1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
কীভাবে গড়বেন আপনার সন্তানকে
শামীমা জাফরিন
  • ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

প্রত্যেক বাবা-মার কাছে সবচাইতে প্রিয় এবং অমূল্য সম্পদ তাদের সন্তান। সন্তানের মধ্য দিয়েই প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকে। সন্তানই তাদের ভিন্ন সংস্করণ। ভ্রুণ থেকে শুরু হয় সন্তানের শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি। তার জন্য পিতা-মাতা দুজনেরই সুসম্পর্ক সন্তানের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। এখন আসুন, সন্তান জন্মাবার পর থেকে শিক্ষা সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত আপনার সন্তানকে কিভাবে গড়ে তুলবেন। ভ্রুণ থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পরও শিশু বড় না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার সন্তান যখন একটু একটু কথা বলতে শিখবে তখন থেকে তার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শিশু মাত্রই অনুকরণপ্রিয়। তখন সে মা এবং পরিবারের সবাই কি করে, কিভাবে কথা বলে-সবকিছুই সে হুবহু রপ্ত করতে চেষ্টা করে। কাজেই, শিশুর সামনে সব সময় সাবধান এবং সচেতন হতে হবে এবং মাকে সে সকল ব্যাপারে খুবই সতর্ক হতে হবে। কিভাবে খেতে হবে, কিভাবে চলতে হবে, কিভাবে কথা বলতে হবে, বড়দের সাথে। কিভাবে কথা বলতে হবে শিশুকে সে সকল বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। এখন যে বিষয়টির অভাব অনেক শিশুর মধ্যেই দেখা যায় সেটা শিক্ষা নয়; সুশিক্ষার অভাব। অজ্ঞতা, যার অভাবে তারা অন্যায়, নৈতিকতা বিরোধী কাজ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না কিংবা যে বিষয়গুলো খুব একটা দোষের মনে করে না, সেটাকে তারা বুদ্ধিবৃত্তি বলে খুব আত্মতৃপ্তি বোধ করে। কিন্তু এগুলোর অনেক কিছুর মধ্যে যে মিথ্যাচার, প্রতারণামূলক বিষয় থাকে সেটা তারা আলাদা করে ভাবে না, ভাবতে পারে না। এবং এগুলো যে নৈতিকতা বিরোধী তা বুঝতে পারে না, বুঝার চেষ্টাও করে না। এগুলো ছোটকাল থেকে আস্তে আস্তে রপ্ত করে পরে সেটা মজ্জাগত হয়ে যায়। ছোটকালে কোনো বাচ্চা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বললে পরিবারের অনেকে এসব শুনে আনন্দ পান এবং কেউ আসলে তাদের সামনে তার ঐ ধরনের কথার খুব প্রশংসা করে এবং তাদের সামনে সে বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করে। খুব হাসাহাসি করেন, আনন্দ পান। এতে সে শিশু এসব ব্যাপারে উৎসাহিত হয়, যা পরবর্তীতে তাকে এসব ব্যাপারে সহজ করে ফেলে। অনেক সময় শিশু তার বয়সের চেয়ে পরিপক্ক কথা বলে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাকে ধমক কিংবা প্রশ্রয় কোনোটাই দেওয়া ঠিক নয়, তাকে সে কথাটা সহজভাবে এবং ভালো দিকে পরিবারের সদস্যদের বিশেষভাবে মাকে ব্যাখ্যা করে বুঝালে সে আর সে ধরনের কথা খুব একটা বলবে না। শিশু যদি যৌথ পরিবারের হয় তবে সেক্ষেত্রে পরিবারের প্রত্যেককেই তাকে সুন্দর-সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বড় হতে সাহায্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বভাবসুলভ চপলতা প্রতিটি শিশুর মধ্যেই থাকবে। সব সময় সেজন্য তাকে শাসনের মধ্যে রাখলে তার মানসিক বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাড়াবে। তার অনুসন্ধিৎসু মন তার চারপাশের সব কিছুই জানতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে সে অনেক কিছুই ভয়ে জানতে চাইবে না। তার চারপাশের সব কিছুই তার অজানা, সব কিছুই নতুন। তাকে ঐসব কিছু জানতে সাহায্য করতে হবে। এটা তার অধিকার। কাজেই বিষয়গুলো ধৈর্যের সাথে সঠিকভাবে সুন্দরভাবে তার কাছে বর্ণনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিবারই তার প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। আর একজন মাকে হতে হবে একজন দক্ষ, সফল, সুস্থ মনের শিক্ষয়িত্রী। অনেক বাচ্চা অনেক ধরনের খাবার খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে মাকে (মা চাকরিজীবী হলে সব সময় সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে যে তার দায়িত্বে থাকবে তাকে) সে খাবারের গুণাগুণ এবং না খেলে শরীর তার ক্ষতিকর দিক আকর্ষণীয়ভাবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে গল্পাকারে বর্ণনা করতে হবে। এতে সে গল্পের ফাঁদে পড়ে যেতে বাধ্য হয় এবং এর ফলে দেখা যায় অনেক বাচ্চা তেঁতো খাবারও পর্যন্ত খুব সহজেই খেয়ে থাকে। অনেক বাচ্চা যখন-তখন নানা জিনিসের বায়না ধরে এবং তাকে সে জিনিস না দেওয়া পর্যন্ত কান্নাকাটি করতে থাকে। অনেক সময় তার বাবা-মা অফিসে যাওয়ার আগে কিংবা অফিস থেকে ফেরার পর কিছু নিয়ে আসার বায়না ধরে এবং না আনলে কান্নাকাটি করে থাকে। কিন্তু আপনার পক্ষে সব সময় আনা সম্ভব নয় কিংবা অনেক সময় মনে নাও থাকতে পারে। তখন আপনি কি করবেন? বিরক্ত হয়ে বাচ্চার গালে কষে চড় লাগাবেন কি? এটা কখনো ঠিক নয়। তারা কিন্তু কথার ছলে অনেক কিছু ভুলে যায়। তার কাছে আপনার অপারগতার বিষয়টি লুকানোর প্রয়োজন নেই। তার কাছে সহজভাবে বলবেন মনে না থাকার কথা। অফিসে অনেক কাজ ছিল কিংবা রাস্তার অসুবিধার কথা একটু বুঝিয়ে বললে, তাকে কাছে নিয়ে আদর করলে, তার জামা-কাপড়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কিংবা তার মন অন্য ধরনের বিষয়ের দিকে ঘুরিয়ে কিংবা এসব কিনে যদি সব পয়সা শেষ হয়ে যায় তাহলে অফিসে যাবেন কি করে, তার জন্য অন্যান্য জিনিস কিনবেন কি দিয়ে, সেগুলোর কথা বলে তাকে প্রশ্ন করবেন, এখন বলো কি হবে তাহলে? সে আর চাইবে কি না সে জিনিস, তার মুখ দিয়ে তার উত্তর চাইবেন। দেখবেন সে আপনার থেকেই আপনার পক্ষে তার উত্তর দিবে। এতে সে বাস্তবতার সাথেও পরিচিত হবে। যদি সম্ভব হয় আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সেটা কিনে দিবেন। তবে সেটা যে বাধ্য হয়ে কিনে দিতে না হয়। খেলনার ব্যাপারে খেয়াল রাখা দরকার যে চমক জিনিসগুলো তাকে অপরাধ প্রবণতার দিকে ঠেলে দিতে পারে (দিবে যে সব সময় এমন কোনো কথা নেই, তবে সতর্ক থাকা উচিত) সে ধরনের খেলনা না দেওয়াই উচিত। যেমন- অনেক বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের বন্দুক, পিস্তল কিনে দিতে দেখা যায়। এতে সে তার সাথীদের সাথে অনেক সময় খেলতে দেখা যায় যে, সে মস্তান হয়ে তার বন্ধুকে গুলি করে। এটা তার কাছে খুব সহজ একটা খেলা। কিন্তু এটার খারাপ দিক অবশ্যই রয়েছে। যার প্রভাব পরবর্তীতে তাকে অনেক সময় অপরাধী হতে সহজ করে তুলতে পারে। শিশুর খেলা হওয়াটাই আনন্দদায়ক। বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স অথবা ক্ষতিকর কিছু না হয়ে যে কোনো যুগোপযোগী জিনিস যা থেকে শিশু ক্ষতিকর কিছু শিখবে না, সে রকম খেলনা দিবেন। শিল্পের সাথে, সাহিত্যের সাথে ছোটকাল থেকেই তাকে পরিচিত করা দরকার। এজন্য তাকে ছবি আঁকার বিভিন্ন সরঞ্জাম, ছোট ছোট ছবির বই। গল্পের বইগুলো তাকে দুপুরে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে আকর্ষণীয়ভাবে পড়ে শুনানো। তাছাড়া শিশুরা রূপকথার গল্পের পাশাপাশি আমাদের দেশের স্থাপত্যের বিভিন্ন ইতিহাস যেমন- ভাষার ইতিহাস, আমাদের জাতীয় পতাকার রঙ্গের ইতিহাস, নবী-রাসূলদের সত্য কাহিনী, সাহাবা কাহিনী তাদের শুনাতে হবে। এসব গল্প শুনতে তারা দারুণ পছন্দ করে। এগুলো তাদের আয়ত্তে যে সব শব্দ আছে সে সব শব্দগুলো ব্যবহার করে তাদের মতো করে ছোট ছোট বাক্যের সমন্বয়ে আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করলে তারা যেমন আকর্ষণ অনুভব করবে, গুরুত্ব দিবে, তেমনি তাদের মানসিক বিকাশের পাশাপাশি দেশপ্রেম ও আদর্শিক মনোভাব গড়ে উঠবে, দেশের প্রতি মমত্ত্ববোধ জাগবে। ইসলামী আদর্শে গড়ে উঠার স্পৃহা জাগবে। অতএব আপনি শিশুকে ছোটকাল থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। যেমন- কোনো শিশুকে তার মা ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম নিয়ে শুতে বলতে পারেন। তিনি মুখে মুখে কালিমা, সূরা পড়াতে পারেন। অত:পর তার নিজেকে গড়ার জন্য, সবার জন্য, দেশের জন্য সুন্দর সুন্দর কথার সমন্বয়ে মুনাজাত করাতে পারেন- খারাপ কাজ করলে পাপ হবে, পাপটা কি, তার ক্ষতিকর দিক, পুণ্য কি, কি তার ভালো দিকগুলো বলা। এতে তার মনে ছোটকাল থেকে ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত হবে এবং সে শিশু বড় হলে নৈতিকতা বিরোধী কাজ অপেক্ষাকৃত কম করে থাকে। যদি সে পারিপার্শ্বিক অবস্থার শিকার হয়ে কিছু করে থাকে তারপরও তার মধ্যে অনুশোচনা হয়ে থাকে এবং তার মনে ভালো হওয়ার চেষ্টা জাগে। তাছাড়াও তাদের চলাফেরায় অনেক সময় ত্রুটি থাকে যা তারা অনেক সময় বুঝে এবং না বুঝে করে থাকে। এসব ব্যাপারগুলো তাদের সাথে সুন্দর, সহজভাবে আলাপ করে ত্রুটি সংশোধনে সচেষ্ট হতে হবে। তাহলে তারা আস্তে আস্তে ক্ষতিকর দিকগুলো পরিহার করবে এবং সুন্দর রুচিকর মার্জিতপূর্ণ বিষয়গুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং সে নিজে, পরিবারের, সমাজের এবং দেশের একজন সুনাগরিক হয়ে বেড়ে উঠবে। গড়ে তুলবে সঠিক সুষ্ঠু নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ ও আদর্শ রাষ্ট্র।

ফেইসবুকে আমরা...