তালেবানের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দীর্ঘ বিশ বছরের আফগান যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের এই শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গত দুইশ বছরে কাবুলে ব্রিটিশ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পর তৃতীয় কোন পরাশক্তির পরাজয় ঘটল। পরাজয় যে শুধু মার্কিন বাহিনীর হয়েছে তা নয়, পরাজিত হয়েছে গোটা পশ্চিমা বিশ্বের সম্মিলিত বাহিনী ন্যাটো, পরাজিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতও। আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফেরাতে তালেবান কতটুকু সফল হবে, তাদের সরকার কতটা মানবিক হবে, আফগানিস্তান কতটা কল্যাণরাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারবে এসব প্রশ্ন এখন সবার মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আফগানিস্তানে একটি সুন্দর আগামী নিশ্চিত একথা কেউই আত্মবিশ্বাসের সাথে দাবি করবেন বলে মনে হয় না। আমিও নিশ্চিত নই সামনের দিনগুলো কেমন হবে। তবে ততোটা চিন্তিতও নই যতটা ভয়াবহতার আশঙ্কা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে।
যেসব আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর আমাদের সামনে আসে অথবা যেসব মিডিয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো খবর প্রচার করে তার প্রায় সবগুলোই আফগানিস্তান যুদ্ধের পরাজিত শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন। হোক তা বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন কিবা আনন্দবাজার। পরাজিত শক্তির সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মিডিয়া। যারা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে আফগানিস্তানে গত বিশ বছরের মার্কিন আগ্রাসন আফগান জনগণের জন্য কল্যাণকর ছিল এবং বর্তমান তালেবানের উত্থানে আফগানদেরই ক্ষতি। দেশি বিদেশি মিডিয়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত অনেকেই ভাবছেন হয়তো এখানে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আমেরিকান সেনার উপস্থিতিই ভালো ছিল। আসলেই কি তাই? তালেবানরা কাবুল দখলের পর প্রত্যাশিতভাবেই ঘোষণা করেছে তারা আফগানিস্তানে শরীআহ আইন বাস্তবায়ন করতে চায়। আর এ নিয়েই মায়াকান্না শুরু হয়েছে পরাজিত শক্তি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহলে। তারা চিন্তিত তালেবানের জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, চুরির জন্য হাত কাটা, নারী স্বাধীনতা, মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে। আফগান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের শঙ্কা কতটা যৌক্তিক তা এ নিবন্ধে আলোচনা করব পশ্চিমা মিডিয়ার আলোকে।
তালেবানের বিষয়ে স্বদেশে অথবা বিদেশে সব চেয়ে উচ্চকিত নারী অধিকার কর্মীরা বা নারীবাদীরা। তাদের দাবি আফগানিস্তান থেকে মার্কিনসেনা প্রত্যাহার এবং তালেবানের উত্থান সেদেশে নারীদের অধিকার খর্ব করবে। একথা সত্য যে তথাকথিত নারীবাদীরা যেসব অধিকারের অসংলগ্ন স্বপ্ন দেখেন তা আফগানিস্তান তো নয়ই কোন সভ্য মুসলিম দেশেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তালেবান নারীদের কিভাবে মূল্যায়ন করে এর প্রমাণ পাওয়া যায় ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সানডে এক্সপ্রেস এর নারী সাংবাদিক ইভন রিডলির ইসলাম গ্রহণ থেকে। তিনি সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২০০১ সালে তালেবানের হাতে এগারো দিন বন্দি ছিলেন। এ সময়ে তার সাথে তালেবানের আচরণ, পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ সব কিছুই বিস্তারিতভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখা ‘ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান’ বইয়ে। অন্যদিকে আমাদের মিডিয়া এবং নারীবাদীরা আফগান নারীদের অধিকার রক্ষায় যে মার্কিন বাহিনীর উপর আস্থা রাখে তারা নারী বন্দিদের সাথে কী আচরণ করে এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের হাতে বন্দি মুসলিম বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকীর চিঠি থেকে, প্রমাণ পাওয়া যায় বাগরাম কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত যারা আফিয়া সিদ্দিকীর আর্তচিৎকার শুনেছেন তাদের থেকে।১ আফিয়া সিদ্দিকীর সাথে মার্কিন পশুগুলো কী করেছে তা আমি এখানে লিখব না, লেখার ভাষা আমার নেই, লেখার সাহস আমার নেই।
নারী বন্দিদের বিষয় না হয় বাদই দেওয়া গেলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস২ এর ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন নারী সেনাদের প্রতি পুরুষদের যৌন হয়রানির ঘটনা শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী সহকর্মীদের প্রতি যৌন হয়রানির এই হিসাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় বরং ন্যাটো জোটের সবগুলো বাহিনীতেই লক্ষণীয়। যাদের হাতে নিজের নারী সহকর্মীরাই নিরাপদ নয় তারা করবে নারী অধিকার রক্ষা! যাদের নিজেদের বাহিনীগুলোতেও নারীরা নিরাপদ নয় তারা চিন্তিত আফগান নারীদের নিয়ে! অদ্ভুত! এই যে তথাকথিত সভ্য বাহিনীতেই নারীর প্রতি সহিংসতা, আমাদের নারীবাদীরা কি এসব বাহিনীকে ভয় পান? অবশ্যই না। কারণ কোন মনীষী না বললেও এটাই সত্য ‘ভয় থেকে ডলারের শক্তি অনেক বেশি।’ সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হলো আফগান নারীদের অধিকার নিয়ে ভারতীয় সংবাদ পাঠকদের বিকট কণ্ঠের আস্ফালন। তারা ভুলে গেলেও আমরা ভুলিনি সারা দুনিয়ায় আলোড়ন তোলা চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা। চলন্ত বাসে নির্ভয়াদের গণধর্ষণের স্বীকার হতে হয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে, তালেবান নিয়ন্ত্রিত কোন শহরে নয়। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী নারীদের বসবাসের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ ভারত, শীর্ষ দশে আছে যুক্তরাষ্ট্রও। সুতরাং এসব দেশ এবং এসব দেশের থেকে আমদানিকৃত নারীবাদে বিশ্বাসীরা নারী-স্বাধীনতা বলতে আসলে কী চায় তা বুঝাই যাচ্ছে।
এবার আসা যাক তালেবানের আফগানিস্তানে কর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বিষয়ে। উপরে উল্লেখ করা তথ্য থেকে তথাকথিত সভ্য ও আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বে নারী শিক্ষা ও নারীর কর্মসংস্থানের নামে নারীদের অবমাননা করার প্রবণতা সহজেই অনুমেয়। নারীর এমন কর্মসংস্থান মোটেও কাম্য নয়, যেখানে নারীরা নিজের সহকর্মীর ও আশেপাশের সকল পুরুষের লোভের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এবং এর কোন কার্যকর প্রতিরোধ তৈরি করা হয়না। অন্যদিকে নারীদের কাজের এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও সুস্পষ্ট মানবিকতা বিবর্জিত কাজ। এ অবস্থায় যেকোন নীতিবান সরকারের উচিত হবে নারীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, পরিপূর্ণ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। দুঃখজনক হলেও সত্য কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তায় শতভাগ সফল বলে কোন রাষ্ট্র দাবি করতে পারবে না। আমরা অপেক্ষায় থাকব তালেবান এই সমস্যার কেমন সমাধান নিয়ে আসে দেখার জন্য। ইসলামী শরীআতের আলোকে দেশ চালানোর ঘোষণা দেওয়া তালেবান যদি সত্যি সত্যি ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত নারী অধিকার নিশ্চিত করে তবে তা নিঃসন্দেহে নারীর জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিতে রোল মডেল হবে।
মৃত্যুদণ্ড ও হাত কাটার শাস্তি বিষয়ে প্রথমেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে পৃথিবীর সর্বত্র আইন সমান নয়। জাতিগত মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ন্যায়-অন্যায় বোধের ভিত্তিতেই দেশে দেশে আইন তৈরি হয়। এজন্য যে অপরাধে উপমহাদেশে শাস্তির বিধান রয়েছে, ইউরোপে তা কোন অপরাধ নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে সম্প্রতি আলোচিত একটি মাদক মামলার কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশে মাদক ব্যবহার ও কেনা-বেচার জন্য যেমন শাস্তি হয় ইউরোপে ঠিক তেমন হবে না। কারণ আমাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ আলাদা। একইভাবে একটি দেশ কী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিবে, কিভাবে দিবে এ আইন নিজেদের দেশীয় সংস্কৃতির প্রভাবেই তৈরি হবে। যদি তালেবান এমন কোন কারণে মৃত্যুদণ্ড বিধান করে যা দেশের অধিকাংশ মানুষ মানতে নারাজ সেক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তর থেকেই একটা গণ আন্দোলনের সূচনা হবে, সরকার পতন হবে। এরকম গণ আন্দোলনের মাধ্যমে মহা পরাক্রমশালী রাষ্ট্রনায়কদের পতনের ইতিহাস অহরহ পাওয়া যায়। সুতরাং মৃত্যুদণ্ড কিবা চুরির শাস্তি আটকে দেওয়ার জন্য আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোন মোড়লের উপস্থিতির সাফাই গাওয়া অমূলক। আফগান জনগন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটোকে ডেকে নেয়নি তাদের আভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য।
চুরির জন্য হাত কাটা নিয়ে যেসব পশ্চিমা মিডিয়া অতিরিক্ত মায়াকান্না করছে তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই দ্য গার্ডিয়ান৪ পত্রিকার ২০১০ সালের একটি রিপোর্ট। যেখানে বলা হয়েছে মার্কিন সেনা কর্তৃক কোন কারণ বা যুদ্ধের উস্কানি ছাড়াই শুধু আনন্দের জন্য আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের হত্যা এবং হত্যা শেষে বিজয় চিহ্ন হিসেবে তাদের আঙ্গুল কেটে নিয়ে আসার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আফগান জনগণের হাত কাটা যাওয়ার কষ্টে পশ্চিমাদের মায়াকান্নায় কেমন করে প্রভাবিত হই যাদের নিজেদের সৈন্যরা নিছক আনন্দের জন্য নিরীহ, নিরস্ত্র আফগানদের হত্যা করত এবং আঙ্গুল কেটে নিয়ে আসত!
আফগানিস্তানে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা নিয়েও অনেকে চিন্তিত। এ বিষয়ে প্রথমেই যে প্রশ্ন সামনে আসে তা হলো সর্বশেষ কবে আফগানিস্তানে পরিপূর্ণ মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল? গত বিশ বছরে কি এর কোন অস্তিত্ব ছিল? সহজ উত্তর এসবের কোন অস্তিত্ব অন্তত গত বিশ বছরে আফগানিস্তানে ছিল না। কেন ছিলনা তা ইতোমধ্যে উল্লেখিত তথ্য থেকেই বুঝা যায়। তবু আরো একটি যুদ্ধাপরাধের তথ্য দেই। বিবিসি নিউজের৫ ১৯ নভেম্বর ২০২০ এর তথ্য মতে আফগানিস্তানে মোতায়েন অস্ট্রেলিয়ান সৈন্য কর্তৃক কোন কারণ ছাড়াই ৩৯ জন নিরস্ত্র আফগান নাগরিককে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেখানে সৈন্যরা যুদ্ধরত ছিল এমন কোন প্রমাণ নেই। অর্থাৎ এগুলো ঠাণ্ডা মাথার খুন ছিলো। মার্কিন এবং ন্যাটো সৈন্যদের দ্বারা এরকম শত সহস্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লাখো নিরীহ-নিরস্ত্র আফগান। শুধু আফগানিস্তানে নয় নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতে নিত্যকার ঘটনা। কৃষ্ণাঙ্গ রেড-ইন্ডিয়ানদের রক্তের উপর দাঁড়ানো আমেরিকা আজো পারেনি বর্ণবাদের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত হতে। তাই আমরা জর্জ ফ্লয়েড এর মত শিক্ষিত কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে আমেরিকান পুলিশের হাটুর নিচে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে ধুকে ধুকে মরতে দেখি। ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক কাশ্মিরকে পৃথিবীর বৃহত্তম জিন্দানখানায় রূপদান, বাবরী মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে মন্দির নির্মাণ, সংখ্যালঘু মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন ও গোরক্ষার নামে মানুষ হত্যার ইতিহাস সবারই জানা।
উপরে উল্লেখ করা প্রায় সবগুলো রেফারেন্সই পশ্চিমা মিডিয়া থেকে নেওয়া যারা আসলে আফগান যুদ্ধের একটি পক্ষ। যখন যুদ্ধরত একটা বাহিনীর নিজেদের মিডিয়া মানবাধিকার, নারী অধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের কথা স্বীকার করে খবর ছাপায় তখন যুদ্ধক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থা কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমান করা যায়। গত বিশ বছরে মানবাধিকারের এসব সুস্পষ্ট লঙ্ঘন দেখেও সবাই চুপ ছিলো। চুপ ছিল বললে ভুল হবে, সবাই সরব ছিল আফগানিস্তানের মাটির সন্তান তালেবানকে সন্ত্রাসী অর্থে জঙ্গি আখ্যা দিতে। এতো কিছুর পরও যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী এবং আফগান জনগণের সমর্থনহীন পুতুল সরকারের পতন নিশ্চিত দেখে এখন ভবিষ্যৎ আফগানিস্তানে মানবাধিকার আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার ভান করা চূড়ান্ত সীমার ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।
সবশেষে আলোচনা করব তালেবানের আয়ের উৎস নিয়ে। অনেকে দাবি করেন গত বিশ বছরে এরকম একটি পরাশক্তির বিপক্ষে প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকতে আফিম ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় তালেবানকে অনেক বেশি সহায়তা করে। এখন তারা সন্দেহ করছেন আফিম ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তালেবান রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তানে মাদক ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে পারে। তালেবান মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত এ দাবি যুদ্ধরত এক পক্ষ তথা পশ্চিমাদের। তা আদৌ সত্য কি না এ প্রশ্নের অবকাশ রাখে। প্রয়াত অধ্যাপক তারেক শামসুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে-তালেবানের মাত্র পাঁচ বছরের (১৯৯৬-২০০১) শাসনামলে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল ৭৫ শতাংশ।৬ যারা শাসনক্ষমতায় থাকাবস্থায় এমন দ্রুত আফিম চাষ হ্রাস করেছে তারা পরে মাদক ব্যবসা করেছে, তারা আবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিলে আফিমের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে এ দাবি যুক্তিযুক্ত নয়৷ উপরন্তু তালেবান ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে তারা সব রকমের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করবে।
আমরা জানি আফগান যুদ্ধে হেরে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিলিয়ন ডলার আর ভারতের বিলিয়ন ডলার গচ্ছা গেছে। তালেবানের প্রতি তাদের প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর চেষ্টা খুবই স্বাভাবিক। তাদের জন্য খারাপ লাগে যে গত বিশ বছরেও তারা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর জন্য তালেবানের এমন এমন কোন দুর্বলতা খোঁজে বের করতে পারেনি যেগুলোতে তারা নিজেরা অন্তত শক্তিশালী। যদি বের করতে পারত তবে নারী অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আবার মিডিয়া গরম করত না যেগুলোতে তাদের নিজেদের অবস্থাই তথৈবচ। মোট কথা, পরাজিত শক্তির প্রোপাগাণ্ডা সম্পর্কে সবারই সচেতন হওয়া উচিত। বিশেষ করে মুসলমানদের এসব ফাঁকা বুলি সম্পর্কে একটু বেশিই সচেতন হওয়া উচিত। সবশেষে প্রত্যাশা এটাই-তালেবানের মাঝে আগের তুলনায় আরো বেশি সহনশীলতা আসুক, তারা দেশের সকল জনগনকে গুরুত্ব দিক, আফগানিস্তানে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হোক। আরো প্রত্যাশা, দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদের পতন হোক, আমাদের মত উন্নয়নশীল অথবা অনুন্নত রাষ্ট্রাগুলোতে ডলার খেকো বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়ার পতন হোক।
তালেবানের দখল পরবর্তী কাবুল বিমানবন্দরের দৃশ্যচিত্র থেকে একটা শিক্ষণীয় বার্তা উল্লেখ করে শেষ করছি- পালানোর রাস্তা নিশ্চিত না করে দেশি ও বিদেশি শক্তির মধ্যে বিবাদে বিদেশি শক্তির তাবেদারি করা অত্যন্ত বোকামি। যদি বিদেশি শক্তি পরাজিত হয় তবে তারা কোন না কোন ভাবে পালিয়ে যাবেই, মাঝখান দিয়ে আপনার তাবেদারির স্মৃতি আপনাকে এতোটা ভীত করবে যে বিমানের পাখায় চড়ে হলেও দেশ থেকে পালাতে আপনি উদ্যোগী হবেন।
১. Al jazeera, Injustice In the Age of Obama
২. New york Times (Online), ‘This Is Unacceptable.’ Military Reports a surge of Sexual Assaults in the Rank
৩. Reuters (Online), Exclusive: India Most Dangerous Country for Woman
৪. The Guardian (Online), US Soldiers killed Afghan Civilians for Sport
৫. BBC News (Online), Australian ‘War Crimes’: Ellit Troops Killed Afghan Civilians
৬. বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর, পৃষ্ঠা-২১৩