1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও সংশ্লিষ্ট মাসাইল
মাওলানা মো. কুতবুল আলম
  • ৭ এপ্রিল, ২০২১

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি। ঈমান ও সালাতের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো যাকাত। ‘যাকাত’ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি পাওয়া, বরকত লাভ হওয়া, প্রশংসা করা ইত্যাদি। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে এসব অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
শরীআতের পরিভাষায় ‘যাকাত’ বলা হয় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কর্তৃক বছরান্তে তার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ (শতকরা ২.৫০ টাকা হারে) যাকাতের হকদার ব্যক্তিকে প্রদান করা। নিসাবের মালিক ব্যক্তির উপর যাকাত প্রদান ফরয হওয়ার বিষয়টি শরীআতের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এর ফরযিয়াত অস্বীকার করা কুফরী। ইসলামী শরীআতে যাকাতের ফরযিয়াত অস্বীকারকারীর শাস্তি মৃত্যুদ-। নিসাব পরিমান সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হলে এর উপর যাকাত আদায় করা ফরয। বিনা কারণে যাকাত প্রদানে বিলম্ব করলে গুনাহগার হবে।
কুরআন মাজীদে বহু স্থানে যাকাতের আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ
-তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত-১১০)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ -তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর, আয়াত-৫৬)

আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’ তথা মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,
وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أُولَـٰئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا
-এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব। (সূরা নিসা, আয়াত-১৬২)

যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
-“তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা তাওবা, আয়াত-১০৩)
কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে, যেখানে খাঁটি মুমিনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে সেখানে যাকাতের কথা এসেছে অপরিহার্যভাবে। এছাড়াও প্রকৃত পূণ্যশীলদের পরিচয়ে, সৎকর্মপরায়ণদের বৈশিষ্ট্য ও কর্মের তালিকায়, মসজিদ আবাদকারীদের পরিচয়ে, কুরআন মাজীদ কাদের জন্য হিদায়াত ও শুভসংবাদ দাতা এ সকল বর্ণনায় যাকাতের উল্লেখ এসেছে। মোটকথা, এত অধিক গুরুত্বের সাথে যাকাতের বিষয়টি কুরআন মাজীদে এসেছে যে, এটা ছাড়া দ্বীন ও ঈমানের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন, “যাকাতের ফরযিয়াতকে যে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।” (ফাতহুল বারী)
হাদীস শরীফে এসেছে- “যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার যাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয়পাশে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ঐ ধন, আমিই তোমার পুঞ্জিভূত সম্পদ।” -সহীহ বুখারী

যাকাতের নিসাব
কোন স্বাধীন, জ্ঞানবান, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা (প্রায় ৮৮ গ্রাম) কিংবা এর যে কোনো একটির সমমূল্যের টাকা বা ব্যবসায়িক মালের মালিক হয় তবে এ মালকে শরীআতের পরিভাষায় ‘যাকাতের নিসাব’ বলা হয়। উক্ত মাল এক বছরব্যাপী তার মালিকানাধীন থাকলে তার উপর যাকাত আদায় করা আবশ্যক হবে। যে ব্যক্তি উপরে উল্লিখিত পরিমাণ সম্পদের মালিক তাকে ‘মালিকে নিসাব’ বা সাহিবে নিসাব বলা হয়। অবশ্য এ মাল ঋণমুক্ত এবং তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। উক্ত মালের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ (শতকরা ২.৫০) যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। (হিদায়া ও আলমগীরী)

স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত
নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য কারো মালিকানায় থাকলে এবং তা এক বছর স্থায়ী হলে তার উপর ঐ স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত আদায় করা ফরয। এ স্বর্ণ-রৌপ্য যে অবস্থায় থাকুক অলংকার আকারে ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত, ব্যাংকে বা কারো নিকট গচ্ছিত অথবা ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে মোটকথা যে অবস্থায়ই থাকুক অবশ্যই তার যাকাত আদায় করতে হবে। স্বর্ণ-রৌপ্য নিসাব পরিমাণ বা তার অধিক যে পরিমানই থাকুক তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হয় ঐ স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা অথবা তার বাজার মূল্য দ্বারা যাকাত আদায় করতে হবে। (হিদায়া ও আলমগীরী)
কারো নিকট যদি কিছু পরিমাণ স্বর্ণ ও কিছু পরিমাণ রৌপ্য থাকে এবং এর কোন একটিও নিসাব পরিমাণ হয়না সেক্ষেত্রে উভয়টির সম্মিলিত মূল্য যদি রৌপ্যের অথবা স্বর্ণের কোন একটির নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান হিসাবে যেহেতু স্বর্ণের মূল্য থেকে রৌপ্যেও মূল্য অনেক কম সেহেতু রৌপ্যের মূল্যই ধর্তব্য হবে। আর উভয়টির সম্মিলিত মূল্য যদি রৌপ্যের নিসাবের সমপরিমাণ না হয় তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। (আলমগীরী)
যদি কারো নিকট কিছু পরিমাণ ব্যবসার মাল এবং কিছু পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্য থাকে এবং কোনটাই পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না হয় তবে এগুলোর সম্মিলিত মূল্য যদি রৌপ্যের নিসাবের সমপরিমাণ হয় তবে এতে যাকাত ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী)
কারো মালিকানায় যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ টাকা থাকে এবং তা এক বছর অতিবাহিত হয় তবে এ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। (আলমগীরি)

আসবাবপত্রের যাকাত
স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যতীত অন্য যত আসবাব পত্র আছে যেমন- লোহা, পিতল, কাসা, রাং, কাপড়, জুতা, চিনা বাসন, কাঁচের বরতন, ডেগ-ডেগচী, বসবাসের বাড়ি, জমি-জমা, নিজস্ব চলাচলের গাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হোক বা ঘরে রাখা হোক এর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে যদি এগুলো বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে থাকে এবং এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে বছরান্তে এর যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ব্যবসায়ী আসবাবপত্রের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মূল্যের হিসেব ধর্তব্য হবে। (হিদায়া ও আলমগীরী)

ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাত
ব্যবসায়ী পণ্য যে প্রকারেরই হোক যদি এর মূল্য স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিসাব পরিমাণ হয় এবং এক বছরকাল স্থায়ী হয় তাহলে পূর্ণ মালের (শতকরা ২.৫০) চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। (হিদায়া) ব্যবসায়ী পণ্য বিভিন্ন প্রকারের হলে সবগুলোর সমন্বিত মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে এর যাকাত আদায় করতে হবে। (আলমগীরী)

বাড়ি ও আসবাবপত্রের যাকাত
বসবাসের বাড়ীর উপর যাকাত ফরয হয় না। ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত কিংবা ক্রয়কৃত বাড়ী ও দালান কোঠার মূল্যের উপর যাকাত ফরয হয় না। বরং ভাড়া বাবদ যা আয় হয় তাতে যথানিয়মে যাকাত ফরয হয়। সে সব দালান কোঠা বা জমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় হয় (বসবাস বা ভাড়ার উদ্দেশ্যে নয়) এসবের মূল্যের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অনুরূপ আবাস গৃহের আসবাবপত্র ইত্যাদির উপরও যাকাত ফরয হয় না। যে সমস্ত আসবাবপত্র ভাড়া দেওয়া হয় যেমন- দোকান, গাড়ী, রিক্সা, নৌযান, ডেকোরেশনের আসবাবপত্র ইত্যাদির মূল্যের উপর যাকাত ফরয নয়। কারণ এগুলো বিক্রয়ের জন্য নয় বরং ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য, তাই এগুলোর আয়ের উপর যাকাত ফরয হবে মূল্যের উপর নয়।

ব্যাংকে গচ্ছিত মালের উপর যাকাত
ব্যাংকে গচ্ছিত ও জমাকৃত মাল মূলতঃ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট আমানত। এই অর্থ সম্পদের মালিকের মালিকানা সর্বাবস্থায় বিদ্যমান থাকে এবং ব্যবহারের অধিকারও থাকে। কাজেই ব্যাংকে গচ্ছিত রক্ষিত ও জমাকৃত অর্থ সম্পদের উপর যাকাত ফরয হবে এবং বছরান্তে আদায় করতে হবে। (জাদীদ ফিকহী মাসাইল)

যে সব সম্পদে যাকাত ফরয হয় না
নিজের চলাচলের বাহন ঘোড়ার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। অবশ্য ঘোড়া যদি ব্যবসার জন্য হয় তাহলে তার মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে যাকাত ফরয হবে। আর যদি নিসাব পরিমাণ না হয় তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। (আলমগীরী)।
গাধা, খচ্চর, সিংহ এবং শিকারী কুকুর যদি ব্যবসার জন্য হয় তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে অন্যথায় যাকাত ওয়াজিব হবে না।  (আলমগীরী) শুধু উটের বাচ্চা, গাভীর বাচ্চা, এবং বকরীর বাচ্চার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। বোঝা বহন বা কৃষি কাজে ব্যবহৃত পশু এবং গৃহপালিত পশুর উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। (আলমগীরী)
ওয়াকফ্কৃত পশু, অন্ধ পশু এবং পা কাটা পশুর উপর যাকাত ওয়জিব নয়। (শামী) যাকাত প্রদানকারী নিসাবের মালিক হওয়ার পূর্বে যাকাত দিলে জায়িয হবে না। অর্থাৎ নিসাবের মালিক হওয়ার পূর্বে যাকাত আদায় করলে নিসাবের মালিক হওয়ার পর ঐ মালের পুনরায় যাকাত আদায় করতে হবে। পূর্বের আদায়কৃত যাকাত গ্রহণযোগ্য হবে না। (শামী ও আলমগীরী)

যাকাত বণ্টনের নির্ধারিত ৮টি খাতের বিবরণ
কুরআন মজীদে সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা যাকাতের ব্যয়ের আটটি খাত নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এ খাতসমূহ ছাড়া অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা জায়িয নয়। উক্ত আটটি খাতের বিবরণ নিম্নরূপ-

১। ফকীর: ফকীর হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্ত হস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকীর। যে সকল স্বল্প সামর্থের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্ট করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকীর। কারও মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।

২। মিসকীন: মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যে সব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সাওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন। মিসকীন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকীর বা মিসকীন যাকেই যাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়।

৩। আমিলীন বা যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী: ইসলামী সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উশর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকেই আদায় করা যাবে। কুরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত যাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়।

৪। মুআল্লাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য): এই খাতটি সাহাবায়ে কিরামের ঐকমত্যের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে।

৫। ক্রীতদাস বা বন্দি মুক্তি: এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী বা বন্দি মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোন নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দি হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

৬। ঋণগ্রস্থ: এ ধরণের ব্যক্তিকে তার ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্থের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। অথবা যে ব্যক্তি এমন ঋণগ্রস্থ যে, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে না তাকে যাকাত দেয়া যাবে। আবার কোন ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা না জায়িয প্রথা অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।

৭। আল্লাহর পথে: সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও ইসলামের মাহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এবং যে আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে।

৮। অসহায় মুসাফির: যে সমস্ত মুসাফির অর্থ কষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হওয়ার মত এবং বাড়ি ফিরে যেতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায়। কোনো ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী, কিন্তু সফরে এসে অভাবে পড়ে গেছে বা  মাল-সামান চুরি হয়ে গেছে এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে।  তবে এ ব্যক্তির জন্য শুধু প্রয়োজন পরিমাণ গ্রহণ করাই জায়িয, এর বেশি নয়।

যাকাত আদায়ের প্রক্কালে নিম্নবর্ণিত দিকসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী:

যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ অর্থাৎ সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, বাণিজ্যদ্রব্য ইত্যাদি নিসাব পরিমাণ আছে সে শরীআতের দৃষ্টিতে ধনী। তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।

যাকাতের টাকা যাকাতের হকদারদের নিকট পৌঁছে
তে হবে। যাকাতের নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করে অন্য কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন রাস্তা-ঘাট, পুল নির্মাণ করা, কুপ খনন করা, বিদ্যুত-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচার, ইমাম-মুআযযিনের বেতন-ভাতা দেওয়া, ওয়ায মাহফিল করা, দ্বীনি বই-পুস্তক ছাপানো, ইসলামী মিডিয়া তথা রেডিও, টিভির চ্যানেল করা ইত্যাদিও জায়িয নয়।  মোটকথা, যাকাতের টাকা এর হকদারকেই দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও যাকাত আদায় হবে না।

যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো, উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে সে নিজের খুশি মতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। এরূপ না করে যদি যাকাতদাতা নিজের খুশি মতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে যেমন, তার ঘর সংস্কার করে দিল, টয়লেট স্থাপন করে দিল কিংবা পানি বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করল তাহলে যাকাত আদায় হবে না। যাকাতের টাকা দরিদ্র ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দিতে হবে। এরপর যদি সে নিজের খুশি মতো এসব কাজেই ব্যয় করে তাহলে যাকাতদাতার যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

আত্মীয়-স্বজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে তাদেরকে যাকাত দেয়াই উত্তম। ভাই, বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা এবং অন্যান্য আত্মীয়দেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। প্রদানের সময় যাকাতের উল্লেখ না করে মনে মনে যাকাতের নিয়ত করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম।

নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ যারা তার জন্মের উৎস তাদেরকে নিজের যাকাত দেয়া জায়িয নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী এবং তাদের  অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেয়া জায়িয নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেয়া জায়িয নয়।

বাড়ির কাজের ছেলে বা কাজের মেয়েকে যাকাত দেয়া জায়িয যদি তারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে যাকাতের অর্থ দিলে যাকাত আদায় হবে না।

কোনো লোককে যাকাতের উপযুক্ত মনে হওয়ায় তাকে যাকাত দেয়া হল, কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশ পেল যে, লোকটির নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাহলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় যাকাত দিতে হবে না। তবে যাকে যাকাত দেওয়া হয়েছে সে যদি জানতে পারে যে, এটা যাকাতের টাকা ছিল সেক্ষেত্রে তার ওপর তা ফেরৎ দেওয়া ওয়াজিব।

যাকাত দেওয়ার পর যদি জানা যায় যে, যাকাত-গ্রহীতা অমুসলিম ছিল তাহলে যাকাত আদায় হবে না। পুনরায় যাকাত দিতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (বুঝদার) ছেলে-মেয়েকে যাকাত দেওয়া যাবে।

ফেইসবুকে আমরা...