1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ওয়াহাবী মতবাদ সহীহ কিনা?
জবাব দিচ্ছেন: মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ওয়াহাবী মতবাদ কী? সম্প্রতি দেওবন্দী ধারার একটি ম্যাগাজিনে স্বীয় উলামাদেরকে ওয়াহাবী সাব্যস্ত করে তাদের বিরোধীদেরকে কবর ও মাজার পূজারী আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিষয়টি কি সঠিক? বিস্তারিত জানতে চাই।

 

প্রশ্নকারী: বশির আহমদ

লালার গাঁও, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট

 

জবাব: ওহাবী মতবাদ ইসলামের নামে প্রচারিত একটি ভ্রান্ত (বাতিল) মতবাদ। প্রসিদ্ধ বাতিল ফিরকাহ খারিজীদের আকীদা ও কর্মপন্থার সাথে তাদের মিল পাওয়া যায়। এর প্রবর্তক মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী। তার জন্মস্থান ঐ ‘নজদ’ নামক স্থানে যেখান থেকে শয়তানের শিং এর বহিঃপ্রকাশ হবে বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদীস শরীফে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর ফলাফল হিসেবে তার প্রবর্তিত ও প্রচারিত ওহাবী মতবাদের মাধ্যমে ইসলামের আদর্শ বহির্ভুত ধ্বংসাত্মক আকীদার যে বিষ বৃক্ষরোপিত হয়েছে এটিকেই ‘শয়তানের শিং’ হিসেবে জগত বরেণ্য হকপন্থী মনিষীগণ মনে করেন। এ বিষয়ে সুপ্রসিদ্ধ হানাফী ফাতাওয়া গ্রন্থ ‘ফাতাওয়ায়ে শামী’তে এসেছে,

كما وقع في زماننا في أتباع عبد الوهاب الذين خرجوا من نجد وتغلبوا على الحرمين وكانوا ينتحلون مذهب الحنابلة، لكنهم اعتقدوا أنهم هم المسلمون وأن من خالف اعتقادهم مشركون، واستباحوا بذلك قتل أهل السنة وقتل علمائهم . (رد المحتار: ٢٦٢/٤ (

-আমাদের যুগে মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল ওয়াহাবের অনুসারীদের দ্বারা (নাজায়িয) বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে। যারা নজদের এলাকা থেকে বের হয়ে হারামাইন শরীফাইনের দখলদার হয়েছে। তারা নিজেদেরকে হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী বলে দাবী করে, অথচ তা অযৌক্তিক। কেননা তারা বিশ্বাস করে কেবল তারাই মুসলমান। আর যারা তাদের আকীদার পরিপন্থী তারা মুশরিক। আর এ সূত্র অনুযায়ী তারা আহলে সুন্নাহপন্থীদেরকে ও তাদের আলিমগণকে হত্যা করা বৈধ মনে করে। (নাউযুবিল্লাহ)

দেওবন্দের আকাবীর সকলেই হানাফী মাযহাবপন্থী হওয়ার বিষয় তাদের লিখিত কিতাবের সূত্রে প্রমাণিত। দেওবন্দের উলামা মাশায়িখগণ তাদের লিখিত কিতাবে ওয়াহাবী বলতে গায়র মুকাল্লিদ ভ্রান্ত লা মাযহাবীগনকে বুঝিয়েছেন ও সংজ্ঞায়িত করেছেন। এমনকি তাদের কেউ কেউ ওহাবীদেরকে তাদের ভ্রান্ত আকীদার কারণে বার বার ‘ওহাবীয়াহ খবীছাহ’ নাপাক ওয়াহাবী আখ্যায়িত করেই ক্ষান্ত হননি বরং রাসূল (সা.) এর শানে ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদীর বেয়াদবীপূর্ণ উক্তিকে কুফুরীতুল্য বলে ফাতাওয়া দিয়েছেন।

তাছাড়া দেওবন্দ ধারার আলিমগণ উপমহাদেশের গায়র মুকাল্লিদ (আহলে হাদীস) সম্প্রদায়ের প্রাচীন নাম ওয়াহাবী ছিল বলে তাদের পুস্তকাদিতে দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করেছেন। অপরদিকে বর্তমান ওয়াহাবীদের বড় মাপের আলিমগণের অনেকেই দেওবন্দ ধারাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গ্রহণ করা তো দূরের কথা বরং উক্ত ধারার বড় বড় আলিমগণের অনেককে কুফুরীর ফাতাওয়া দিয়েছেন। তাই দেওবন্দ ধারার অনুসারীরা নিজেদেরকে ওয়াহাবী বলে দাবী করা তাদের আকাবিরীন সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক বৈ কি হতে পারে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, আশ শিহাবুস সাকিব, আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, সাইফুল মুকাল্লিদীন, আল কাওলুল বালীগ ফিত্ তাহজীর আন জামাআতিত তাবলীগ দ্রষ্টব্য)

আর উক্ত ম্যাগাজিনে উদ্ধৃত দেওবন্দ বিরোধীদের সকলকে ঢালাওভাবে কবর বা মাজারপূজারী বলে আখ্যায়নও অসত্য ও অযৌক্তিক। কেননা আকীদার মূল বিষয় বহির্ভুত শাখাগত বহু মাসআলায় দেওবন্দপন্থীদের সাথে অন্যান্য হক্কানী সুন্নী উলামা মাশায়িখের মতবিরোধের বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট, যা কারো অস্বীকারের সুযোগ নেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন-মাশায়িখে রামপুর, মাশায়িখে ফুরফুরা, মাশায়িখে জৈনপুর ও তাদের শাখা হিসেবে সুপরিচিত ছারছীনা, ফুলতলী, সোনাকান্দাসহ আরো অনেক। আর তারা সকলেই প্রকৃত শিরক ও বিদআতবিরোধী অবস্থানে অতি কঠোর ও আপোষহীন। বিশেষত: কবর কিংবা মাজারকে কেন্দ্র করে শরীআতবিরোধী সকল কার্যকলাপের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যা কারো অজানা নয়। তাই উপরে বর্ণিত মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অযথা বিভেদ সৃষ্টির মতো অপরিণামদর্শী ইন্দন যোগানো বৈ কি হতে পারে?

 

জবাবদাতা: প্রিন্সিপাল ও খতীব, আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার 

মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র

ফেইসবুকে আমরা...