1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পিতা কি মুশরিক ছিলেন?
Reporter Name
  • ৩ মে, ২০২১

মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পিতা কি মুশরিক ছিলেন? বিস্তারিত জানতে চাই।

কামরান আহমদ

বিশ্বনাথ, সিলেট

জবাব: হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পিতা কে ছিলেন এ সম্পর্কে মনিষীগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এ সম্পর্কে মোট তিনটি মত বর্ণিত হয়েছে। যথা:

(ক) তাঁর পিতার নাম তারুহ বা তারূখ ছিল, যিনি একত্ববাদে বিশ্বাসী ঈমানদার ছিলেন। আর আযর মূলত তার চাচা ছিলেন যিনি পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

(খ) তাঁর পিতার নাম আযর, যিনি মুশরিক ছিলেন।

(গ) তাঁর পিতার প্রকৃত নাম তারুহ ছিল। আযর ঐ তারুহের উপাধি ছিল। অর্থাৎ আযর ও তারুহ একই ব্যক্তি ছিলেন।

 

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিমত অনুযায়ী হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পিতা ঈমানদার ছিলেন না। এ মতের পক্ষে কিছু মনীষী রয়েছেন, যারা কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কিংবা বিরোধপূর্ণ বর্ণনাসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান ব্যতীত কুরআন মাজীদের আয়াত ও হাদীস শরীফের কতিপয় বর্ণনার আলোকে উক্ত রায় দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে অধিক বিবেচনাযোগ্য ও অধিক বিশ্লেষণপ্রসূত অভিমত হচ্ছে প্রথম অভিমত। সে অনুযায়ী হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পিতা ঈমানদার ছিলেন। এ অভিমতের পক্ষে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে:

১। নসব বর্ণনাকারীগণের সর্বসম্মত মতামত অনুযায়ী তারুহ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাওরাতের বর্ণনায়ও উক্ত নামের উল্লেখ রয়েছে।

২। হাদীস শরীফের বহু বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুর্ব-পুরুষগণের সকলেই ঈমানদার ও স্বীয় যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তা ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মুবারক স্থানান্তর হওয়ার বর্ণনা সম্বলিত রেওয়ায়েতে রয়েছে- তাঁর পূর্ব-পুরুষগণের সকলে আল্লাহর উপাসনাকারী ঈমানদার ছিলেন। আর যেহেতু হযরত ইবরাহীম (আ.) ছিলেন সর্বসম্মত মতানুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ব পুরুষ। তাই তাঁর পূর্ব-পুরুষগণের সকলে ঈমানদার না হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ব-পুরুষগণের সকলের ঈমানদার সাব্যস্ত হওয়ার বিষয় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

৩। হযরত ইবরাহীম (আ.) কে মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা নিষেধ করা হয়েছিল অথচ তিনি শেষ জীবনে পিতার মাগফিরাত কামনা করেছিলেন বলে পবিত্র কুরআন মাজীদে প্রমাণ রয়েছে। তাই তাঁর পিতা মুশরিক হলে কিভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন? এসকল বিষয়াবলি সমাধানকল্পে মনীষীগণের অনেকে প্রথম অভিমতকে অধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে রায় প্রদান করেছেন।

প্রথম অভিমতের পক্ষে যে দলীল:

পবিত্র কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

وإذ قال إبراهيم لأبيه آزر أتتخذ أصناما آلهة إني أراك وقومك في ضلال مبين (الانعام:٧٤(

-স্মরণ করুন! যখন ইবরাহীম তাঁর পিতা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিসমূহকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করছেন? নিশ্চয় আমি আপনাকে এবং আপনার সম্প্রদায়কে প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত দেখছি। (সূরা আনআম, আয়াত-৭৪)

পবিত্র কুরআন মজীদে উল্লেখিত আযর দ্বারা এখানে পিতা নয় বরং চাচাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা আরবী ভাষায় اب শব্দের প্রয়োগ পিতা ও চাচা উভয় অর্থে হওয়া সাব্যস্ত রয়েছে। কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (র.) তদীয় ‘তাফসীরে মাযহারীর’ ৩য় খ-ের ২৮০-২৮১ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

و كان آزر على الصحيح عما لإبراهيم عـ و العرب يطلقون الأب على العم. و الزرقاني في الشرح المواهب أن دليل كون آزر عما لإبراهيم عـ  قد صرح به الشهاب الهيثمي بأن أهل الكتابيين و التاريخ أجمعوا أن آزر عم إبراهيم عـ .

-বিশুদ্ধ মতানুযায়ী আযর ইবরাহীম (আ.) এর চাচা ছিলেন আর আরববাসীগণ عم (চাচা) অর্থে أب (পিতা) ব্যবহার করে থাকে। ইমাম যুরকানী (র.) শরহে মাওয়াহিব, গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আযর ইবরাহীম (আ.) এর চাচা হওয়ার দলীল হিসেবে শিহাব হায়সামী বলেছেন, আহলে কিতাব এবং ঐতিহাসিকগণ একমত হয়েছেন যে, আযর ইবরাহীম (আ.) এর চাচার নাম।

তাফসীরে মাযহারীর ৫ম খণ্ডের ১৪৩ নং পৃষ্ঠায় পানিপথী (র.) ربنا اغفرلي و لوالدي এর তাফসীরে লিখেছেন,

هذه الآية تدل على أن والديه كان مسلمين و إنما كان آزر عما له و كان اسم أبي إبراهيم عـ تارخ كما ذكرنا في سورة البقرة و لأجل دفع توهم آزر قال والدي يعني من ولدني حقيقة و لم يقل أبوي فإن الأب يطلق على العم مجازا .

অর্থাৎ এ আয়াত প্রমাণ করে যে, হযরত ইবরাহীম (আ.) এর মাতা-পিতা মুসলমান ছিলেন এবং আযর তাঁর চাচা। ইবরাহীম (আ.) এর পিতার নাম ছিল তারুখ, যেমন সূরা বাকারায় এতদসংক্রান্ত আলোচনায় আমি উল্লেখ করেছি এবং আযর পিতা হওয়ার সন্দেহ দূর করার জন্য ইবরাহীম (আ.) এখানে أبوي না বলে والدي বলেছেন, যিনি তাঁর প্রকৃত জন্মদাতা পিতা। কেননা الأب শব্দটি রূপকভাবে চাচা অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

তাফসীরে তাবারী ৫ম খণ্ডের ১৬৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,

حدثنا محمد بن حميد و سفيان بن وكيع قالا حدثنا جرير عن ليث عن مجاهد قال ليس آزر أبا إبراهيم.

-মুহাম্মদ ইবনু হুমাইদ ও সুফিয়ান ইবনু ওয়াকী বলেছেন, জারীর বর্ণনা করেছেন লাইস থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন মুজাহিদ থেকে, হযরত মুজাহিদ (র.) বলেছেন, আযর ইবরাহীম (আ.) এর পিতা নন।

حاشيه جمل على الجلالين এর ৫ম খণ্ডের ৪১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-

و آزر كان عم إبراهيم عـ .

অনুবাদ: আযর ইবরাহীম (আ.) এর চাচা ছিলেন।

দ্বিয়াউল কুরআন, দ্বিতীয় খ-, পৃষ্ঠা ২৫৮-২৫৯ এর মধ্যে আছে

لأبيه سے  مراد   آزر هے جو  اپ كا   چچا تها  ـ اپ كے والد كا نام تارخ تها ـ

-কুরআন শরীফে لأبيه দ্বারা আযর বুঝানো হয়েছে, যিনি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর চাচা ছিলেন। ইবরাহীম (আ.) এর পিতার নাম তারুখ ছিল।

ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) আযর ইবরাহীম (আ.) এর চাচা হওয়ার পক্ষে অনেক দলীল উপস্থাপন করেছেন। যেমন তিনি বর্ণনা করেছেন:

أخرج ابن المنذر بسند صحيح عن جريج في قوله تعالى و إذ قال إبراهيم لأبيه آزر قال ليس آزر بأبيه إنما هو إبراهيم بن تارح أو تارخ بن شارخ بن ناخر بن فالخ .

– و إذ قال إبراهيم لأبيه آزرএর তাফসীরে ইবনু মুনযির বিশুদ্ধ সনদে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেছেন জুরাইজ বলেন, আযর ইবরাহীম (আ.) এর পিতা নয়, তিনি হলেন ইবরাহীম ইবনু তারুহ বা তারুখ ইবনু শারুখ ইবনে নাখুর ইবনে ফালুখ।

তিনি আরো বর্ণনা করেছেন,

أخرج ابن أبي حاشم بسند صحيح عن  السدي أنه قيل له اسم أبي إبراهيم آزر فقال بل اسمه تارح .

-ইবনু আবী হাশিম বিশুদ্ধ সনদে সুদ্দী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত সুদ্দীকে বলা হলো হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পিতার নাম ছিল আযর, তদুত্তরে সুদ্দী বললেন, না আযর নয়, বরং তাঁর পিতার নাম ছিল ‘তারুহ’।

ইমাম সুয়ূতী (র.) আরো বলেন,

روينا بالأسانيد عن ابن عباس رضـ و مجاهد و ابن جرير و السدي أنهم قالوا ليس آزر أبا لإبراهيم عــ انما هو إبراهيم بن تارخ .

-আমি বিশুদ্ধ সনদের মাধ্যমে হযরত ইবনু আব্বাস (রা.), মুজাহিদ (র.) ইবনু জারীর (র.) এবং সুদ্দী (র.) থেকে বর্ণনা করেছি, সকলেই বলেছেন, আযর ইবরাহীম (আ.) এর পিতা নন, নিশ্চয় তিনি [ইবরাহীম (আ.)] হলেন ইবরাহীম বিন ‘তারুখ’।

আরো অগণিত বর্ণনা ও দলীল বিদ্যমান আছে যে, আযর ইবরাহীম (আ.) এর পিতা নন, বরং চাচা। আল কামুসুল লুগাতে বর্ণনা করা হয়েছে:

آزر اسم عم إبراهيم عـ و أما ابوه فانه تارخ .

-আযর ইবরাহীম (আ.) এর চাচার নাম, তার পিতার নাম ‘তারুখ’।

নকলী-আকলী দলীল ছাড়াও আরবী অভিধানবিদগণের মতেও আযর ইবরাহীম (আ.) এর পিতা নন, বরং চাচা। তারপরও কেউ যদি আযরকে ইবরাহীম (আ.) এর পিতা প্রমাণ করতে চায়, তবে তা সুস্পষ্ট গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

জবাবদাতা: প্রিন্সিপাল ও খতীব, আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার 

মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র

ফেইসবুকে আমরা...