1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
তালেবান মুখপাত্রের সাক্ষাৎকার
Reporter Name
  • ৩০ জুলাই, ২০২১

[সম্প্রতি তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্লড আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তালেবানের মুখপাত্র সোহেল শাহীনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। সাক্ষাৎকারে সোহেল শাহীন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সাথে তালেবানের চুক্তি, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও এসব বিষয়ে তালেবানের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। সাব্বির আহমদ কর্তৃক অনূদিত সাক্ষাৎকারটির নির্বাচিত অংশ মাসিক পরওয়ানার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।]

সাংবাদিক: সোহেল শাহীন আপনাকে ধন্যবাদ, দোহা থেকে যোগদানের জন্য! আমেরিকা ও তালেবানের মধ্যে আফগানিস্তানে এরকম একটি চুক্তি ছিলো যে আমেরিকা তার সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নিবে, বিনিময়ে তালেবান তার সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করবে, কিন্তু গত কয়েক মাসে আফগানিস্তানে সহিংসতা আরো বেড়েছে এবং জনগণ এরকম সহিংসতার জন্য তালেবানকে দায়ী করছে। আপনি বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সোহেল শাহীন: চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিলো যে, আমেরিকা তার সব সৈন্য মে মাসের প্রথম দিকেই প্রত্যাহার করে নিবে কিন্তু তারা তা করেনি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন ১১ সেপ্টেম্বর অন্যান্য বিদেশি সেনাদের সাথে তার সৈন্যও আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নিবেন। এখনো আমরা তাদেরকে আক্রমণ করিনি এবং যে সহিংসতার কথা বলা হচ্ছে তা আমাদের দিক থেকে মোটেও হচ্ছে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে প্রায় ১৫০টি আফগানিস্তানের জেলা আমাদের অধিনস্ত হয়েছে, আর তা হয়েছে তাদের দিক থেকে স্বেচ্ছায়। আমরা যুদ্ধ বা সামরিক শক্তি দ্বারা জেলাগুলো দখল করিনি। মাত্র ছয় সপ্তাহে যুদ্ধের দ্বারা এতগুলো জেলা দখল করা সম্ভব নয়।
সাংবাদিক: বিদেশি সৈন্যরা ও আমেরিকার সৈন্যরা আফগানিস্তানে থেকে গেলে তালেবানরা এটিকে চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে দেখবে। এটার অর্থ নির্দিষ্ট করে বললে নির্ধারিত সময়ে সৈন্য প্রত্যাহার করা না হলে আপনারা কি প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছেন?
সোহেল শাহীন: অবশ্যই, তারা যদি চুক্তি লঙ্ঘন করে কোন পদক্ষেপ নেয় এবং আমাদের দেশে হস্তক্ষেপ করতে চায় হোক সে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাহলে এটা মেনে নেয়া হবে না। এরকম করলে আমাদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার ও মুকাবিলা করার।
সাংবাদিক: আচ্ছা, আফগানিস্তানে বসবাসরত কূটনীতিক, এনজিও কর্মী এবং অন্যান্য বিদেশি বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষেত্রে কী ঘটবে? তাদের জন্যও কি সময়সীমা প্রযোজ্য হবে?
সোহেল শাহীন: এনজিও কর্মী, কূটনীতিক ও দূতাবাসের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আমরা তাদেরকে নিরাপদ পরিবেশ দিবো, যাতে তারা আমাদের জনগণের প্রয়োজনে কাজ করতে পারে। আমরা পৃথিবীর সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করবো। এমনকি এই সময়েও আমরা দূতাবাস কিংবা এনজিও কর্মীদের আক্রমণ লক্ষ্যবস্তু বানাবো না, এটা আমাদের অঙ্গীকার।
সাংবাদিক: আমেরিকা কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলেছিল এবং তুরস্ক এটি পরিচালনা ও নিরাপত্তা প্রদানেরও প্রস্তাব করেছিল কিন্তু তালেবান সেটি প্রত্যাখ্যান করেছিল। কেন আপনারা প্রত্যাখ্যান করলেন?
সোহেল শাহীন: কারণ আমেরিকা ও ন্যাটো সৈন্যদের আফগানিস্তানে বসবাস করা চুক্তি লঙ্ঘনের সামিল কেননা তারা সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। হ্যাঁ, তুরস্ক অনেক বড় ইসলামিক দেশ, তাদের সাথে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক ভালো সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এখন একটি দখলদারিত্বের ক্ষেত্র চলছে তাই সব ধরনের সৈন্যের আমরা প্রত্যাহার চাই। আপাতত এই অধ্যায় শেষ হোক। পরে আমরা আরেকটি অধ্যায়ে প্রবেশ করতে সক্ষম যেটি হলো আফগানিস্তানের স্বাধীনতার অধ্যায়, যেখানে আমরা বিশ্বের সব দেশের সাথে সম্পর্ক রাখবো; বিশেষ করে ইসলামিক দেশগুলোর সাথে, যেখানে তুরস্কও থাকবে।
সাংবাদিক: তুরস্ক সৈন্যদের নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও কাবুলে বসবাস আফগানিস্তান-তুরস্ক সম্পর্কে অনেক খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে যেটা আপনার কথা থেকে পরিষ্কার বুঝা গেলো। আমেরিকার সৈন্যদের যেরকম অবস্থা ঠিক সেরকম অবস্থা তুরস্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সোহেল শাহীন: তাছাড়া তুরস্কের ন্যাটোর সাথে সম্পর্ক রয়েছে, আমেরিকার সৈন্যরা যখন আফগানিস্তানে আক্রমণ করেছিল তখন তুরস্কও আমেরিকার পক্ষে ছিলো, সমর্থক হিসেবে। তাই এখন আমেরিকার সৈন্যদের পাশাপাশি তাদেরকেও বলবো আফগানিস্তান থেকে সবার চলে যাওয়া উচিত। তারপর আমরা যখন সরকার গঠন করবো তখন আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক থাকতে পারে, এটা ঐ সময়ের সাথে সম্পর্কিত। এখন সব ধরনের দখলদারিত্বের অবসান আমরা চাই যা আমরা বারবার ঘোষণা দিয়েছি।
সাংবাদিক: আফগানিস্তানে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটতে যাচ্ছে এটা নিয়ে আফগানবাসী খুব উদ্বিগ্ন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘানি খুব জোর গলায় বলছে যে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীরা খুব শক্তিশালী, কিন্তু সম্প্রতি তারা দেশ ত্যাগ করে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তানে চলে যায় আর ঐদিকে তালেবান রাতারাতি এগিয়ে চলছে, শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। এরকম পরিস্থিতিতে আসলেই কি তালেবান শান্তি আলোচনায় যাওয়ার জন্য তৎপর?
সোহেল শাহীন: হ্যাঁ, আলোচনা অব্যাহত রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানে যাওয়াই আমাদের নীতি। আমাদের নীতি এখনো পরিবর্তন হয়নি আর আমরা পরিবর্তন করতে উৎসাহীও না কারণ যা হবে তা আলোচনার মাধ্যমেই হবে, যার মাধ্যমে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। দ্বিতীয়ত যে উন্নয়নগুলো হচ্ছে, যেমন জেলাগুলোর আত্মসমর্পণ, তা এটাই প্রমাণ করে যে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর তাদের প্রশাসনের প্রতি অবিশ্বাস তীব্র হয়ে দেখা দিচ্ছে। তারা বলছেন যে আমরা আমাদের প্রশাসনকে বিশ্বাস করি না। আমরা তো আর যুদ্ধ করে তাদের সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করাচ্ছি না। তারা স্বেচ্ছায় আমাদের প্রশাসনে যোগ দিচ্ছেন। আমাদের নেতৃত্বের নির্দেশনা হলো সব স্কুল, অফিস, বাজার সুন্দরভাবে চলবে এবং খোলা থাকবে।
সাংবাদিক: আমি মনে করি, তালেবানের শাসন সম্পর্কে যে উদ্বিগ্নতা ও ভয়গুলো অনেক আফগানিদের মনের মধ্যে গাঁথা, যা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চলে আসছিলো, যেখানে জনগণের কাজকর্মগুলো যেমন টেলিভিশন, গান, সিনেমা, মেয়েদের দশ বছরের উপরে স্কুলে উপস্থিতি নিষিদ্ধকরণ ছিলো বাস্তবতা। আপনার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে যে, এটা মূলত আফগানিস্তানের জনগণের প্রশ্ন, যে উন্নয়নগুলো গত দুই দশকে হলো মহিলাদের অধিকার বিষয়ে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, যদি তালেবান ক্ষমতায় যায় তাহলে সব ধরনের অধিকার কি ঠিক থাকবে? মহিলারা কি তাদের শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ পাবে?
সোহেল শাহীন: অবশ্যই, মহিলারা ইসলামি আইন-কানুন, হিজাব ইত্যাদি মেনে চলে শিক্ষা, এমনকি চাকরিও করতে পারবে, এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। অনেক ইসলামী দেশগুলোতে এটি হচ্ছে। আমরা মুসলিম, আমরা এটি বিশ্বাস করি। যে জেলাগুলো আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তাদের জন্য স্কুল, বাজার, অফিস, সংবাদপত্র, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি সবকিছু পূর্বে যেরকম চলতো ঐরকমই থাকবে। ইসলামী শরীআ অনুযায়ী সবকিছু চলবে, এরকম দিকনির্দেশনা আমাদের আছে। এতে তো তাদের দুশ্চিন্তার কোন কারণ থাকার কথা না। অনেকে অনেক মিথ্যা প্রচারণা আমাদের বিরুদ্ধে ছড়াচ্ছে, আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। তালেবান আফগানিস্তানের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে, এতে কোন সমস্যা হবে না। যেহেতু আমরা ইসলামিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি তাই ইসলামী নিয়মের ভিতরে আমরা সব ধরনের স্বাধীনতা, অধিকার দেয়ার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইসলামী শরীআহ নারী পুরুষ সবাইকে যথাযথ অধিকার দিয়েছে।
সাংবাদিক: তাহলে আপনি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে তালেবান ক্ষমতায় গেলে গত দুই দশকের উন্নতিতে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না। এটার অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে তালেবান অনেক ভাবে নাগরিকের স্বাধীনতারে ব্যাপারে তাদের চিন্তাগুলো পরিবর্তন করেছে। এটা ঠিক কি না?
সোহেল শাহীন: ইসলামী আইন-কানুন মেনে চলে সব ধরনের স্বাধীনতা কেন আমরা তাদেরকে দিবো না!! আমরা মুসলিম, আমরা একটি ইসলামিক সরকার গঠন করতে যাচ্ছি যেখানে শরীআহ আইন চালু থাকবে এবং ইসলামী আইন নারী পুরুষ সবাইকে অধিকার দিয়ে থাকে। ইসলামিক আইন মেনে চলে সব ধরনের অধিকার দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয় তা ভিত্তিহীন। বাস্তবতার সাথে এসবের কোন সম্পর্ক নেই। দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে যে গণমাধ্যমে আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। এই আমি আপনার সাথে প্রথম কথা বলছি বিশ বছর পর, যেখানে আপনি অন্যদিকে অনেকের শতবার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাই আমাদের বিরোধীরা আমাদের বিপক্ষে প্রচারণা চালানোর অনেক সুযোগ পেয়েছে।
সাংবাদিক: তাই যে প্রচারণাগুলো চালানো হচ্ছিলো আপনাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আপনার কথামতো তা আসলে ভিত্তিহীন। আর আপনি বলছেন যে, আফগানিস্তান একটি ইসলামিক দেশ, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক কোন গোষ্ঠী এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ করবে না। কিন্তু অনেক মুসলিম দেশ রয়েছে যারা নারীদের শিক্ষার উপর, খেলাধুলা, সিনেমা ইত্যাদির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চেষ্টা করছে।
সোহেল শাহীন: হতে পারে অনেক ইসলামী দেশ এরকম করছে কিন্তু অনেক মুসলিম দেশে এখনো দেখা যায় তারা হিজাব পালন করছে, মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল রয়েছে। আফগানিস্তানের মুসলিম জনগণ যুদ্ধ করেছে পরপর দুইটি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দুটি উদ্দেশ্যে যাতে দখলদারিত্বের অবসান ঘটে এবং ইসলামিক সরকার গঠন হয়। অবশ্যই একটা সরকার অংশগ্রহণ করেছে আল আফরানসদের মাধ্যমে এবং যেটি জনগণের উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করবে এবং দেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকবে; এটিই আমরা চাই।
সাংবাদিক: শেষ প্রশ্ন আপনার কাছে, এখন যে শান্তি আলোচনা চলছে যেটাতে তালেবান প্রতিজ্ঞা করেছে যে এই আলোচনা সামনে আরো বেগবান হবে এবং প্রত্যাশা করছে যে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উপনীত হবে। তারা পরিকল্পনা করছে, একটি লিখিত শান্তি প্রস্তাব উপস্থাপন করবে আফগান সরকারের কাছে খুব শীঘ্রই। আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি?
সোহেল শাহীন: আমাদের পরিকল্পনা আছে কিন্তু ওরা যেরকম বল ছে ঐরকম না। আমাদের একটা পরিকল্পনা হচ্ছে যে, আমরা আফগান সরকারের জন্য আমাদের এজেন্ডা প্রস্তুত করেছি ও উপস্থাপন করেছি। তারা আমাদের এজেন্ডা জানে আমরা যা চাই, তারাও আমাদের কাছে তাদের এজেন্ডা উপস্থাপন করেছে। এজন্য দোহায় আলোচনা চলমান আছে। আলোচনাগুলো মন্তরগতিতে চলছে যেটা আমরা চাচ্ছি না, এটা দ্রুতগতিতে হওয়া দরকার। ধন্যবাদ।
সাংবাদিক: ধন্যবাদ তালেবানের মুখপাত্র সোহেল শাহীন আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য।

ফেইসবুকে আমরা...