1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে দিনে একটি সাদাকাহ করা
মাওলানা নজমুল হুদা খান
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হাদীসের মূল ভাষ্য

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “كُلُّ سُلَامىٰ مِنْ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ، تَعْدِلُ بَيْنَ اثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وَتُعِيْنُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَبِكُلِّ خُطْوَةٍ تَمْشِيْهَا إلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ، وَتُمِيْطُ الْأَذَى عَنْ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ”. رواه البخاري ومسلم.

অনুবাদ: হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সূর্য উদিত হয় এমন প্রত্যেক দিনে মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে একটি সাদাকাহ প্রদান করা উচিত। দু’জনের মধ্যে ন্যায় বিচার করা একটি সাদাকাহ, কোনো মানুষকে তার সওয়ারীতে আরোহনে সাহায্য করে তাতে উঠিয়ে দেওয়া অথবা তার মালামাল বাহনের উপর উঠিয়ে দেওয়া একটি সাদাকাহ। ভালো কথাও একটি সাদাকাহ। নামাযের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক পদক্ষেপও একটি সাদাকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাও একটি সাদাকাহ। (বুখারী, হাদীস নং ২৭৮১; মুসলিম, হাদীস-২২০৭)

প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে দিনে একটি সাদাকাহ করা

এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন দেহের প্রতিটি গ্রন্থি তথা জোড়ার পরিবর্তে একটি করে সাদাকাহ প্রদানের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,

كُلُّ سُلَامىٰ مِنْ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ

-সূর্য উদিত হয় এমন প্রত্যেক দিনে মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে একটি সাদাকাহ প্রদান করা উচিত।
এখানে ‘সূর্য উদিত হয় এমন প্রত্যেক দিন’ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে সকল দিনকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক গ্রন্থি বা জোড়ার পরিবর্তে প্রতিদিনই সাদাকাহ করা উচিত। শুধু জীবনে একবার সাদাকাহ করলেই হবে এমন নয়।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنّهُ خُلِقَ كُلّ إِنْسَانٍ مِنْ بَنِي آدَمَ عَلٰى سِتّينَ وَثَلاَثِمِائَةِ مَفْصِلٍ

-“আদম সন্তানের প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৩৬০টি জোড়ায় সৃষ্টি করা রয়েছে (মুসলিম, হাদীস নং ২২০২)।” সুতরাং প্রত্যেক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৩৬০টি সাদাকাহ করা উচিত। কেউ সকালে উঠে এ পরিমাণ সাদাকাহ করলে সে সন্ধ্যাবেলা এমন অবস্থায় উপনীত হয় যে, সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে সরিয়ে ফেলেছে। মুসলিম শরীফের পূর্বোক্ত বর্ণনায় এরূপ রয়েছে।
কেউ কেউ প্রতিদিন এ সাদাকাহ ওয়াজিব বলেছেন। তবে ইমাম নববী (র.) বলেছেন, এটি নফল ও উৎসাহ প্রদানমূলক সাদাকাহ। এটি ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় সাদাকাহ নয় (ইমাম নববী, শারহু মুসলিম, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৩২)। আল্লামা ইবনু দাকীক আল ঈদও অনুরূপ বলেছেন। (শারহুল আরবাঈন, পৃষ্ঠা ৭১)
প্রতি জোড়ার বিনিময়ে প্রতিদিন যে সাদাকাহ আদায় করতে হয় তা দুটি কারণে:

১. নিআমতের শুকরিয়া স্বরূপ। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা জোড়াসমূহের মাধ্যমে স্বচ্ছন্দে শরীরকে ব্যবহার করার মতো যে মহান নিআমত দান করেছেন তার শুকরিয়াস্বরূপ এ সাদাকাহ প্রদান করা হবে।

২. ভবিষ্যত নিরাপত্তার ওয়াসীলাস্বরূপ। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যেন ভবিষ্যতেও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহকে সালামত রাখেন এ উদ্দেশ্যে উক্ত সাদাকাহ প্রদান করা হবে।

প্রত্যেক নেক আমল এক একটি সাদাকাহ
আল্লাহ তাআলা মানবদেহকে ৩৬০টি জোড়ায় সৃষ্টি করে যেমন একে স্বচ্ছন্দে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। এ নিআমতের শুকরিয়া হিসেবে প্রত্যেক জোড়ার বিনিময়ে প্রতিদিন একটি করে সাদাকাহ করার ঘোষণা দিয়ে সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নেক আমলকে এক একটি সাদাকাহ’র স্থলাভিষিক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি এ হাদীসে বলেছেন, দু’জনের মধ্যে ন্যায় বিচার করা একটি সাদাকাহ, কোনো মানুষকে তার সওয়ারীতে আরোহনে সাহায্য করে তাতে উঠিয়ে দেওয়া অথবা তার মালামাল বাহনের উপর উঠিয়ে দেওয়া একটি সাদাকাহ। কারো সাথে উত্তম কথা বলাও একটি সাদাকাহ। নামাযের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক পদক্ষেপও একটি সাদাকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাও একটি সাদাকাহ। পূর্বের হাদীসে আমরা পেয়েছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) একটি সাদাকাহ, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহ আকবার বলা) একটি সাদাকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ বলা) একটি সাদাকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা) একটি সাদাকাহ, ভালো কাজের আদেশ দেওয়া একটি সাদাকাহ, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকাহ। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি সাদাকাহ (মুসলিম, হাদীস নং ২২০১)। এরূপ বিভিন্ন নেক আমলকে এক একটি সাদাকাহ বলে উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য ঘোষিত বিধানকে সহজ করে দিয়েছেন। নতুবা প্রতিদিন ৩৬০ টি করে স্বতন্ত্র সাদাকাহ করতে হলে উম্মতের পক্ষে তা সম্ভব হতো না।
উল্লেখ্য যে, সাদাকাহ’র সাওয়াব কেবল হাদীসে বর্ণিত বিষয়গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন হাদীসে উদাহরণ হিসেবে মাত্র কয়েকটি বিষয়ের নাম এসেছে। এ বর্ণনাগুলোর সারকথা হলো, প্রত্যেক নেক আমলই এক একটি সাদাকাহ। যেমন, অন্য হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ -প্রত্যেক নেক আমলই সাদাকাহ (বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯৬; মুসলিম, হাদীস-২২০০)। এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো নেক আমলকেই ছোট করে না দেখার জন্য বলেছেন। যেমন, মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ যার (রা.) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন,

لا تَحْقِرَنَّ مِنَ المَعْرُوفِ شَيْئاً وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ

-কোনো নেক আমলকে তুচ্ছ মনে করো না, এমনকি যদি তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করাও হয়। (মুসলিম, হাদীস-৬৪৫১)

দু’জনের মধ্যে ন্যায়বিচার করা একটি সাদাকাহ
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تَعْدِلُ بَيْنَ اثْنَيْنِ صَدَقَةٌ

-‘দুজনের মধ্যে ন্যায়বিচার করা একটি সাদাকাহ’। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি দু’জন মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করে দিলে সে একটি সাদাকাহ’র সাওয়াব পাবে এবং এটি ঐদিনের জন্য তার দেহের একটি জোড়ার বিনিময়ে যে সাদকাহ আদায় করতে হয় এর স্থলাভিষিক্ত হবে।
পারষ্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি মানবসমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। দুজন মানুষের মধ্যে ঝগড়া সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করে। তাই এরূপ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া জরুরী। মীমাংসার ক্ষেত্রে অবশ্যই ন্যায়বিচারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সর্বাবস্থায় ইনসাফ রক্ষা করতে হবে। কারো প্রতি কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা যাবে না। এমনকি কোনো পক্ষের সাথে নিজের শত্রুতা থাকলেও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করা যাবে না। পবিত্র কুরআন মাজীদের নির্দেশনাও এটি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلٰى أَلَّا تَعْدِلُوا، اِعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى

-কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তেমাদেরকে ন্যায়বিচার পরিত্যাগে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার করো। এটিই তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত ০৮)

সওয়ারীতে আরোহনে সাহায্য করাও সাদাকাহবিশেষ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

وَتُعِيْنُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ

-কোনো মানুষকে তার সওয়ারীতে আরোহনে সাহায্য করে তাতে উঠিয়ে দেওয়া অথবা তার মালামাল বাহনের উপর উঠিয়ে দেওয়াও একটি সাদাকাহ। অর্থাৎ কোনো মানুষ বার্ধক্য, দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে সাওয়ারীতে আরোহনে অপারগ হলে বা তাতে আরোহন করা তার জন্য কষ্টসাধ্য হলে তাকে সহযোগিতা করে সাওয়ারীতে উঠিয়ে দেওয়া কিংবা সাওয়ারীতে তার মালামাল উঠিয়ে দেওয়া সাদাকাহ হিসাবে গণ্য হবে। অতীতে মানুষ সাওয়ারী বা বাহন হিসাবে উট, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর ইত্যাদি প্রাণীকে ব্যবহার করত। বর্তমানে গাড়ি, রিক্সা ইত্যাদি এর স্থান দখল করেছে। তাই কোনো মানুষকে গাড়ি, রিক্সা কিংবা অন্য কোনো যানে উঠতে সাহায্য করা কিংবা তার মালামাল উঠিয়ে দেওয়া সাদাকাহ হিসাবে গণ্য হবে।
ভালো কথাও সাদাকাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ -‘ভালো কথাও একটি সাদাকাহ’। তাসবীহ, তাহলীল, যিকির-আযকার ইত্যাদি যেমন ভালো কথার অন্তর্ভুক্ত তেমনি মানুষের সাথে উত্তম কথা বলাও এর অন্তর্ভুক্ত। আখলাকে হাসানাহ তথা উত্তম চরিত্রের অন্যতম দিক হলো, মানুষের সাথে ভালো কথা বলা, হাসিমুখে কথা বলা। সুতরাং কেউ কারো সাথে ভালো কথা বললে কিংবা হাসিমুখে কথা বললে তা সাদাকাহ হিসাবে গণ্য হবে।

নামাযের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক পদক্ষেপও একটি সাদাকাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

وَبِكُلِّ خُطْوَةٍ تَمْشِيْهَا إلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ

-নামাযের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক পদক্ষেপও একটি সাদাকাহ। এক্ষেত্রে দূরত্ব কম হোক বা বেশি হোক প্রত্যেক পদক্ষেপই এক একটি সাদাকাহ হিসাবে গণ্য হবে।

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাও একটি সাদাকাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

وَتُمِيْطُ الْأَذَى عَنْ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ

-রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাও একটি সাদাকাহ। কষ্টদায়ক বস্তু বলতে এমন সকল জিনিস উদ্দেশ্য যা চলাচলের পথে কষ্টের কারণ হয়। রাস্তার উপর পড়ে থাকা ইট, পাথর, বাঁশ কিংবা বাঁশের কঞ্চি, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি যা-ই পথচারীদের কষ্টের কারণ হবে তা সরিয়ে ফেলা সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানোকে ঈমানের শাখা বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,

الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ

-ঈমানের ষাট বা সত্তরের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা (অর্থাৎ ঈমানের সাক্ষ্য দেওয়া) এবং সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ। (বুখারী ও মুসলিম; ভাষ্য মুসলিম থেকে নেওয়া, হাদীস-৬০)

৩৬০ সাদাকাহ’র সমতুল্য একটি আমল
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নেক আমলকে এক একটি সাদাকাহ হিসাবে সাব্যস্ত করার পাশাপাশি মাত্র দু’রাকআত নামায ৩৬০টি সাদাকাহ’র স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন। এটি উম্মতের প্রতি তাঁর বিশেষ দয়া। সে দু’রাকআত নামায হলো সালাতুত দুহা বা চাশতের নামায। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى .

-তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে তখন তার প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একটি সাদাকাহ রয়েছে। প্রত্যেক তাসবীহ একটি সাদাকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ একটি সাদাকাহ, প্রত্যেক তাহলীল একটি সাদাকাহ, প্রত্যেক তাকবীর একটি সাদাকাহ, ভালো কাজের আদেশ দেওয়া একটি সাদাকাহ, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা একটি সাদাকাহ। অবশ্য, চাশতের সময় দু’রাকআত নামায পড়া এসবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। (মুসলিম, হাদীস-১৫৪৪)
সুতরাং দুহা বা চাশতের নামাযের প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। তবে চাশতের নামায পড়লে অন্য আর কোনো নেক আমলের প্রয়োজন নেই এমনটি মনে করলে চলবে না। নেক আমল যিনি যতটুকু করবেন তিনি নিজেই এর ফল ভোগ করবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঈমানের পাশাপাশি নেক আমলকে জান্নাত লাভের মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ

-যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। এটিই মহান সফলতা (সূরা বুরুজ, আয়াত ১১)। সুতরাং সর্বদা সব ধরনের নেক আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা জরুরী।

ফেইসবুকে আমরা...