1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ঈমানদারদের জননী হাফসা বিনতু উমর (রা.)
উম্মু উবাইদা
  • ৪ জুন, ২০২৩

আল কুরআনের যিম্মাদার পুণ্যবতী হাফসা বিনতু উমর (রা.)! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রকাশের পাঁচ বছর পূর্বে আপনার জন্ম। আপনার পিতা উমর বিন খাত্তাব (রা.) ও মাতা যাইনাব বিনতু মাদহুন এর আলয় আলোকিত করে আপনি পৃথিবীতে আসেন। আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) ছিলেন আপনার ভাই। আপনি ইসলামের ছায়াতলে আগমনকারী অগ্রগামী দলের অন্তর্ভুক্ত এবং উভয় হিজরতেই মুহাজির হওয়ার পরম সৌভাগ্য লাভে ধন্য হন। প্রথমে আপনার বিবাহ হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবী খুনাইস বিন হুযাইফাহ (রা.) এর সাথে, যিনি ছিলেন দ্বীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। খুনাইস (রা.) বদর এবং উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন এবং উহুদ যুদ্ধের সময় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। (উসদুল গাবাহ)

আপনার ইদ্দত পালন শেষ হলে আপনার পুণ্যবান পিতা উমর (রা.) পুনরায় আপনার বিবাহের ব্যবস্থা করতে মনঃস্থ করেন। সে সময় উসমান (রা.) এর স্ত্রী নবী-নন্দিনী রুকাইয়াহ (রা.) ও ইন্তিকাল করায় আপনার পিতা তাঁর (উসমান) কাছে আপনার বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু তিনি তখনো পুনরায় বিবাহের জন্য প্রস্তুত নয় বলে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এরপর আপনার পিতা আবূ বকর (রা.) এর নিকট প্রস্তাব পাঠান- আপনি রাযি থাকলে আমি আপনার সাথে আমার মেয়ে হাফসা এর বিয়ে দিতে চাই। কিন্তু আবূ বকর (রা.) প্রস্তাব পেয়েও নীরব থাকেন! এর কিছুদিন পরেই সমগ্র জাহানের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই আপনাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান! সে মহাবার্তা আনন্দ আর প্রশান্তির কী বিপুল ফল্গুধারাই না আপনার হৃদয়ে বইয়ে দিয়েছিলো!

এরপর আবূ বকর (রা.) আপনার পিতা উমর (রা.) কে বলেছিলেন- আপনার প্রস্তাবে আমি নিরুত্তর ছিলাম কারণ আমি জানতাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার মেয়েকে বিবাহের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, আমি চাচ্ছিলাম না এমন কিছু বলি যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে যায়। তিনি হাফসা (রা.) এর ব্যাপারে চিন্তা না করলে আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করতাম। অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, যখন উসমান (রা.) আপনাকে বিবাহ করার প্রস্তাব গ্রহণ না করার কথা আপনার পিতা রাসূল e কে জানান তখন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- হাফসার উসমান থেকে উত্তম কারো সাথে এবং উসমানের হাফসা থেকে উত্তম কারো সাথে বিবাহ হবে (উসদুল গাবাহ)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথারই প্রতিফলন হয় আপনার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ে এবং উসমান (রা.) এর সাথে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে সাইয়্যিদানা উম্মু কুলসুম (রা.) এর বিয়ে হওয়ার মাধ্যমে।

আর এর মাধ্যমেই আপনি আল মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেককার স্ত্রী এবং সমগ্র জাহানের ঈমানদারের মা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন যখন আপনার বয়স ছিল মাত্র বিশ বছর (সিয়ারু আলামিন নুবালা)। খাদিজা (রা.), সাউদা (রা.) এবং আয়িশা (রা.) এর পর আপনি হন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চতুর্থ স্ত্রী। তৃতীয় হিজরীর শাবান মাসে চার হাজার দিরহাম মুহরে সায়্যিদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আপনার বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। আপনি নববী আলয়ে বসবাস করেন এবং দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ স্বামী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রজ্ঞা দ্বারা মহিমান্বিত হন। যার ফলে আপনার ভাই আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) সহ আরো বহু সাহাবী (রা.) আপনার থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করেন। আপনার মেধা এবং বিচক্ষণতা রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষ্য করেছিলেন এবং লাইলা নামে এক আনসারী মহিলাকে লেখা এবং রুকইয়া শেখানোর জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ)

বিশ্বাসীদের জননী হাফসা (রা.)! বিবাহিত জীবনে আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক এক তালাকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তখন জিবরাঈল (আ.) এসে বলেন- নিঃসন্দেহে তিনি (হাফসা) অনেক বেশি রোযা রাখেন, এবং সালাত আদায় করেন। আর তিনি জান্নাতে আপনার স্ত্রী হবেন। জিবরাঈল (আ.) আরো বলেন- আল্লাহ আপনাকে উমর (রা.) এর খাতিরে হাফসা (রা.) কে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। (উসদুল গাবাহ)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পবিত্র কুরআনের অংশগুলো ভিন্ন ভিন্ন সাহাবীর যিম্মাদারিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো, গ্রন্থাকারে একত্রিত ছিলো না। আবূ বকর (রা.) তাঁর খিলাফাতকালে কুরআনের সকল অংশ একত্রিত করার উদ্যোগ নেন। এর ফলে প্রথমবারের মতো কুরআন একত্রিকরণ সম্পন্ন হয় এবং তা আবূ বকর (রা.) এর ও পরবর্তীতে উমর (রা.) এর যিম্মাদারিতে থাকে। আপনার পিতার ওফাতের সময় তিনি এই মহামূল্যবান একমাত্র নুসখাটি আপনার কাছে দিলে আপনি পবিত্র কুরআনের পাহারাদার হিসেবে পরিণত হন। উসমান (রা.) খলীফা হয়ে আরো কিছু কপি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আপনার কাছে গচ্ছিত কপি থেকে বেশ কিছু কপি তৈরি করেন এবং মূল কপি আপনাকে ফিরিয়ে দেন। এর পর আপনি আমৃত্যু তা নিজের কাছে আগলে রাখেন। (হায়াতুল আউলিয়া)

আপনি একাধারে সায়িদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী এবং আমীরুল মুমিনিন (রা.) এর কন্যা ছিলেন। আপনার বাবা খলীফা হওয়ার পর থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবিত নয় স্ত্রী এর জন্য নয়টি প্লেট নিজের কাছে রাখতেন। যখনই তার কাছে কোন বিশেষ খাবার আসতো, তিনি তার কিছু অংশ প্রতিটি প্লেটে ভাগ করে উম্মুল মুমিনীনদের নিকট পাঠাতেন। তিনি সবার শেষে আপনার প্লেট পাঠাতেন যেন কেউ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করতে না পারেন (হায়াতুস সাহাবা)।

আপনার পিতা উমর (রা.) সর্বদাই দুআ করতেন- হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নবীর শহরে (মদীনায়) শহীদের মৃত্যু দান করুন। আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন মদীনায় অবস্থান করে শহীদ হওয়া কীভাবে সম্ভব! তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- আল্লাহ চাইলে অবশ্যই তা সম্ভব হবে। সত্যিই আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় নবীর শহরে ইন্তিকাল দান করেছিলেন। যখন আপনি জানতে পারলেন তিনি মদীনা শহরেই ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছেন তখন আপনি দ্রুত তাঁর কাছে গেলেন এবং বলতে লাগলেন- হায় রাসূলের সাহাবী! রাসূলুল্লাহ e এর শ্বশুর! আমিরুল মুমিনীন! উমর (রা.) বললেন- তোমার কাছে আমার যে হক আছে সে দাবি থেকে আমি তোমাকে আর কখনো আমার জন্য বিলাপ করতে নিষেধ করছি। তবে তোমার চোখের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। যখন কোন মৃত মানুষের এমন প্রশংসা করা হয় যা সে ছিলো না তখন ফেরেশতারা তা তার বিপক্ষে লিখে রাখেন। এরপর আপনার পিতা তাঁর পক্ষ থেকে কিছু সাদাকাহ করার ওয়াসিয়াত করেন। আপনি আপনার ইন্তিকালের সময়ও একই রকম ওয়াসিয়াত করেছিলেন (উসদুল গাবাহ, হায়াতুস সাহাবা)। প্রসিদ্ধমতে ৪৫ হিজরীতে আপনি ইন্তিকাল করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে আপনাকে দাফন করা হয়।

আমাদের মা, আমাদের দিশারী, আমাদের শিরতাজ হাফসা বিনতু উমর! আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট, আপনিও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ আপনাকে সর্বোচ্চ প্রতিদান দান করুন। আল্লাহ যেন জান্নাতে আমাদের সাক্ষাৎ করান! আমীন!

ফেইসবুকে আমরা...