1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
সন্তানের অধিকার
মো. জুয়েল আহমদ
  • ৫ নভেম্বর, ২০২২

আমরা সচরাচর মা-বাবার অধিকার নিয়ে আলোচনা করি, শুনি ও লেখালেখি করে থাকি। তবে আজ সন্তানের অধিকার নিয়ে লিখতে চাই। মা-বাবার জন্য যে দুআ আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন তাতে আল্লাহ সন্তানের হক সুক্ষ্মভাবে যোগ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

-আর তুমি বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমার মা-বাবা শৈশবে আমাকে যেভাবে লালন-পালন করেছেন আপনি সেভাবে তাঁদের প্রতি দয়া করুন। (সূরা ইসরা, আয়াত-২৪)
এখানে (كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا) অর্থাৎ “আমার মা-বাবা শৈশবে আমাকে যেভাবে লালন-পালন করেছেন” এই কথাটি লক্ষ্য করলে বুঝা যায় সন্তানের দুআর যোগ্য হতে হলে প্রত্যেক মা-বাবাকে শৈশবে সন্তানের হকের প্রতি যতœবান হতে হবে। তাছাড়া সন্তানের হকের ব্যাপারে মা-বাবা জিজ্ঞাসিত হবেন। যেমন-

وَقَالَ عبد الله بن عمر لِرَجُلٍ: “أَدِّبِ ابْنَكَ، فَإِنَّكَ مَسْئُولٌ عَنْ وَلَدِكَ، مَاذَا أَدَّبْتَهُ؟ وَمَاذَا عَلَّمْتَهُ؟ وَأَنَّهُ مَسْئُولٌ عَنْ بِرِّكَ وَطَوَاعِيَتِهِ لَكَ” (رواه البيهقي/৫০৯৮)

-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি তোমার সন্তানকে আদব শিক্ষা দাও। কেননা তোমাকে তোমার সন্তানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি তাকে কী কী আদব ও কী কী ইলিম শিখিয়েছো? আর তোমার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করা হবে তোমার সাথে সদ্ব্যবহার করা ও তোমার আনুগত্যের ব্যাপারে। (বাইহাকী/৫০৯৮)
সন্তানের হকগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা:
১। সন্তানের জন্মের পূর্বে মা-বাবার উপর তাঁর অধিকার ২। সন্তানের জন্মের পর মা-বাবার উপর তাঁর অধিকার

সন্তানের জন্মের পূর্বে মা-বাবার উপর তাঁর অধিকার
১। মা-বাবা নিজেকে সৎ ও পবিত্র রাখা
প্রত্যেক মানুষেরই উচিত নিজের সন্তানের কল্যাণের জন্য হলেও নিজেকে সৎ ও পবিত্র রাখা। আর এটা সন্তানের একটি হক। আর এর ফলে সন্তানেরাও উপকৃত হয়। পবিত্র কুরআনে হযরত মূসা (আ.) ও হযরত খাদীর (আ.) এর প্রসিদ্ধ ঘটনার একটি অংশ হলো যে, তাঁরা একটি গ্রামে গিয়েছিলেন এবং সেখানে খাবার চাইলে তাঁদের খাবার দেওয়া হয়নি তথা মেহমানদারী করা হয়নি, অথচ ঐ দুই ইয়াতিম বালকের সম্পদ যেন সুরক্ষিত থাকে সেজন্য তাঁরা দেয়াল ঠিক করে দিয়েছিলেন যার নিচে গুপ্তধন ছিল। আর এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا অর্থাৎ তাঁদের পূর্বপুরুষ সৎ ছিলেন। তাফসীরের কিতাবে এসেছে, এই আয়াতে ‘তাদের পিতা’ বলতে তাদের ‘সপ্তম পূর্বপুরুষ’ যিনি ছিলেন তাঁকে বুঝানো হয়েছে, যিনি নেককার ছিলেন। তাফসীরের কিতাবে এসেছে- “তাহলে মা-বাবা সৎ থাকলে তাদের পরবর্তী সপ্তম প্রজন্মও যে উপকৃত হতে পারে তা পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণিত। কেননা ইয়াতিম দুই বালকের বাবা ছিলেন তাদের সপ্তম পূর্বপুরুষ।” (তাফসীরে মুনীর)
২। নেককার স্বামী-স্ত্রী বাছাই করা
প্রত্যেক মানুষেরই উচিত বিবাহের সময় এই বিষয় খেয়াল রাখা যে, আমি যাকে বিয়ে করছি আল্লাহ চাইলে সে আমার সন্তানের মা বা বাবা হবে, সুতরাং আমার সন্তানের জন্য একজন ভালো মা বা বাবা হতে পারে এমন কাউকেই বিবাহ করব। যেমন- হযরত আবুল আসওয়াদ আদ দুওয়ালী তাঁর সন্তানদের বলতেন, (আমার সন্তানেরা শুনো) ‘আমি তোমাদের প্রতি শৈশব থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত তো ইহসান করেছিই এমনকি তোমাদের জন্মের পূর্বেও তোমাদের প্রতি ইহসান করেছি। সন্তানরা বলল, (বাবা) আমাদের জন্মের পূর্বে কীভাবে আমাদের প্রতি ইহসান করলেন? তিনি জবাবে বললেন, তোমাদের জন্য এমন মা বাছাই করেছি যার কারণে তোমাদেরকে কেউ কোনো দিন মন্দ বলার সুযোগ পাবে না।’
আর বিবাহের ক্ষেত্রে তো নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়েই রেখেছেন, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تُنْكَحُ المَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ، تَرِبَتْ يَدَاكَ (متفق عليه)

-চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়। তার সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ¦ীনদারীতাকেই প্রাধান্য দিবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। (বুখারী, হাদীস-৫০৯০; মুসলিম, হাদীস-১৪৬৬)
হাদীসে নারীকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে তার চারটি বৈশিষ্ট্য দেখতে বলা হয়েছে। যথা- ধন-সম্পদ, বংশীয় মর্যাদা (সামাজিক মর্যাদা), সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা। তবে ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়টি ছেলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৩। সুন্নাহ অনুসরণ করে স্বামী-স্ত্রী একত্রিত হওয়া
সুন্নাহ অনুসরণ না করে যখন স্বামী-স্ত্রী একত্রিত হন আর সেই মিলনে যদি সন্তান হয় তাহলে শয়তান সেই সন্তানের ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে। তাই মা-বাবার উচিত সন্তানের কল্যাণের জন্য সুন্নাহ অনুসরণ করা। যেমন হাদীসে এসেছে, হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَمَا إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ، وَقَالَ: بِسْمِ اللهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَرُزِقَا وَلَدًا لَمْ يَضُرَّهُ الشَّيْطَانُ. (رواه البخاري/৩২৭১)

-তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর কাছে আসে এবং বলে, “বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাজাকতানা” আর সেই মিলনে যদি তাঁদেরকে সন্তান দেওয়া হয়, তাহলে শয়তান ঐ সন্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী, হাদীস-৩২৭১)
৪। আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য দুআ করা
সন্তানের জন্মের পূর্ব থেকেই মা-বাবার উচিত নেক সন্তানের জন্য দুআ করা। যেমন- আমরা কুরআনে কারীম থেকে এখানে দুইটি দুআ উল্লেখ করছি।

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا (الفرقان : ৭৪)

-হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে চোখ জুড়ানো জীবনসঙ্গী এবং সন্তানাদী দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দিন। (সূরা ফুরকান, আয়াত-৭৪)

رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ (آل عمران : ৩৮)

-হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনার পক্ষ থেকে নেককার সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি দুআ শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩৮)
৫। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সন্তানের হক
সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন মায়ের উচিত নিজেকে সবসময় ভালো কাজে নিয়োজিত রাখা এবং শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি নযর রাখা। মায়ের গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় মায়ের কার্যকলাপের প্রভাব সন্তানের উপর হয়ে থাকে, তাই মা ঐ সময় সন্তানের কল্যাণের জন্য নিজেকে ভালো আমলে নিয়োজিত রাখা উচিত।

সন্তানের জন্মের পর মা-বাবার উপর তাঁর অধিকার
১। সন্তানের ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া
সন্তান জন্মের পর তার ডান কানে আযান দেওয়া ও বাম কানে ইকামত দেওয়া সুন্নাত। হাদীসে এসেছে,
হযরত আবূ রাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ফাতিমা (রা.) হাসান (রা.) কে জন্ম দিলেন তখন আমি রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি যে, তিনি হাসান (রা.) এর কানে সালাতের আযানের মতো আযান দিলেন। (তিরমিযী, হাদীস-১৫১৪)
নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার কোনো সন্তান জন্ম নিল অতঃপর তার ডান কানে আযান দিল এবং বাম কানে ইকামত দিল তাহলে তার থেকে উম্মুস সাবিয়্যাতকে (খারাপ জিন/শয়তান) দূরে রাখা হয়। (শুআবুল ঈমান, হাদীস-৮২৫৪)
২। সন্তানের জন্য তাহনীক ও দুআর ব্যবস্থা করা
সন্তানের জন্মের পর তার জন্য তাহনীক করা ও দুআ করা সুন্নাত। তাহনীক হলো মিষ্টি জাতীয় কোন কিছু চিবিয়ে সন্তানের মুখে দেওয়া। এক্ষেত্রে উত্তম হলো খেজুর চিবিয়ে দেওয়া। আর খেজুর না পেলে মিষ্টি জাতীয় কিছু সন্তানের মুখে দেওয়া। যেমন হাদীসে এসেছে,
হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (সদ্যোজাত) শিশুদের নিয়ে আসা হতো, আর তিনি তাঁদের জন্য বরকতের দুআ করতেন এবং তাঁদেরকে তাহনীক করতেন। (মুসলিম, হাদীস-১০১)
হযরত আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার এক পুত্র সন্তান জন্ম নিল, আমি তাঁকে নিয়ে নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। আর তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহীম। অতঃপর তিনি একটি খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন আর তার জন্য বরকতের দুআ করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। (বুখারী, হাদীস-৫৪৬৭)
৩। সন্তানের জন্য সুন্দর নাম বাছাই করা
সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখা এটা হলো সন্তানের অন্যতম অধিকার। হাদীসে এসেছে, হযরত আবূ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ، وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ. (رواه أبو داود)

-কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও তোমাদের বাবার নাম ধরে ডাকা হবে। অতএব তোমরা তোমাদের নামগুলোকে সুন্দর করে রাখ। (আবূ দাউদ, হাদীস-৪৯৪৮)
হযরত ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللهِ عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ. (رواه مسلم)

-নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (মুসলিম, হাদীস-২১৩২)
রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا سَمَّيْتُمْ فَعَبِّدُوا. (المعجم الكبير للطبراني)

-যখন তোমরা নাম রাখবে তখন আবদযুক্ত করে নাম রাখ। (অর্থাৎ আল্লাহর নামের সাথে আবদ যুক্ত করে নাম রাখ। যেমন আব্দুর রহীম, আব্দুল মালিক ইত্যাদি)। (তাবারানী, হাদীস-৩৮৩)
৪। আকীকা করা
সন্তানের জন্মের ৭ম বা ১৪ তম বা ২১ তম দিনে ছেলে হলে দুইটি বকরি আর মেয়ে হলে একটি বকরি আল্লাহর নামে যবেহ করে সন্তানের মাথার চুল মুন্ডন করাকে আকীকা বলে। যাদের সামর্থ আছে তাদের উচিত সন্তানের কল্যাণের জন্য আকীকা করা। কেননা আকীকার কারণে সন্তানকে আল্লাহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন এবং এতে করে সন্তান লাভের পর মা-বাবার পক্ষ থেকে শুকরিয়ারও বহি:প্রকাশ হয়। আকীকা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

وَعَن عَائِشَة ্রأن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمرهم عن الغلام شاتان مكافئتان، وعن الجارية شاة (رواه الترمذي/১৫১৩)

-হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আদেশ করেছেন ছেলের পক্ষ থেকে একই ধরনের দুইটি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকীকা করতে। (তিরমিযী, হাদীস-১৫১৩)
৫। সন্তানের মাথার চুল মুন্ডন করা ও চুলের ওযন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করা

عن سمرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ্রالغلام مرتهن بعقيقته يذبح عنه يوم السابع، ويسمى، ويحلق رأسه (رواه النرمذي)

-হযরত সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল শিশুই তার আকীকার সাথে বন্ধক (দায়বদ্ধ) অবস্থায় থাকে। জন্মগ্রহণ করার সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে যবেহ করতে হবে, তার নাম রাখতে হবে এবং তার মাথা ন্যাড়া করতে হবে। (তিরমিযী, হাদীস-১৫২২)

عن علي بن أبي طالب قال: عق رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الحسن بشاة، وقال: ্রيا فاطمة، احلقي رأسه، وتصدقي بزنة شعره فضة، قال: فوزنته فكان وزنه درهما أو بعض درهم (رواه الترمذي/১৫১৯)

-হযরত আলী ইবন আবী তালিব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসানের আকীকা করলেন এবং বললেন, হে ফাতিমা, তার মাথা ন্যাড়া করে দাও এবং তার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য দান কর। তদানুযায়ী আমি তার চুল ওযন করলাম আর ইহার ওযন এক দিরহাম বা তার কাছাকাছি ছিল। (তিরমিযী, হাদীস-১৫১৯)
৬। দুধ পান করানো
সন্তানের জন্মের পর তাকে দুই বছর দুধ পান করানোর ব্যবস্থা করা মা-বাবার কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ ……إلخ (سورة البقرة : ২৩৩)

-আর মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৩)
৭। আদর করা
সন্তানকে আদর-স্নেহ লালন-পালন করাও মা-বাবার অন্যতম কর্তব্য। হাদীসে এসেছে,
হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবন আলীকে চুম্বন করলেন। ঐ সময় তাঁর নিকট আকরা বিন হাবিস তামীমী (রা.) বসা ছিলেন। তখন আকরা বললেন, আমারতো দশ সন্তান আছে অথচ আমি তাঁদের কখনো চুম্বন করিনি। তখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে দয়া করে না তাকে দয়া করা হয় না। (বুখারী, হাদীস-৫৯৯৭)
৮। সন্তানের জন্য বদদুআ না করা
সন্তানের কোনো আচরণে মা-বাবা রাগ করে বদদুআ করা উচিত নয়, কারণ এতে সন্তান চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ثلاث دعوات مستجابات لا شك فيهن: دعوة المظلوم، ودعوة المسافر، ودعوة الوالد على ولده. (رواه الترمذي/১৯০৫)

-তিনজনের দুআ সন্দেহাতীতভাবে কবূল হয়: (১) মাযলুমের দুআ (২) মুসাফিরের দুআ (৩) সন্তানের জন্য মাতা-পিতার বদদুআ। (তিরমিযী, হাদীস-১৯০৫)
৯। সন্তানকে আদব ও জ্ঞান শেখানোর ব্যবস্থা করা
সন্তানের যতগুলো হক রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাকে ইসলামের মৌলিক আদব ও ইলম শিক্ষা দেওয়া। আর এই শিক্ষাদানের বিষয়টি সাদাকা করার চেয়েও ফদীলতপূর্ণ।
হযরত জাবির বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে আদব শিক্ষা দেওয়া প্রতিদিন মিসকীনদের অর্ধ ‘সা’ দান করার চেয়ে উত্তম। (তাবারানী, হাদীস-২০৩২)
হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মা-বাবার হক কী কী আমরা জানি। তবে সন্তানের হক কী কী? তখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (সন্তানের হক হলো) তার সুন্দর নাম রাখা এবং তাকে আদব শিক্ষা দেওয়া। (শুআবুল ঈমান, হাদীস-৮২৯১)
রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে ছোটদের শিক্ষা দিতেন তা নিম্নোক্ত হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, হে বালক, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কিছু বিষয় শিক্ষা দিচ্ছি (আর তা হলো), তুমি আল্লাহ তাআলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে তাহলে তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে তাহলে তুমি তাঁকে কাছে পাবে। তোমার কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহর কাছে চাও। সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহর কাছেই করো। জেনে রাখো, যদি জাতির সকল লোকই তোমার কোনো উপকার করতে চায় তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। যদি জাতির সকল লোকই তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায় তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। (তিরমিযী, হাদীস-২৫১৬)
১০। নামায শিক্ষা দান
সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নামায আদায়ে অভ্যস্ত করা মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হযরত আমর বিন শুয়াইব তিনি তার বাবা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাযের শিক্ষা দাও এবং দশ বছর বয়সে এর জন্য প্রহার করবে (যদি নামায না পড়ে) এবং তোমাদের সন্তানদের বিছানা পৃথক করে দিবে। (আবূ দাউদ, হাদীস-৪৯৫)
রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তাঁর নাতনী উমামা বিনতে যাইনাব (রা.) কে নিয়ে নামায পড়তেন, হযরত আবূ কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়ে যাইনাব ও আবুল আস বিন রবির ঔরসজাত সন্তান উমামা বিনতে যাইনাব (রা.) কে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে রেখে দিতেন। আর যখন দাঁড়াতেন তাকে কাঁধে তুলে নিতেন। (বুখারী, হাদীস-৫১৬)
এমনিভাবে সন্তানকে দ্বীনের সঠিক আকীদা ও আমলের শিক্ষা দেওয়া বা এর ব্যবস্থা করা মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
১১। বিবাহের ব্যবস্থা করা
সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার বিবাহের ব্যবস্থা করে দেওয়াও মা-বাবার দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
হযরত আবূ সাঈদ (রা.) ও ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার সন্তান জন্ম নিল সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে ও তাকে আদব শিক্ষা দেয়। অতঃপর যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন যেন তাকে বিয়ে করিয়ে দেয়। যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে না করিয়ে দেয় আর সে যদি গুনাহ করে তাহলে তার গুনাহ বাবার উপর বর্তাবে। (বাইহাকী, হাদীস-৮২৯৯)
১২। সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা
একাধিক সন্তান হলে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা মা-বাবার জন্য আবশ্যক।
হযরত নুমান বিন বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে আদল (সমতা) বজায় রাখো, তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে আদল (সমতা) বজায় রাখো। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস-১৮৪২০)
হযরত নুমান বিন বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদীস, তিনি বলেন, তার বাবা তাঁকে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এলেন এবং বললেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ), আমি আমার এই ছেলেকে আমার একটি গোলাম দান করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি তোমার প্রত্যেক ছেলেকে এই রকম দান করেছ ? তিনি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার দান ফিরিয়ে নাও। মুসলিমের বর্ণনায় আছে, আল্লাহকে ভয় করো, সন্তানদের মধ্যে আদল (সমতা) বজায় রাখো। অতঃপর আমার বাবা ঐ সাদাকা ফিরিয়ে নিলেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আপনার অনুগত সন্তান চান তাহলে তাঁর দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। নিজের সন্তানকে শরীআত নির্দেশিত পন্থায় গড়ে তুলুন। ইসলাম সন্তানের যে অধিকার দিয়েছে তা যথাযথভাবে আগে নিজে আদায় করুন তাহলে সন্তান আপনার অনুগত হবেই ইন শা আল্লাহ।

ফেইসবুকে আমরা...