1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
একাধিক সনদে বর্ণিত হাদীস বিষয়ে কোন হুকুম সাব্যস্ত করা
মাওলানা জিয়াউল হক চৌধুরী
  • ৬ মার্চ, ২০২১

ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (র.) তিরমিযী শরীফে ‘এ উম্মতের বিভক্তি’ অধ্যায়ে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি নিম্নরূপ-

حَدَّثَنَا الحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ أَبُو عَمَّارٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا الفَضْلُ بْنُ مُوسٰى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تَفَرَّقَتِ اليَهُودُ عَلٰى إِحْدٰى وَسَبْعِينَ أَوْ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَالنَّصَارٰى مِثْلَ ذٰلِكَ، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلٰى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً. وَفِي البَابِ عَنْ سَعْدٍ، وَعَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، وَعَوْفِ بْنِ مَالِكٍ. حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইয়াহুদীরা একাত্তর বা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল, খ্রিস্টানেরাও অনুরূপ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। এ বিষয়ে হযরত সা’দ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ও হযরত আউফ বিন মালিক থেকে হাদীস রয়েছে। হযরত আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ।

মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট এটি জানা আছে যে, ইমাম তিরমিযী (র.) তার তিরমিযী শরীফে সাধারণত যে রীতি অনুসরণ করেছেন তা হলো, তিনি একটি অধ্যায়ে একটি বা দু’তিনটি মাত্র হাদীস উল্লেখ করেছেন এবং হাদীস নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত যে হাদীস অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেননি সে হাদীসখানাই উল্লেখ করেছেন। সাথে সাথে তিনি এ হাদীসটি অন্য কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাঁর নীতি হলো, ‘ওয়া ফিল বাবি’ এ বলে এ বিষয়ে তাঁর জানা অন্যান্য সনদের দিকে ইঙ্গিত করে দিয়েছেন। এ কারণে দেখা যায় পরবর্তীতে অনেক উলামায়ে কিরাম ইমাম তিরমিযীর ‘ওয়া ফিল বাব’ এর উপর ভিত্তি করে স্বতন্ত্র কিতাব সংকলন করেছেন। বর্ণিত হাদীসটির ক্ষেত্রেও তিনি আরো তিনজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করে সনদের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারা হলেন হযরত সা’দ, আব্দুল্লাহ বিন আমর ও আউফ বিন মালিক (রা.)। এখানে তিনি আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) এর হাদীসটিকে ‘গরীব’ বলেছেন।

মোদ্দাকথা হলো ইমাম তিরমিযী (র.) এ হাদীসের চারটি মাত্র সনদ সম্পর্কেই অবগত ছিলেন, এর অধিক যদি জানতেন তাহলে তিনি উল্লেখ করে দিতেন। কেননা মোজার উপর মাসেহ সংক্রান্ত হাদীসটির তিনি আরো বিশটি সনদের উল্লেখ করেছেন।

বর্ণিত হাদীসটি মুহাদ্দিসীনে কিরাম আরো এগারোজন সাহাবী থেকে উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন হযরত আনাস, জাবির, আবূ উমামা, ইবনে মাসউদ, আলী, আমর বিন আউফ, উমাইর, আবুদ্দারদা, আবূ মুয়াবিয়া (কেউ কেউ মুয়াবিয়া বলেছেন), ইবনে উমার এবং ওয়াসিলা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন। অর্থাৎ হাদীসটির সর্বমোট পনেরটি সনদ জানা গেল। অথচ ইমাম তিরমিযী মাত্র চারটি সনদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হাদীসটিকে ইমাম সাখাভী (র.) ‘মাকাসিদে হাসানা’য় এবং ইমাম শাতিবী ‘আল ই’তিসাম কিতাবেও সহীহ বলেছেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কিরামের উল্লেখযোগ্য কোনো সমালোচনা নেই। অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে বক্তব্যগুলো নিম্নরূপ।

হযরত আনাস (রা.) এর হাদীসটি ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী ‘আল-লাআলিল মাসনুআ’ কিতাবে উক্বাইলী ও দারুকুতনীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন এবং একে ‘মারূফ’ ও ‘মাহফুয’ বলেছেন। আর একথা আহলে ইলমগণের নিকট জানা আছে যে, এদুটি পরিভাষা যথাক্রমে ‘মুনকার’ ও ‘শায’ এর বিপরীত।

হযরত আবূ উমামা (রা.) এর হাদীসের ব্যাপারে নূরুদ্দীন হাইসামী (র.) মাজমাউয যাওয়ায়িদ কিতাবে উল্লেখ করেন, رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ وَالْكَبِيرِ بِنَحْوِهِ، وَفِيهِ أَبُو غَالِبٍ، وَثَّقَهُ ابْنُ مَعِينٍ وَغَيْرُهُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِ الْأَوْسَطِ ثِقَاتٌ، وَكَذَلِكَ أَحَدُ إِسْنَادَيِ الْكَبِير হাদীসখানা ইমাম তাবারানী ‘আল মুজামুল আওসাতে’ উল্লেখ করেছেন এবং ‘আল মুজামুল কাবীরে’ কাছাকাছি শব্দে উল্লেখ করেছেন। তাতে আবূ গালিব নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তাকে ইয়াহ্ইয়া ইবনে মাঈন ও অন্যান্যরা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর মুজামে আওসাতের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। মুজামে কাবীরে বর্ণিত একটি হাদীসের সনদের অবস্থাও অনুরূপ।

হযরত সাদ (রা.) এর হাদীসটির ব্যাপারে তিনি বলেন, رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ مُوسَى بْنُ عُبَيْدَةَ الرَّبَذِيُّ وَهُوَ ضَعِيفٌ হাদীসখানা ইমাম বাযযার উল্লেখ করেছেন, তাতে মূসা বিন উবাইদা দুর্বল বর্ণনাকারী।

হযরত ইবনে উমরের হাদীসের ব্যাপারে তিনি বলেন,  رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى، وَفِيهِ لَيْثُ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ وَهُوَ مُدَلِّسٌ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ হাদীসটি আবূ ইয়ালা উল্লেখ করেছেন, এতে লাইস বিন আবূ সুলাইম মুদাল্লিস রাবী, অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।

হযরত আবূ দারদা ও ওয়াসিলাহ (রা.) এর হাদীসের ব্যাপারে তিনি বলেন, رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ كَثِيرُ بْنُ مَرْوَانَ وَهُوَ ضَعِيفٌ جِدًّا হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন, এর সনদে কাসীর বিন মারওয়ান খুবই দুর্বল বর্ণনাকারী।

হযরত আমর বিন আউফ (রা.) এর হাদীসের ব্যাপারে তিনি বলেন, رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ كَثِيرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ وَهُوَ ضَعِيفٌ، وَقَدْ حَسَّنَ التِّرْمِذِيُّ لَهُ حَدِيثًا، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ হাদীসটি ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন, এর সনদে কাসীর বিন আবদুল্লাহ দুর্বল বর্ণনাকারী। ইমাম তিরমিযী (র.) তাঁর একটি হাদীসকে হাসান বলেছেন। অন্য সকল বর্ণনাকারী সিকা।

ইবনে মাসউদ (রা.) এর হাদীসের ব্যাপারে তিনি বলেন, رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ بِإِسْنَادَيْنِ، وَرِجَالُ أَحَدِهِمَا رِجَالُ الصَّحِيحِ، غَيْرَ بُكَيْرِ بْنِ مَعْرُوفٍ، وَثَّقَهُ أَحْمَدُ وَغَيْرُهُ وَفِيهِ ضَعْفٌ ইমাম তাবরানী হাদীসখানা দুটি সনদে উল্লেখ করেছেন। একটি সনদের বর্ণনাকারী বুকাইর বিন মারূফ ব্যতীত সকলেই সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী। ইমাম আহমদ ও অন্যান্যরা তাকে ‘সিকা’ বলেছেন। আর তার মধ্যে কিছু দুর্বলতা বিদ্যমান।

হযরত আউফ বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহুর হাদীসখানা মুস্তাদরাকে হাকীমে বিদ্যমান। ইমাম হাকিম বলেন, হাদীসখানা ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র.) এর শর্তের উপর বিদ্যমান।

ইমাম শাতিবী হযরত আলী (রা.) এর হাদীসখানা উল্লেখ করে বলেন, لا اضمن عهدة صحته আমি হাদীসখানা সহীহ হওয়ার যিম্মাদারী গ্রহণ করব না। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো সমালোচনা উল্লেখ করেননি।

হযরত আবূ হুরায়রা ও মুয়াবিয়া (রা.) এর হাদীস একসাথে উল্লেখ করে মুস্তাদরাক গ্রন্থে বলেন, هَذِهِ أَسَانِيدُ تُقَامُ بِهَا الْحُجَّةُ فِي تَصْحِيحِ هَذَا الْحَدِيثِ এ সনদগুলো এ হাদীসটিকে সহীহ নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

বর্ণিত হাদীসটির পনেরটি সনদের মধ্যে তেরজনের ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কিরামের বক্তব্য জানা যায়, এর মধ্যে নি¤œবর্ণিত আটজন সাহাবীর হাদীসকে সহীহ বা হাসান বলার অবকাশ রয়েছে। তারা হলেন, হযরত আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ বিন আমর, আনাস, আবূ উমামাহ, আমর বিন আউফ  মুয়াবিয়াহ, ইবনে উমার ও আউফ বিন মালিক। যাদের আলোচনা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। বাদ বাকী অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদিসের সনদ যদিওবা দয়ীফ তথাপিও ‘তাআদ্দুদে তুরুক’ তথা বিভিন্ন সনদে বর্ণনা হওয়ার কারণে এগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যে হাদীসটি এত অধিক সংখ্যক সাহাবী বর্ণনা করেছেন এবং যার মধ্যে অন্ততপক্ষে আটটি সনদকে সহীহ বা হাসান সে হাদীসটিকে কিভাবে দয়ীফ সাব্যস্ত করা হবে?

উপরের আলোচনা থেকে মোটামুটি এটুকু বলা যায় যে, একটি হাদীস কতজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন, এ সকল সাহাবীদের থেকে কতজন তাবিঈ বর্ণনা করেছেন এবং সনদের পরবর্তী বর্ণনাকারীদের সংখ্যাও কিরূপ ছিল। অতঃপর একটি হাদীসের সহীহ্ বা দয়ীফ হুকুম দেখে অন্তত এটুকু বিবেচনায় নিতে হবে যে, এ হুকুমটি কি বিশেষ কোন সনদের উপর নাকি সামগ্রিকভাবে সকল সনদের উপর। এখানে এটিও জরুরী নয় যে, একজন মুহাদ্দিস সবগুলো সনদ সম্পর্কে অবগত থাকবেন। (ইস্তেফাদাহ্-তরজুমানুস সুন্নাহ)

এখানে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে যদি কোনো একজন মুহাদ্দিসের নিকট কোনো একটি হাদীসের অনেকগুলো সনদ বিদ্যমান থাকে এবং সেখান থেকে তিনি কেবলমাত্র একটি সনদের উপর ভিত্তি করে হাদীসটিকে সহীহ বলে দেন এবং উসূলে হাদীসের মূলনীতির আলোকে সনদটির সকল বর্ণনাকারী সিকা সাব্যস্ত হন। তবে এই একটি সনদের ভিত্তিতে হাদীসটিকে সহীহ বলা যাবে। কিন্তু কোন একটি হাদীসকে দয়ীফ বা দুর্বল সাব্যস্ত করতে গিয়ে তার নিকট বিদ্যমান সেই অনেকগুলো সনদের মধ্য থেকে একটি মাত্র দুর্বল সনদ উল্লেখ করে মুতলাকান হাদীসটিকে দয়ীফ সাব্যস্ত করতে পারবেন না। বড়জোর তিনি বলতে পারবেন যে হাদিসটির ‘এ সনদটি’ দুর্বল। এ কারণে বলা যায় যে, একটি হাদীসকে সহীহ বলে দেওয়া যত সহজ, দয়ীফ সাব্যস্ত করা তত সহজ নয় এবং সনদসহ হাদীস উল্লেখ করা যত সহজ, হাদীসের সনদের ব্যাপারে কোনো হুকুম সাব্যস্ত করা তত সহজ নয়।

প্রথম কথা হলো দয়ীফ হাদীস ফাদাইলে আমাল ও মানাকিব বর্ণনার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। দয়ীফ হাদীসকে বাদ দিলে ইসলামের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অনেকটাই প্রমাণ করা সম্ভব নয়। সীরাতের কিতাবেও দয়ীফ হাদীসের উল্লেখ লক্ষ্যণীয়।

মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি মূলনীতি হলো, যদি কোন দয়ীফ হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হয় তবে তা কিছু শর্তসাপেক্ষে দয়ীফ থেকে হাসান লিগাইরীহির পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যায়। আর হাসান লিগাইরীহি হাদীস মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট দলীল।

এ প্রসঙ্গে পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের পার্থক্য বিষয়ে একটি দয়ীফ হাদীস রয়েছে যেটি ইমাম বায়হাকীর আস সুনানুল কুবরাতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত আহলে হাদীস আলিম সিদ্দিক হাসান খান ভুপালী তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আউনুল বারী’তে উল্লেখ করেন,

واما المرأة فتضم بعضها الي بعض لانه استر لها واحوط لحديث رواه ابو داود في المراسيل عن يزيد بن ابي حبيب انه صلي الله عليه وسلم مر علي امرأتين تصليان فقال اذا سجدتما فضما بعض اللحم الي الارض فان المرأة في ذلك ليست كالرجل و رواه البيهقي  من طريقين موصولين لكن في كل منهما متروك قاله الحافظ ابن حجر في التلخيص. (عون الباري-جلد-১ صفحة-৫২০)

‘আর নারীরা তাদের এক অঙ্গ অন্য অঙ্গের সাথে (জড়সড় হয়ে) লাগিয়ে রাখবে। কেননা এটি তাদের জন্য অধিক সতর আবৃতকারী এবং এটিই অধিক সতর্কতা। এর দলীল হলো, ইয়াযিদ বিন আবূ হাবীব থেকে বর্ণিত ইমাম আবূ দাউদের মারাসিলে বর্ণিত একটি হাদীস। হাদীসটি হলো, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুজন মহিলার নিকট দিয়ে গমন করলেন। তখন তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা তোমাদের শরীরের অংশ মাটিতে লাগিয়ে রাখবে। কেননা এক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের ন্যায় নয়। হাদীসখানা ইমাম বাইহাকী দুটি ভিন্ন ভিন্ন মাওসুল সনদে উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাজার “তালখীসে  বলেন, প্রত্যেকটি সনদেই মাতরূক বর্ণনাকারী বিদ্যমান।”

উপরে বর্ণিত বক্তব্যের শুরুতে নবাব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী পুরুষ মহিলার পার্থক্য উল্লেখ করে হাদীসখানা উল্লেখ করেছেন এবং এর সনদ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিন্তু শেষের দিকে এসে এ হাদীসটি দয়ীফ হওয়া বা সনদে মাতরূক বর্ণনাকারী থাকা সত্ত্বেও কেন হাদীসখানা দলীল তার কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

فمن يري  المرسل حجة و هو مذهب ابي حنيفة و مالك في طائفة والامام احمد في المشهور عنه  فحجتهم المرسل المذكور ومن لا يري المرسل حجة كالشافعي و جمهور المحدثين فباعتضاد كل من الموصول والمرسل  بالاخر و حصول القوة من الصورة المجموعة.

“যারা মনে করেন, মুরসাল দলীল হতে পারে, তাদের জন্য ইমাম আবূ দাউদের বর্ণিত মুরসাল হাদীসটি দলীল। আর মুরসাল হাদীস দলীল এ মত ইমাম আবূ হানীফার। একদল মনে করেন এটি ইমাম মালেকেরও অভিমত এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল থেকেও এটি প্রসিদ্ধ। আর যারা মনে করেন মুরসাল হাদীস দলীল নয় তাদের মতেও এ হাদীসটি দলীল, আর তা হলো মুরসাল ও মাওসূল হাদীস একটি অপরটিকে মজবুত করবে এবং সামগ্রিক ভাবে দলীলটি সুদৃঢ় হয়ে যাবে। আর এ অভিমত ইমাম শাফিঈ (র.) ও অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনে কিরামের।”

মোদ্দাকথা হলো, দয়ীফ হাদীস যদি একাধিক সনদে বর্ণিত হয় তবে তা শর্তসাপেক্ষে দলীল হয় এবং উসূলে হাদীসের পরিভাষায় তা হাসান লিগাইরিহী’র পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যায়। এর একটি প্রকৃত উদাহরণ এ হাদীসটি। যেটির মাধ্যমে স্বয়ং আহলে হাদীসদের একজন শীর্ষস্থানীয় আলিম মাসআলা ইস্তিম্বাত করে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (আল্লাহই সর্বাধিক অবগত)

 

ফেইসবুকে আমরা...