1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
তাফওয়ীদ ও তা’ওয়ীল
মাওলানা মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী
  • ৮ নভেম্বর, ২০২১

পবিত্র কুরআন ও হাদীসে আল্লাহ পাকের অনেক সিফাতের উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু সিফাত স্পষ্ট (মুহকাম), অন্যগুলো এমন যা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়াজন হয়। যেগুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়াজন হয় আলিমগণ এক্ষেত্রে দুটি পথ গ্রহণ করেছেন। একটি হলো তাফওয়ীদ (تفويض) অপরটি হচ্ছে তা’ওয়ীল (تأويل)।

তাফয়ীদ (تفويض) পরিচিতি

তাফওয়ীদ হলো আল্লাহর সিফাত (বিশেষণ) সমূহের বাহ্যিক অর্থ অনুসন্ধান না করে এ বিশেষণের প্রকৃত রূপকে আল্লাহ তাআলার উপর সোপর্দ করা। এককথায় আল্লাহ তাআলার উপর নির্ভর করাকে تفويض বা সোপর্দ করা বলে। এ পথকে যারা অবলম্বন করেন তাদেরকে মুফাওয়ীদা (مفوضة) বলে। আল্লাহ তাআলার সিফাত বিষয়ে পূর্ববর্তী সালফে সালিহীনদের অনেকেই এ পথ (সিফাতের জ্ঞান আল্লাহর দিকে সোপর্দ করা) অনুসরণ করেছেন। যেমন, হরফে মুকাত্তাআত।

তায়ীল (تأويل) পরিচিতি

তা’ওয়ীল হলো আল্লাহ তাআলার বিশেষণের ক্ষেত্রে আরবী ভাষা সাহিত্যের ব্যবহার তথা আরবদের ভাষারীতি অনুযায়ী আল্লাহ তাআলার শানে প্রযোজ্য অর্থ করা। সালফে সালিহীনের এক জামাআত এবং পরবর্তী মুসলিম উম্মাহ এ পথ অনুসরণ করেছেন। যেমন,

আল্লাহ তাআলার বাণী- وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ এর আক্ষরিক অনুবাদ হচ্ছে; ‘আসমানকে আমি হাত দ্বারা তৈরী করেছি,নিশ্চয়ই আমি বিস্তৃত করতে সক্ষম।’ (সূরা আয যারিয়াত, আয়াত-47)

ইমামুল মুফাসসীরিন ইবন আব্বাস (রা.) ও তাবিঈনদের মধ্যে প্রসিদ্ধ মুফাসসীর মুজাহিদ, কাতাদাহ, ইবন যায়িদ, সুফিয়ান সাওরী (র.) প্রমুখ উক্ত আয়াতে بِأَيْدٍ  শব্দকে بقوة দ্বারা তা’ওয়ীল  করেছেন। (তাফসীরে তাবারী)

তাফসীরে ইবন কাসীর, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে জালালাইনসহ নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীরের কিতাবেبِأَيْدٍ  শব্দকে بقوة দ্বারা তা’ওয়ীল করা হয়েছে। শুধু তাই নয় লা মাযহাবীদের দ্বারা অধুনা যে দুই চারটি তাফসীরের কিতাব রচিত হয়েছে সেগুলোতেও উক্ত আয়াতে بِأَيْدٍ শব্দকে بقوة দ্বারা তা’ওয়ীল করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ সিদ্দীক হাসান খান কৃত ফাতহুল বায়ান ও বিন উছাইমিন কৃত তাফসীরুল কুরআনিল কারীমের কথা বলা যেতে পারে। অতএব, এই আয়াতের যথাযথ অর্থ হবে ‘আসমানকে আমি (হাত) নিজ ক্ষমতা দ্বারা তৈরী করেছি, নিশ্চয়ই আমি (এর বিশালতাকে)বিস্তৃত করতে সক্ষম।’

আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে তাফওয়ীদ বা তা’ওয়ীল ছাড়া অন্য যে পথই অবলম্বন করা হোক, হয় সেটা তাজসীম অর্থাৎ দেহবাদী ও তাশবীহ তথা সাদৃশ্যবাদী আকীদা হবে নয়তো তা’তীল অর্থাৎ সিফাতকে অকার্যকর করা হবে।

উল্লেখ্য যে,কুরআনে বর্ণিত যে সকল শব্দে আল্লাহর হাত, পা, চেহারা ও দেহ ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে সেই সকল শব্দের তাফওয়ীদ বা তা’ওয়ীল না করে আক্ষরিক অর্থে আল্লাহর দেহ সাব্যস্ত করাকে তাজসীমি আকীদা বলা হয় এবং এ আকীদার অনুসারীদেরকে দেহবাদী বা মুজাসসিমা বলা হয়।

তাওয়ীল কেন করা হয়?

আকাবিরীনের তা’ওয়ীল করার কারণ সম্পর্কে মুল্লা আলী কারী (র.) তার মিরকাত গ্রন্থে লিখেছেন-

পরবর্তী উলামায়ে কিরাম তা’ওয়ীল বা ব্যাখ্যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের বিরোধিতা করতে চান নি। আল্লাহ ক্ষমা করুন, তাদের থেকে এমন ধারণাও করা যায় না বরং পরবর্তী উলামায়ে কিরামের সময়ে মুজাসসিমা ও জাহমিয়্যাহ ইত্যাদি গুমরাহ ফিরকার ব্যাপকতা ও সাধারণ মুসলমানের উপর তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়াতে তা’ওয়ীল বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। পরবর্তী উলামায়ে কিরাম এ সকল বাতিলপন্থিদের প্রতিরোধ করতে এবং তাদের ভ্রান্ত মতবাদের অসারতা তুলে ধরতেই তা’ওয়ীল বা ব্যাখ্যার পথ ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। এজন্য দেখা যায় তাদের অনেকে ওজর পেশ করে বলেছেন,যদি পূর্ববর্তী নেককারগণের যামানার ন্যায় আকীদার বিশুদ্ধতা বিদ্যমান থাকত এবং বাতিলপন্থিদের প্রাদুর্ভাব দেখা না দিত তাহলে আমরা বিন্দুমাত্র তা’ওয়ীল বা ব্যাখ্যাতে মনোনিবেশ করতাম না।

আমি জানতে পেরেছি যে, শীর্ষস্থানীয় সালফে সালিহীনদের মধ্যে ইমাম মালিক ও আওযায়ী (র.) এ হাদীসের (ينزل ربنا تبارك وتعالى) বিস্তারিত তা’ওয়ীল করেছেন। হযরত সুফিয়ান সাওরী (র.) استواء على العرش কে ‘কাজের ইচ্ছা পোষণ’ দ্বারা তা’ওয়ীল করেছেন। যেমন এর উদাহরণ ثم استوٰى الى السماء অর্থাৎ আকাশের দিকে ইচ্ছা পোষণ করলেন। এরূপ তা’ওয়ীল করেছেন ইমাম জাফর সাদিক (র.), বরং তিনি বলেন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কিরাম একমত যে, আল্লাহর দিক আছে এমন বিশ্বাস পোষণকারী কাফির। আল্লামা ইরাকী (র.) আরো স্পষ্টভাবে তা বলেছেন। তিনি (ইরাকী) আরো বলেন, এটাই ইমাম আবূ হানীফা, শাফিঈ, মালিক, আশআরী ও বাকিল্লানি (র.) এর অভিমত।

সকল দলের অনুসারীগণ (নিম্নবর্ণিত আয়াত ও হাদীসের) তা’ওয়ীল করার বিষয়ে একমত। যেমন:

১। তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থজন হিসেবে বিরাজ করেন না। আর না পাঁচ জনের মধ্যে, যাতে তিনি ষষ্ঠ জন হিসেবে উপস্থিত থাকেন না। তারা এতোদ্বপেক্ষা কম হোক অথবা বেশি হোক তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন। (সূরা মুজাদালাহ, আয়াত-০৭)

২। যে দিকেই তোমরা (তোমাদের চেহারা) ফিরাও না কেন, সে দিকেই আল্লাহর দিক। (সূরা বাকারাহ,আয়াত-১১৫)

৩। আমি তার (মানুষের) শাহরগের চেয়েও তার অধিক নিকটবর্তী। (সূরা কাফ, আয়াত-১৬)

৪। মুমিনের কলব রাহমানের দুই অঙ্গুলির মধ্যস্থলে। (আল হাদীস)

৫। হাজরে আসওয়াদ এই যমিনে আল্লাহর ডান হাত। (আল হাদীস) (মিরকাত, খণ্ড:৩, পৃষ্ঠা: ২৭০-২৭১)

মুল্লা আলী কারী (র.) এর ভাষ্য থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, উপরোল্লেখিত আয়াত ও হাদীস বা এ ধরনের আয়াত ও হাদীস-এর তা’ওয়ীল বা ব্যাখ্যা করার উপর সবাই একমত।

তাওয়ীলকে অস্বীকার করার পরিণতি

ক্ষেত্র বিশেষে মুতাশাবিহাত আয়াতের সঠিক তা’ওয়ীল না করলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,ওহীর বাহ্যিক কিংবা আক্ষরিক অর্থ নেয়ার দ্বারা খ্রিষ্টানরা যেভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করেছে সেভাবে ভ্রান্ত আকীদায় বিশ্বাসীরা আল্লাহর শানের খিলাফ বিভিন্ন কিছু সাব্যস্ত করার সুযোগ পেয়ে যাবে।

ইবন কাসীর (র.) লিখেছেন, খ্রিষ্টানরা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করার জন্য পবিত্র কুরআনের দুটি শব্দকে (كلمة الله ও  روح الله) দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে। (তাফসীরে ইবন কাসীর)

সুতরাং বিভিন্ন বাতিল ফিরকাগুলো প্রকাশের পর আইম্মায়ে কিরাম সঠিক তা’ওয়ীলের দিকে মনোনিবেশ করেন। এই সমস্ত তা’ওয়ীলকে আহলুস সুন্নাহ বিরোধী কাজ মনে করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী মুফাসসির ও হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণকে বাতিল সাব্যস্ত করার অপকৌশল মাত্র।

বি.দ্র: কুরআন মাজীদে এ ধরনের অনেক আয়াত রয়েছে যার তা’ওয়ীল বা তাফসীর করা ছাড়া সঠিক মর্ম উদঘাটন করা অসম্ভব।

লা মাযহাবীগণ কুরআন মাজীদ এবং হাদীস শরীফে বর্ণিত আল্লাহর উপস্থিত হওয়া, হাসি, ভুলে যাওয়া ইত্যাদি শব্দের বাহ্যিক অর্থে বিশ্বাস করাকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মত ও পথ বলে থাকেন। এ কারণে তারা দুনিয়ার সকল হকপন্থি মুহাদ্দিস মুফাসসিরের বিভিন্ন তা’ওয়ীল ও ব্যাখ্যাকে ভ্রান্ত বলে থাকেন।

তাওয়ীলের ব্যাপারে আপত্তি

লা মাযহাবীগণ কুরআন ও হাদীসের তা’ওয়ীল কে শুধু অস্বীকারই করেননা বরং যে সকল মুফাসসির ও মুহাদ্দিস তা’ওয়ীল করেছেন তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত বহির্ভূত বাতিল-বিদআতী আখ্যা দিয়ে থাকেন। যেমন-

ফাতহুল বারী ১ম খণ্ডের ৩৫২ পৃষ্ঠায় ইবন মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে  فوالذى نفسي بيده সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ।’ এ হাদীসাংশে উল্লেখিত يد (হাত) শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন হাজার (র.) বলেন, এখানে يد এর ব্যাখ্যা হলো, القدرة তথা ক্ষমতা।

ইবন হাজার আসকালানী (র.) এর এই ব্যাখ্যা সম্পর্কে লা মাযহাবীদের গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ বিন বায বলেন,

لاشك أنه كلام ناقص مخالف لما عليه أهل السنة والجماعة

-নিঃসন্দেহে এটি একটি অপূর্ণাঙ্গ কথা। এমন বিশ্বাস আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিপরীত। (اخطاء فتح الباري في العقيدة7)

যে সকল আয়াতে আল্লাহর সিফাতের ব্যাখ্যা ব্যতত সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছা সম্ভব নয়

লা মাযহাবীগণ আল্লাহর সিফাতের তা’ওয়ীলকে অস্বীকার করে থাকেন। অথচ কুরআন কারীমে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলোর তা’ওয়ীল আবশ্যক। নিম্নে কয়েকটি আয়াত তাফসীরসহ উল্লেখ করা হলো, যে আয়াতসমূহে আল্লাহর সিফাতের তা’ওয়ীল ব্যতীত সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব নয়।

১. সূরা নিসার ১০৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

يَسْتَخْفُونَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ ٱللهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضٰى مِنَ ٱلْقَوْلِ

-তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে লুকায় না; অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে এমন বিষয়ে পরিকল্পনা করে যা তিনি পছন্দ করেন না।

উপরোক্ত আয়াতে وَهُوَ مَعَهُمْ (তিনি তাদের সাথে রয়েছেন) এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন ‘সাথে থাকা’ এর অর্থ তাদের গোপন সংকল্প সম্পর্কে তিনি অবগত।

২. সূরা তাওবার ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

 إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا

-তিনি তখন তাঁর সঙ্গীকে (আবু বকর রা.) বলেছিলেন, চিন্তিত হয়োনা নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

উপরোক্ত আয়াতে إِنَّ اللهَ مَعَنَا আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, আল্লাহর সাহায্য সাথে রয়েছে।

৩. সূরা শুআরাহর ৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

 قَالَ كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِين

-তিনি বললেন, কখনো নয়, নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে আমার প্রতিপালক আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহর সাথে থাকার ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, আল্লাহর সাহায্য সাথে থাকা।

৪. সূরা ওয়াকিয়ার ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنكُمْ وَلَكِن لَّا تُبْصِرُونَ

-আমি তোমাদের অপেক্ষা তার নিকটতর। কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা (মৃত) ব্যক্তির নিকটতর এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহর অবগতি বুঝানো হয়েছে।

৫. সূরা আনফালের ১২নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلآئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ

-যখন আপনার প্রতিপালক ফিরিশতাদের প্রত্যাদেশ করেছিলেন নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। সুতরাং মুমিনদের অবিচলিত রাখো।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক সাথে থাকার ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা সাথে থাকা।

৬. সূরা আনকাবুত এর ৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ 

-যারা আমার পথে সাধনা করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক সৎকর্মপরায়ণদের সাথে থাকার ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা সাথে থাকা।

৭. সূরা আনফালের ৪৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

-নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক ধৈর্যশীলদের সাথে থাকার ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ লিখেছেন, আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা সাথে থাকা।

লা মাযহাবীদের অপব্যাখ্যা ও একটি প্রশ্ন

লা মাযহাবীগণ আল্লাহর সিফাতের ব্যাপারে বলে থাকেন, বিশেষণগুলোর বাহ্যিক অর্থ, আক্ষরিক অর্থ, সরল অর্থ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তার উপর বিশ্বাস করতে হবে। অর্থাৎ তারা তা’ওয়ীল করাকে বিদআতীদের কাজ বলে থাকেন। পক্ষান্তরে যখন কুরআন কারীমের কোন আয়াত অথবা সহীহ কোন হাদীস তাদের মূলনীতিকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে তখন তারা তা’ওয়ীল করতে লেগে যান। যেমন পূর্বোক্ত বুখারী শরীফের কিতাবুস সালাতের দুটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়,আল্লাহ তাআলা নামাযীদের সামনে থাকেন। হাদীসটি যখন লা মাযহাবীদের আকীদা আল্লাহর আরশে বসে থাকার বিরুদ্ধে চলে গেল, তখন তাদের শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায তা’ওয়ীল করতে শুরু করলেন। আব্দুল্লাহ বিন বায ‘আখতাউ ফাতহুল বারী ফিল আকীদা’ গ্রন্থের টিকায় (উক্ত হাদীসের ব্যাপারে) লিখেছেন-

فهذا لفظ محتمل يجب أن يفسر بما يوافق النصوص المحكمة

-এ শব্দটির অন্য অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এর এমন ব্যাখ্যা করতে হবে যা অকাট্য দলীলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। (اخطاء فتح الباري فى العقيدة-৬)

লা মাযহাবীদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীসগুলো যদি কেবল বাহ্যিক, আক্ষরিক ও সরল অর্থ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তার উপর বিশ্বাস করা হয়। তাহলে নিম্নলিখিত আয়াতগুলোর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করলে আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্টিত হন কিভাবে?

আয়াতগুলো নিম্নরূপ-

ا. ونحن أقرب إليه من حبل الوريد

-এবং আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও অধিকতর নিকটবর্তী। (সূরা কাফ, আয়াত-১৬)

ب. وهو معكم أينما كنتم

-তোমরা যেখানেই থাকনা কেনো তিনি তোমাদের সাথে আছেন। (সূরা হাদীদ, আয়াত-০৪)

ফেইসবুকে আমরা...