1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার কারাবাখ চুক্তি : তুরস্কের ভূমিকা ও অর্জন
মিফতাহুল ইসলাম তালহা
  • ১ জানুয়ারী, ২০২১

কয়েক সপ্তাহব্যাপী চলমান আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ বিরতির জন্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে গত নভেম্বরে স্বাক্ষরিত তুরস্ক ব্যাপক অভিনন্দন অর্জন করেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, জনগণের নিকট ও গণমাধ্যমে, সর্বত্র একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়ার মধ্যে নাগরনো কারাবাখ অঞ্চলের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য এ চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী আজারবাইজান তাদের দখলিকৃত ভূমি ফিরে পায়, যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়, এসব হয়েছে আজারবাইজান বাহিনীর অদম্য গতি ও আর্মেনিয়ার রাজধানীর নিকটবর্তী হয়ে যাওয়ার পর। তুরস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে যখন এ চুক্তিকে আজারবাইজানের বিজয় এবং কয়েক দশক ধরে অবৈধভাবে আর্মেনিয়ার দখলে থাকা তাদের ভূমির পুনরুদ্ধার হিসেবে দেখা হচ্ছে, তখন অনেক অ্যাক্টিভিস্ট এ চুক্তিটিকে আঙ্কারার বিজয় হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা আঙ্কারাকে এ যুদ্ধের মৌলিক অংশীদার হিসেবেও দেখছেন। কিন্তু শুধুমাত্র চুক্তিতে শুধুমাত্র রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের শর্ত থাকায় এ ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিবাদমান অঞ্চলে তুর্কি বাহিনী
এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একেপির নেতা ও সাবেক সাংসদ রাসুল তুসুনের কথায়। তিনি আল জাজিরাকে জোর দিয়ে বলেন, চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পারস্পরিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে। চুক্তি সাক্ষরের আগের দিন তারা এ ঐক্যমতে পৌঁছান। এরপর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তুসুন আরো জানান যে, রুশ বাহিনীর পাশাপাশি শান্তিরক্ষায় তুর্কি বাহিনীও অংশগ্রহণ করবে এবং যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে রাশিয়ার পাশাপাশি তুর্কি অফিসারগণও থাকবেন।
একেপির এ নেতা আরো বলেন যে, প্রকৃতপক্ষে আজারবাইজানের বিজয় তুরস্কেরই বিজয়, কারণ “আজারবাইজানের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের সম্পর্কের অনুরূপ। আর আমরা দুই রাষ্ট্রে একই জাতি বসবাসরত।” তিনি আরো যোগ করেন, “এ চুক্তিতে আমাদের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় রয়েছে। তা হলো আজারবাইজান স্থলভাগ দিয়ে নাখচেভান অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আজারবাইজান তুরস্কের সাথে প্রথম বারের মতো স্থলভাগ দিয়ে সংযুক্ত হলো। এ বিষয়টি হতে না দেওয়ার জন্য কিছু রাষ্ট্র চেষ্টা করছিল। এর মধ্য তুরস্কের ভূরাজনৈতিক বিজয় অর্জিত হয়েছে।”

যোগাযোগের করিডর
এদিকে তুর্কি রাষ্ট্রপতির দফতরের গণযোগাযোগ বিভাগের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে যে, “আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার এ চুক্তিটি এবারের দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকে তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রচেষ্টার ফলে সম্ভব হয়েছে।” সূত্র আরো জানায়, “চুক্তির ধারাসমূহ আজারবাইজান ও তুরস্কের জন্য খুবই যথাযথ। বিশেষত এ চুক্তির ফলে আজারবাইজান সরাসরি তুরস্কের সাথে স্থলভাগ দিয়ে মিলিত হতে পারছে। আর্মেনিয়া কর্তৃক জবরদখলকৃত ভূমি আজারবাইজান ফিরে পাচ্ছে।”
এখন তুরস্কের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আজারবাইজানের ভূখ-ের নিরাপত্তা ও অখ-তা নিশ্চিত করা। আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে আজারবাইজানের ভূমিতে ভবিষ্যতের যে কোন হুমকি প্রতিরোধ করতে বাকুর সাথে আঙ্কারা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে বলেও সূত্র জানায়। এছাড়াও এ চুক্তির ফলে দক্ষিণ ককেশাসে তুরস্ক প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র অনুসারে এ চুক্তি বাস্তবায়নের অর্থ হচ্ছে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে অর্থনৈতিক যোগাযোগের চ্যানেল উন্মুক্ত হওয়া, পাশাপাশি উজবেকিস্তান, কাজাখিস্তান, তুর্কমেনিস্তান থেকে শুরু করে ইরানের মধ্য দিয়ে না গিয়েই তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়া।

নাখচেভান অঞ্চল
এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্বে আজারবাইজানের নাখচেভান ছিটমহলে যেতে হতো হয়তো আর্মেনিয়া অথবা ইরানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এ চুক্তির পর নাখচেভান ছিটমহলের পাশাপাশি আজারবাইজানের এখন সরাসরি তুরস্কের সাথেও ভৌগলিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। চুক্তি অনুসারে আজারবাইজান ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি করিডোর পেয়েছে।
নাখচেভান ছিটমহল আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এটি দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে আর্মেনিয়া, ইরান ও তুরস্কের মাঝখানে অবস্থিত, এ অঞ্চলের রাজধানীর নামও নাখচেভান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন এলাকা হচ্ছে এই নাখচেভান, এখানে পর্যটকরা খুব কমই গিয়ে থাকেন। এ অঞ্চলে আয়তন প্রায় ৫৩৬৩ বর্গ কিলোমিটার, এটি আজারবাইজানের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন। নাখচেভানের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখের মতো। তুর্কি সংবাদ মাধ্যম অনুসারে, তুর্কি ট্যাংক ও স্থলবাহিনী বিশেষ উপায়ে নাখচেভানে পৌঁছায়।

রেলওয়ে ও সামরিক ঘাটি
বিভিন্ন তুর্কি পত্রিকা বলছে, তুরস্ক, নাখচেভান ও আজারবাইজানের মধ্যকার দূরত্ব সত্ত্বেও এসব অঞ্চলের যোগাযোগ সহজীকরণের জন্য একটি রেললাইন নির্মিত হতে যাচ্ছে। এ পথ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।
এদিকে আজারবাইজানের গণমাধ্যম অনুসারে, তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও আজারবাইজানের উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাকু ও আঙ্কারার মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ কিছু দস্তাবেজ প্রস্তুত করা হয়েছে। উভয় পক্ষ এ বৈঠকে নাখচেভানে তুরস্কের সামরিক ঘাটি নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা করেছে।

[নিবন্ধটি আল জাজিরার আরবি সংস্করণ থেকে অনূদিত]

ফেইসবুকে আমরা...