খুব ছোটবেলা থেকে আমি ওয়ায মাহফিলের একজন নিয়মিত শ্রোতা। গ্রামের আশেপাশে যেকোন মাহফিলে উপস্থিত হতাম শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে। এসব মাহফিলের বক্তব্যগুলো হৃদয়ের খোরাক হতো, ঈমানকে তাজা করতো, আমলের প্রতি উৎসাহিত করতো। অতিরিক্ত দুনিয়ামুখীতা বোধহয় হৃদয়কে শক্ত করে দিয়েছে। আজকাল বেশিরভাগ বক্তার কথাই হৃদয়ে দাগ কাটে না, বেশিরভাগ কথাই মনে হয় রিয়াযুক্ত, ইখতিলাফি বাড়াবাড়িযুক্ত অথবা রাজনৈতিক এজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত। তবে আজ কথা বলব এর ব্যতিক্রমী এক ক্ষণজন্মা ব্যক্তির নসীহত নিয়ে, যার মজলিসে বসলে হৃদয় অনুতাপে বিগলিত হয়, যার নসীহত শুনলে অন্তরে অনুশোচনার তুফান বয়।
১৫ জানুয়ারি ২০২২। জকিগঞ্জের বালাই হাওরে লাখো মানুষের মাঝে বসেছিলাম আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে। শুনছিলাম এক দরাজ কণ্ঠের হৃদয় নিংড়ানো নসীহত- ‘অন্ধ-আতুরদের খিদমাত করার চেষ্টা করবেন।’ আমরা তো সাধারণত অসহায়দের সাহায্যের কথা বলি। সাহায্য আর খিদমাত কি এক? তিনি খিদমাত করতে বলছেন কেন? তিনিই এর উত্তর দিয়ে দিলেন, “হাদীসে কুদসী অনুযায়ী ধৈর্য ধারণকারী অন্ধ-আতুরদের উপর আল্লাহর রহমত, তারা জান্নাতী।” যারা জান্নাতী তাদের মাকাম অনেক উপরে। এতো গভীর আর সংবেদনশীল যার প্রতিটি শব্দ চয়ন তাঁর কথা তো হৃদয়ের গভীরে আঘাত করবেই। রূহানিয়াতে ভরপুর এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন আমাদের বড় ছাহেব কিবলাহ আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। জীবনে যতবার তাঁর বক্তব্য শুনেছি ততবার মনে হয়েছে নিজের ঈমান তাজা হয়েছে, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হয়েছে! এবারের বক্তব্যও ব্যতিক্রম হলো না। ওয়ায মাহফিলে বক্তারা ঘন্টা দুয়েক বয়ান করেও অনেকক্ষেত্রে মানুষকে দ্বীনের কোন একটা বিষয় সঠিকভাবে বুঝাতে আর আমল করতে উৎসাহিত করতে ব্যর্থ হন। অথচ তিনি নাতিদীর্ঘ এক আলোচনায় যেন পুরো দ্বীন ইসলামই আলোচনা করে গেলেন, একজন সত্যিকারের মুসলমান হওয়ার উপায় বলে গেলেন।
বড় ছাহেবের বক্তব্যে দুটি বিষয় সব সময়ই স্থান পায়। এতীমদের কথা আর আরাকানের মযলুম রোহিঙ্গাদের কথা। ইয়াতীম বালক-বালিকাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে তিনি যে ইতোমধ্যে প্রবাদপ্রতিম ঐতিহাসিক চরিত্রে পরিণত হয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা দুনিয়ায় হাজারো ইয়াতীমখানা আছে। সেখানেও অনেকে খিদমাত করেন। কিন্তু এমন কাউকে খোঁজে পাওয়া কঠিন যার প্রতিটা গল্পজুড়ে ইয়াতীমদের বিচরণ, যার জীবনের পরম চাওয়া ইয়াতীম শিশুদের ভরসাস্থল হওয়া। তাদের প্রতি কতোটা গভীর মমত্ববোধ থাকলে একটি এতীম শিশুর চাহনী উপলব্ধি করে তিনি বলতে পারেন ‘দয়াময় আমার হৃদয় পূর্ণ হয়ে গেছে। একটি এতীম ছেলে আমাকে আপন বলে মনে করছে!’
এদেশে আশ্রয় নেওয়া আরাকানের মযলুম রোহিঙ্গাদের প্রতি বিতৃষ্ণা ছড়ানোর কাজ একটি মহল বেশ পরিকল্পিতভাবেই করছে। ফলে ধীরে ধীরে যেন তাদের প্রতি মমত্ববোধে ভাটা পড়ছে অনেকের। বড় ছাহেব যালিম ও মযলুমের সংঘাতে সবসময় মযলুমের পক্ষে। তাই প্রতিটি বয়ানেই হৃদয় নিংড়ানো আবেগ নিয়ে বলেন সেসব নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের গল্প। রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাঁর স্বার্থহীন পবিত্র চিন্তাগুলো আমার মত যারা সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর হয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝা ভাবতে শুরু করেছেন তাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে শিখায়, মযলুমের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে উৎসাহ দেয়। যে বয়ানে তিনি এসব মযলুমানের কথা বলেন সে বয়ান পরবর্তী দুআয় যখন ‘আমরা যেন যালিম না হই, আমরা যেন মযলুম না হই’ বলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন তখন তনু-মন কম্পিত হয়। শুকরিয়া আদায় করি রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, কাশ্মীরীদের মতো মযলুম না হওয়ায়। সাবধান হই যেন কোনভাবে হাক্কুল ইবাদ নষ্টকারী যালিম না হই। পাশাপাশি অনুতপ্ত হই মযলুমদের নিজের উপর কখনো কখনো বোঝা ভাবায়। তার দুআর এই একটি বাক্যই যেন এক জীবন পরিবর্তনকারী নসীহত। আমি তাই অশ্রুজলে সিক্ত হই আর বারবার আমীন, আমীন বলি।
দান-সাদকাকে সকল আলিমই কমবেশি উৎসাহিত করেন। কিন্তু কে আছেন, যিনি ভাবেন কোন দানে কীভাবে অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের অধিক উন্নয়ন ঘটানো যায়? আছেন আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। দান-সাদকাকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অধিক কার্যকর করতে তিনি যে চিন্তা করেন তা বুঝা যায় যখন তিনি বলেন, ‘দরিদ্রদের রোজগারের উপকরণ দান করবেন।’ তিনি নিজেই এরকম দানের পদ্ধতি আমাদের দেখিয়ে দেন দরিদ্র মানুষের মধ্যে রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, সেলাইমেশিন, ঝুড়ি, বেলচা এমনকি কদুর বীজও বিতরণ করে। এসব দান যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কয়েক বেলা উত্তম খাওয়ানো থেকে বেশি কার্যকর তা বিবেচক মানুষ মাত্রই বুঝতে পারেন। বড় ছাহেব আমাদের সে কার্যকর পথে এগোতে আহবান জানান, নিজে দান করে দেখিয়ে দেন। দারিদ্র্য বিমোচনে যারা কাজ করেন তারাও শিক্ষা নিতে পারেন তাঁর কার্যক্রম এবং দিকনির্দেশনা থেকে। সংগঠক হিসেবে তাঁর থেকে গুছানো এবং মিতব্যয়ী কিন্তু কার্যকর উদ্যোক্তা খোঁজে বের করা যেকোন মানুষের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয় হবে বলেই আমার মনে হয়।
ইয়াতীম, মযলুম আর দরিদ্রদের নিয়ে নসীহতেই শেষ নয়, বড় ছাহেবের বয়ানের একটা বড় অংশজুড়েই থাকে খিদমাতে খালক্বের অন্যান্য খুটিনাটি বিষয়াদি। তাই তিনি বক্তব্যে বলতে ভুলেন না ইদ্দত পালনকারী মহিলাকে সহায়তার কথা, চক্ষু শিবির আয়োজনের কথা অথবা মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থার কথা। এমনকি সুদূর আরবে অবস্থান করেও ভুলে যান না ফুলতলীতে বাড়ির সামনে থাকা কুকুরের যত্ন নেওয়ার কথা বলতে। কতো অসহায়দের ঘর যে বড় ছাহেব নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করে দিয়েছেন তার হিসাব আমাদের কারো জানা নেই। দুর্গম অসচ্ছল অঞ্চলে কতোশত মসজিদ যে নির্মাণ করেছেন তার সঠিক তথ্যও অজানা। তিনি তাঁর খিদমাতে খালক্ব চালিয়ে যান নীরবে। আর আমাদের ডাকেন সেসব খিদমাতে শামিল হতে, মসজিদগুলো আবাদ রাখতে। তাঁর বৃক্ষরোপণের তাগিদ শুনে সাধারণ মানুষের অন্তরে যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হয় তা বিশ্বব্যাপী চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মুকাবিলার আন্দোলন থেকেও বেশি কার্যকর বলেই মনে হয়। তন্ময় হয়ে তার বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর বক্তব্য শুনে ভাবি আমরা কতো কৃত্রিম মানুষকে মানবসেবার পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করছি। অথচ নিরপেক্ষ বিবেচনায় এ ক্ষণজন্মা মহামনীষীর প্রতিটি বক্তব্যই দারিদ্র বিমোচনের একেকটি মডেল, তাঁর সারাটা জীবন মানবসেবার এক অনন্য উদাহরণ, তাঁর প্রতিটা কথাই পারস্পরিক সহানুভূতি আর সহমর্মিতার নববী নযীর।
“আল্লাহ আমাদের দাম্ভিক মস্তককে নত করে দাও। বদ্ধ দুয়ার খুলো। আমরা যেন মাটির আসনে বসতে পারি।” এ তিনটি বাক্য প্রায়ই বড় ছাহেব তাঁর বক্তব্যে, দুআয় উল্লেখ করেন। প্রতিবারই আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি আমি কি আসলেই দাম্ভিক, অহংকারী? নিজেকে বাঁচানোর যত চেষ্টাই করি শেষ পর্যন্ত উত্তর হয় ‘হ্যাঁ, আমার মাঝে দাম্ভিকতা রয়েছে।’ তখনই লজ্জায় মাথা নত হয়। আমি আল্লাহুম্মা আমীন বলি। অশ্রুসজল হই। মনে হয় এই বুঝি রহমতের দুয়ার আমার জন্য অবারিত হলো। আর তখন শুকরিয়া আদায় করি, আমি ভাগ্যবান এমন এক মুর্শিদ পেয়েছি যার প্রতিটা কথাই মৃত অন্তরকে জাগ্রত করে। সার্থক আমার “বাইআত কিয়া ময় নে” বলা। “আমরা যেন মাটির আসনে বসতে পারি” এ কথা অত্যন্ত ব্যাপক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ঈসালে সাওয়াব মাহফিল থেকে ফেরার পথে বারবার মনে পড়ছিলো বড় ছাহেবের এই কথাগুলো। এর ব্যাপকতা আলোচনা করতে আলাদা একটি প্রবন্ধই লেখা সম্ভব। ব্যক্তিগতভাবে আমি উপলব্ধি করি দাম্ভিক মস্তককে নত করে দেওয়ার দুআর মাধ্যমে মূলতঃ হৃদয় থেকে অহংকার দূর করার দুআই করা হয়। কিন্তু অহংকার দূর হওয়ার পরেই শেষ না। এর পরবর্তী ধাপ এমন খুলুসিয়ত অর্জন করা যাতে সকলকে সমান ভাবতে পারি, মানুষের মাঝে সাধারণভাবে চলতে পারি, বাহ্যিক চাকচিক্য থেকে দূরে থাকতে পারি এমনকি মানুষের কটুকথাকেও হজম করে মানুষের জন্য, সৃষ্টির জন্য, দ্বীনের রাহে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।
মাটির আসনে বসতে পারার কামনা করা মনে হয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য একটু বেশি প্রাসঙ্গিক। আমাদের বিদ্যমান সমাজ বাস্তবতায় এই দুই শ্রেণি এমন নিরঙ্কুশ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন যে বেশিরভাগই ভুলে যান তারা এই মাটিরই সৃষ্টি, এই সমাজেরই অংশ। এই দুই শ্রেণি যদি আসলেই ‘মাটির আসনে বসা’র সঠিক অর্থ নিরূপণ করে সে অনুযায়ী কাজ করেন তবে সমাজে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন হবে তা বলাই বাহুল্য। জনপ্রতিনিধিদের দিকনির্দেশনা প্রদান করে তাঁর বক্তব্য, “নির্বাচনে যারা বিজয়ী এবং পরাজিত হন তারা উভয়েই জনপ্রতিনিধি। উভয়েরই জনসমর্থন আছে। তাই উচিত সকলপক্ষ সম্পর্ক রক্ষা করে কাজ করা।” এ কথাতে একদিকে যেমন আছে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং পারস্পরিক সম্মান জাগ্রত করার প্রয়াস, অন্যদিকে এই বক্তব্য থেকে সরকার ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বক্তার গভীর জ্ঞানের প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ কম ভোট পেয়েও জনপ্রতিনিধির স্বীকৃতি পাওয়া যায় যে নির্বাচন পদ্ধতিতে সে ‘সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ মডেল নিয়েও যে তিনি ভাবেন তা বুঝতে পেরে আমি বিস্মিত হয়েছি! এই নির্বাচন পদ্ধতির চর্চা আমাদের দেশে নেই, সুদূর অতীতে ভারতবর্ষে এর চর্চা ছিলো বলেও জানা নেই। জনপ্রতিনিধিদের কেবল সহমর্মিতা আর ভ্রাতৃত্ববোধের নসীহত করেই তিনি শেষ করেননি। তিনি ঈমানদার জনপ্রতিনিধিদের নসীহত করেছেন আমানতদারিতা নিশ্চিতের। বলেছেন, মানুষের কটু মন্তব্য সহ্য করেও কেউ যদি হক্বদারকে তার হক্ব পৌঁছে দেয় তাহলে সে সাদাকাহ এর সাওয়াব পাবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি এমন গভীর মমতামাখা নসীহত আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো মিশরের গভর্নর মালিক আল আশতার (রা.) কে নসীহত করে পাঠানো খলীফা হযরত আলী (রা.) এর চিঠির কথা। আলী (রা.) যেমন স্নেহমাখা শব্দে মালিক আশতার (রা.) কে রাষ্ট্র পরিচালনার নসীহত করেছিলেন তিনি যেন সে সিলসিলারই অনুসরণ করছেন।
তিনি শুধু যে জনপ্রতিনিধিদের মতপার্থক্য ভুলে কাজ করার আহবান জানান তা নয়, বরং ইসলামের সঠিক মর্ম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ যেসব যুবক আমাদের আকাবিরীনদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে তাদের প্রতি বড় ছাহেবের আহবান, “আসো, আমার সাথে দুই দিন প্রত্যন্ত গ্রামের মেঠোপথ ধরে পথ চলো। আমার বিশ্বাস তোমার চিন্তার পরিবর্তন হবে।” তার এতো আত্মবিশ্বাসের উৎস কোথায়? তিনি জানেন, তিনি যে পথ মাড়ান সে পথ আমাদের সালাফদের পথ, এ পথ খিদমাতে খালক্বের পথ, এ পথ শরীআতে মুহাম্মদীর পথ। এ মহাসড়কে কোন সংকীর্ণতা নেই। এ সীরাতুল মুস্তাকীমে যে একবার হাটা শুরু করে সে বিভ্রান্ত হয় না। তাই আকাবিরদের নামে কুৎসা শুনেও তিনি ধৈর্য ধরেন, কাছে আসার মমতামাখা আহবান জানান আর মাওলার দরবারে তাদের হিদায়াতের ফরিয়াদ করেন।
একবার এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছিলাম ফুলতলীরই ইসালে সাওয়াবে। ফেরার পথে সে বলেছিলো “তোমার পীর ছাহেব হুযুর তো খুব উচ্চমার্গীয় ভাষায় কথা বলেন। আমার মনে হয় দেশের অনেক শিক্ষিত মানুষ তাঁর হাতে বাইআত হয়ে তৃপ্তি পাবেন।” হ্যাঁ, তাঁর ভাষা উচ্চমার্গীয়। তাঁর শব্দচয়ন মার্জিত, পরিশীলিত আর কাব্যিক। কিন্তু তা শুধু শিক্ষিতজনদের হৃদয়ে পৌঁছায় এমন নয়। তাঁর নসীহত সমানভাবে সবাই বুঝেন এবং অনুভব করেন। কারণ তিনি কথা বলেন হৃদয় দিয়ে, আল্লাহর তরে, লৌকিক চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে। তাই বালাই হাওর সকল শ্রেণির মানুষের নয়নের নোনাজলে সিক্ত হয়। তাঁর শব্দশৈলীর ঝংকারে কঠিন হৃদয়ের জং ভেঙে চুরমার হয়, অন্তর বিগলিত হয়। সময় পেলেই এ মজলিসে যাওয়ার চেষ্টা করি নিজের অন্তরকে পরিষ্কার রাখার মানসে।
বড় ছাহেবের যেকোন বক্তব্য নিয়েই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পর্যালোচনা করা যায়। পরিসরের সংক্ষিপ্ততায় এখানেই ইতি টানা প্রয়োজন। শেষ করি ব্যক্তিগত একটি অনুভূতির কথা বলে। মাঝে মাঝেই গভীর রাতে নানামুখী হতাশা এসে আমাকে ঘিরে ধরে। জীবনে চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় মন টালমাটাল হয়, কখনো কখনো প্রচণ্ড ভয় পাই। এমন এক রাতে হঠাৎ মনে হলো চোখ বন্ধ করে বড় ছাহেবের কথা ভাবি। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে আসলো যিকরের মাহফিলে তাঁর দরাজ কণ্ঠ- “মাওলা তুমি কোথায়? আইনামা-তুওয়াল্লূ ফাছাম্মা ওয়াজহুল্লাহ।” সে রাতে মুর্শিদের যিকরের এই স্মৃতি হৃদয়ে ভেসে উঠায় যে প্রশান্তি লাভ করেছিলাম তা আজো অম্লান। এখনো হতাশাগ্রস্ত হলে এ দরাজকণ্ঠ হৃদয়ে ভেসে উঠে। মনে হয় আল্লাহর রহমত তো আমার চারপাশ ঘিরে রেখেছে। আমার কীসের ভয়? মাঝে মাঝে চিন্তা করি কুরআনের এ আয়াত তো আমি অনেকবার পড়েছি, এমনভাবে কেন অনুভব করিনি? এখানেই বড় ছাহেব অনন্য। তিনি সবার হৃদয়ে কুরআনের মর্ম জাগ্রত করে দেন, আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনার স্বাদ পাইয়ে দেন, শরীআতকে অনুভব করান। তাঁর নসীহতে মোহরাঙ্কিত হৃদয়ের তালা ভেঙ্গে চৌচির হয়। নববী ইলমের এ আকর আমাদের অন্ধকার হৃদয়ে আলো জ্বালিয়ে চলেন হরদম।