1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) এর ভালোবাসা
মোহাম্মদ খছরুজ্জামান
  • ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) নবী রাসূলের পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্বের মূলে রয়েছে রাসূলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর গভীর আস্থা। তাঁর জীবন ছিল নবীপ্রেমে পরিপূর্ণ নিমজ্জিত, তিনি রাসূলের প্রেম সাগরে চির সাতারু, হুব্বে রাসূলে বিদগ্ধ আত্মার অধিকারী, নবীর ধ্যানে মগ্ন বিভোর সাধক। তাঁর মতো রাসূল প্রেমিক পৃথিবীতে দ্বিতীয় আরেকজন নেই। তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ রাসূলের প্রতি ভালোবাসায় ভরপুর।
রাসূলের প্রতি আবূ বকর (রা.) এর সীমাহীন ভালোবাসা বৃথা যায়নি দুনিয়া ও আখিরাতে। তিনি রাসূলের তিন বছরের ছোট ছিলেন। তাই বন্ধুত্ব ছিল বাল্যকালের। তিনি স্বপ্ন দেখলেন, চাঁদ নেমে আসল মক্কায়। চাঁদের কিরণে আলোকিত সব ঘর। সমুদয় আলো এসে জমা হলো তাঁর কোলে। জাহিলী যুগেও তিনি জ্ঞানী লোক। চাঁদ এবং আলো দেখে দারুণ ভাবিত। খোঁজতে লাগলেন তা’বীর। খিষ্টান যাজকের ভাষ্য, ‘আপনি নবীর অনুসারী হবেন। ফলে পরিণত হবেন শ্রেষ্ঠ মানুষে।’ নবীর সাথে সম্পর্কের সুযোগ হয়েছিল নুবুওয়াত প্রকাশের পূর্বেই। ঈমান আর সখ্যতার শুরু তখন থেকে। সঙ্গ দিতেন সার্বক্ষণিক। আয়িশা (রা.) বলেন, আমার বাবা সারাক্ষণ হুযূরের খিদমতে থাকতেন। রাতে মাত্র কটি ঘণ্টা ঘরে কাটানো ছিল অতি কষ্টের। বিরহ বিচ্ছেদে সময় পার হতো না। অন্তরে নবীপ্রেম জ্বলত দাউদাউ করে। নিভৃত হতেন পরবর্তী দর্শনে।
তিনি রাসূলের সকল সময়ের সহযাত্রী ছিলেন। ফলে সহ্য করতে হয়েছে নিষ্ঠুর নির্যাতন। তিনি মক্কার প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়েও নবীপ্রেমিক হওয়াতে কাফির মুশরিকদের হিংস্র থাবায় জর্জরিত হন। নবীর প্রতি ভালোবাসার অপরাধে নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু টলাতে পারেনি কোনো ঝড়-তুফান। কাফির মুশরিকদের আঘাতে রক্তাক্ত সমস্ত শরীর। তাকে চেনা দায়। তিনি আর বেঁচে আছেন কিনা সন্দেহ। এরপরও হুঁশ এলে চোখ খুলেই প্রথম কথা বলেন, নবীর অবস্থা কী? হুব্বে রাসূলের এ এক অনুপম দৃষ্টান্ত।
আবূ বকর রাসূলের চিরসঙ্গী। হিজরতেও সঙ্গী হবেন। ইঙ্গিত পান আগে থেকেই। তাই সদা সতর্ক অবস্থানে। গভীর রাতে রাসূল বেরিয়ে এলেন। সবদিকে শত্রু, দরজায় করাঘাত মাত্রই সঙ্গী প্রস্তুত। এ প্রস্তুতি দীর্ঘ দিনের। নবীর সন্তুষ্টিতে সর্বাত্মক সতর্কতা। অন্ধকার রজনী, দুর্গম পথ, চতুর্দিকে দুশমনের তল্লাশী। বন্ধুযুগল হলেন মদীনামুখী। গারে সওরে আত্মগোপন করলেন। প্রাণনাশের আশঙ্কা চরম। ভয় ভীতি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনোবল তখনও বলিষ্ঠ। কুরআনে এসেছে দৃঢ়তার ইঙ্গিত; “তিনি তাঁর সাথীকে বলেন, ভয় করো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে।” চরম সংকটে অভয় বাণী। নবীর সাথে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের উজ্জ্বল উপমা, নবীর প্রতি ভালোবাসা- এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর নেই; নিজের জীবনও না, জ্বলন্ত প্রমাণ দিলেন প্রথম খলীফা। সওর পর্বতের গুহায় সর্পের দংশন। বিষের অসহ্য যন্ত্রণায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নবীর ভালোবাসায় নিজের জীবন বিসর্জন দিবেন তবু নবীর ঘুমে ব্যাঘাত করা যাবে না। তিনি বুঝলেন রাসূলের সন্তুষ্টিই ইসলাম।
তাবুক যুদ্ধ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় পরিচালিত একটি উল্লেখযোগ্য সমর অভিযান। নবীর ডাকে বসল পরামর্শ সভা। ডাক পড়ল আর্থিক সহযোগিতার। সাধ্যানুযায়ী সকলে অংশগ্রহণ করলেন। প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ। শীর্ষে রইলেন তিন খলীফা। আবূ বকর (রা.) হাজির করলেন তাঁর সর্বস্ব। রাসূলের জিজ্ঞাসা, ঘরে কী রেখে এসেছ? ঘরে রেখে এসেছি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল। ইশকের দরিয়ায় ডুবন্ত আপাদমস্তক। রাসূলের সন্তুষ্টিই আসল বিষয়। ভালোবাসায় অপূর্ব আত্মসমর্পণ। সব সম্পদ বিলিয়ে দিলেন ভালোবাসার বলে।
মিরাজের ঘটনা সাধারণ বিচারে অবিশ্বাস্য। যেমনটা অবিশ্বাস করেছে কাফির সম্প্রদায়। জ্ঞান গরীমায় তাদের কমতি ছিল না। কমতি ছিল বিশ্বাসে আস্থায়। তারা মনে করত তিনি আরো দশজনের মতো সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ অক্ষম। অলৌকিক কর্ম সম্পাদনে নবীর অলৌকিক কর্ম তাদের বিশ্বাসের বাইরে। নবীকে দেখল সরাসরি অথচ রইল কাফির। কারণ একটাই। দেখেনি ভালোবাসার চোখে, আস্থার আয়নায়। মিরাজের সংবাদ শোনামাত্র বিশ্বাস করে সিদ্দীক উপাধি লাভ করেন হযরত আবূ বকর। অসম্ভব সম্ভব হলো আবূ বকরের পক্ষে। কাফির মুশরিকও জানত তিনি নবীপ্রেমিক। প্রেমের বন্ধনে ব্যাঘাত ঘটাতে মিরাজের ঘটনা বলে দিয়ে নড়ানোর চেষ্টা করেছে- ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু তিনি বিশ্বাসে অটল-অনঢ়। সত্যিই যদি নবী বলেন, তিনি মিরাজে গমন করেছেন তবে আমি বিশ্বাস করলাম। এই বিশ্বাস ভালোবাসার বিশ্বাস। গভীর আস্থা আর বলিষ্ঠ ভালোবাসার বলে তিনি পরিণত হলেন সিদ্দীকে আকবরে।
হযরত আবূ বকর (রা.) বার্ধক্যে উপনীত। মৃত্যুর আগে কতিপয় ওসিয়ত করলেন। জানাযার পর আমার সালাম পৌঁছাবে রওদ্বায়ে আতহারে। রওদ্বার পাশে দাফনের অনুমতি চাইবে। ওসিয়ত মতো হুবহু তাই করা হলো। রওদ্বা থেকে আওয়াজ আসল- ‘বন্ধুকে বন্ধুর সাথে মিলিয়ে দাও’। তাঁকে কবরস্থ করা হলো রওদ্বায়ে আতহারের পাশে। মৃত্যুর পরও বেছে নিলেন বন্ধুর সান্নিধ্য। এ এক অপূর্ব ভালোবাসা। যার ইতি নেই, মরণের পরও তা জীবন্ত।
হযরত আবূ বকর (রা.) ইসলামের প্রচার-প্রসারে নিবেদিত এক বিশাল বিস্তৃত জীবন। অসীম অবদানে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলে স্বীকৃত। তাঁর জীবন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নবীপ্রেমে ভরপুর। তাঁর পুরো জীবন নবী প্রেমের উজ্জ্বল উপমা। নবীর প্রতি উম্মতের সম্পর্কের ধরণÑ আকীদা-বিশ্বাস, ভাব-ভক্তি, ধ্যান-ধারণা, প্রেম-ভালোবাসা, অনুসরণ-অনুকরণ কেমন হওয়া আবশ্যক অনায়াসে সব শিখিয়ে দিবে তাঁর জীবন। সাহাবায়ে কিরাম ইসলাম বুঝেছেন সরাসরি নবী থেকে। এমন সৌভাগ্য আর কারো হয়নি। ঈমানে-আমলে, ইলমে-আখলাকে তাঁরাই সেরা। আর আবূ বকর (রা.) সেরাদের সেরা। কোন আমলে আল্লাহ খুশি হন, দুনিয়া আখিরাত কামিয়াব হয়, জান্নাত লাভ করা যায়, হযরত আবূ বকরের চেয়ে অধিক সমঝদার আর নেই। তিনি ইসলামের যাবতীয় আমল পালনের পাশাপাশি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন রাসূলের মহব্বতে। তাই আবূ বকর (রা.) সহ সাহাবা অনুসারী দাবি করলে হুব্বে রাসূল বুকে ধারণ ও লালন অপরিহার্য।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

ফেইসবুকে আমরা...