Logo
কুরআন তিলাওয়াতের আদব
মূল: হুজ্জাতুল ইসলাম আবূ হামিদ আল গাযালী (র.); অনুবাদ: ইমাদ উদ্দিন তালুকদার
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআনওয়ালার মর্যাদা
যাবতীয় গুণকীর্তন মহিয়ান আল্লাহ তাআলার যিনি তাঁর বান্দাদেরকে প্রেরিত নবী ব এবং কিতাব দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এই কিতাব তথা ধর্মগ্রন্থে পূর্বাপর কোনো ভ্রান্ত বিষয়কে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। এটি শ্রেষ্ঠ ও গুণাকর বিচারক আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। কিতাবের ভেতরে থাকা পূর্ববর্তী সত্য ঘটনাবলী ও সংবাদসমূহে গবেষকদের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে। এখান থেকেই তারা সঠিক ও সুদৃঢ় পথের সন্ধান পেয়ে থাকেন, জীবন চলার পথে শান্তি ও মুক্তির দিশা পান এবং হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এই কিতাব হলো ইহকালীন মায়াজাল থেকে মুক্তি ও হিদায়াতের আলো। রয়েছে অন্তরের যাবতীয় অসুখের চিকিৎসা।
যে আল্লাহর রাজত্বের বৈপরীত্য করে, আল্লাহ তাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেন আর যে এই কিতাবের জ্ঞানভা-ার ছেড়ে ভিন্ন কোথাও জ্ঞান আহরণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে তার আপন ভ্রান্ততার ইচ্ছায় ছেড়ে দেন, ফলে সে বিভ্রান্ত হয়। আল-কুরআন হলো হিদায়াতের সুদৃঢ় বন্ধন; নিরাপদ আশ্রয়। কুরআন কারীম এমন মহানগ্রন্থ যা হচ্ছে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র থেকে বিশালতর বিষয়, অতি অল্প থেকে অনেক বড়- এরকম সমস্ত বিষয়াদিকে শামিল করেছে। এর বিস্ময়তা শেষ হবে না এবং অনবদ্যতারও পরিসমাপ্তি ঘটবে না। জ্ঞানীদের জন্য কুরআন থেকে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণের পরিধি কখনই শেষ হবে না, এর অমৃত স্বাদ অবিনশ্বর, যার ক্ষয় নেই। পূর্বাপর সকলের জন্য পথপ্রদর্শক। জিনেরা যখন কুরআন শ্রবণ করে, তারা তাদের গোষ্ঠীর নিকট গিয়ে বলে,
إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا- يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ ۖ وَلَن نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا
-আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি। যা সঠিক পথ প্রদর্শন করে, তাই আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং এখন আমরা আর আমাদের প্রতিপালকের সাথে (ইবাদতে) কখনও কাউকে শরীক করব না।১
সুতরাং যে-ই এর উপর ঈমান এনেছে, সে এ ক্ষেত্রে যথাযথই করেছে; যে কুরআন অনুযায়ী কথা বললো, সে যথার্থ বললো; যে তা আঁকড়ে ধরলো সে সত্য পথের সন্ধান পেয়ে গেল এবং যে কুরআন কারীমের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করল, সে সফলকাম হয়ে গেল। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
-আমিই যিকর (কুরআন) নাযিল করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী।২
পবিত্র কুরআন অন্তর ও কাগজে হিফাযত করার আসবাব হচ্ছে তার তিলাওয়াতকে স্থায়ী করা, সর্বদা আদব ও নির্দেশনামত তা অধ্যয়ন এবং তার মাঝে নিমজ্জিত বিষয়াদির বাহ্যিক আদব ও অন্তর্নিহিত আমলসমূহের সংরক্ষণ করা। আর তার জন্য বিস্তারিত আলোচনা ও ব্যাখা করা আবশ্যক। এ বিষয় চারটি ভাগে তুলে ধরা হবেÑ ১) পবিত্র কুরআনের ফদীলত ও তা লাভকারী, ২) তিলাওয়াতের বাহ্যিক আদব, ৩) তিলাওয়াতের সময় অন্তর্নিহিত আবেদন, ৪) কুরআন বুঝা ও ব্যাখ্যা।
কুরআনের ফদীলত
কুরআন ও কুরআনওয়ালাদের সম্পর্কে রাসূল ব বলেন,
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ، ثُمَّ رَأَى أَنَّ أَحَدًا أُوتِيَ أَفْضَلَ مِمَّا أُوتِيَ فَقَدِ اسْتَصْغَرَ مَا عَظَّمَهُ اللَّهُ تَعَالَى
-যে কুরআন পড়ে অতঃপর মনে করে অন্য কেউ আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত এই কুরআন থেকে উত্তম কিছু লাভ করেছেÑ সে আল্লাহ তাআলা যা মহান করেছেন, সে জিনিসকে খাটো করল।৩
রাসূল ব বলেন,
مَا مِنْ شَفِيعٍ أَفْضَلُ مَنْزِلَةً عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنَ الْقُرْآنِ لَا نَبِيٌّ وَلَا مَلَكٌ وَلَا غَيْرُهُ
আল্লাহর কাছে কুরআনই (তাঁর সাথে বেশি সম্পৃক্ত থাকার ফলে আমলকারীর জন্য) নবী, ফিরিশতা এবং অন্য কারোর চেয়েও বেশি সুপারিশকারী হবে।৪
রাসূল ব বলেন,
لَوْ كَانَ الْقُرْآنُ فِي إِهَابٍ مَا مَسَّتْهُ النَّارُ
-যদি কুরআন চামড়ায় (মুড়ানো) থাকে, তাহলে (কুরআনের বিশেষত্বে সাধারণত) আগুন তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না।৫
রাসূল ব আরও বলেন,
أَفْضَلُ عِبَادَةِ أُمَّتِي تِلَاوَةُ الْقُرْآنِ
-আমার উম্মতের উত্তম (নফল) ইবাদাত হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত।৬
রাসূল ব আরও বলেন,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَرَأَ طه وَيس قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ الْخَلْقَ بِأَلْفِ عَامٍ فَلَمَّا سَمِعَتِ الْمَلَائِكَةُ الْقُرْآن قَالَتْ طُوبَى لِأُمَّةٍ يَنْزِلُ عَلَيْهِمْ هَذَا وَطُوبَى لِأَجْوَافٍ تَحْمِلُ هَذَا وَطُوبَى لِأَلْسِنَةٍ تَنْطِقُ بِهَذَا
-আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিরাজিকে সৃষ্টি করার এক হাজার বছর আগে কুরআন মাজীদের সূরা ত্বহা ও সূরা ইয়াসীন পড়েন। যখন ফিরিশতারা কুরআন শুনেন তখন তারা বলেন, সৌভাগ্য সেই উম্মতের জন্য যাদের উপর কুরআন নাযিল হবে, সৌভাগ্য তাদের যারা তা মুখস্ত করবে, সৌভাগ্য সেই জিহ্বার যেটি কুরআনকে পড়বে।৭
নবী করীম ব আরও বলেন,
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
-তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কুরআন নিজে শিখে এবং অন্যকে শেখায়।৮
হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَنْ شَغَلَهُ قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ عَنْ دُعَائِي وَمَسْأَلَتِي أَعْطَيْتُهُ أَفْضَلَ ثَوَابِ الشَّاكِرِينَ
-যাকে কুরআন তিলাওয়াতের মগ্নতা তাঁর প্রয়োজন চাওয়া থেকেও বেশি মশগুল রাখে, আমি তাকে শুকুর আদায়কারীদের মধ্যে সর্বোত্তম প্রতিদান দিই।৯
আরেক হাদীসে এসছে, রাসূল ব বলেন,
ثَلَاثَةٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى كَثِيبٍ مِنْ مِسْكٍ أَسْوَدَ لَا يَهُولُهُمْ فَزَعٌ وَلَا يَنَالُهُمْ حِسَابٌ حَتَّى يَفْرُغَ مَا بَيْنَ النَّاسِ رَجُلٌ قَرَأَ الْقُرْآنَ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَرَجُلٌ أَمَّ بِهِ قَوْمًا وَهُمْ بِهِ رَاضُونَ
-তিন ধরনের ব্যক্তি কিয়ামতের দিন মিশকের পাহাড়ের উপরে থাকবে। তারা কোনো ধরনের ভয় পাবে না এবং তাদের কোনো হিসাব হবে না। তারা হলো, ১) যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন তিলাওয়াত করে ২) সে ইমাম ব্যক্তি যার উপর তার মুসল্লিরা সন্তুষ্ট…।১০
রাসূল ব আরও বলেন,
أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللَّهِ وَخَاصَّتُهُ
-কুরআনওয়ালারা হলো আল্লাহর ওলী তথা একান্ত নিকটবর্তী এবং তারা আল্লাহর খাস শ্রেণি।১১
এভাবে কুরআনের ফদীলত নিয়ে রাসূল ব আরও বলেন,
إِنَّ الْقُلُوبَ تَصْدَأُ كَمَا يَصْدَأُ الْحَدِيدُ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا جَلَاؤُهَا فَقَالَ تِلَاوَةُ الْقُرْآنِ وَذِكْرُ الْمَوْتِ
-নিশ্চয়ই কলবে জং ধরে, যেরকম লোহার মধ্যে জং ধরে। তখন বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ ব! এর সমাধান কী? রাসূল ব বলেন, তিলাওয়াতে কুরআন ও মরণের স্মরণ (কলবে জং ধরার চিকিৎসা)।১২
কুরআন তিলাওয়াতকারীর আল্লাহ তাআলার দয়ার দৃষ্টি নিয়ে রাসূল ব আরও বলেন,
للَّهُ أَشَدُّ أَذَنًا إِلَى قَارِئِ الْقُرْآنِ مِنْ صَاحِبِ الْقَيْنَةِ إِلَى قَيْنَتِهِ
-আল্লাহ তাআলা কুরআন তিলাওয়াতকারীকে কোনো ব্যক্তির পছন্দের শিল্পীর গান শুনার আগ্রহ থেকেও বেশি পছন্দের সাথে শ্রবণ করেন।১৩
কুরআন তিলাওয়াত ও এর মর্যাদা নিয়ে সালাফের বর্ণনা রয়েছে। সাহাবী আবূ উমামা আল-বাহিলী (রা.) থেকে বলেন, কুরআন তিলাওয়াত করো। এ কিতাব কখনও ধোঁকা দিবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তিকে আযাব দিবেন না, যে কুরআনকে হিফাযত করেছে (কুরআন তিলাওয়াত করে এবং তার নির্দেশনা মেনে চলে।)।১৪
সাহাবী ইবন মাসঊদ (রা.) বলেন,
إِذَا أَرَدْتُمُ الْعِلْمَ فَانْثُرُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّ فِيهِ عِلْمَ الْأَوَّلِينَ وَالْآخَرِينَ
-যদি তোমরা জ্ঞান লাভ করতে চাও, তাহলে কুরআনকে বুঝো, কেননা তাতে রয়েছে পূর্বাপর সব কিছুর জ্ঞান।১৫
ইবন মাসঊদ (রা.) আরও বলেন,
اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّكُمْ تُؤْجَرُونَ عَلَيْهِ بِكُلِّ حَرْفٍ مِنْهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ أَمَا إِنِّي لَا أَقُولُ الْحَرْفُ ألم وَلَكِنْ الْأَلِفُ حَرْفٌ وَاللَّامُ حَرْفٌ وَالْمِيمُ حَرْفٌ
-সকলে কুরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ এর প্রতিটি হরফে দশটি করে নেকী রয়েছে। আমি এমনটি বলছি না যে, হরফ হচ্ছে, আলিম-লাম-মীম (তিনটি মিলে), বরং এখানে আলিফ হচ্ছে একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি অর্থাৎ প্রত্যেকটিই আলাদা হরফ।১৬
ইবন মাসঊদ (রা.) আরও বলেন, কাউকে কুরআন ছাড়া ভিন্ন কিছু নিয়ে যেন প্রশ্ন না করা হয়, কারণ যদি কেউ কুরআনকে ভালোবাসে এবং কুরআন তাকে বিমোহিত করে, তাহলে এটাই বুঝায় সে আল্লাহ ও তার রাসূল বকে ভালোবাসে; আর যদি সে কুরআনের প্রতি ঘৃণা রাখে তাহলে এর মানে সে আল্লাহ এবং তার রাসূল ব কেই ঘৃণা করে।১৭ সাহাবী আমর ইবনল আস (রা.) বলেন, ‘কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াতের বিনিময়ে জান্নাতে একেকটি মর্যাদার স্তর রয়েছে এবং একেকটি আয়াত তোমাদের ঘরের জন্য একেকটি আলোকবর্তিকা।’১৮ এই সাহাবী কুরআনের ব্যাপারে আরও বলেন, যে কুরআন পড়ে সে যেন তার উভয় পাশে ধীরে ধীরে নবুওয়াতের নূর অনুভব করছে। তবে তার কাছে ওহী আসবে না।১৯
সাহাবী আবূ হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘যে ঘরে কুরআন তিলাওয়াত হয়, সে ঘরে বরকত বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাদের কল্যাণ বৃদ্ধি পায়, ফিরিশতারা তিলাওয়াত শুনতে আসেন এবং সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। আর যে ঘরে আল্লাহর এই কিতাব তিলাওয়াত হয় না, আল্লাহ তাআলা সবকিছু সংকীর্ণ করে দেন, কল্যাণ হ্রাস পায়, ফিরিশতারা বের হয়ে যান এবং শয়তান প্রবেশ করে।’২০
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র.) বলেন, ‘আমি স্বপ্নে আল্লাহর দীদার লাভ করি। তখন আমি বলি, হে রব! কী সবচেয়ে উত্তম জিনিস, যার মাধ্যমে আপনার নৈকট্যলাভকারীরা আপনার নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহ বলেন, আামার কালামের মাধ্যমে। তখন আমি বলি, হে আামার রব, আপনার কালাম বুঝে পড়ার মাধ্যমে না, না বুঝে পড়ে? আল্লাহ তাআলা বলেন, বুঝে পড়ে এবং না বুঝে কেবল তিলাওয়াতের মাধ্যমেই (আমার নৈকট্য হাসিল করতে পারে)।২১ বিশিষ্ট তাবিঈ ইমাম মুহাম্মদ ইবন কাব আল-কুরজী (র.) বলেন, যখন মানুষ কিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছ থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনবে, মানুষ (এই তিলাওয়াতের এমন অমীয় স্বাদ পাবে) মনে করবে তারা কখনোই এই কুরআন আর শুনে নাই।’২২ ইমাম ফুদাইল ইবন ইয়াদ আবিদুল হারামাইন (র.) বলেন, কুরআনকে ধারণকারী ব্যক্তির অনুচিত তার কোনো প্রয়োজনে দুুনিয়ার কারো কাছে যাওয়া হউক সে খলিফা বা তার চেয়ে নি¤œ মর্যাদার কেউ। বরং মানুষের তার কছে জড়ো হওয়া উচিত।’২৩ তিনি আরও বলেন, কুরআনকে ধারণকারী হলো ইসলামের পতাকাবাহী। সুতরাং তার উচিত নয় যে খামখেয়ালিপনা করে তার মত খামখেয়ালি করা, যে কুরআন ভুল পড়ে তার উচিত নয় তার মত ভুল পড়া, যে কুরআন পড়ে ভুলে যায় তার জন্য উচিত নয় সেরকম ভুলে যাওয়া।’ তিনি আরও বলেন, এরকম করা হচ্ছে কুরআনকে তাযীম করার জন্য।২৪ ইমাম সুফইয়ান সাওরী (র.) বলেন, ব্যক্তি যখন কুরআন তিলাওয়াত করে, ফিরিশতারা তার দু চোখের মাঝে চুম্বন করেন।২৫ বিশিষ্ট তাবিঈ আমর ইবন মাইমুন (র.) বলেন, ফজরের নামায শেষে যে একশত কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার সমস্ত অধিবাসীর সাওয়াব প্রদান করেন।
বর্ণিত আছে, খালিদ ইবন উকবা (রা.) রাসূল ব এর কাছে আসলেন। রাসূল বকে বললেন, আমাকে কুরআন শুনান। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শুনালেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى
-নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, দয়া এবং নিকটাত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন (আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পড়–ন)…।২৬
তিনি বলেন, এই আয়াতটি আবার পড়–ন। রাসূল ব আবার পড়েন। এই কথা শুনে তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! এই বাণীতো অত্যন্ত সুস্বাদু। এটাতো ঊর্ধ্বতর, নিম্মতর সমস্ত বিষয় সমেত নির্দেশনার পত্র। এই বাণী অনেক উচ্চাঙ্গের বাণী, এটি মানবরচিত রচনা নয়।২৭
ইমাম হাসান বাসরী (র.) বলেন, কুরআন ধরে রাখার সম্পদের উপর কোনো সম্পদ নেই আর কুরআনহীনতার দারিদ্রতার চেয়ে দারিদ্রতা নেই।২৮
হযরত ফুদাইল ইবন ইয়াদ (র.) বলেন, ‘যে সকালে সূরা হাশরের শেষ অংশ পড়ে, অতপর সে দিনই মারা যায়, সে শহীদের মর্যাদা পাবে। আর যে সন্ধ্যায় তা পড়ে অতপর সে রাতেই মারা যায় সেও শহীদের মর্যাদা পাবে।২৯ কাসিম ইবন আব্দুর রহমান (র.) বলেন, আমি এক বুযুর্গকে জিজ্ঞেস করলাম, এমন কোনো বন্ধু আছে, যার সাথে বন্ধুত্ব করা যায়? তখন সেই বুযুর্গ হাত প্রসারিত করে কুরআনের মাসহাফ দেখালেন এবং তা বুকে জড়িয়ে বললেন, এটি (অর্থাৎ এটি সে, যার সাথে বন্ধুত্ব করা যায়।)।৩০
হযরত আলী ইবন আবী তালিব (রা.) বলেন, তিনটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, শ্লেষ্মা দুর করে, ১) মিসওয়াক, ২) রোযা এবং ৩) কুরআন তিলাওয়াত।৩১
সুত্র:
ইমাম গাযালী রাহিমাহুল্লাহ’র কালজয়ী ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ কিতাবের ‘আদাবু তিলাওয়াতিল কুরআন’ অধ্যায়ের ‘ফাদীলাতুল কুরআন’ পাঠের অনুবাদপাঠের অনুবাদ।

ফুটনোট

১ সূরা জিন, আয়াত: ১-২
২ সূরা হিজর, আয়াত: ৯
৩ ইমাম তাবারানী (র.) হাদীসটি কিছুটা ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন,
مَنْ قَرَأَ القُرْآنَ فَكَأَنَّمَا اسْتُدْرِجَتِ النُّبُوَّةُ بَيْنَ جَنْبَيْهِ، غَيْرَ أَنَّهُ لَا يُوحَى إِلَيْهِ ومَنْ قَرَأَ القُرْآنَ فَرَأى أَنَّ أَحَدًا أُعْطِيَ أَفْضَلَ مِمَّا أُعْطِيَ، فَقَدْ عَظَّمَ مَا صَغَّرَ اللهُ، وصَغَّرَ مَا عظَّمَ اللهُ، ولَيْسَ يَنْبَغِي لِحَامِلِ القُرْآنِ أَنْ يَسْفَهَ فيمَنْ يَسْفَهُ، أَوْ يَغْضَبَ فيمَنْ يَغْضَبُ، أَوْ يَحْتَدَّ فيمَنْ يَحْتَدُّ، ولَكِنْ يَعْفُو ويَصْفَحُ؛ لِفَضْلِ القُرْآنِ
-আল-মুজামুল কাবীর, হাদীস-১৪৫৭৫
৪ আল্লামা ইবনুস সুবকী (র.) তাখরীজে বর্ণনাটিকে সনদহীন বলেছেন। তবে কুরআনের সুপারিশের সমর্থনে অন্যান্য বর্ণনা রয়েছে। ইমাম মুসলিম (র.) কুরআন ধারণকারী ব্যক্তির জন্য কুরআন শাফাআতকারী হবে সংক্রান্ত বর্ণনা করেন, اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِصَاحِبِهِ -মুসলিম: ৮০৪
৫ ইমাম তাবারানী (র.), আল-মুজামুল কাবীর, হাদীস-৪৯৮; ইমাম আলী ইবন আবূ বকর হাইসামী (র.), মাজমাউয যাওয়াইদ ওয়া মাম্বাউল ফাওয়াইদ, হাদীস-১১৬২৭
৬ আল্লামা মুত্তাকী আলÑহিন্দী রাহিমাহুল্লাহু, কানযুল উম্মাল, হাদীস-২৩৫৯
৭ ইমাম দারিমী, সুনান দারিমী, হাদীস-৩৪১৪; ইমাম তাবারানী (র.), আল-মুজামুল কাবীর, হাদীস-৪৮৭৩
৮ ইমাম বুখারী, সহীহ বুখারী, হাদীস-৪৭৮৯
৯ ইমাম তিরমিযী (র.), সুনান তিরমিযী, হাদীস-২৯২৬
১০ ইমাম তিরমিযী (র.), সুনান তিরমিযী, হাদীস-১৯৮৬
১১ ইমাম ইবন মাজাহ, সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস-২১৫
১২ ইমাম বাইহাকী (র.), শুআবুল ঈমান, হাদীস-১৮৫৯
১৩ ইমাম ইবন মাজাহ, সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস- ১৩৪০
১৪ ইমাম দারিমী (র.), সুনান দারেমী, হাদীস-৩৩২০
১৫ ইমাম আবূ তালিব মাক্কী (র.) (৩৮৬ হি.), কূতুল কুলূব ফি মুআমালাতিল মাহবুব, ১/৯০
১৬ ইমাম তিরমিযী, সুনান তিরমিযী, হাদীস-২৯১০
১৭ ইমাম আবূ তালিব মাক্কী (র.) (৩৮৬ হি.), কূতুল কুলূব ফি মুআমালাতিল মাহবুব, ২/৮৮ (শামেলা)
১৮ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (র.), কিতাযুয যুহদ ও ওয়ার রাকায়েক, হাদীস-৭৮৯
১৯ ইমাম তাবারানী (র.), আল-মুজামুল কাবীর, হাদীস: ১৪৫৭৫; ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ হাকিম নিশাপুরী রািিহমাহুল্লাহ (৪০৬ হি.), আল-মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, হাদীস-২০২৮
২০ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (র.), কিতাযুয যুহদ ও ওয়ার রাকায়েক, হাদীস-৭৯০; ইমাম ইবনু আবী শাইবা (র.), আল-মুসান্নাফ: ৩০০২৭
২১ ইমাম ইবনুল জাওযী (র.), মানাকিবুল ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল, ৫৮৩-৪ (শামিলা)
২২ ইমাম আবূ নুয়াইম (র.) (৪৩০ হি.), সিফাতুল জান্নাত, হাদীস-২৭০
২৩ ইমাম আবূ নুয়াইম (র.) (৪৩০ হি.), হিলইয়াতুল আউলিয়া ৮/৯২
২৪ ইমাম আবূ নুআইম (র.) (৪৩০ হি.), প্রাগুক্ত হিলইয়াতুল আউলিয়া ৮/৯২
২৫ ইমাম বাইহাকী (র.), শুআবুল ঈমান, হাদীস নং-২০৭৪
২৬ সূরা নাহল, আয়াত: ৯০
২৭ ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ হাকিম নিশাপুরী (র.) (৪০৬ হি.), আল-মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, হাদীস-৩৮৭২
২৮ ইমাম ইবন শাইবা রাহিমাহুল্লাহু, আল-মুসান্নাফ, হাদীস-২৯৯৫৪
২৯ ইমাম আবূ মুহাম্মাদ দারিমী (র.), মুসনাদে দারেমী, হাদীস-৩৪৬৬
৩০ ইমাম ইবন আবিদ দুনিয়া, আল-আযলাতু ওয়াল ইনফিরাদ, হাদীস-৫৩
৩১ ইমাম দাইলামী (র.), মুসনাদুল আল-ফিরদাউস, হাদীস-২৯৮০

ফেইসবুকে আমরা...