সমুদ্রের বুকে তেতাল্লিশ রাত্রি কাটিয়ে অবশেষে বাঙ্গালায় পৌঁছলাম। বিশাল এই দেশে প্রচুর চাল উৎপন্ন হয়। এতো সস্তা দ্রব্যমূল্য আমি দুনিয়ার আর কোথাও দেখিনি। তবে এ এক অন্ধকারের দেশ। খোরাসানিরা এ দেশের নাম দিয়েছে ‘নিআমতে ভরপুর দুযখ’। স্থানীয় এক রৌপ্য মুদ্রায় (যা আট দিরহামের সমান) এ দেশে দিল্লির হিসাবে ২৫ রতল (ওজনের পরিমাপ) চাল পাওয়া যায়। দিল্লির ১ রতল মরক্কোর ২০ রতলের সমান। স্থানীয়দের মুখে শুনেছি, তাদের নিকট তখন না-কি বাজার দর চড়া ছিল। মাহমুদ আল-মাসমুদী আল-মাগরিবী নামের এক নেককার ব্যক্তি অনেক আগে এ দেশে বসবাস করতেন, দিল্লিতে আমার সাথে থাকাকালে তার ইন্তিকাল হয়। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তিনি স্ত্রী ও খাদিমকে নিয়ে এ দেশে বসবাস করতেন, এবং তিনজনের পুরো বছরে খাবার মাত্র আট দিরহাম দিয়ে কিনতেন।
বাংলাদেশে আমি মাত্র তিন রৌপ্য দিনারে দুধের গাভি ও মহিষ আর এক দিরহামে আটটি হৃষ্টপুষ্ট মুরগি বিক্রি হতে দেখেছিলাম। ১৫টি কবুতর বিক্রি হতো মাত্র ১ দিরহামে, মোটাসোটা ভেড়া পাওয়া যেতো দুই দিরহামে, এক রতল (দিল্লির পরিমাপ অনুযায়ী) চিনির দাম ৪ দিরহাম, ১ রতল গোলাপজল ৮ দিরহাম, ৪ দিরহামে ১ রতল ঘি, ২ দিরহামে ১ রতল তিলের তেল পাওয়া যেতো। মাত্র ২ দিনারে ৩০ গজ উন্নতমানের সূক্ষ্ম ও মসৃণ কটনের কাপড় বিক্রি হতে দেখেছি, সুশ্রী ক্রীতদাসী বিক্রি হতে দেখেছি মাত্র ১ স্বর্ণ দিনারে (স্থানীয় ১ দিনার মরক্কোর আড়াই দিনারের সমান)। এই দামে আমি আশুরা নাম্নী এক দাসী কিনেছিলাম, সে ছিল খুবই রূপবতী, আমার এক সঙ্গী ২ স্বর্ণ দিনারে অল্প বয়স্ক সুদর্শন দাস কিনেছিলেন, সে দাসের নাম ছিল লু’লু’। বাংলাদেশের যে শহরে প্রথম প্রবেশ করেছিলাম, সে শহরের নাম চাটগাঁও। বিশাল সমুদ্রের তীরে অবস্থিত বিরাট এক শহর চাটগাঁও। আর এ সমুদ্রে মিশেছে গঙ্গা ও জুন নদী। গঙ্গায় হিন্দুরা তীর্থ যাত্রা করে। এ নদীতে তাদের বিশাল নৌবহর রয়েছে, এই নৌবহরের সাহায্যে তারা লক্ষ্মণাবতীর অধিবাসীদের সাথে যুদ্ধ করে।
বাংলার সুলতান ছিলেন ফখরুদ্দীন। তিনি মহৎ শাসক ছিলেন, মুসাফিরদের পছন্দ করতেন, বিশেষত সূফী-দরবেশদেরকে ভালোবাসতেন। এ দেশের রাজত্ব ছিল দিল্লির সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবনের ছেলে সুলতান নাসিরুদ্দীনের (যিনি বুগরা খান নামে পরিচিত); নাসিরুদ্দীন তাঁর বাবার মৃত্যুর পর ছেলে মুঈযযুদ্দীনকে দিল্লির শাসক নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে নাসিরুদ্দীন তার পুত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন, একটি নদীর তীরে পিতা-পুত্রের বাহিনী মুখোমুখি হয়েছিল। নাসিরুদ্দীন শেষ পর্যন্ত পুত্রের হাতে দিল্লির রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে বাংলায় ফিরে আসেন, মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বাংলাতেই স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। তাঁর পর তাঁর পুত্র শামসুদ্দীন রাজত্ব লাভ করেন এবং মৃত্যু অবধি রাজত্ব করেন। এরপর ক্ষমতায় আসেন সুলতান শামসুদ্দীনের পুত্র শিহাবুদ্দীন। পরবর্তীতে তাঁকে পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করেন তাঁর ভাই সুলতান শামসুদ্দীনের আরেক পুত্র সুলতান গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ (ইবনে বতুতা বাহাদুরপুর লিখেছেন, তবে বাংলার ইতিহাসে ইনি বাহদুর শাহ নামেই পরিচিত)। শিহাবুদ্দীন ভাইয়ের বিরুদ্ধে দিল্লির সুলতান গিয়াসুদ্দীন তুঘলকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলে তুঘলক শিহাবুদ্দীনকে সহযোগিতা করেন এবং বাহাদুর শাহকে আটক করেন। তুঘলকের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মুহাম্মাদ বিন তুঘলক শিহাবুদ্দীনকে এই শর্তে মুক্তি দেন যে, শিহাবুদ্দীন তাঁর অর্ধেক রাজত্ব মুহাম্মাদ বিন তুঘলককে প্রদান করবেন। মুক্তি পেয়ে শিহাবুদ্দীন চুক্তিভঙ্গ করেন, ফলে মুহাম্মাদ বিন তুঘলক যুদ্ধ করে তাঁকে নিহত করেন এবং তাঁর এক জামাতাকে বাংলার শাসক নিযুক্ত করেন। সৈন্যরা এই শাসককে হত্যা করেন, এরপর ক্ষমতায় আসেন আলী শাহ। আলী শাহ তখন লকনৌতি বা লক্ষ্মণাবতীতে ছিলেন। ফখরুদ্দীন (মুবারক শাহ) ছিলেন সুলতান নাসিরুদ্দীনের বংশের অনুগত। তিনি যখন দেখলেন বাংলা নাসিরুদ্দীনের বংশধরদের হাতছাড়া হয়ে গেছে, তখন চাটগাঁও ও বাংলায় আলী শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর ফলে আলী শাহ ও ফখরুদ্দীনের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়। ফখরুদ্দীন ছিলেন নৌশক্তিতে শক্তিশালী, তাই তিনি বর্ষাকালে লক্ষ্মণাবতীতে আক্রমণ করতেন। আলী শাহের স্থলবাহিনী শক্তিশালী ছিলো, তাই শুকনো মৌসুমে তিনি বাংলায় ফখরুদ্দীনের উপর আক্রমণ করতেন।
সুলতান ফখরুদ্দীনের ফকির-দরবেশ প্রীতির অবসান ঘটে একবার তাঁর কোন এক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার সময় এক দরবেশকে চাটগাঁওয়ে তাঁর প্রতিনিধি নিযুক্ত করার পর। সেই ফকীরের নাম ছিল শায়দা। শায়দা সুলতান ফখরুদ্দীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং রাজত্ব দখল করতে চান। এমনকি তিনি সুলতানের একমাত্র পুত্রকে হত্যা করেন। সুলতান খবর পেয়ে ফিরে এসে শায়দাকে আক্রমণ করেন, শায়দা তার অনুগামীদেরকে নিয়ে পালিয়ে সাতগাঁওয়ে চলে যান। সাতগাঁও খুবই সুরক্ষিত নগরী ছিল। সুলতান শায়দাকে সাতগাঁও অবরোধ করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন। সাতগাঁওবাসী তখন নিজেদের প্রাণভয়ে শায়দাকে বন্দি করে সুলতানের বাহিনীর নিকট সমর্পণ করেন এবং সুলতানের নিকট এ বিষয়ে তাঁর নির্দেশ জানার জন্য চিঠি লিখেন। সুলতান তাঁর নিকট শায়দার মস্তক প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। তারা সুলতানের নিকট শায়দার মস্তক প্রেরণ করেন। এ কারণে বহু ফকীর-দরবেশ নিহত হয়েছিলেন। আমি চাটগাঁওয়ে প্রবেশ করে সুলতানকে দেখিনি, তার সাথে সাক্ষাৎও করিনি। কারণ ভারতবর্ষের বাদশাহের সাথে তাঁর বিরোধ ছিল, তাই তাঁর সাক্ষাতের পরিণতি সম্পর্কে আমি ভয় করছিলাম। চাটগাঁও থেকে আমি কামরূপ পর্বতমালার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। চাটগাঁও থেকে কামরূপ ছিল এক মাসের পথ। কামরূপের বিস্তীর্ণ পর্বতমালা চীন অবধি পৌঁছেছে। এই পর্বতমালা তিব্বতের সাথেও মিলেছে। এ পর্বতমালার বাসিন্দারা দেখতে তুর্কিদের মতো, সেবার ক্ষেত্রে তারা বিশেষ পারদর্শী, এ অঞ্চলের একজন দাস অন্য অঞ্চলের কয়েক জন দাসের অনুরূপ। এরা যাদুটোনার জন্য বেশ বিখ্যাত। এই পর্বতমালায় আমার সফরের উদ্দেশ্য ছিল এক আল্লাহর ওলীর সাক্ষাৎলাভ। তিনি হলেন শাইখ জালালুদ্দীন তিবরিযী (হযরত শাহজালাল র.)।
এই শাইখ ছিলেন অনেক বড় এক ওলী এবং অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর অনেক প্রসিদ্ধ কারামত রয়েছে, এবং বিরাট প্রভাব রয়েছে। তিনি ছিলেন দীর্ঘজীবীদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আমাকে বলেছেন যে, তিনি বাগদাদে খলীফা মু’তাসিম বিল্লাহকে পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গীরা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি ১৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তিনি টানা চল্লিশ বছর ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতেন। একটানা দশদিন রোযা রেখে তারপর রোযা ছাড়তেন। তার একটি গাভি ছিল, সে গাভির দুধ দিয়ে ইফতার করতেন। সারা রাত নামায পড়তেন। তিনি ছিলেন ছিপছিপে ও ছোটোখাটো গড়নের মানুষ। ঐ পাহাড়ের মানুষ তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, এ জন্য তিনি তাদের মধ্যেই বসবাস করতেন।
তাঁর এক সাথি আমাকে জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর মৃত্যুর একদিন আগে তাদের সকলকে ডাকেন। তাদেরকে আল্লাহভীতির ওসীয়ত করেন এবং বলেন, আমি আগামীকাল তোমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবো ইনশাআল্লাহ। পরের দিন যুহরের নামায আদায়কালে শেষ সিজদায় আল্লাহ তাঁর রূহ কবজ করেন। তিনি যে গুহায় বসবাস করতেন, সেই গুহার পাশে তাঁরা একটি খননকৃত কবর, কাফন ইত্যাদি পেলেন। তখন তাঁরা তাঁকে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে জানাযার নামায আদায় করে দাফন করেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন।
আমি যখন এই শাইখের সাথে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা পোষণ করলাম, তাঁর আবাসস্থলের দুই দিনের পথ অবশিষ্ট থাকতেই তাঁর চারজন সঙ্গী আমার সাথে দেখা করলেন। তাঁরা আমাকে জানালেন, শাহ জালাল (র.) তাঁর সাথে থাকা দরবেশদেরকে বলেছেন, তোমাদের নিকট মরক্কো থেকে এক আগন্তুক আসছেন, তোমরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাও। আমার সম্পর্কে তাঁর নিকট কোন তথ্য ছিল না, বরং তিনি কাশফের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। আমি তাদের সঙ্গে শাইখের নিকট গেলাম, এবং গুহার বাইরে তাঁর খানকায় পৌঁছলাম। সেখানে কোন দালান ছিল না। কাফির-মুসলিম নির্বিশেষে সে দেশের অধিবাসীরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতো। তারা তাঁর জন্য হাদিয়া-তোহফা নিয়ে আসতো। তাঁর সাথে থাকা সূফী-দরবেশ ও অন্যরা এসকল খাবার খেতেন। আর তিনি কেবল তাঁর গাভির দুধ দিয়েই ইফতার করতেন, যেমনটা এর আগেও আমরা আলোচনা করেছি। আমি যখন তাঁর দরবারে প্রবেশ করলাম, তিনি আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে আমার সাথে মুয়ানাকা করলেন। তিনি আমাকে আমার স্বদেশ সম্পর্কে এবং আমার সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে আমি তাঁকে জানালাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘আপনি আরবের মুসাফির’। তখন তার সঙ্গীরা বললেন, তিনি আজমেরও মুসাফির। শাইখ বললেন, হ্যাঁ, আজমেরও, তোমরা তাঁর কদরদানি করো। তাঁরা আমাকে তাঁর খানকায় নিয়ে গেলেন এবং তিন দিন মেহমানদারি করলেন।
আমি যেদিন শাহ জালাল (র.) এর সাথে প্রথম দেখা করি, সেদিন চমৎকার একটি আলখাল্লা দেখে আমার খুবই পছন্দ হয়। আমি মনে মনে বলছিলাম, হায়! শাইখ যদি এটি আমাকে দান করতেন!! আমি যেদিন তাঁর নিকট বিদায় নিতে গেলাম, তিনি গুহার এক পাশে গিয়ে আলখাল্লাটি খুললেন, এবং আমাকে পরিয়ে দিলেন। তাঁর মাথার টুপিটিও আমাকে পরিয়ে দিলেন। এরপর তিনি তালিওয়ালা পোশাক পরলেন। দরবেশগণ আমাকে জানালেন যে, শাইখ সাধারণত এই আলখাল্লাটি পরেন না। আমার আগমন উপলক্ষ্যেই তিনি এটি পরেছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে, মাগরিবি (মরক্কোর অধিবাসী তথা ইবনে বতুতা) আলখাল্লাটি চাইবেন, কাফির সুলতান এটি তার নিকট থেকে নিয়ে যাবে, এবং সে এটি আমাদের ভাই বুরহানুদ্দীন আস-সাগিরজীকে দান করবে। আর আলখাল্লাটি তাঁরই। দরবেশদের কাছ থেকে এ খবর জেনে আমি তাদেরকে বললাম, শাইখ তাঁর পোশাক আমাকে পরিয়ে দিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে আমি তাঁর বরকত লাভ করেছি। আমি এ আলখাল্লা নিয়ে কাফির-মুসলিম কোন সুলতানের দরবারেই প্রবেশ করবো না। এরপর আমি শাহ জালাল (র.) এর নিকট থেকে প্রস্থান করলাম। বহুকাল পর আমি চীন দেশে প্রবেশ করি। এক পর্যায়ে খানসা শহরে পৌঁছি। ভীড়ের কারণে সেখানে আমার সঙ্গীরা আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আলখাল্লাটি তখন আমার নিকট ছিল। আমি কোন এক রাস্তায় ছিলাম, হঠাৎ সে রাস্তায় মন্ত্রীর বিশাল বহর এসে পৌঁছে। আমার উপর মন্ত্রীর চোখ পড়লে তিনি আমাকে ডেকে নেন এবং আমার আগমনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি আমার থেকে আলাদা হওয়ার আগেই আমি তার সাথে সুলতানের প্রাসাদে পৌঁছি। আমি তখন সরে যেতে চাইলে মন্ত্রী আমাকে নিষেধ করেন এবং আমাকে সুলতানের নিকট নিয়ে যান। সুলতান আমাকে মুসলিম সুলতানদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি তাকে উত্তর দিই। এক পর্যায়ে তিনি আলখাল্লাটির দিকে তাকান, এবং এটি তার ভালো লেগে যায়। মন্ত্রী তখন আমাকে আলখাল্লাটি খুলতে বলেন, তখন আমার পক্ষে সে কথা না শুনে কোন উপায় ছিল না। সুলতান তখন আমার আলখাল্লাটি নিয়ে নির্দেশ দিলেন যেন আমাকে দশটি খেলাত (বিশেষ রাজকীয় পোশাক), সুসজ্জিত ঘোড়া, এবং খরচপাতি প্রদান করা হয়। আমি মনে কষ্ট পেলাম। হঠাৎ মনে পড়লো, শাইখ তো বলেছিলেন যে এটি আমার নিকট থেকে এক কাফির সুলতান কেড়ে নেবে। আমি আরো বিস্মিত হলাম। আরেক বছর যখন আমি চীনের খান বালিক শহরে প্রবেশ করলাম, শাইখ বুরহানুদ্দীন আস-সাগিরজীর খানকায় গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি, তিনি পড়ছেন আর তাঁর পরনে সেই আলখাল্লাটি! আমি বিস্মিত হয়ে হাত দিয়ে আলখাল্লাটি নেড়ে দেখলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি এটি কেন নাড়ছেন, আপনি এটি চিনেন না-কি? আমি বললাম হ্যাঁ, এই আলখাল্লাটিই তো খানসার সুলতান আমার থেকে নিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আলখাল্লাটি আমার ভাই জালালুদ্দীন (শাহ জালাল র.) আমার জন্য বানিয়েছিলেন। এবং আমাকে চিঠি লিখেছিলেন যে অমুকের মাধ্যমে আলখাল্লাটি আপনার নিকট পৌঁছবে। এরপর তিনি চিঠিটি বের করে আমাকে দেখালেন। আমি চিঠিটি পড়ে শাহ জালাল (র.) এর দৃঢ় বিশ্বাস দেখে অবাক হলাম। আমি তাঁকে প্রথম ঘটনাটি জানালাম। তিনি বললেন আমার ভাই জালালুদ্দীন এসবের ঊর্ধ্বে আল্লাহর রহমতের আশ্রয়ে চলে গেছেন। এরপর তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে খবর পৌঁছেছে যে তিনি (শাহ জালাল র.) প্রতিদিন ভোরে (ফজরে) মক্কা শরীফে নামায আদায় করতেন, প্রতিবছর হজ্জ আদায় করতেন; কারণ, তিনি আরাফার দিন ও ঈদুল আদহার দিন লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যেতেন, এবং তিনি কোথায় যেতেন তা কেউই জানতো না।
[বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার কালজয়ী ভ্রমণকাহিনি ‘রিহলাতু ইবনু বতুতা’। ইবনে বতুতা এ বইটিতে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কাহিনিও আলোচনা করেছেন। মাসিক পরওয়ানার পাঠকদের জন্য আরবী ভাষায় রচিত ইবনে বতুতার বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা ও হযরত শাহজালাল (র.) সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিচারণের অংশটুকু মিফতাহ তালহা কর্তৃক অনুবাদ করে দেওয়া হলো। -সম্পাদক]