1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
কারবালার ঘটনাপ্রবাহ ও হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত
সায়্যিদ মুফতী মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান (র.)
  • ১৪ আগস্ট, ২০২১

ম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার বেটা হুসাইন (রা.) ত্বিফ ভূমিতে (কারবালা) নিহত হবে এবং আমার পরে আমার উম্মত ফিতনায় নিক্ষিপ্ত হবে। (জামউল ফাওয়াইদ)
মোটকথা, এটিই ছিল আল্লাহর ফয়সালা। সম্মানিত ইমাম ৬০ হিজরীর ৮ই যিলহজ্জ তারিখে তাঁর পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে মক্কা থেকে কুফার দিকে যাত্রা করলেন। পথিমধ্যে ইরাকের কবি ফারাযদাকের সাথে সাক্ষাত হলে তিনি বললেন, ইরাকের অধিবাসীদের মন আপনার পক্ষে এবং তরবারি বনী উমাইয়াদের পক্ষে আর ফয়সালা আল্লাহর হাতে।
ইমাম বললেন, আল্লাহর ফয়সালা যদি আমাদের পছন্দ মাফিক হয় তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া। আর মৃত্যু যদি আমার আকাঙ্খার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাতেও ক্ষতি নেই। কারণ, আমাদের নিয়ত অত্যন্ত পবিত্র।
তিনি সম্মুখে এগিয়ে চললেন। পথিমধ্যে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মদীনা থেকে আগত তাঁর চাচাত ভাই আবদুল্লাহ ইবন জাফরের সাথে সাক্ষাত হলো। মদীনার গভর্নর কর্তৃক প্রদত্ত নিরাপত্তা সনদও তার সাথে ছিল। তিনি তাঁকে মদীনায় ফিরে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলেন। কিন্তু জবাবে ইমাম বললেন, আমি স্বপ্নে নানাজীর সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি আমাকে একটি কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি অবশ্যই তা করবো। আর কাজটি কী এ সম্পর্কে মৃত্যুর পূর্বে আমি কাউকে কিছু বলতে পারি না। (ইবন আসীর, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৭)
সুবহানাল্লাহ! প্রেম ও ভালোবাসার জগতের নিয়ম-কানুনই ভিন্ন। সেখানে বাহ্যিক কার্যকারণ মোটেই বিবেচ্য নয়।

সায়্যিদুনা হুসাইন (রা.) সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন। সা’লাবিয়া নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি মুসলিম ইবন আকীলের (রা.) শাহাদাতের খবর পেলেন। বন্ধু-বান্ধব বললেন, আপনাকে আল্লাহর নামের কসম দিয়ে বলছি, আপনি ফিরে চলুন। এখন কুফায় যাওয়া আর যুক্তিসংগত নয়। কিন্তু মুসলিম ইবন আকীলের ভাই ও সন্তানরা ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালেন। ফলে ইমামকে সামনে অগ্রসর হতে হলো। যি জাশাম নামক স্থানে উপনীত হলে হুর ইবন ইয়াযীদ তামীমী তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে সৈন্যদের নিয়ে সেখানে পৌঁছলো এবং ইমামের সামনে ছাউনি ফেলল। তখন ছিল যুহরের নামাযের সময়। ইমাম হুসাইন (রা.) জামাআতের সাথে যুহরের নামায পড়লেন। হুর ইবন ইয়াযীদও তার সৈন্যসহ জামাআতে শরীক হলো। নামায শেষে হুরের সৈন্যদলকে সম্বোধন করে ইমাম (রা.) বললেন, তোমরা আমাকে ডেকে এনেছো। তোমাদের সব পত্র আমার কাছে আছে। এখন যদি তোমরা আমাকে না চাও তাহলে আমি ফিরে যেতে প্রস্তুত আছি।
জবাবে হুর বলল, আমাদের এ মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যতক্ষণ না আমরা আপনাকে উবায়দুল্লাহ ইবন যিয়াদের হাতে তুলে দেব ততক্ষণ আমরা নিজেরাও ফিরে যাব না এবং আপনাকেও ফিরে যেতে দেব না। ফলে বাধ্য হয়ে ইমাম হুসাইন ও তাঁর মুষ্টিমেয় সঙ্গী-সাথীর কাফেলাকে হুরের সাথে রওয়ানা হতে হলো। পথিমধ্যে হুর এ মর্মে ইবন যিয়াদের পত্র পেল যে, ইমাম হুসাইন ও তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের এমন একটি স্থানে অবস্থান করাও যেখানে পানি সহজলভ্য নয়।

সুতরাং ৬১ হিজরীর ২রা মুহাররাম বৃহস্পতিবার দিন মহান ইমামকে (রা.) তাঁর সঙ্গী-সাথিসহ এমন এক স্থানে থামানো হয় যা কারবালা নামে খ্যাত। এ স্থান সম্পর্কে হযরত জিবরাঈল (আ.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে অবহিত করেছিলেন- আপনি হুসনাইন (রা.) কে ভালোবাসেন। কিন্তু আপনার উম্মত তাঁকে এমন এক স্থানে হত্যা করবে যা কারবালা নামে সুপরিচিত। বর্ণনাকারী বলেন, ইমাম (রা.) কে সেখানে থামতে বলা হলে তিনি বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন, এটা প্রকৃতই কারব (কষ্ট) ও বালা (বিপদ) এর স্থান। (জামউল ফাওয়ায়েদ তাবারানীর বরাতে)
কারবালায় অবস্থানের দ্বিতীয় দিন يُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ এর সত্যতা প্রমাণ করে আমর ইবন সাদ চার হাজার সৈন্য নিয়ে ইবন যিয়াদের পক্ষ থেকে কারবালায় এসে পৌঁছে। ইবন যিয়াদ তাকে রাই ও দায়লামের গভর্নর নিয়োগ করেছিল এবং সে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। ইতোমধ্যে ইমাম হুসাইন (রা.) এর ব্যাপারটি সামনে আসে। ইবন যিয়াদ ইমামের মোকাবিলার জন্য প্রথমে আমর ইবন সা’দকে কারবালায় যাওয়ার নির্দেশ দান করে। সে অক্ষমতা প্রকাশ করলে ইবন যিয়াদ তাকে পদচ্যুত করার হুমকি দেয়। রাই এর গভর্নরীর লোভে ইবন সা’দ এভাবে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টিই খুইয়ে বসে এবং ইমাম হুসাইন (রা.) এর বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত হয়। যদিও সে সর্বদাই চেষ্টা করেছে যাতে ইমামের রক্তের দায়দায়িত্ব তার ওপরে না বর্তায়।
ইমাম (রা.) কেন এসেছেন আমর ইবন সা’দ দূত পাঠিয়ে তা জানতে চাইল। ইমাম হুসাইন (রা.) তাঁর আগমনের কারণ জানানোর সাথে সাথে একথাও জানিয়ে দিলেন যে, এখন কুফাবাসী যেহেতু আমাকে চাচ্ছে না, তাই আমি মদীনা ফিরে যেতে প্রস্তুত। তোমরা আমার নিকটাত্মীয়, আমাকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দাও। একথা শুনে আমর ইবন সা’দ খুশি হয়ে বলে, আল্লাহর শপথ! আমি নিজেও চাই যেন হুসাইন (রা.) এর রক্তে আমার হাত রঞ্জিত না হয়। সে ইবন যিয়াদকে একথা জানিয়ে দিলে ইবন যিয়াদ নির্দেশ পাঠায় যে, হুসাইন (রা.) এর নিকট থেকে প্রথমে ইয়াযীদের বাইআত গ্রহণ করো। তারপর অন্য কোনো বিষয় আমরা ভেবে দেখব। আর যদি সে বাইআত না করে তবে তার পানি বন্ধ করে দাও।
ইমাম হুসাইন (রা.) এভাবে ইয়াযীদের বাইআত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং ইবন যিয়াদের নির্দেশ মুতাবিক ৬১ হিজরীর ৭ই মুহাররামে ইমাম (রা.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফোরাত নদীতে পাঁচশ সৈন্যের পাহারা বসানো হয়। ইমাম (রা.) তাঁর ভাই বীরপুরুষ আব্বাস ইবন আলী (রা.) কে পানি আনতে নির্দেশ দেন। তিনি ত্রিশজন অশ্বারোহী ও ত্রিশজন মশকবাহী সাথে নিয়ে যান এবং জোর করে পানি নিয়ে আসেন।
যুদ্ধ যাতে না হয় সেজন্য ইবন সাদ শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালান। কিন্তু মুহাররামের ৯ তারিখে ইবন যিয়াদ শামার যিল জাওশানের মাধ্যমে ইবন সাদের নিকট কড়া ভাষায় লিখিত একটি পত্র পাঠান। তাতে লেখা হয়- হয় তুমি হুসাইনের বিরুদ্ধে লড়াই করো, নয় সরে দাঁড়াও। যুদ্ধ না করলে আমি তোমাকে পদচ্যুত করে তদস্থলে শামারকে গভর্নর নিয়োগ করছি। ইবন যিয়াদের পক্ষ থেকে এই হুমকির পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইবন সাদ ছয় হাজার সৈন্য নিয়ে অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত আহলে বাইতে নবুওয়াতের এই ক্ষুদ্র কাফেলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। তিনি সৈন্যদেরকে প্রস্তুতির আদেশ দেন। ইমাম হুসাইন (রা.) প্রস্তুতির এই খবর পেয়ে এক রাতের জন্য অবকাশ চান। ইবন সা’দ তাঁকে অবকাশ দান করেন। সারাদিন ভক্ত অনুরক্তদের সাথে পরামর্শ চলতে থাকে। ইমাম আহলে বাইতকে সবর ও শোকরের জন্য ওসীয়ত করেন। তারপর তিনি মহান রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। সারারাত ব্যাপি রবের কাছে প্রাণের আকুতি নিবেদনে ব্যস্ত থাকেন। তাঁর সঙ্গী-সাথীগণও সারারাত নামায ও ইস্তিগফার এবং বিনীত প্রার্থনায় কাটিয়ে দেন।

শাহাদাতের সকাল
অবশেষে আশুরার ঊষা দিগন্ত-বক্ষ বিদীর্ণ করে আত্মপ্রকাশ করলো এবং সূর্য রক্ত অশ্রুর মালা ছিন্ন করে উদিত হলো। সায়্যিদুনা হুসাইন (রা.) ফজরের নামায শেষে তাঁর বাহাত্তর জন জানকবুল সঙ্গী নিয়ে ময়দানে হাযির হলেন। দক্ষিণভাগে যুবাইর ইবন কাইসকে এবং বাঁ দিকে হাবীব ইবন মুহাযিরকে নিয়োগ করলেন এবং আব্বাস ইবন আলী (রা.) কে পতাকার দায়িত্ব প্রদান করলেন। ইমাম (রা.) নিজের অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করে দুআ করলেন এবং ইতমামে হুজ্জত বা শেষকথা বলার জন্য কুফাবাসীদেরকে নিম্নোক্তভাবে সম্বোধন করলেন-
হে জনগন! একটু থামো, আমার কথা শোন। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। যদি তোমরা তা মেনে নাও তবে তোমাদের চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। আর যদি না মান, সেটাও তোমাদের উপর নির্ভর করে। বিষয়টির সবদিক সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তোমাদের যা ইচ্ছা করবে। আমি গোটা বিষয়টাকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছি। হে জনগন! চিন্তা করে দেখ, আমি কে? আরো চিন্তা করে দেখো, আমাকে হত্যা করা এবং আমার অমর্যাদা করা তোমাদের জন্য জায়িয কি-না? আমি কি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতি নই? আমি কি তাঁর চাচাত ভাই আলী (রা.) এর পুত্র নই? সায়্যিদুশ শুহাদা হামযা (রা.) কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না? জাফর তাইয়ার শহীদ (রা.) কি আমার চাচা ছিলেন না? আমাদের দুই ভাই সম্পর্কে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ হাদীস নয় যে, হাসান ও হুসাইন (রা.) বেহেশতের যুবকদের নেতা?
শোন, তোমরা আমাকে ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আর কোনো দৌহিত্র পাবে না। তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও কেন? আমি কি তোমাদের কারো রক্তপাত ঘটিয়েছি? তোমাদের কারো অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছি? তোমাদের কাউকে কি আহত করেছি? এরপর তিনি কুফার কিছু সংখ্যক নেতার নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন এবং জিজ্ঞেস করতে থাকলেন, তোমরা কি আমাকে পত্র পাঠিয়ে ডেকে আননি? এতে সেই সমস্ত লোক নেতিবাচক জবাব দিয়ে দিলে তিনি বললেন, তোমরা অবশ্যই আমাকে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছো। এখন আমার আগমন যদি তোমাদের কাছে মনঃপুত না হয়ে থাকে তাহলে আমাকে আমার আশ্রয়স্থলে ফিরে যেতে দাও।
কুফাবাসীদের মধ্য থেকে একজন বলল, আপনি ইবন যিয়াদের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন না কেন? মহান ইমাম (রা.) জবাব দিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি নীচ প্রকৃতির মানুষদের মতো দুশমনের হাতে হাত দিতে পারি না এবং ক্রীতদাসদের মতো তাদের দাসত্ব মেনে নিতে পারি না। যারা কিয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে না সেইসব অহংকারীদের থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
কুফাবাসীদের ওপর ইমাম হুসাইন (রা.) এর এই বক্তৃতার কোনো প্রভাব পড়ল না। তবে হুর ইবন ইয়াযীদ তামীমী ধীরে ধীরে অশ্ব চালিয়ে এগিয়ে আসলেন এবং নিকটে আসার পর দ্রুত অশ্ব চালিয়ে অগ্রসর হয়ে আহলে বাইতের বাহিনীতে শামিল হয়ে গেলেন এবং ইমাম হুসাইনকে (রা.) বললেন, হে রাসূলের সন্তান, আমি সেই ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম আপনাকে বাধা দিয়েছে। আমার কওম এতটা দুর্ভাগা তা আমার জানা ছিল না। এখন আমি আপনার পদপ্রান্তে হাযির। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে আপনার প্রতি বন্ধুত্বের হক আদায় করব। আমার এ কাজ কি আমার পূর্বকৃত গুনাহর কাফফারা হিসেবে যথেষ্ট হবে?
হযরত ইমাম খুশি হয়ে বললেন, হে হুর, অবশ্যই হবে। দুনিয়াতে তোমার নাম হুর। আখিরাতেও তুমি দুযখের আযাব থেকে স্বাধীন ও মুক্ত থাকবে। হুর তার কওমকে উদ্দেশ্য করে নিম্নোক্ত ভাষায় বক্তব্য পেশ করল, হে আমার কওম, ইমাম হুসাইন (রা.) এর প্রস্তাব মেনে নিয়ে তাঁর প্রতি তরবারি উত্তোলনের অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করো, তা কি সম্ভব নয়?
আমর ইবন সাদ বললেন, আমি তো তা মানতে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু এখন বিষয়টি আমার ইখতিয়ারের বাইরে। এরপর কুফাবাসীদের পক্ষ থেকে একটি তীর নিক্ষেপ করা হলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
প্রথমে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। উভয় পক্ষ থেকে এক একজন লোক সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হতো। কিন্তু এভাবে কুফাবাসীরাই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। আবদুল্লাহ ইবন উমাইর কালবী যুবাইর ইবন খুদাইর, হুর ইবন ইয়াযীদ তামীমী এবং নাফে ইবন হিলাল তাদের প্রতিদ্বন্দীদেরকে গাজর মূলার মতো কাটতে থাকেন। এ অবস্থা দেখে শত্রু সৈন্যরা একযোগে আক্রমণ করে বসে এবং ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আহলুল বাইতের মুষ্টিমেয় জানবাজ বিপুল সংখ্যক কুফাবাসী সৈন্যকে পরাভূত করে ফেলে। হযরত হুসাইন (রা.) এর বাহিনীর বীর সৈনিকগণ যেদিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন সেদিকেই শত্রুর ব্যুহকে তছনছ করে দিচ্ছিলেন। কিন্তু দুই পক্ষের সংখ্যা শক্তির মধ্যে কোনো তুলনা করাই সম্ভব ছিল না। দুপুর হতে না হতেই ইমামের (রা.) সমস্ত সঙ্গী-সাথী তাঁর জন্য পতঙ্গের ন্যায় জীবন কুরবানী করলেন (রা.)।
এরপর পালা আসল আহলে বাইতের যুবকদের। আলী আকবর ইবন হুসাইন (রা.), কাসিম ইবন হুসাইন (রা.), আবূ বকর ইবন হাসান (রা.), আবদুল্লাহ ইবন মুসলিম (রা.), আদী ইবন আবদুল্লাহ ইবন জাফর (রা.), আবদুর রহমান ইবন আকীল (রা.), মুহাম্মাদ ইবন আকীল (রা.) প্রমুখ তাঁদের তরবারির ঝলক দেখিয়ে জান্নাতের যুবকদের নেতা হুসাইনের (রা.) জন্য জীবনের কুরবানী পেশ করলেন। তাঁদের মধ্যে শুধু হযরত ফাতিমা যাহরা (রা.) এর সন্তান ও নাতিই ছিলেন ষোল জন। শেষ পর্যন্ত হযরত ইমাম হুসাইনের পাশে তাঁর চার ভাই আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ (রা.), জাফর (রা.) এবং উসমান (রা.) ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকলেন না। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা সবাই প্রতিটি আঘাত বুক পেতে গ্রহণ করতে থাকলেন। কিন্তু শেষ অবধি তাঁরাও এক এক করে জান্নাতের পথে চির বিদায় গ্রহণ করলেন।
এবার রইলেন অসংখ্য জখমে ক্ষতবিক্ষত পিপাসায় কাতর ইমাম হুসাইন (রা.) একা। কিন্তু তাঁর বীরত্ব, উদ্দীপনা ও সাহসিকতায় কোনো ভাটা পড়েনি। তাঁর তরবারি যেদিকেই ঝলসে উঠছিল সেদিকেই শত্রুরা প্রাণভয়ে পালাচ্ছিল। অবশেষে তিনি অসংখ্য জখমে কাতর হয়ে মাটির ওপর বসে পড়লেন এবং দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন। কিন্তু শেরে খোদা আলী (রা.) এর আহত এই সন্তানের ওপর আক্রমণ করার দুঃসাহস কারো হলো না। নিজের দুর্ভাগ্যের ওপর তাঁর রক্তে শেষ মোহর অংকিত করা থেকে প্রত্যেকেই পাশ কাটিয়ে চলছিল। অবশেষে শামার চিৎকার করে বলল, এখন কিসের জন্য অপেক্ষা করছো, হত্যা করছ না কেন? হযরত ইমাম (রা.) তাঁর শুষ্ক ঠোঁঠে পানির পেয়ালা লাগিয়েছেন মাত্র, ঠিক সেই মুহূর্তে হুসাইন ইবন নুমাইর তাক করে তির নিক্ষেপ করে। তির তাঁর কণ্ঠে বিদ্ধ হয়। তিনি নদীর দিকে অগ্রসর হতে থাকলে শত্রুরা চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যারাআ ইবন শারীক তামীমী তরবারি দ্বারা আঘাত করে এবং সানান ইবন আনাস নাখঈ বর্শার আঘাতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তরবারি দিয়ে মাথা কেটে পবিত্র দেহ থেকে বিচ্চিন্ন করে ফেলে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
তাঁর পবিত্র দেহে তেত্রিশটি বর্শার এবং ত্রিশটি তরবারির আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়াও ছিল তিরের আঘাতের চিহ্ন। তাঁর শাহাদাতের পর জালিমরা আহলুল বাইতের তাঁবুর দিকে অগ্রসর হয় এবং সেখানে যেসব মালামাল ছিল লুট করে নেয়। এমনকি মেয়েদের বস্ত্র পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়। ইমাম হুসাইনের পুত্র যাইনুল আবিদীন (রা.) অসুস্থ অবস্থায় তাঁবুতে শুয়ে ছিলেন। শামার তাঁকেও শহীদ করতে উদ্যত হয়। কিন্তু আমর ইবন সাদ নির্দেশ দেন যে, মেয়েদের তাঁবুতে প্রবেশ করবে না এবং শিশুদেরকে আঘাত করবে না। মহান ইমামের শাহাদাতের এই মহাদুর্ঘটনা ৬১ হিজরীর ১০ই মুহাররাম সংঘটিত হয়।
সালমা আনসারিয়া বলেন, সেই দিনই আমি মদীনায় উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামার (রা.) কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি এইমাত্র স্বপ্নে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম। তাঁর মাথা এবং পবিত্র দাঁড়ি ধূলামলিন এবং তিনি কাঁদছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ব! কি হয়েছে? তিনি বললেন, এইমাত্র হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আসছি। (তিরমিযী)
পরদিন আহলুল গাদেরিয়া সায়্যিদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইন (রা.) ও অন্যান্য শহীদদের মস্তকবিহীন লাশ জানাযার পরে দাফন করে। শত্রুরা সকল শহীদের মাথা বর্শাগ্রে গেঁথে নিয়ে যায়।
আহলে বাইতের কাফেলাকে বন্দী হিসেবে ইবন যিয়াদের কাছে পৌঁছানো হয় এবং মহান শহীদদের মাথাগুলো তার সামনে পেশ করা হয়। মাথাগুলো পেশ করার সময় সানান ইবন নাখঈ এই কবিতাটি পাঠ করে-

املاء ركابى فضة وذهبا * انى قتلت السيد المححبا
قتلت خير الناس ابا واما * وخيرهم اذ يذكرون نسبا

-স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে আমার সাওয়ারী পূর্ণ করে দাও। কারণ, আমি সৌন্দর্যম-িত একজন নেতাকে হত্যা করেছি। আমি এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি যিনি পিতামাতা উভয় দিক থেকেই উত্তম এবং উত্তম বংশজাত যাদের নাম স্বরণ করা হয় তাদের মধ্যে সর্বোত্তম।
ইমামের (রা.) এই প্রশংসা শুনে ইবন যিয়াদ ক্রব্ধ হয়ে পড়ে এবং সানান ইবন নাখঈর মাথা কেটে ফেলে। এভাবে হযরত হুসাইন (রা.) এর খুনী অনতিবিলম্বে তার উপযুক্ত পরিণতি লাভ করে।
অতঃপর ইবন যিয়াদ ভরা দরবারে ইমাম হুসাইন (রা.) এর পবিত্র দাঁত ছড়ি দিয়ে খটখটায়। সেখানে সাহাবা যায়িদ ইবন আরকাম (রা.) উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইবন যিয়াদের এই বেআদবী বরদাশত করতে পারলেন না। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি নিজ চোখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঐ ঠোঁঠে চুমু খেতে দেখেছি। বেআদবী করিস না। একথা বলে তিনি চরম আবেগে কেঁদে ফেললেন। ইবন যিয়াদ বলল, যদি তুমি জ্ঞান হারিয়ে না ফেলতে তাহলে আমি তোমার শিরচ্ছেদ করতাম। একথা শুনে হযরত যায়েদ (রা.) বদদুআ করে মজলিস থেকে উঠে গেলেন।
ইবন যিয়াদ এবার ইমাম হুসাইন (রা.) এর একমাত্র স্মৃতি যাইনুল আবিদীন (রা.) কে হত্যা করার নির্দেশ দিলে যাইনাব বিনতে আলী (রা.) আর্তচিৎকার করে উঠলেন এবং বললেন, হে ইবন যিয়াদ আমাদের খান্দানের বহু মানুষকে হত্যা করেছিস। আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি তাঁকে হত্যা করতে চাইলে প্রথমে আমাকে হত্যা কর।
এই আর্তচিৎকারে অসুস্থ আবিদের জীবন রক্ষা পায়। ইবন যিয়াদ আহলুল বাইতের বন্দীদের এবং শহীদদের মাথাগুলো শামারের তত্ত্বাবধানে দামেশকে ইয়াযীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। অসুস্থ আবেদের (রা.) গলায় জিঞ্জির ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে এই কাফেলা ও শহীদদের মস্তক ইয়াযীদের কাছে পৌঁছে।
ইয়াযীদ সম্ভাব্য গুরুতর পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে অবিলম্বে দরবারে আম তলব করে। তাঁর সামনে ইমাম হুসাইন (রা.) এর পবিত্র মস্তক রাখা হয় এবং বক্তৃতায় শামার নিজের ও তার সঙ্গী-সাথীদের কর্মকা- গর্বের সাথে বর্ণনা করলে ইয়াযীদ অশ্রুভারাক্রান্ত হয়ে বলে- হুসাইনকে (রা.) হত্যা করা ছাড়াই আমি তোমার আনুগত্যে সন্তুষ্ট ছিলাম। তুমি হুসাইন (রা.) কে হত্যা না করলে আমি তোমার প্রতি খুশি হতাম। ইবন মারজানার (ইবন যিয়াদ) ওপর আল্লাহর লা’নত। খোদার কসম! তার অবস্থানে আমি থাকলে হুসাইন (রা.) কে ক্ষমা করে দিতাম। আল্লাহ তাঁর ওপর রহমত নাযিল করুন।
একথা বলে ইয়াযীদ হুসাইন (রা.) এর হন্তাদেরকে পুরস্কৃত না করেই বহিস্কার করে। ইবন যিয়াদের মতো ইয়াযীদও দরবারে বসে হুসাইন (রা.) এর পবিত্র দাঁত ছড়ি দিয়ে খটখটাতে থাকে এবং নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করে-

ابى قومنا ان ينصفونا وانصفت : قواضب فى ايماننا تقطر الدماء
يفلقن هاما من رؤس اعزة : علينا وهم كانوا اعق واظلما

-আমাদের কওম ইনসাফ করতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু আমাদের দক্ষিণ হস্তে ধারণকৃত তরবারি ইনসাফ করেছে যা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে।
যারা আমাদের প্রতি কঠোর সেইসব নেতাদের মুকুট বিদীর্ণ করে ফেলেছে আমাদের হাতে তরবারি। যেহেতু তারা ছিল চরম যালিম ও অত্যাচারী।
এখানেও সাহাবী আবূ বুরদা আসলামী (রা.) উপস্থিত ছিলেন। যায়িদ ইবন আরকাম (রা.) ইবন যিয়াদকে যা বলেছিলেন তিনিও ইয়াযীদকে তাই বললেন এবং মজলিস থেকে উঠে গেলেন।
এরপর ইয়াযীদ দরবারের লোকদের উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে- তোমরা জান, এ দুর্ঘটনা কেন সংঘটিত হয়েছে। হুসাইন (রা.) বলেছিলেন, আমার পিতা আলী (রা.) ইয়াযীদের পিতা থেকে উত্তম। আমার মা ফাতিমা যাহরা (রা.) তার মায়ের চেয়ে উত্তম, আমার নানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নানার চেয়ে উত্তম এবং আমি নিজে তার চেয়ে উত্তম, তাই খিলাফতের অধিক হকদার। পিতার সম্পর্কে বলতে গেলে বলব, আমার ও তাঁর পিতার বিষয় আল্লাহর সামনে পেশ হয়েছে। কিন্তু দুনিয়াতে ফয়সালা হয়েছে আমার পিতার অনুকূলে। হ্যাঁ, তাঁর মা আমার মা অপেক্ষা উত্তম এবং তাঁর নানা আমার নানা অপেক্ষা উত্তম। এটাই সব মুসলমানের আকীদা-বিশ্বাস। অবশ্য হুসাইন (রা.) বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি এবং কুরআনের এই আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করেননি- قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ
-তুমি বল, হে আল্লাহ! বাদশাহীর অধিপতি, তুমি যাকে ইচ্ছা শাসন ক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নাও। আল্লাহই ভালো জানেন, এগুলো ইয়াযীদের মনের কথা না শুধুমাত্র মৌখিক জমাখরচ, আর তার অশ্রু দুঃখ ও অনুশোচনার অশ্রু, না রাজনৈতিক অশ্রু? হযরত ইউসুফের (আ.) ভাইয়েরাও অশ্রুপাত করেছিল। وَجَاءُوا أَبَاهُمْ عِشَاءً يَبْكُونَ -তারা সন্ধ্যাকালে কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে হাযির হলো। (সূরা ইউসুফ)
এ সম্পর্কে কাজী সানাউল্লাহ পানিপথির উক্তি শুনুন- বর্ণিত হয়েছে যে, যেদিন হুসাইন (রা.) কে শহীদ করা হয় সেদিন ইয়াযীদ নিম্নে বর্ণি ত এই কবিতাটি গর্বের সাথে পড়েছিল। কবিতাটির সারমর্ম হলো, আজ মুহাম্মাদের বংশধরদের নিকট থেকে দ্বিতীয় বদরের দিনের প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম। কবিতাটি হলো-

وَلَسْتَ مِنْ جُنْدُبٍ اِنْ لَمْ اَنْتَقِمْ : مِنْ بَنِى اَحْمَدْ مَا كَانَ قَدْ فَعَلَ

-আহমাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তানরা যা করেছে সে জন্য আমি যদি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ না করি তাহলে আমি জুনদুবের অন্তর্ভুক্ত নই।
আর মদকে হালাল গণ্য করে সে এই কবিতা পড়ে-

فَاِنْ حَرَّمْتَ يَوْمًا عَلَى دِيْنِ اَحْمَدَ رضـ : فَخُذْهَا عَلَى دِيْنِ مَسِيْحَ بْنِ مَرْيَمِ

-একদিন যদি তুমি মদকে হারাম মনে করে করো আহমাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনের বিধান অনুসারে তাহলে অন্য একদিন মাসীহ ইবন মারইয়ামের (ঈসা আ.) দ্বীন অনুসারে গ্রহণ করবে।
আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধরদেরকে মিম্বরে দাঁড়িয়ে গালি দিল। এই গোমরাহীর মধ্যে ডুবে থাকতে তাদেরকে বহু দিন অবকাশ দেওয়া হলো। এরপর মহান আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলেন। যেমন ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়ার হন্তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি তাদের একজনও অবশিষ্ট ছিল না। বর্ণিত আছে যে, ইমাম হুসাইন (রা.) এর পবিত্র মস্তক ইয়াযীদের সামনে পেশ করা হলে একটি গীর্জা থেকে একদল লোক বেরিয়ে আসল। সেই গীর্জার গায়ে লেখা ছিল-

اَتَرْجُوْ اُمَّةً قَتَلَتْ حُسَيْنًا : شَفَاعَةَ جَدِّهِ يَوْمَ الْحِسَابِ

-যেসব লোক হুসাইন (রা.) কে হত্যা করেছে তারা কি কিয়ামতের দিন তাঁর নানার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত আশা করতে পারে?
এই কবিতাংশ কে লিখেছে সে বিষয়ে ঐ পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করলে সে জবাব দেয় যে, প্রাচীনকাল থেকেই এটি লিখিত আছে, কখন কে লিখেছে তা আমি জানি না। মোটকথা, নির্ভরযোগ্য বর্ণনা অনুসারে ইয়াযীদের ‘কুফর’ প্রমাণিত। তাই সে লা’নতের উপযুক্ত যদিও লা’নত করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। তবে اَلْحُبُّ فِيْ اللهِ وَالْبُغْضُ فِيْ اللهِ -ভালোবাসা ও শত্রুতা পোষণ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে, হাদীসটি তার প্রতি লা’নতের দাবি করে। الله اعلم
বক্তৃতা শেষ করে ইয়াযীদ ইমাম যাইনুল আবিদীনের (রা.) হাতকড়া ও জিঞ্জির খুলে দেয়। ইয়াযীদের স্ত্রী ভরা দরবারে উপস্থিত হয়ে ইয়াযীদকে জিজ্ঞেস করল, হে আমীরুল মুমিনীন, এটা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কলিজার টুকরা ফাতিমা (রা.) এর পুত্রের মস্তক? ইয়াযীদ জবাব দিল, হ্যাঁ। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্র হুসাইন (রা.) এর মাথা। তাঁর জন্য বিলাপ করো। আল্লাহ ইবন যিয়াদকে ধ্বংস করুন। সে তাড়াহুড়া করে তাঁকে হত্যা করেছে।
ইয়াযীদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খান্দানের মেয়েদেরকে তার পরিবারের মেয়েদের সাথে থাকতে দেয়। যেহেতু উভয় পরিবারের মধ্যে বহু পূর্ব থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল, তাই ইয়াযীদের পরিবারের সব মহিলা তাদের শোকে শরীক হয় এবং তাদের প্রতি সমবেদনা জানায়। ইয়াযীদ ইমাম যাইনুল আবিদীন (রা.) কে নিয়ে শাহী দস্তরখানে একসাথে খাবার গ্রহণ করত।
কয়েকদিন সযত্ন মেহমানদারীর পর ইয়াযীদ আহলুল বাইতের কাফেলাকে কিছু জিনিসপত্র দিয়ে একজন বিশ্বস্ত ও সৎ লোকের তত্ত্বাবধানে মদীনায় পাঠিয়ে দেয়।
ইয়াযীদের সদাচরণ দেখে সাকীনা বিনতে হুসাইন (রা.) বেশ মুগ্ধ হন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহদ্রোহী লোকদের মধ্যে ইয়াযীদের চেয়ে অধিক উত্তম আচরণের লোক দেখিনি।

 

অনুবাদক: মাওলানা মুহাম্মদ মুজাম্মেল হক

ফেইসবুকে আমরা...