1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ফিলিস্তিন : সমকালীন নজদী উলামাদের মনস্তত্ত্বের স্বরূপ বিশ্লেষণ
আবু আব্দুল্লাহ লতিফী
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২৩

ফিলিস্তিনে চলমান জায়োনিস্টদের গণহত্যা ও তুফান আকসার মধ্যে দখলদার সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র আফিখাই আদরাই মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নজদীকে উদ্ধৃত করে মুসলমানদের হামাস ও শিআ ইরানীদের থেকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছে! ইবন ওয়াহাব নজদীর মতে- আহলে বিদআত ও শিআরা ইয়াহুদী-নাসারাদের থেকে জঘন্য, এদের ফিতনা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে! আইডিএফ মুখপাত্রের এই ফাতওয়ার সাথে বর্তমান সময়ের তথাকথিত সালাফী শায়খদের হামাস সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যগুলো একই সূত্রে গাঁথা। কোন সরলপ্রাণ মুসলমান ততক্ষণ হিসাব মিলাতে পারবে না একজন টুপি/রোমাল-জোব্বা পরা শায়খ কিভাবে ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের সমালোচনা করতে পারেন যতক্ষণ না সে ইবন আব্দিল ওয়াহাব নজদীর এই ফাতওয়া এবং এই লোকের সাথে বর্তমান সালাফীদের সম্পর্কের বিষয়ে গভীরভাবে জানবে।

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাথে দখলদার জায়োনিস্টদের সম্প্রতি চলমান যুদ্ধের এই সময়ে এসে আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের তথাকথিত কিছু সহীহ আকীদার শায়খের মুখ থেকে হামাস তথা ফিলিস্তিনের মুজাহিদিনদের সম্পর্কে বেঁফাস মন্তব্য শুনছি। এসব বেঁফাস মন্তব্য শুনে অনেক সময় মনে হতে পারে যে এই মন্তব্য করছে সে নিজে ব্যক্তিগতভাবে বিভ্রান্ত, এটা কোন সমষ্টিগত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়। এই চিন্তাটা তখনই ভেঙে যায় যখন একই আকীদার আরো অসংখ্য শায়খ গত একশ বছরে এমন এমন ফাতওয়া দিয়েছেন বা দিচ্ছেন যা স্পষ্টভাবে মুজাহিদ বাহিনীর সাথে শত্রুতা এবং ভোগে মত্ত শাসকদের চাটুকারিতার শামিল।

নজদী সালাফীরা যাকে হাদীস শাস্ত্রে জগতশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হিসেবে মনে করেন নাসিরুদ্দীন আলবানী গত শতকের শেষ দিকে ফাতওয়া জারি করেন মুসলমানদের উচিত পশ্চিম তীর ত্যাগ করে অন্যত্র হিজরত করা! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য নজদী আলিমদের পূর্বসূরিরা আজ থেকে তিন দশক আগেই এভাবে আল আকসার দাবি পরিত্যাগ করতে উম্মাহকে আহবান করেন। ফিলিস্তিন থেকে নিরিহ মুসলিমদের হিজরতের আহবান জানানো এই ফাতওয়া আপাতদৃষ্টিতে বেশ শান্তিপ্রিয় একটি ফাতওয়া হিসেবে মনে হলেও এর পিছনে যে প্রশ্নগুলো উঠে আসা উচিত ছিলো সে প্রশ্নগুলো সালাফীদের কেউ করেনি, এখনো করছে না। ফিলিস্তিনের মুসলমানরা আল আকসাকে দখলে রাখার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী যেহেতু না তাই তাদের হিজরতের পরামর্শ দেওয়া এসব শায়খ এবং তাদের অনুসারীদের মাথায় এ প্রশ্ন কেন আসে না যে আকসা দখলে রাখার দায়িত্ব, ফিলিস্তিন দখলে রাখার দায়িত্ব কবে থেকে শুধু ফিলিস্তিনীদের হলো? আকসার দায়িত্ব তো হাজার বছর ধরে উম্মাহর সবার পক্ষ থেকে খলীফার হাতে ছিলো। খেলাফতের অবর্তমানে উম্মাহর অঘোষিত অভিভাবকত্বের ভং ধরে থাকা আলে সৌদের উপর কি আকসার দায়িত্ব বর্তায় না? বর্তমান আরব শাসক এবং তাদের পূর্ব পুরুষদের কি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত নয় যে তাদের রাজত্বের সময়ে এসে কেন এবং কীভাবে ফিলিস্তিন দারুল ইসলাম থেকে দারুল কুফর হয়ে গেলো?

এসব প্রশ্ন ফিলিস্তিন থেকে হিজরত করার ফাতওয়া দেওয়া সৌদি গ্রান্ড মুফতী করবেন না, তাদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণকারী সৌদি তথা আরব রাজতন্ত্রের সেবক এদেশের ঘোমটা শায়খরাও করবেন না। কারণ তারা জানেন যে ফিলিস্তিনে একটি ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাদের পেট্রোডলারের উৎস আরব শাসকদের পূর্বসূরিদের অনুমোদনক্রমেই। শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই ইউরোপীয়রা দুনিয়ার নানা প্রান্তে তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিস্তার করেছিলো। কিন্তু আরব, মধ্য এশিয়া, আনাতোলিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকা তথা পৃথিবীর কেন্দ্রভূমিতে বিস্তীর্ণ মুসলিম ভূখণ্ডে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে বাধার প্রাচীর হয়ে ছিলো উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক অটোমান (ঊসমানীয়া) খিলাফত। আরবের নজদে অটোমানদের এই কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে মুহাম্মদ বিন সৌদ ও তার বংশধররা প্রত্যক্ষভাবে খিলাফতকে দুর্বল করার কাজে অংশ নেন। উনবিংশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের শুরুর দিকে জেরুযালেমে বসবাসের জন্য ইয়াহুদীরা অটোমান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের কাছ কিছু জমি চেয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিপুল সম্পদশালী জায়োনিস্টরা অটোমান সাম্রাজ্যের পতনে প্রত্যক্ষভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং এক পর্যায়ে সফল হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে অটোমান খিলাফতের অবসানের পর প্রায় হাজার বছর হিজায তথা মক্কা ও মদীনা শাসন করা হাশিমী বংশোদ্ভূত শরীফ হুসাইন বিন আলী যখন নিজেকে সমগ্র আরবের শাসক এবং মুসলিম উম্মাহর খলীফা ঘোষণা করেন তখন ব্রিটিশদের সাথে তার সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠই ছিলো বলা চলে। তবে সেই সম্পর্ক তিক্ততায় রূপান্তরিত হয় কেবল এবং কেবল হুসাইন বিন আলী ফিলিস্তিনের উপর তার তথা মুসলমানদের অধিকারে ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় অর্থাৎ দ্বিতীয় কোন শক্তি ফিলিস্তিনে পুনর্বাসিত হোক এতে সায় না দেওয়ায়। এই প্রেক্ষাপটেই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হোন ব্রিটিশদের সম্পূর্ণ ওয়াফাদার আব্দুল আযীয বিন সৌদ। তিনি ব্রিটিশদের সাথে সমঝোতায় আসেন ফিলিস্তিনে ইয়াহুদীদের বসতিতে তার কোন আপত্তি নেই। এই সমঝোতার পরই ব্রিটিশদের সহায়তায় পতন হয় শরীফদের এবং হিজায সহ আরবের বিস্তীর্ণ অংশের রাজত্ব পৌছে সৌদের বংশধরদের হাতে। যে রাজ বংশের গোড়াপত্তনই হয়েছে ফিলিস্তিনে ইয়াহুদী বসতি স্থাপনে সম্মতির মাধ্যমে তাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের কোন উপকার হবে একথা কল্পনায়ও আনা উচিত নয়।

সালাফীদের নিকট আরো একজন গ্রহণযোগ্য শায়খ সালিহ আল ফাওজানের আরেকটি ফাতওয়াও দখলদার বাহিনীর মুখপাত্র আফিখাই আদরাই উদৃত করেছেন। সালেহ আল ফাওজান এর মতে মিছিল, হরতাল, ধর্মঘট ইত্যাদি ইসলামের ইতিহাসে কখনো ছিলো না, এসব কাজ ফিতনা, ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল বের করা উচিত নয়। ফাওজান কে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলী মুখপাত্র পশ্চিম তীর সহ সকল মুসলমানকে আহবান জানিয়েছে ইসলামের নামে এসব ফিতনার কাজ থেকে তারা যেনো বিরত থাকেন! ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করা কথিত সালাফীরা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট রাজতন্ত্রের মোসাহেবি করতে গিয়ে কতোটা অধঃপতনে নেমেছে তার বাস্তব উদাহরণ এই ফাতওয়া। তাদের এসব ফাতওয়া কতোটা বিধ্বংসী হয়ে উম্মাহর জন্য ফিরে আসছে তার বাস্তব প্রমাণ জায়োনিস্ট মুখপাত্র কর্তৃক এই ফাতওয়ার বিপুল প্রচার। এদেশের সকল মানুষই জানে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন যেকোন রাজতন্ত্রের প্রধান ভীতির নামই হলো ‘জনগণ’। তাই যেকোন একনায়কই তার নিজ রাষ্ট্রে কোন ধরণের প্রতিবাদ সভা, মিছিল ইত্যাদি সব চেয়ে কঠোরভাবে দমন করেন। আরবে প্রতিষ্ঠিত আলে সৌদের রাজতন্ত্রও গত একশ বছর ধরে সাধারণ মানুষের, এমনকি হক্বপন্থী উলামায়ে কেরামদের কণ্ঠরোধ করে আসছে অত্যন্ত নির্মমতার সাথে। রাজতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে এমন যেকোন উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিতে তারা বেশ পারঙ্গম। এসব আরব শাসকদের একটি দুশ্চিন্তার কারণ ফিলিস্তিনীদের প্রতি সমব্যথী সাধারণ আরবরা।

এমবিএস বা এমবিজেড এবং তাদের পূর্ব পুরুষদের দুর্বলতা হলো ফিলিস্তিনীদের অধিকারের জন্য ইসরায়েলের বিপক্ষে কোন মিছিল সংঘটিত হলে তাতে নিয়মিত বাধা প্রদান করলে তারা জনরোষে পড়তে পারেন, আবার তাদের এসব প্রতিবাদকে নিয়মিত সংগঠিত হতে দিলে পরে কোন সময় তা আয়ত্তের বাইরে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় তা বলা মুশকিল। এই ধরণের পরিস্থিতিতে একজন সালাফী মাদখালী শায়খের মিছিল/সমাবেশ বিরোধী ফাতওয়া তাদের জন্য কাজটা সহজ করে দেয়। আমাদের দেশের আহলে হাদীস আন্দোলনের নামে বা অন্য কোন নামে যেসব পেট্রো-ডলার শায়খরা অধুনা কালে সোশ্যাল মিডিয়াতে তরুণদের এটেনশন পাচ্ছেন তাদের মুখেও শায়খ ফাওজানের ফাতওয়ার পুনরাবৃত্তি শুনা যায় প্রতিনিয়তই। অথচ আমরা সবাই এখন এ বিষয়ে একমত ফিলিস্তিনীদের নিরাপত্তা, অধিকার আর আকসা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন অটুট রাখতে অথর্ব এসব আরব শাসকদের চেয়ে একজন সাধারণ মুসলমানের সক্রিয় স্লোগানই বেশি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে আরো কিছুদিন পরে যদি এই শায়খরা অন্যান্য কিছু ইবাদতকে ‘আরবে নাই’ এই দলীলে যেভাবে বিদয়াত ফাতওয়া দেন ঠিক তেমনই ‘আরবে নাই’ বলে ফিলিস্তিনের জন্য মিছিল করা হারাম বা বিদয়াত বলে প্রচারণা চালান তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দিনশেষে এখনো তারা এক সুনির্দিষ্ট আকীদার রাজতন্ত্রের সেবক যে রাজতন্ত্র এখন দুনিয়ায় জান্নাত তৈরিতে ব্যস্ত।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুদ্ধ সম্পর্কে শূন্যজ্ঞান বিপথগামী অনেক শায়খকে একথাও বলতে শুনা যায় হামাস নিজে থেকে দুই-চারটা রকেট মেরে ইসরায়েলীদের উস্কানি দেয় এবং পরে ইসরায়েলীরা ফিলিস্তিনীদের নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের বক্তব্য শুনলে যেকোন সরলপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে এ বিশ্বাস জাগ্রত হবে যে দখলদারদের হাতে মুসলমানরা নির্যাতিত হওয়ার মূল কারণ আসলে হামাসই, মনে হবে হামাস প্রতিষ্ঠার আগে ফিলিস্তিনে মুসলমানরা নির্যাতিত ছিলো না, হামাস যে এলাকার নিয়ন্ত্রণে নাই সে এলাকায় ফিলিস্তিনীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না! এদেশের নজদী সালাফী শায়খরা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধাদের এইটুক সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হন না। প্রায় দুই শত কোটি মুসলমানদের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নেওয়া হামাস যুদ্ধাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত কোন এক সৌদি ফিরত শায়েখের মুখে শুনা যায়- ‘ফিলিস্তিন এরকম বিদআতী, বেনামাজীদের দ্বারা জয় হবে না। হবে দ্বীনদার, মুত্তাকী সহীহ আকীদাওয়ালাদের হাত ধরে।’ অথচ এই সহীহ আকীদার শায়খ নিজে মধু আর হানি নাটস এর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা নিজেরা যুদ্ধে যাবেন না, আল্লাহর পক্ষ থেকে সহীহ আকীদার ফিরিশতা এসে যুদ্ধ জয় করে তাদের হাতে জেরুজালেমের চাবি দিয়ে যাবেন। জিহাদের মাঠে উপনীত হওয়ার ভয়ে ভীত অন্য এক শায়খ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছেন আক্বীদার জিহাদ না করে অস্ত্রের জিহাদ করছে বলেই মুসলমানরা পরাজিত হচ্ছে। অস্ত্রের জিহাদ বাদ দিয়ে আক্বীদার জিহাদ করতে হবে। এই ভদ্রলোকের কথা শুনে মনে হবে হামাস ইতোমধ্যে পরাজিত। অথচ টানা ত্রিশ দিন ধরে ইয়াহুদীদের সাথে হামাস যোদ্ধারা জীবন দিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। বিজয় অর্জন নতুবা শহীদ হওয়া যাদের লক্ষ্য তাদের কোনটাকে এই শায়খরা পরাজয় মনে করেন? বিজয় অর্জন নাকি শহীদ হওয়াকে?

বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের নজদী সালাফী শায়খরা শুধু যে হামাসের প্রশ্নে কিংবা ফিলিস্তিনের প্রশ্নে এলোপাতাড়ি ফাতওয়াবাজি করেন তা নয়৷ তাদের ফাতওয়াবাজি থেকে রেহাই পায় না গত দেড়শ বছরে তিন বিশ্ব পরাশক্তি ব্রিটেন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করা তালিবানরা, তাদের ফাতওয়ায় বিপথগামী ইউরোপীয়দের ত্রাস অটোমানরা, তাদের ফাতওয়ায় বিপথগামী রাজনীতির মাঠে ইসলামী ভাবধারা লালন করা এরদোয়ান, ইমরান খান, মুরসী সবাই। এমনকি ক্রুসেডারদের থেকে জিহাদের মাধ্যমে বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ী সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (র.)ও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। এই যে সমকালীন অথবা পূর্বযুগের কোন বিজেতার, কোন হকপন্থী রাষ্ট্রনেতার প্রতিই তাদের শ্রদ্ধা নেই এর কারণ একটাই। তথাকথিত সহীহ আকীদার দ্বন্দ এবং আরব রাজতন্ত্রের উপাসনা। তাদের মতে তালিবান খারাপ কারণ তারা হানাফী, সুন্নী ও সূফী; অটোমানরা খারাপ কারণ তারা আশআরী আকীদার অনুসারী; এরদোয়ান, ইমরান খান, মুরসী খারাপ কারণ তারা মাযহাবী এবং রাজতন্ত্রের বাইরে সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা। একইসূত্রে তাদের কাছে সালাহুদ্দীন আইয়ূবীও সমালোচনার পাত্র কারণ তিনি ছিলেন কাদেরিয়া তরীকার অনুসারী সূফী শাফিঈ মাযহাবী।

কালজয়ী সব মুসলিম বিজেতা, সমকালীন সব মুজাহিদ অথবা নেতা সবার সমালোচনায় মুখ নোংরা করা আমাদের সালাফী শায়খদের মুখে লাখ লাখ ইয়ামানী মুসলমানকে দুর্ভিক্ষে ফেলে হত্যাকারী, রাসূলুল্লাহর দেশ হিজাযে ব্যাপক নোংরামী, গান, নাচ আর ফুটবলে সয়লাবকারী, নিয়ন সিটিতে বিলিয়ন ডলার অপচয়কারী সৌদি রাজ পরিবারের বিপক্ষে কোন সমালোচনা শুনবেন না। শতভাগ শরীআতের উপর রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টাকারী তালেবান অথবা আকসার জন্য জীবন উৎসর্গকারী হামাসের থেকে তাদের কাছে উত্তম নবীজীর দেশকে একটি সেক্যুলার পর্যটন নির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করা এমবিএস-এর আরব! কারণ তাদের তাত্ত্বিক গুরু নজদের শিং ইবন ওয়াহাবের মতে ইয়াহুদী নাসারা থেকে ‘বিদআতীরা’ খারাপ। আর উপরে নাম নেওয়া সবাই তাদের নিকট বিদয়াতী। তাই তাদের কাছে ইসরায়েলীদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ জায়িয, শিআ ইরানের থ্রেট থেকে বাচার অজুহাতে আরবে নাসারাদের সেনাঘাটি নির্মাণের অনুমোদন জায়েয, আকসা বিদআতীদের থেকে ইয়াহুদীদের কাছে থাকাই উত্তম।

মোটকথা, সারাবিশ্বের নজদী সালাফী, আহলে হাদীসরা এমন এক রাজ পরিবারের উপকারভোগী মুসাহেব যাদের ইসলামের ইতিহাসে গর্ব করার মতো কোন ঐতিহ্য নেই, কোন ঘটনা নেই। মরুদস্যু থেকে খাদিমুল হারামাইন বনে যাওয়া এসব শাসকদের গত একশ বছরের শাসনামলে উম্মাহর জন্য লাভজনক কিছু করার কোন নযীরও নেই। এমন অবস্থায় মুসাহেব শায়খরা উঠেপড়ে লাগেন ভিন্ন মতাবলম্বী যেসব মুসলমানের গর্ব করার মতো ইতিহাস আছে অথবা গর্ব করার মতো সাম্প্রতিক অর্জন আছে তাদের বিরুদ্ধে। এদেরকে যদি সমালোচনা করে নামানো না যায় তাহলে তাদের খাদিমুল হারামাইনের শান-শওকত সবই তো ধূলায় মিশে যায়।

এই অতর্ব বদ-দ্বীন বা বে-দ্বীন রাজতন্ত্রের গোলামে পরিণত হওয়া শায়খরা আঙ্গুল তুলতে তুলতে সাহস করেন এমন এক সাইয়িদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলতে যাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতী যুবকদের নেতা ঘোষণা দিয়ে গেছেন। পাপিষ্ঠ মদ্যপ ইয়াযীদের বিরুদ্ধে সায়্যিদুনা ইমাম হুসাইন (রা.) “এক্সাইটেড হয়ে” যুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন বলার দুঃসাহস এসব শায়খরা দেখান কারণ তিনিও এমন এক রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে নেমেছিলেন যা ছিলো উম্মাহর ইতিহাসে বে-দ্বীন রাজতন্ত্রের সূচনা। বে-দ্বীন শাসকের গোলামী করতে করতে এরা সচেতন বা অচেতনভাবে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে শত্রু ভাবা শুরু করে! তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এর থেকে বড় গযব আর কী হতে পারে! যদি মস্তবড় আলিম হতাম তাহলে তাদের হিদায়াতর জন্য এবং উম্মাহর সাবধানতার জন্য সালাফীদের ফাতওয়ার মারপ্যাচ নিয়ে একটা বই লেখার চেষ্টা করতাম। তাফসীরে বাশারীর মতো বড় নয়, মাত্র কয়েকশ পাতার বইয়ের নাম দিতাম – ‘Politics and Curse of Fatwa on the Kingdom of Najdiyah; How Followers of Hussain Was Misguided by the disciples of Yazid’ অর্থাৎ নজদরাজ্যে ফাতওয়ার রাজনীতি এবং অভিশাপ; যেভাবে হুসাইনীরা ইয়াজিদীদের দ্বারা প্রতারিত হন।

ফেইসবুকে আমরা...