1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
আকাবিরে দেওবন্দ ও মীলাদুন্নবী
মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান
  • ১২ অক্টোবর, ২০২২

সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ তাআলার র্সবশ্রেষ্ঠ নিআমত হলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালীন, নাবিয়্যুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর জন্ম, জন্মকালীন ঘটনাবলীর আলোচনা, তাঁর মুবারক শৈশব ইত্যাদি স্মরণ করাকে মাহফিলে মীলাদুন্নবী বলা হয়। যুগ যুগ ধরে মুসলমানরা বছরের বিভিন্ন দিনে এবং বিশেষভাবে রবীউল আউয়াল মাসে এ মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। এ কাজটিকে উলামায়ে কিরাম উত্তম একটি কাজ হিসেবে গ্রহণ করছেন। শাইখ ইবন তাইমিয়া এবং নজদীপন্থীরা ব্যতীত আর কেউই মীলাদ শরীফ বা মাহফিলে মীলাদুন্নবীর বিরোধিতা করেননি। এমনকি উলামায়ে দেওবন্দের ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় তাদের আকবীরগণ মীলাদ কিয়ামকে শুধু বৈধই মনে করতেন না বরং মীলাদ মাহফিলকে মৌলিকভাবে মুবাহ বা জায়িয মনে করতেন।  মীলাদ মাহফিলে দাড়িয়ে নবীকে সালাম দেওয়াকে আদব মনে করতেন। আমরা এ প্রবন্ধে মীলাদ কিয়াম বিষয়ে উলামায়ে দেওবন্দের শিরতাজ কয়েকজন আলিমের বক্তব্য উল্লেখ করব এবং সেগুলো  পর্যালোচনা করব।

মীলাদ এবং কিয়াম সম্পর্কে  দেওবন্দী হযরতগণের প্রসঙ্গ আসলে প্রথমেই নাম আসে সমস্ত দেওবন্দী উলামার মুরব্বী, তাদের তরীকা-তাসাওউফের ইমাম হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (র.) এর কথা। যিনি মীলাদ কিয়ামকে শরীআতসম্মত মনে করতেন এবং নিজেও আমল করতেন। ফয়সালায়ে হাফত মাসআলাতে লিখেন-

فقير کا مشرب يہ ہے کہ محفل مولود ميں شريک ہوتا ہوں- بلکہ برکات کا ذريعۃ سمجھ کر ہر سال منعقد کرتا ہوں اور قيام ميں لطف ولذت پاتا ہوں

-“আমার নীতি হলো, আমি মীলাদ মাহফিলে শরীক হই,  একে বরকতের ওসীলা মনে করে প্রতি বছর এর আয়োজন করে থাকি এবং কিয়াম করে আনন্দ ও তৃপ্তি পাই।”
হাজী ছাহেব (র.) এর আরকেটি বক্তব্য পাওয়া যায় ‘আদ দুররুল মুনাযযাম’ কিতাবে। মীলাদ ও কিয়ামের বৈধতার দলীল দিয়ে কিতাবটি লিখেছেন দেওবন্দী ধারার আরেকজন বড় মাপের আলিম হযরত আব্দুল হক এলাহাবাদী মুহাজিরে মক্কী (র.), যিনি হযরত আব্দুল গণী মুজাদ্দিদ (র.) এর শাগরিদ। এতে বিভিন্ন উলামায়ে কিরমের মতামত উল্লেখ করে তিনি প্রমাণ করেছেন। মীলাদ-কিয়াম করা শরীআতসম্মত বৈধ একটি আমল। কিতাবটির র্পূণনাম “আদ দুররুল মুনাযযাম ফী বায়ানি হুকমি মাওলিদিন নাবিয়্যিলি আ’যাম।” হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মক্কী (র.) এ কিতাব সম্পর্কে  লিখেন,
مولف علامه جامع الشريعة والطريقة نے جو کچهه رساله الد المنظم فی بیان حکم مولد النبي الاعظم مں تحریر کیا وہ صواب هے ۔ فقر کا بهی بهی اعتقادی هے اور اکثر مشائخ عظام کو اسی طریقه پر پا یا. خداوند تعا لے مولف کو علم و عمل مںم برکت زیادہ عطا فرماوے ۔ العبد الضعيف . فقری امداد الله الچشتی ۔
“এ কিতাবের লেখক শরীআত এবং তরীকতের বিজ্ঞ একজন আলিম। তিনি এ কিতাবে যা র্বণনা করেছেন আমি ফকীর বিশ্বাস করি তা সম্পূর্ণ  সঠিক। আমি অধিকাংশ  বুযুর্গানে দ্বীনকে এই পথেই পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা লেখকের ইলম ও আমলে অধিক বরকত দান করুন।” (দুর্বল বান্দাহ, ফকীর ইমদাদুল্লাহ চশিতী সাবেরী) [আদ দুররুল মুনাযযাম]
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (র.) সম্পর্কে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি দৃঢ়ভাবে মীলাদ এবং কিয়ামের পক্ষে ছিলেন। দেওবন্দ ধারার যে সকল আলিম মীলাদের বিরোধিতা করেন তারাও স্বীকার করেন যে, হযরত হাজী ছাহেব (র.) মীলাদ কিয়াম করতেন। তিনি ফয়সালায়ে হাফতে মাসআলাতে এ মাসআলা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। মীলাদ জায়িয হওয়ার বিভিন্ন সূরত থাকাবস্থায় একে বিদআত বলা এবং এ নিয়ে ফিতনা করতে নিষেধ করেছেন। মীলাদ কিয়ামকে জায়িয মনে করার জন্য একজন সত্যান্বেষী দেওবন্দীর কাছে এ রিসালাহ থাকাই যথেষ্ট।
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র.) উলামায়ে দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় আলিম। তিনি মীলাদ ও কিয়ামকে জায়িয মনে করতেন। এমনকি ফয়সালায়ে হাফত মাসআলা নামক ছোট রিসালাহটিও থানভী ছাহেবের লিখা। স্বীয় পীর ও মুরশিদের নির্দেশে মীলাদ কিয়ামসহ কয়েকটি মুখতালাফ ফীহ মাসআলার সমাধান দিয়ে এ রিসালাহটি লিখে মুরশিদকে পাঠ করে শুনান। হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (র.) পুরো রিসালাটি শুনে কিছু দিক নির্দেশনা দেন এবং গ্রহণযোগ্যতার জন্য তার নামে ছাপানোর নির্দেশ দেন। (আশরাফুস সাওয়ানহি, ১/৩১৯)
এ থেকে বুঝা যায় ফয়সালায়ে হাফত মাসআলাতে যে ফাতওয়াগুলো দেওয়া হয়েছে তা একই সাথে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (র.) এবং আশরাফ আলী থানভী (র.) এর ফাতওয়া। এবার আমরা দেখি ফয়সালায়ে হাফত মাসআলা তে কী লিখা হয়েছে। কিতাবের শুরুর দিকেই লিখা আছে,

اگر کوئی شخص ميلاد ميں اس قسم کی مخصوص کی ہوئی باتيں (تاريخ قيام وغيرہ) اختياری سمجھتا ہے اور بذات خود عبادت نھيں سمجھتا بلکہ صرف مصلحت سے ان پر عمل کرتا ہے البتہ اپنے اس مقصد کو جس کے لئے يہ سا کچھ کرتا ہے- (يعني حضور سروار کائنات صلی اللہ عليہ وسلم کے ذکر کے احترام کو) ضرور عبادت جانتا ہے تو يہ بدعت نہيں ہے

-“কেউ যদি মীলাদ মাহফিলের নির্ধারিত তারিখ, কিয়াম ইত্যাদিকে ঐচ্ছিক মনে করে এবং এগুলোকে ইবাদত মনে না করে বরং কোন অভিপ্রায় এসব করে, তবে যাকে উদ্দশ্যে করে এসব করা হচ্ছে তথা হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাযীমকইে ইবাদত মনে করে তাহলে তা বিদআত হবে না।”
ফয়সালায়ে হাফত মাসআলা থেকে বেশি উদ্ধৃতি দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ এ রিসালাহ সবার কাছে প্রসিদ্ধ। এ রিসালাহ থেকে প্রমাণিত হয় হযরত থানভী (র.) মীলাদ কিয়াম করাকে জায়িয এবং মুবাহ মনে করতেন। এ হলো থানভী ছাহেবের প্রথম দিকের ফাতওয়া। পরবর্তীতে থানভী ছাহেব মীলাদ কিয়ামকে সরাসরি জায়িয বলতেন না। বরং কিছু শর্তের ভিত্তিতে জায়িয বলতেন। তবে মীলাদ কিয়ামকে কখনো সরাসরি অস্বীকার করেননি, যেমনটি বর্তমান সময়ের দেওবন্দী ধারার অনেক আলিম বলে থাকেন।

তৎকালীন কিছু মানুষ মীলাদ কিয়াম মাহফিলকে কেন্দ্র করে বদ আকীদা রাখত, নারী পুরুষের সমাগম করতো, মীলাদ ও কিয়ামকে আবশ্যক মনে করত। এসব দিক বিবেচনায় তিনি মীলাদ কিয়ামকে সরাসরি জায়িয বলা থেকে ফিরে আসেন। এ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানার জন্য হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান কৃত ‘আশরাফুস সাওয়ানিহ’ কিতাব পাঠ করতে পারেন।
যিনি মুরশিদের সান্নিধ্যে অবস্থান করে স্বীয় পীর ও মুরশিদকে মীলাদ কিয়াম করতে দেখলেন, মুরশিদের নামে মিলাদ কিয়াম জায়িয বলে ফাতওয়া দিলেন। তিনি কি ঢালাওভাবে সব ধরণের মীলাদ কিয়ামকে বিদআত ফাতওয়া দিতে পারেন? সকল প্রকার মীলাদ কিয়াম যদি বিদআত হয় তাহলে নিজের মুরশিদের আমলও তো প্রশ্নবদ্ধি হয়ে যায়। অথচ কেউ যদি ইনসাফের সহিত থানভী ছাহেবের ফাতওয়া পড়েন তাহলে বুঝতে পারবনে তিনি সব ধরনের মীলাদ কিয়ামকে নাজায়িয বলেন নি। হযরত ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (র.) এর অন্যতম খলীফা উলামায়ে দেওবন্দের শিরতাজ হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (র.)। তাকে হাজী ছাহেব (র.) এর মীলাদ কিয়াম করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

وہ خود لکھتے ہيں کہ در اصل یہ مباح ہيں۔ اگر ان کو سنت یا ضروری جا نے بدعت تعدی حدود اللہ تعالی اور گناہ ہے اور بدون اس کے کرنے ميں وہ اباحت لکھتے ہيں

-“এ বিষয়ে (মীলাদ ও কিয়াম ) তো তিনি (হাজী ইমদাদুল্লাহ র.) নিজেই লিখেছেন যে,  ইহা মূলত মুবাহ বা জায়িয। যদি কেউ ইহাকে সুন্নত অথবা আবশ্যক মনে করে তাহলে বিদআত, আল্লাহর বিধানের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন এবং তাতে গুনাহ হবে। আর কেউ যদি মীলাদ কিয়ামকে সুন্নত বা আবশ্যক মনে না করে তাহলে তো তিনি লিখেছেন ইহা মুবাহ।” (ফাতওয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ. ১৪৯)
হযরত গাঙ্গুহী (র.) নিজে মীলাদের ফাতওয়ায় তাশাদ্দুদ করতেন। আমাদের র্বতমান দেওবন্দী ভাইয়েরা গাঙ্গুহী ছাহেবের ফাতওয়া উল্লখে করে জৌনপুর এবং ফুরফুরাসহ ভারত উপমহাদেশের বহু হাক্কানি মাসলাক এবং বিশ্বব্যপী উলামায়ে কিরাম যে মীলাদ কিয়াম করতেন সেটাকেও বিদআত বলে থাকেন। কিন্তু তারা যদি ইনসাফের সহিত গাঙ্গুহী ছাহেবের ফাতওয়া পড়তেন তাহলে ঢালাওভাবে মীলাদ কিয়ামকে বিদআত বলতে পারতেন না। কেননা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (র.) মীলাদ কিয়াম বিদআত হওয়ার যে কারণ উল্লখে করেছেন সেটা ভারত উপমহাদেশের উল্লিখিত দুটি ধারা ও বিশ্বব্যপী বেশিরভাগ উলামায়ে কিরামের মীলাদ কিয়ামে সর্ম্পূণ অনুপস্থিত।
গাঙ্গুহী (র.) কোন কারণে মীলাদকে বিদআত বলেছেন সে সর্ম্পকে তিনি লিখেন,

ہںں ہم لوگ منع کرتے ہيں تو وجہ یہ ہے کہ ان کو رسوم اہل زمانہ سے خبر نہيں کہ یہ لوگ ان قود کو ضروری جانتے ہيں لہذا باعتبار اصل کے مباح لکھتے ہںں اور ہم لوگوں کو عادت عوام سےمحقق ہو گيا ہے کہ یہ لوگ ضروری اور سنت جانتے ہيں ۔ لہذا ہم بدعت کہتے ہيں- پس فی الحقيقت مخالفت اصل مسائل میں نہيں ہوئی

“আমরা (মীলাদ-কিয়ামকে) নিষেধ করি (হাজী ছাহবে র.) বর্তমান সময়ের মানুষরে রুসুম সম্পর্কে র্অথাৎ লোকেরা যে ইহাকে আবশ্যক মনে করে এ সর্ম্পকে তারা অবগত ছিলেন না। তাই তারা মীলাদের মৌলিক হুকুম জায়িয লিখেছেন। কিন্তু মানুষের অভ্যাস থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে,  তারা এগুলোকে আবশ্যকীয় মনে করে, এজন্য আমরা বিদআত বলি। না হলে বাস্তবে মূল মাসআলায় (হাজী ছাহেব এবং আমাদের মধ্য) কোন মতবিরোধ হয়নি। (ফাতওয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ. ১৪৯)
এই হলো গাঙ্গুহী ছাহেবের ফাতওয়ার ভাষ্য। এই ফাতওয়াকে পূঁজি করে পরবর্তী অনেক দেওবন্দী আলিম মীলাদ কিয়ামের মূল মাসআলাকে বিদআত-নাজায়িয বলে ফাতওয়া দিচ্ছেন। অথচ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (র.) মীলাদ কিয়ামকে মৌলিকভাবে নাজায়িয ফাতওয়া দেন নি। তার বক্তব্যর সারসংক্ষপে হলো-
* মীলাদ কিয়াম মৌলিকভাবে জায়িয হওয়ার ব্যাপারে হাজী ছাহেব এবং তার মধ্যে কোন র্পাথক্য নেই।
*তিনি কেবল তাদের মীলাদ কিয়ামকে নাজায়িয বলেন, যারা ইহাকে জরুরী মনে কর।

দেওবন্দী উলামায়ে কিরামের আকীদার একটি গুরুত্বর্পূণ কিতাব হলো আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ।কিতাবটি লিখেছেন হযরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহরানপুরী (র.)। ভারতের কিছু আলিম দেওবন্দীর আকীদা নিয়ে হিজাযের তথা মক্কা মদীনার আলিমদের কাছে মিথ্যাচার করেন এবং তাদের উপর কুফরী ফাতওয়া নিয়ে আসেন। সায়্যিদ মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (র.) তখন তখন মদীনায় ছিলেন। এ ঘটনা অবগত হলে তিনি হিজাযের আলিমদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। হিজাযের আলিমরা বিষয়টি বুঝতে পেরে বিভিন্ন বিষয়ে দেওবন্দী উলামাদের আকীদা জানতে চেয়ে তাদের নিকট ২৬টি প্রশ্ন লিখে পাঠান। তাদের আলিম উলামাদের অনুরোধে মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী (র.) প্রশ্নগুলোর জবাব লিখে পাঠান। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সমূহ নিয়েই এই বই। এই বইটি মক্কা-মদীনা ও আল আযহাররে আলিমরা সত্যায়ন করেছেন। বইটি ছোট হলেও এখানে উলামায়ে দেওবন্দের মৌলিক আকীদা সমূহকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ বইয়ের ২৬ টি প্রশ্নের দুটি প্রশ্ন ছিলো মাহফিলে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কিয়াম সর্ম্পক। এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খলীল আহমদ সাহারানপুরী (র.) হযরত আহমদ আলী সাহারানপুরী (র.) এর বক্তব্য উল্লেখ করেন। আল্লামা আহমদ আলী সাহারানপুরী (র.) কে মীলাদ মাহফিলের জায়িয এবং নাজায়িয পদ্ধতি সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হয়ছিল। তিনি জবাব দেন,

إن ذكر الولادة الشريفة لسيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بروايات صحيحة في اوقات خالية عن وظائف العبادة الواجبات وبكيفية لم تكن مخالفة عن طريق الصحابة واهل القرون الثلاثة المشهود لها بالخير وبالأعتقادات التي موهمة بالشرك والبدعة وبالاداب التي لم تكن مخالفة عن سيرة الصحابة التي هي مصداق قوله عليه السلام ما انا عليه واصحابي. وفي مجالس خالية عن المنكرات الشرعية موجب للخير والبركة بشرطين ان يكون مقرونا بصدق النية والإخلاص واعتقاد كونه داخلا في جملة الأذكار الحسنة المندوبة غير مقيد بوقت الأوقات. فإذا كان كذالك لا نعلم أحدا من المسلمين أن يحكم عليه بكونه غير مشروع.

-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের আলোচনা তথা মীলাদ মাহফিল যদি সহীহ র্বণনার দ্বারা হয়, আবশ্যকীয় ইবাদতের সময় ব্যতীত অন্য সময়ে এমন পদ্ধতিতে যা সাহাবায়ে কিরাম বা কুরূনে সালাসার বিপরীত নয়, শিরক বিদআতের সাথে সম্পর্কিত বিশ্বাস থকেে মুক্ত হয়ে এবং শরীআতের সব ধরনের অপছন্দনীয় কাজ থকেে মুক্ত হয়ে যে মীলাদ মাহফিল হয় তা কল্যাণ ও বরকতকে আবশ্যক করে। তবে এগুলো হবে দুটি শর্তের ভিত্তিতে,  এক. নিয়তের বিশুদ্ধতা, দুই. মাহফিলে মীলাদকে পূণ্যময় মুস্তাহাব যিকরের অর্ন্তভুক্ত মনে করা এবং সেটাকে কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট না করা। মীলাদ মাহফিল যখন এমন হবে তখন তাকে বিদআত ফাতওয়া দিতে পারে এমন মুসলমানের কথা আমার জানা নেই। (আল মুহান্নাদ পৃ. ৮৬)
এ জবাব থেকে বুঝা গেল, হযরত সাহারানপুরী (র.) মৌলিকভাবে মাহফিলে মীলাদকে নাজায়িয বলেন নি। বরং যে সকল মীলাদ মাহফিলে নিষিদ্ধ র্কাযাবলি থাকব সেগুলো র্বজনীয়। এ আকীদার বইয়ে উলামায়ে দেওবন্দের অনেক আলিম সত্যায়ন করেছেন। যেমন, শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, মীর আহমদ হাসান আমরোহী, মুফতী আযীযুর রাহমান দেওবন্দী।
মীলাদ শরীফে যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দেওয়া হয় তখন সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দেন। দাড়িয়ে সালাম দেওয়াকে আদব মনে করা হয়। আকাবিরে দেওবন্দ ও সালামের সময় দাড়িয়ে যাওয়াকে জায়িয এবং আদব মনে করতেন। ফয়সালায়ে হাফত মাসআলায় হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (র.) এর ফাতওয়া, এ কিতাবে থানভী ছাহেব এবং গাঙ্গুহী ছাহবেরে সর্মথন থেকে এমনটিই প্রমাণতি হয়। তাদের কেউ কেউ বিপরীত ফাতওয়া দলিলেও এসব  ফাতওয়া দ্বারা এটা প্রমাণ হয়না যে তারা মৌলিকভাবে কিয়ামকে অস্বীকার করেন। বরং থানভী ছাহেব, গাঙ্গুহী ছাহেব, কাশমিরী ছাহেব, মাদানী ছাহেব; তাদের কিতাবাদি এটাই প্রমাণ হয় তারা মূলত কিয়ামকে জায়িয মনে করেন। নির্দিষ্ট কিছু কারণে কেউ কেউ কিয়ামকে নাজায়িয বলেন। হযরত থানভী ছাহেব একবার মীলাদ কিয়াম সমর্থনকারী কিছু আলিমদের উদ্দেশ্যে বলেন-

اگر تم اس کو ضروري نہيں سمجھتے ہو تو ايک دفعۃ تم قيام مت کرو- ہمارے ساتھ بيٹے رہو تو ہم ايک دفعۃ تمہارے ساتھ قيام کرنے کو تيار ہيں- يہ اس امر کا ثبوت ہو گا کہ قيام کو ناجائز يا حرام ہم بھی نہيں

“তোমরা যদি কিয়ামকে জরুরী মনে না করো তাহলে একবার কিয়াম না করে আমাদের সাথে বসে থাকো, তখন আমরাও তোমাদের সাথে কিয়াম করতে প্রস্তুত আছে। এর দ্বারা প্রমাণ হবে যে,  কিয়ামকে আমরা নাজায়িয বা হারাম বলি না। (আনোয়ারুল বারী, ৭/৩০)
মীলাদ শরীফে কিয়াম যদি হারাম বা বিদআত হয়ে থাকে তাহলে কি থানভী ছাহেব একবার হারাম কাজ বা বিদআত কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন? বরং তার বক্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনি কিয়াম করাকে হারাম কিংবা নাজায়িয মনে করতেন না।

মূল কথা হলো, নাজায়িয কর্মকান্ড মিশ্রিত না হলে মীলাদ ও কিয়াম উলামায়ে দেওবন্দের কাছে বৈধ। সাদ্দুয যারাঈ নীতিকে পুঁজি করে আমভাবে সকল মীলাদ মাহফিলকে বিদআত বলা চরম বাড়াবাড়ি।

এ প্রবন্ধটি মীলাদ-কিয়াম জায়িয কিনা সেটা প্রমাণ করার জন্য নয়। এর জন্য শরীআতের র্পযাপ্ত দলীল রয়েছে। এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো মীলাদ কিয়াম সর্ম্পকে উলামায়ে দেওবন্দের দৃষ্টভঙ্গি তুলে ধরা। পরিশেষে হযরত আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী এর দুআর একটি অংশ দিয়ে শেষ করছে। তিনি তার  ‘আখবারুল আখইয়ার’ কিতাবের শেষে লিখেন,

اے الله ميرا كوئی عمل ایسا نہیں ہے جسےآپکے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں ، میرے تمام اعمال میں فساد نیت موجود رہتی ہے البتہ مجھ حقیر فقیر کا ایک عمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کی وجہ سے بہت شاندار ہے اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلادکے موقع پر میں کھڑے ہو کر سلام پڑھتا ہوں اور نہایت ہی عاجزی و انکساری محبت وخلوص کے ساتھ تیرے حبیب پاک صلی اللہ علیہ و سلم پر درود و سلام بھیجتا رہا ہوں

-হে আল্লাহ! আমার এমন কোনো আমল নেই, যা আপনার দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে কর, আমার সব আমলই মন্দ নিয়ত থাকি। তবে আমার মত নগণ্যের একটি আমল আপনার তাওফীকে অনেক মহান, তা হল আমি মীলাদের মজলিসে দাড়িয়ে সালাম পড়ি এবং খুব কাতর হয়ে অত্যন্ত মহব্বত ও ইখলাসের সাথে আপনার হাবীবের উপর দুরূপ সালাম পাঠ করি।

প্রসঙ্গত, অনেকে দাবী করেন আখবারুল আখইয়ার মূল কিতাবের (র্ফাসী) দুআয় মীলাদ শব্দ উল্লেখ নেই। বরং মীলাদের স্থানে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাওদা শরীফে দাঁড়িয়ে সালাম আদায়ের কথা।
ইনসাফের সাথে কথা বলছি, আমার কাছে ফার্সী আখবারুল আখইয়ার। তবে বিভিন্ন প্রকাশনীর ৩ টি র্উদু কপি আছ। এর প্রত্যেকটি দুআয় মীলাদ শব্দ আছে। হতে পারে, আখবারুল আখইয়ার ফার্সী কপি থেকে কেউ মীলাদ শব্দকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কেননা এরকম পরিবর্তনের কিছু ঘটনা কিছু মহলের  মহলের পক্ষ থেকে অনেকবারই হয়েছে। আমার কাছে যদিও আখবারুল আখইয়ারের ফার্সী কোনো নুসখা নেই তথাপি আমার মোটামুটি বিশ্বাস যে,  ফার্সী কপিতে মীলাদ শব্দ আছে। কেননা, আমার কাছে পাকিস্তানের দারুল ইশাআত থেকে প্রকাশিত এক কপি আখবারুল আখইয়ার আছে। এর প্রকাশক হলেন মুফতী তাকী উসমানী ছাহেবের ভাই মাওলানা রাফী উসমানী। র্উদু এ কিতাবটির ভূমিকা লিখেছেন স্বয়ং মুফতী শফী (র.)। প্রকাশকের কথায় মাওলানা রাফী উসমানী ছাহেব বলেন, আমাদের লাইব্রেরীতে আখবারুল আখইয়ারের কয়েকটি নুসখা রয়েছে। তন্মধ্য থেকে সব থেকে নির্ভরযোগ্য নুসখা থেকে শব্দে শব্দে এটি অনুবাদ করা হয়েছে। মুফতী শফী (র.) এর ভূমিকাযুক্ত মাওলানা রাফী উসমানী ছাহেব যে আখবারুল আখইয়ার প্রকাশ করেছেন তন্মধ্যে উক্ত দুআয় মীলাদের কথা উল্লেখ আছে।

ফেইসবুকে আমরা...