রাজার ভয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে তিনি রওয়ানা হলেন দেশের সীমানা পেরিয়ে নিরাপদ কোথাও আশ্রয়ের আশায়। পথ চলছেন আর চিন্তার একফালি রোদ তার মাথার ওপর দিয়ে বয়ে চলছে। দূরে কোথাও লু-হাওয়ার মাতামাতি হয়তো চলছে। এদিকে কোথাও কেউ নেই। হয়তো কারো থাকারও কথা নয়। কয়েকটি বৃক্ষ আর ছায়াদার গাছ-গাছড়ার এই আঙিনায় চলতে চলতে তিনি বিশ্রামের ঠিকানা গেড়েছেন একটি শহরে। শহরটির নাম মাদইয়ান। একটি গাছের ছায়ায় গা শিথিল করে দিবেন এমন সময় সেখানে এক কুয়ার নিকট কিছু মানুষের ভিড় দেখতে পেলেন। যারা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছিল। তৎক্ষনাৎ তার নযর কাড়লো কূপের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন মেয়ের প্রতি যারা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে এসেছিল কিন্তু দীর্ঘক্ষণ লজ্জাবনতভাবে তারা দাঁড়িয়ে রইলো কুয়ার পাশে। তাদের এই অবস্থা দেখে তিনি কাছাকাছি এসে জিজ্ঞেস করলেন,তোমাদের কী ব্যাপার? তারা বলল আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারিনা, যতক্ষণ রাখালেরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি এ কাজে অক্ষম। এ কথা বলার পর তাদের প্রতি তাঁর মনে দয়ার সঞ্চার হলো। তিনি তাদের পশুগুলোকে পানি পান করালেন এবং পুনরায় সেই গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন। সেই পথিক মেয়েদের প্রতি যে সহানুভূতি প্রদর্শন ও উপকার করলেন তা তারা বাড়ি ফিরে বৃদ্ধ পিতার নিকট খুলে বলল। যার ফলে পিতার অন্তরে উপকারের বদলা দেওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হল।
নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে কে সেই পথিক? হ্যাঁ,এই পথিক ব্যক্তিটি ছিলেন আল্লাহর মনোনীত উলুল আযম নবীদের একজন হযরত মূসা (রা.)। তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে হিজরত করছিলেন এমন জায়গায় যেখানে তাঁর মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই ছিলনা। হাতে পয়সাপাতিও ছিলনা। ছিলনা কোনো খাবারের বন্দোবস্তও। দীর্ঘ সফরের ফলে ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত-শ্রান্ত তিনি দুআয় মগ্ন হলেন। আর বললেন, হে আমার রব!নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন। আমি তো তারই ভিখারী।
আল্লাহর কী দয়া! কিছুক্ষণ পরেই মেয়েদের একজন এসে তাকে বলল,‘আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন,তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। তারপর মূসা (আ.) তার নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে সে বলল, ‘ভয় করো না। তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল হতে বেঁচে গেছ।
মেয়েদের একজন বলল, হে আমার পিতা! আপনি একে মজুর নিযুক্ত করুন, কারণ আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, সে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।
তাদের পিতা মূসা (আ.)কে বললেন,আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর সেটা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।
মূসা (আ.) অচেনা অজানা এক লোকালয়ে আসলেন,বিদেশ বিভুঁইয়ে তাঁর ছিলনা কোনো পরিচিতজন, ছিলনা কোন আশ্রয় অথচ মহান রব তাকে আশ্রয়ের জায়গা দিয়েছেন,তাঁর রিযকের ব্যবস্থা করেছেন। ঘনঘোর বিপদে, দু:খ, দুর্দশার দিনে অস্থির না হয়ে তিনি মহান রবের মুখাপেক্ষী হয়েছেন, তাঁর দিকে নিবিড়ভাবে ঝুঁকে পড়েছেন বলেই আল্লাহ খুশি হয়ে তার প্রতি নির্ভরতার ফলস্বরূপ তার জন্য চমৎকার ব্যবস্থাপনা করেছেন। এভাবে যে বান্দাহ সত্যিকার অর্থে তার রবের প্রতি নির্ভর করে তিনি তাকে আগলে রাখেন পরম মমতায়। তার অবারিত দয়ায় অভিষিক্ত হবে তার জীবন।রিযক আর হায়াতের বারাকাহ থাকবে যিন্দেগীজুড়ে। আল্লাহই হন তার নির্ভরতা ও ভরসার শেষ ঠিকানা।