1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
হুব্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ড. আ. ফ. ম আবু বকর সিদ্দীক
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন,

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْلَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمَ

-আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের মুহব্বতের দাবিদার হবে, তাকে তার কথায়, কাজে, চিন্তা-চর্চায় এক কথায় জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে- “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে হাযির হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কিয়ামত কবে হবে?
তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কী সঞ্চয় করেছ? জবাবে সে বললো, আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহব্বত। তখন নবী (সা.) ইরশাদ করেন,

فَاِنَّكَ مَعَ مَنْ اَحْبَبْتَ

– দুনিয়াতে যাঁর সাথে তোমার মুহব্বত রয়েছে, হাশরের দিন তুমি তাঁর সাথেই থাকবে।”
হযরত আনাস (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর আমি এতো খুশি আর কোন দিন হইনি, যত খুশি সেদিন এ সুসংবাদ লাভের পর হয়েছি। আমি আল্লাহপাক এবং তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি, আমি মুহব্বত রাখি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) এবং হযরত উমর (রা.) র সাথে, যেন তাঁদের সঙ্গে আমার হাশর হয়; যদিও আমার আমল তাঁদের মত নয়। এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কী হতে পারে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার মাধ্যমে আল্লাহর মুহব্বত লাভে ধন্য হওয়া যাবে।
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

مَنْ صَلَّىْ عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ عَشَرًا

-যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পেশ করবে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার মর্যাদার দশটি স্তর বাড়িয়ে দেবেন।
হযরত আলী (রা.) বলেন, মুমিনের সকল দুআ আটকে থাকে, যতক্ষণ না সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর দুরূদ প্রেরণ করে।
হযরত উমর ফারুক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুমিনের দুআ আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে, উপরে উঠে না, যতক্ষণ পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ না করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কোন ব্যক্তি যখন আমার রওদ্বা শরীফের কাছে এসে সালাম পেশ করে, তখন আমি নিজে তা শুনি এবং জবাব দেই। আর যখন কোন ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দুরূদ ও সালাম পাঠায়, তখন তা আমার নিকট পৌঁছে দেওয়া হয়, যা আমি শ্রবণ করি এবং জবাব দেই।” হযরত আবূ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার উপর শুক্রবার তথা জুমুআর দিন অধিক হারে দুরূদ পাঠ করবে। কেননা, এই দিন ফিরিশতারা হাযির থাকেন এবং যখন কোন মুমিন ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ ও সালাম পাঠ করে তখন তা সাথে সাথেই আমার নিকট পেশ করা হয়; যা আমি শ্রবণ করি এবং জবাব দেই। তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার ইন্তিকালের পরেও? জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার ওফাতের পরেও! (সুবহানাল্লাহ!)

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে মজলিস বা মাহফিলে আল্লাহর যিকর হয়, কিন্তু আমার নামে দুরূদ ও সালাম পেশ করা হয় না; কিয়ামতের দিন সেই মজলিসের লোকেরা অনুতপ্ত হবে, যদিও তারা অন্যান্য নেক-আমলের বরকতে জান্নাতে যাবে।”
হযরত আবূ তালহা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ অবস্থায় আমাদের নিকট আসেন যে, খুশিতে তাঁর পবিত্র চেহারা ঝলমল করছিল। এ সময় তিনি বলেন, একটু আগে জিবরাঈল (আ.) এসে আমাকে বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে বলেছেন, “হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যদি তোমার কোন উম্মত তোমার উপর একবার দুরূদ পেশ করে, তবে আমি তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবো; আর কেউ যদি তোমার উপর একবার সালাম পেশ করে, তবে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাব; এই সুসংবাদে তুমি কি সন্তুষ্ট হবে না?” আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে এ খোশ খবর পাওয়ায় আমাকে এরূপ আনন্দিত দেখাচ্ছে।”
হযরত উবাই ইবনে কা’আব (রা.) বলেন, একদা আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বললাম, “ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি আপনার উপর অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ করি। আমাকে বলে দিন, আমি প্রত্যেক দিন যে পরিমাণ সময়ে ওযীফা ও তিলাওয়াতের কাজে ব্যয় করে থাকি এর কতটুকু অংশ দুরূদ পাঠের জন্য নির্ধারণ করবো? জবাবে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে এ কাজে যত বেশি সময় ব্যয় করতে পারবে, তাতে তোমার মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তা হলে আমি এক তৃতীয়াংশ সময় ধরে দুরূদ পাঠ করবো। জবাবে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি তুমি আরো বেশি সময় এ কাজে ব্যয় কর, তবে তুমি বেশি উপকৃত হবে। তখন আমি বললাম, তা হলে আমি আমার সময়ের দুই তৃতীয়াংশ সময় এ কাজে ব্যয় করবো। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেটা তোমার ইচ্ছা। তবে আরো অধিক সময় এ কাজে ব্যয় করলে তোমার উপকার হবে। একথা শুনে আমি বললাম, তাহলে আমি আমার পূর্ণ সময় দুরূদ পড়ে কাটাব। এ কথা শুনে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি এরূপ কর; তা হলে এর বরকতে তোমার দ্বীন-দুনিয়ার সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সহজ হয়ে যাবে এবং তোমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
হযরত কাব ইবনে আজুরা (রা.) বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বলেন, তোমরা মিম্বরের কাছে এসো। আমরা মিম্বরের কাছে সমবেত হলে, তিনি মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বলেন ‘আমীন’ যখন তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন, তখনও বলেন ‘আমীন’, আর যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন, তখন আবারও বলেন- আমীন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষে নেমে আসলে, আমরা বললাম, আজ আপনাকে মিম্বরে উঠার অবস্থায় এমন কথা বলতে শুনি, যা ইতোপূর্বে কোন দিন শুনিনি। তখন তিনি বলেন, “আমি যখন সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রাখি, তখন হযরত জিবরাঈল (আ.) এসে বলেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে মাহে রামাদান পাওয়ার পরও তার গুনাহ মাফ করাতে পারেনি। এর সমর্থনে আমি বলেছি- আমীন। আর আমি যখন সিঁড়ির দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বলেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারণ করা হয়; কিন্তু সে আপনার উপর দুরূদ পাঠ করে না। এর উপর আমি বলেছি আমীন। আর যখন আমি সিঁড়ির তৃতীয় ধাপে পা রাখি, তখন জিবরাঈল (আ.) বলেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে তার পিতা-মাতা উভয়েই বা একজন বার্ধক্যে উপনীত হয়; আর সে তাদের খিদমত করে, সন্তুষ্টি লাভ করে জান্নাত লাভ করতে পারেনি। এর সমর্থনে আমি বলেছি -আমীন।
হযরত ফুযালা ইবনে ওবাইদ (রা.) বর্ণনা করেন যে, “একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসেছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি মসজিদে এসে নামায পড়ে এরূপ দুআ করে: ‘হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ কর এবং আমার প্রতি রহম কর।”
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, হে নামাযী ব্যক্তি, তুমি দুআর ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেছ! তোমার উচিত ছিল, নামাযের পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা এবং সে সময় আল্লাহর প্রশংসা করা, তাসবীহ পাঠ করা, তারপর আমার উপর দুরূদ-সালাম পেশ করা এবং সব শেষে আল্লাহর দরবারে দুআ করা। আর এরূপ করলে তোমার দুআ কবূল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতো না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরূপ উক্তির পর সেখানে এসে অপর এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে। নামাযের পর সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পাঠ করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, হে মুসাল্লী! এবার তুমি দুআ কর, এখন তোমার দুআ কবূল করা হবে।”
শামসুল আরিফীন হযরত শাইখ শিবলী (র.) হজ্জের সময় এক যুবককে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে দেখেন। তিনি দেখেন যে, যুবকটি হজ্জের বিভিন্ন হুকুম-আহকাম পালন করার সময় নির্ধারিত দুআ বাদ দিয়ে শুধু দুরূদ শরীফ পাঠ করছে। এ অবস্থা দেখে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, বাবাজী, দুরূদ শরীফ ব্যতীত অন্য কোন দুআ কি তোমার জানা নেই? তুমি সবখানে দুরূদ শরীফ পড়ছো কেন? এর জবাবে সে যুবক ছেলেটি বললো, “চাচাজী! আরো অনেক দুআ আমার জানা আছে, কিন্তু দুরূদ শরীফের মধ্যে যে উপকার আমি পেয়েছি, তা অন্য কোন দুআর মধ্যে পাইনি। তাই, আমি সবখানে কেবল দুরূদ পাঠ করছি।”
তার এ জবাব শুনে, এর তাৎপর্য জানার জন্য শাইখ শিবলী (র.) বলেন, বাবা, তোমার কথা শুনে মনে হয়, এর পিছনে কোন রহস্য বা ঘটনা রয়েছে। তুমি বল, দুরূদ শরীফের মধ্যে কী ফযীলত তুমি অনুধাবন করেছ? তখন সে যুবক ছেলেটি বলে, আমি আমার পিতার সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হই। চলার পথে বাগদাদ শহরে পৌঁছলে আমার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুদিন রোগ ভোগের পর সেখানে ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুর পর তার চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখে আমি খুব কান্নাকাটি করি এবং চাদর দিয়ে তার দেহ ঢেকে রাখি। লজ্জার কারণে বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করতে পারলাম না। একাকী কিভাবে দাফন-কাফন করবো, এ চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লাম।
এ সময় আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি এবং স্বপ্নে দেখি যে, নূরানী চেহারা বিশিষ্ট এক বুযুর্গ ব্যক্তি আমার পিতার লাশের পাশে এসে, তার চেহারার উপর থেকে চাদর সরিয়ে, তার মুখমন্ডলটি তাঁর হাত দিয়ে মুছে দেন; ফলে তার চেহারা আবার মানুষের চেহারায় রূপান্তরিত হয় এবং তা থেকে নূর বের হতে থাকে। এরপর সে বুযুর্গ ব্যক্তি যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন আমি তাঁর কাপড় ধরে বললাম, আল্লাহ তাআলা আপনার উপর রহম করুন! এ চরম বিপদে আপনি আমাকে সাহায্য করেছেন, আমি আপনার পরিচয় জানতে চাই, দয়া করে বলুন।
তখন তিনি বলেন, আমি শাফিউল মুযনিবীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ কথা শুনে আমি তাঁর কদমবুসি করে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনি আমার পিতার মৃত্যুর খবর কীভাবে জানলেন? আমি তো এ খবর কাউকে জানাইনি, জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার পিতার জীবদ্দশায় প্রত্যহ সে আমার নামে তিন-সাতবার দুরূদ পাঠ করতো, আর একজন ফিরিশতা সাথে সাথে তা আমার কাছে পৌঁছে দিত। আজ তোমার পিতার দুরূদ আমার কাছে না পৌঁছায়, আমি সে ফিরিশতাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, সে ফিরিশতা আমাকে তার মৃত্যু সংবাদ এবং চেহারা বিকৃত হওয়ার খবর দেয়। এ দুঃখজনক সংবাদ জেনে আমি তার এ বিপদে সাহায্য করার জন্য এসেছি।” এ কথা বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন এবং আমার স্বপ্ন শেষ হলো। পরে আমি পিতার চেহারা থেকে চাদর সরিয়ে দেখলাম, তা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ঝলমল করছে। (সুবহানাল্লাহ!)
পিতার দাফন-কাফন কিভাবে করবো এ শংকা নিয়ে রাত অতিবাহিত হলো। সকালে দেখলাম শহরের হাজার হাজার লোক দলে দলে আমার পিতার জানাযার সালাত আদায় এবং দাফন ও কাফনের জন্য হাযির। আমি এ কথা ভেবে আশ্চর্যান্বিত হলাম যে, আমি তো কাউকে এ সংবাদ দেইনি, এরা কীভাবে খবর পেল!
আমি সমবেত লোকদের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো, সুবহে সাদিকের সময় সমস্ত শহরবাসী একটি অদৃশ্য আওয়ায শুনেছে: তা হলো যে ব্যক্তি নিজের গুনাহ থেকে নাজাত চায়, সে যেন অমুক মহল্লায়, অমুক মৃত মুসাফিরের জানাযার নামাযে শরীক হয়। তারা সবাই এ আওয়ায শুনে এখানে এসেছে; কিন্তু আওয়াযদাতার কোন খোঁজ তারা পায়নি!
এরপর অসংখ্য লোকের উপস্থিতিতে আমার পিতার জানাযার নামায পড়া শেষ হয় এবং অত্যন্ত সম্মানের সাথে তার দাফন ও কাফনের কাজ সমাপ্ত হয়। আমি এ ঘটনার দ্বারা দুরূদ শরীফের অসীম তাৎপর্য ও ফযীলতের প্রমাণ পেয়েছি। আর এ কারণে আমি হজ্জের হুকুম-আহকাম আদায়ের ক্ষেত্রে অন্য সব দুআ কালাম বাদ দিয়ে কেবল দুরূদ শরীফ পড়ছি। (সুবহানাল্লাহ!)
যুবক ছেলেটির কাছ থেকে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ শুনে হযরত শাইখ শিবলী (র.) তাকে বলেন, “বাবাজী, তুমি মজবুত খুঁটি ধরে আছো, তা কখনো ছাড়বে না; বরং আরো শক্তভাবে তা ধরে থাকবে, তা হলে জীবনে পথভ্রষ্ট হবে না।”
কোন ব্যক্তি যদি রবিউল আউয়ালের চাঁদ দেখার পর, সেই রাত্রিতে দুই-দুই রাকাআত করে চার রাকাআত নফল নামায পড়ে এবং সেই নামাযের প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা পড়ার পর নিম্নলিখিত দুরূদ এক হাজার বার পড়ে, সে এই মাসের প্রথম ১২ দিনের মধ্যে যে কোন রাতে স্বপ্নযোগে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীদার বা দর্শন লাভ করবে- ইনশাআল্লাহ। দুরূদ শরীফ হলো-

اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىْ مُحَمَّدَنِ النَّبِىِّ الاُمِّيْ

স্মরণীয় যে, উক্ত নামায এবং দুরূদ শরীফ পাঠের পর দুনিয়াদারীর কোন কথাবার্তা বলা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখে, সে আমাকেই দেখে। কেননা, শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।
শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) তাঁর রচিত গ্রন্থ “তারগীবে আলিস সাআদাতে বর্ণনা করেছেন, “যে আশিকে রাসূল স্বপ্নের মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দর্শন লাভ করতে চায়, সে যদি যাবতীয় গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে অন্তরের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও মহব্বত নিয়ে নিম্নলিখিত নিয়মে জুমুআর রাতে দুই রাকআত নফল নামায আদায়ের পর পাক বিছানায় শুয়ে ঘুমায় তা হলে তার নেক মকসূদ পূর্ণ হবে- ইনশাআল্লাহ!

নামাযের নিয়ম : ভালোভাবে উযূ করে, পাক-পবিত্র হয়ে দুই রাকআত নফল নামায পড়বে। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর ১১ বার “সূরা ইখলাস’’ পাঠ করবে। আর নামায শেষে “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়ি” এ দুরূদ শরীফ ১০০ বার পাঠ করবে। পরপর তিন জুমআর রাতে এ আমল করলে অবশ্যই আল্লাহর রহমতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যিয়ারত নসীব হবে- ইনশাআল্লাহ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুহব্বতের সম্পর্ক স্থাপন করা হলো ঈমানের দাবি। যেমন তিনি ইরশাদ করেছেন,

لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من نفسه وماله ووالده وولده والناس اجمعين

-তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে সব চেয়ে প্রিয় হই তার নিজের জীবন থেকে, তার ধন-সম্পদ, তার পিতা-মাতা, সন্তানাদি এবং সব মানুষ থেকে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, কিয়ামতের দিনের এ কঠিন ও ভয়াবহ অবস্থায় যখন মানুষ আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এর নিকট সুপারিশের জন্য হাযির হবে; তখন তিনি নিজের ভুল স্মরণ করে আল্লাহ পাকের দরবারে সুপারিশ করতে অপারগতা প্রকাশ করবেন। তিনি বলবেন, “আজকের এই কঠিন দিনে আল্লাহ তাআলার দরবারে সুপারিশ করার যোগ্য আমি নই।” তোমরা নূহ (আ.) এর কাছে যাও, ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী বলতে বলতে তিনি দ্রুত চলে যাবেন।
নূহ (আ.) বলবেন, আল্লাহ পাক আমাকে এক কাওমের কাছে তাদের হিদায়াতের দিকে ডাকার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আমি তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে, তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য দুআ করেছিলাম। আজকের এ দিনে যদি আল্লাহপাক জিজ্ঞেস করেন : তুমি এ কাজ কেন করেছিলে? এর জবাব দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই আমি আমার চিন্তায় অস্থির! এরপর ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী, বলতে বলতে তিনি দ্রুত কেটে পড়বেন, বলবেন, ‘তোমরা আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আ.) এর কাছে যাও। তিনি ও তাঁর অক্ষমতার কথা প্রকাশ করে বলবেন, ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী। মূসা (আ.) ও এরূপ বলবেন। এরপর লোকেরা এ আবেদন নিয়ে হযরত ঈসা (আ.) এর দরবারে হাযির হলে, তিনি নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করে পরামর্শ দেবেন : তোমরা আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও, তিনি এমন মহান ব্যক্তি। যাঁর আগের পরের, অর্থাৎ সমস্ত জীবনের গুনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিয়েছেন। যেমন বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে,

ولكن ائتو محمدا صلى الله عليه وسلم عبدا غفرالله له ما تقدم من ذنبه وما تأخر

-আর তোমরা সকলে মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাও, যাঁর পূর্বাপর জীবনের সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

انا اول شافع و اول مشفع

-কিয়ামতের দিন আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশ করবো এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে।

ফেইসবুকে আমরা...