ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। হাত বাড়ালে ছোঁয়া যাবে এমনটা বললে বোধ হয় ভুল হবে না। রাত পোহালে সামনে থাকবে দুটি দিন। সোজাসাপটা সংবাদটা হলো, দুদিন পরই ঈদ। ঈদানন্দে মুখরিত হবে দিগি¦দিক। আহ্লাদে মেতে ওঠবে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর। সবার কানে কানে বেজে ওঠবে আনন্দ আর সুখের মিছিল।
সেই হেতুতেই খুশির অন্ত নেই ফুয়াদের। অন্যবারের তুলনায় এবার তাকে খানিকটা বেশিই হাসি-খুশি দেখাচ্ছে। বলা যায় খুশির ছায়াটা যেন সরতেই চাচ্ছে না ফুয়াদের মুখাবয়ব থেকে। হয়তো প্রিয় বন্ধু রুহানকে সাথে নিয়ে কেনাকাটায় যাচ্ছে বলে আনন্দের গোল্লা ফুটছে তার ভেতর। ভাবছে কেনাকাটার মধুময় ক্ষণগুলো কেমন কাটবে! ভাবনায় হারিয়ে গিয়ে অবলোকন করছে দুই বন্ধুর ছুটোছুটি আর হুটোপুটি মিশ্রিত কেনাকাটার ক্ষণ। ভাবনার মধ্যেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেলো রুহানের কল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রুহানের মৃদু শাসনযুক্ত প্রশ্ন।
-কিরে এখনও বের হলি না যে?
ফুয়াদ হকচকিয়ে বলে ওঠলো- একটু অপেক্ষা কর! এইতো বেরিয়ে পড়ছি। চটজলদি জামাটা পাল্টে নিলো ফুয়াদ বাইরে বের হতেই উভয়ের মুলাকাত।
ফুয়াদ বলে উঠলো-
-আচ্ছা, বলতো রুহান; কোথায় যাওয়া যায় কেনাকাটার জন্য?
রুহানের প্রতুত্তর- আমি বলতে পারবো না!
তুই যেখানে ভালো মনে করিস।
-চল তাহলে, নিউ মার্কেটেই যাওয়া যাক।
বেশ ক’দিন হলো যাওয়া হচ্ছে না নিউ মার্কেটের ধারেকাছেও। ফুয়াদের ইচ্ছেটাকে সায় দিয়ে দুই বন্ধু হাযির হলো, নিউ মার্কেটে।
কেনাকাটা আর ঘুরাঘুরিতেই ঘনিয়ে এলো ধূলিময় সন্ধ্যা। বিদায় নিয়ে দুজন ফিরে গেল যে যার বাড়িতে। বাড়ির উঠোন মাড়িয়ে রুমে ডুকতেই কানে বেজে ওঠলো বাবার ডাক। ফুয়াদ চটজলদি হাযির হলো বাবার সামনে। ফুয়াদের হাতে কিছু দেখতে না পেয়ে পরক্ষণেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ফুয়াদকে লক্ষ্য করে-
-কিরে তুই না কেনাকাটার জন্য টাকা নিয়ে গেলি! তো খালি হাতে ফিরলি যে?”
ফুয়াদের উত্তর
-বাবা, আমি আর রুহান একসাথেই কেনাকাটায় গিয়েছিলাম। আপনিতো জানেনই রুহানের বাবা মারা যাবার পর ওদের পরিবারের দায়িত্বটা পড়ে গেছে রুহানের উপর। এতখানি বয়সে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছে ও। এবার রুহান তার টিউশনি থেকে পাওয়া টাকাগুলো দিয়েই কেনাকাটা করতে চেয়েছিল। পরে জানতে পারলাম, টিউশনি থেকে পাওয়া যে টাকাগুলো দিয়ে জামা-কাপড় কিনতে চেয়েছিল, সেটা বাসা ভাড়া আর তার মায়ের ওষুধ কিনেই শেষ হয়ে গেছে।
আমি টাকাগুলো দিয়ে রুহান আর তার মায়ের জন্য জামাকাপড় কিনে দিয়ে এসেছি। আর আমারতো গত ঈদের জামা-কাপড়গুলোও নতুনই রয়ে গেছে।
ফুয়াদের মুখ থেকে পুরো কাহিনি শুনে ফুয়াদের বাবার চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেল! চোখের কোণ দিয়ে ঝরতে শুরু হলো আনন্দবৃষ্টি। এ যেন সুখের ফুয়ারা বয়ে চলছে। সাথে সাথে বাবা বুকে জড়িয়ে নিলেন ফুয়াদকে। ফের কেনাকাটার জন্যে টাকা তুলে দিলেন ফুয়াদের হাতে।