1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ঈদে মীলাদুন্নবী : আমাদের সংস্কৃতি
আহমদ চৌধুরী
  • ১১ অক্টোবর, ২০২২

আল্লাহর প্রেম, ভালোবাসা ও নৈকট্য অর্জনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি র্শতহীন আনুগত্য এবং আবেগর্পূণ হৃদয়ের টান। দুনিয়ার সমস্ত কিছুর ভালোবাসাকে পরিত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেম ভালোবাসাকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া। কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,  “হে নবী! আপনি বলুন, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-দৌলত, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান – যাকে তোমরা পছন্দ করো, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা র্পযন্ত। এটা ফাসিকী কাজ। আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না। ” (সূরা তাওবা, আয়াত-২৪)
আজকের অশান্ত পৃথিবীতে মানুষের জীবনধারা এক জটিল অনাদর্শের ভাবাবেগে তাড়িত। তার অতীত র্বতমানকে নির্দেশ  দিতে ভুল করে, ভুল করে র্বতমান ভবিষ্যতকে গড়ে তুলতে।  জীবনের চারপাশে এ বিভীষিকাময় নৈরাশ্য আর হাহাকার ছাড়া আর কিছুই নেই। বাস্তব জীবন সংগ্রামে মানুষ তার সুকুমার বৃত্তিগুলো ভুলে কেবলই স্থুল দৈহিক ও জৈবিক প্রেরণার ক্রীড়নক হয়ে পড়ছে। মানুষের বিদ্বেষ, হিংসা, জিঘাংসা ও জিজীবিষা এমন চরমে পৌঁছেছে যে, জীবনে অবিশ্বাস, অস্বস্তি ও নৈরাশ্যই একমাত্র সত্য বলে দেখা দিয়েছে। কোথাও স্বস্তি নেই, শান্তি নেই, মানুষ বুঝেও অশান্তির বেড়াজালে পা দিয়ে বিপদ থেকে বিপদান্তরে, যে শঙ্কা থেকে শঙ্কান্তর, জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। জীবন যেন এখন অসহনীয় এক সংগ্রাম।
এ থেকে উত্তরণের পথ কেউ খুজেঁ পাচ্ছি না। কারণ আমরা নবীর আর্দশ থেকে অনেক দূরে সরে আসছি। অথচ আল্লাহ বলছেন, তোমাদের শিক্ষার জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম চরিত্রগুণ (সূরা আহযাব, আয়াত-৩৩)। এই অবধারিত মুক্তির বাণীকে অস্বীকার করে ইচ্ছেমতো ভোগ ও সাময়িক আনন্দের বানে ভেসে পাপ পূণ্যের বিচার না করে মানুষ স্রোতের মতো ঝুঁকে পড়ছে পশ্চিমা নাস্তকিতা ও বস্তুবাদের দিকে। কিন্তু মুক্তি সেখানে নেই। একমাত্র নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শের মাঝেই লুকায়িত সেই কাঙিখত অবধারিত মুক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে নিয়ে গৃহস্থালি পরিচালনা র্পযন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নবীজীর মুক্তাখচিত বাণী, “যে স্ত্রী স্বামী গৃহের শৃংখলা বজায় রাখার জন্য কোনো বস্তু যথাস্থানে রাখে, তার জন্য তাকে একটি পূণ্য দান করা হয়, একটি পাপ স্খলন করা হয়, আল্লাহর দরবারে একটি স্তর দান করা হয়। মন দিয়ে খেয়াল করে দেখুন কতো প্রেমময় আমাদের নবী! কতো সুন্দর আমাদের র্ধম!

আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে অনেক দিবস পালন করি। ঐসব দিবসে সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংগঠন, এনজিও প্রতিষ্ঠান স্ব স্ব উদ্যোগে দিবসের তাৎর্পয মানুষের সামনে তুলে ধরে, যার ফলে শত শত বছর পরেও আমরা এসব দিবস ;ব্যক্তির কীর্তি, র্মযাদা, তাঁদের আলোকিত জীবন সর্ম্পকে জানতে পারি, হৃদয়ে ধারণ করতে পারি তাই এসব দিবস যথাযথ র্মযাদায় পালন করা আমাদের জন্য পেছনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার দ্বার উন্মোচন করে। ইহা নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।

ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা নবীজীর শুভ জন্মোৎসব। অশান্ত এ বসুন্ধরায় শান্তির জোয়ার বইয়ে দিতে এই দিবস যথাযথ মর্যদায় পালন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।  ঘরে ঘরে এ দিবসের তাৎর্পয তুলে ধরা উম্মত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ নিয়ে যত আলোচনা হবে। তাঁকে নিয়ে যত সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হবে তত রাসূলকে জানার আগ্রহ বাড়বে। রাসূলকে যত বেশি জানা হবে সত্য স্বপ্ন নিয়ে মানুষের মনে তত বাঁচার অঙ্গীকার যোগাবে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী উলামা মাশায়িখ অত্যন্ত আবগ নিয়ে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করে থাকেন। যা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীকে শান্তির সমীরণে অবিরত তৃপ্তি যোগায়। অনেকে মীলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানাদীকে বাঁকা চোখে দেখেন। শিরণী ও তাবাররুক বিতরণকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেন যা সত্যসত্যই বেদনাদায়ক। আমি বলি ; আপনারা সারা বছর সীরাত আলোচনা করুন। কে বাঁধা দিচ্ছে? আমরাও সীরাত আলোচনা কর। অবশ্যই তা উত্তম কাজ। আমাদের মাঝে যখন মাহে রবিউল আউয়াল আসে, অনায়াসেই তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই তমসাচ্ছন্ন যুগ। ঐতিহাসিকগণ যাকে বলেছেন অন্ধকার যুগ। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগ। স্মৃতিপটে ভেসে উঠে আরব সম্প্রদায়, তাদের বর্বরোচিত বৈশিষ্ট্য, চরিত্র ও বেপরোয়া চলাফেরার দৃশ্য। স্মরণ হয় সুস্পষ্ট সর্তককারী! মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সময়ের অলৌকি সব ঘটনা। স্মরণ হয় তাঁর অর্বণনীয় ত্যাগ ও তিতিক্ষার সুমহান গল্প। তখন মুমিনের হৃদয়ে জমে থাকা প্রেমের তরঙ্গমালা উথলে ওঠে। প্রেম-মহব্বতের জোয়ার বয়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ  নিয়ে বেশি বেশি চর্চা হয়। ঘরে ঘরে দুরুদের আওয়াজ জারি হয়। বিশেষ করে ১২ রবিউল আউয়ালে মসজিদে মসজিদে, পাড়ায় পাড়ায় এবং বাড়ি-ঘরে  যেভাবে মীলাদের অনুষ্ঠান করা হয় তা অবশ্যই উম্মতের সৌভাগ্যের লক্ষণ।

জন্মভূমি বাংলাদশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমি দেশ। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের দেশে এই মহান দিবসকে তার প্রাপ্য র্মযাদা দেওয়া হয় না। জাতীয়ভাবে অনকেটা দায়সারা গোছের ভাব নিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, র্ধমমন্ত্রী একটি করে বাণী প্রদান করে দায় সারেন। সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। স্কুল-কলেজ, মাদরাসা বন্ধ থাকে। এটাই জাতীয়ভাবে দেওয়া র্মযাদার সবটুকু। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও র্ধমমন্ত্রণালয় র্কাযকর কোনো উদ্যোগ নেন না। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কিছুটা ভুমিকা নিলেও শেষ র্পযন্ত তা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমিত থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে কবি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মীদের জন্মদিবস নিয়ে চেতনা বিতরণ করতে করতে কাহিল হয়ে পড়ে। অথচ ঈদে মীলাদুন্নবীর র্মযাদা কোনো কবি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে তুলনা করাও যায় না। কারণ তাঁর র্মযাদার তুলনা পৃথিবীর কারো সাথে চলেনা। তিনি বেনিয়ায, বে মিছাল।
সুতরাং আমাদের স্বার্থে, পৃথিবীকে স্থিতিশীল রাখতে , মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম জাগাতে সর্বোপরি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিবসকে সকলের মাঝে শ্রদ্ধা, স্মরণ এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মধ্যদিয়ে পালন করা উচিত। রাষ্ট্র এই দিনকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী বেতার-টেলিভিশনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনালোচনার আয়োজন, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা বন্ধ না দিয়ে ন্যূনতম সপ্তাহব্যাপী সীরাতপাঠের উৎসব করা, কবিতা, রচনা ও উপস্থিত বক্তৃতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে অন্তত তিন দিনের সীরাত আলোচনা ও বিষয়ভিত্তিক বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। তাছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি পুরস্কার প্রর্বতন করা যেতে পারে যা প্রতিবছর বিতরণ করা হবে। যারা সারা বছর মানব কল্যাণে যুগোর্ত্তীণ ভূমিকা রাখছেন  তাঁদের মধ্য থেকে বাছাই বিশ্লেষণ করে অন্তত তিনজনকে এই সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত করা, চাইলে জেলা পরিষদের মাধ্যমেও প্রতি জেলায় করা যেতে পারে।

আমাদের দেশে নানা প্রকারের সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র আছে এগুলোর মধ্যে নবীর জীবনচর্চাধর্মী তেমন কোন সংগঠন নেই। আমাদের উচিত প্রিয়নবীকে ঘিরে নানারকম সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা। এসবের মাধ্যমে নবীচরিত নিয়ে আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা। ম্যাগাজিন, পুস্তক, স্মারক ও পত্রিকা প্রকাশ করা। প্রতিবছর প্রতি জেলা উপজেলায় তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচিত গ্রন্থমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। শিশু কিশোরদের মধ্যে কবিতা, রচনা ও সীরাত পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায়।

নিজ দেশে তথা পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে আমাদেরকে এই মহামানবের আদর্শের কাছে ফিরে যেতে হবে। কারণ পৃথিবীর অন্যকোন মত ও পথে এতো যুগান্তকারী বৈপ্লবিক আদর্শ নেই। জর্জ  বার্নাড- শ এর ভাষায়- পুরো বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রদায় আদর্শ  ও মতবাদ সম্পন্ন মানবজাতিকে যদি ঐক্যবদ্ধ করে একনায়কের শাসনাধীন আনা হতো তবে একমাত্র মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামই সর্বাপেক্ষা সুযোগ্য নেতারূপে তাদেরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে পারতেন।

মাইকেল এইচ হার্ট আরো সুন্দর করে বলছেন, আমি বিশ্বাস করি অশান্তির বিশ্বে শান্তি আনতে হলে সমগ্র বিশ্বের একক ক্ষমতা আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে র্অপণ করলইে তা শুধু সম্ভব।

পৃথিবীর সত্যাশ্রয়ী সকল ঐতিহাসিকগণ একমত যে, মহানবীর আগমনে পৃথিবী তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। তিনি এসেছিলেন বলেই জগতবাসী নতুন জীবন পেয়েছে। তাই মানবজাতির ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ  শীর্ষ মর্যাদা ও বিরল সম্মান পাবার যোগ্য এই দিন, যেই দিন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সালা্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মর্ত্যের পৃথিবীতে শুভাগমন করে সমস্ত জগতবাসীকে ধন্য করেছিলেন।

যুগের পর যুগ, দিবসের পর দিবস চিরন্তন মর্যাদা পাবার অধিকারী এইদিন। র্ধম-র্বণ সকল জাতি গোষ্ঠীর কাছে সমানভাবে সম্মানের দাবিদার এই দিন। বাস্তবতার বিচারে অত্যন্ত যুক্তিনির্ভর সংগত কারণইে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমনের দিন। ঈদে মীলাদুন্নবীর সর্বদিক দিয়ে দুনিয়াবাসীর কাছে প্রিয় হওয়ার যোগ্যতম। তাঁর  আগমনের কল্যাণেই পৃথিবীর সৃষ্টি । মানুষ ফিরে পেয়েছে মানুষের মর্যাদা।

আল্লামা ফতেহ আলী (র.) তাঁর দিওয়ানে ওয়াইসীতে কী চমৎকার গেয়েছেন,
“ওয়াইসীয়া! আয দ্বীন ও ঈমান ইনকাদর তানিম ওয়া বাস
দ্বীনে মা ইশক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুব্বে উঁ ঈমানে মা।”
হে ওয়াইসী! এতটুকু জানি এবং তাই যথেষ্ট যে আমাদের দ্বীন হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইশক ও তাঁর প্রতি প্রেমই হচ্ছে আমাদের ঈমান।
আমাদের বেহেশতি ফুল শিশুমনে এই চিত্র এঁকে দিতে হবে, আমরা কোন নবীর উম্মত। তাদের জানতে হবে আমরা সেই নবীর উম্মত। চাঁদ সেতারা, আকাশ যমীন যার খিদমাত করার জন্য সদা উদগ্রীব। জীন ফিরিশতারা যাঁর পদসেবা করে জীবনকে র্স্বাথক করার জন্য সদা প্রতীক্ষায় ও দন্ডায়মান ছিলো, ফিরিশতাকূলের সরদার জীবরীল আমীন যাঁর সাক্ষাতে এসে বেয়াদবীর ভয়ে শত সর্তকতা অবলম্বন করতেন, যাঁকে মেঘমালা ছায়া দিয়ে রৌদ্র থেকে আড়াল করে রাখত, বৃক্ষ যার নির্দেশে স্থানান্তরিত হয়ে যেত, চন্দ্র যাঁর অঙ্গুলি ইশারায় দ্বি-খন্ডিত হয়েছিল, যাঁর উম্মত হওয়ার জন্য কতো নবী আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে র্প্রাথনা জানিয়েছিলেন, যাঁর র্মযাদার বর্ণনা কোনো যবান দিতে পারে না, কোনো কলম লিখতে সক্ষম নয়, সেই শেষ এবং শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত আমরা। পরিতাপের বিষয় মুসলমান জাতিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সবচেয়ে বেশি উদাসীন! লিখার কলেবর বৃদ্ধি না করে ছোট্ট একটি গল্প দিয়ে লিখার ইতি টানছি।
স্বপ্নে স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন ড. ইসলামুল হক। তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছিল, মুসলমি উম্মাহর জন্য কিছু বলুন। তিনি বলেছিলেন, ইনযীল শরীফে আছে,  একদিন সকালবেলা হযরত ঈসা (আ.) তাঁর কিছু অনুসারীর সাথে মিলিত হওয়ার মানসে গলীল হ্রদের পানির উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন, এ আর্শ্চযজনক দৃশ্য লক্ষ্য করে তাঁর অনুসারীরা বললেন, হুযূর, আমরাও কি এমনভাবে পানির উপর দিয়ে হেটে যেতে পারবো? ঈসা (আ.) জবাব দিলেন, পারবে। তবে র্শত হচ্ছে, শুধুমাত্র আমার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। দৃষ্টি এদিক ওদিক হলেই ডুবে যাবে। তারা ঈসা (আ.) এর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে পানির উপর দিয়ে অগ্রসর হতে লাগলো। কিছুদূর অগ্রসর পর তাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। ভাবলো, সত্যি সত্যিই কি আমরা পানির উপর দিয়ে যাচ্ছি না কি মাটির উপর দিয়ে। সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার পর তারা দৃষ্টি ঈসা (আ.) এর দিক থেকে একটু সরিয়ে পায়ের দিকে নিলো, তখনই তারা হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেলে। ড. ইসলামুল হক বলেন, এ সংসার সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমাদের জন্য এ নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে একমাত্র তাঁর পবিত্র পদচিহ্ন অনুসরণ করেই অগ্রসর হতে হবে। দৃষ্টি যদি সেখান থেকে একটু এদিক সেদিক যায়, ঈসা নবীর উম্মতের মতো আমরাও দুনিয়ার অথৈ সাগরে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

ফেইসবুকে আমরা...