1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের তাৎপর্য ও শিক্ষা
মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম পারভেজ
  • ১ মে, ২০২১

মাহে রামাদানের মহিমান্বিত ১৭তম দিন ঐতিহাসিক ‘বদর দিবস’। প্রতিবছর দিনটি আমাদের মাঝে আসে ঈমানী চেতনা জাগিয়ে তুলতে। বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ, যা মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে দ্বিতীয় হিজরী সনের ১৭ রামাদান তথা ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ বদর নামক স্থানে সংগঠিত হয়। এটা মদীনা হতে প্রায় ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত।

ইসলামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের তাৎপর্য অত্যধিক। এ যুদ্ধ ছিল আত্মরক্ষার, সত্যের পক্ষে, অন্যায়-যুলম ও অবৈধ আধিপত্যের বিরুদ্ধে। সর্বোপরি মানবকল্যাণের নিমিত্তে। এ যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির পরাশক্তিকে পরাজিত করে ইসলামের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সূচনা করে। এর মাধ্যমে সত্য মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয়। এজন্য এ যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এই দিনকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র ভূমি মক্কা থেকে মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার পর সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এর অধিপতি। তিনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে মদীনার অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মদীনা সনদের মাধ্যমে একটি শান্তি ও সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে শতধা বিভক্ত জাতিকে একটি সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত করেন। একটি নতুন ধর্ম ও রাষ্ট্রের উত্থান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি মক্কা-মদীনার ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোর জন্য প্রবল আতঙ্ক ও গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া ইসলাম নামক একটি নতুন ধর্মের উন্মেষে নিজেদের প্রাধান্যও খর্ব হয় এবং স্বতন্ত্র মদীনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে মক্কা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত কুরাইশদের যে অবাধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল তাতে বিঘ্ন ঘটে। মক্কার কুরাইশরা মদীনায় নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল। এমনকি মদীনা আক্রমণ করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা ইসলামকে ভূপৃষ্ঠ থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। এরই অংশ হিসেবে তারা কুরাইশ নেতা আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি বাণিজ্যিক কাফেলা সিরিয়ায় পাঠিয়েছিল অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য-রসদ নিয়ে আসার জন্য। মক্কার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বাদ পড়েনি যারা এ বাণিজ্যে কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করেনি। শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং পূণ্যের কাজ এবং সামাজিক কর্তব্য মনে করে সবাই এতে অংশগ্রহণ করেছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সংবাদ পেলেন আবূ সুফিয়ান সিরিয়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য-রসদের বিশাল সম্ভার নিয়ে মক্কায় ফিরছেন। তখন তিনি বদর গিরিপথে আবূ সুফিয়ানকে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ মক্কায় এই অস্ত্র ও খাদ্য-রসদ ভাণ্ডার পৌঁছলে কুরাইশরা তা নিয়ে মদীনায় হামলা চালাবে। এ উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় হিজরীর ১২ রামাদান ৩১৩ জন সাহাবীর একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে মদীনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর গিরিপথের দিকে রওয়ানা হন। আবূ সুফিয়ান তার বাণিজ্যিক কাফেলার উপর মুসলমানদের আক্রমণের সম্ভাবনা বুঝতে পেরে দমদম আল গিফারীর মাধ্যমে মক্কায় সংবাদ পৌঁছে দিলেন যে, মাল-সামানাসহ বাণিজ্যিক কাফেলাকে মুসলমানদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য অতিসত্বর তারা যেন এগিয়ে আসে। এদিকে কুরাইশরা আবূ জাহলের নেতৃত্বে আবূ সুফিয়ানকে সাহায্য করার জন্য অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত ১০০০ সৈন্যের বিশাল এক বাহিনী নিয়ে রওয়ানা করে। আবূ লাহাব ব্যতীত কুরাইশদের প্রায় সকল গোত্রের দলপতিই উক্ত বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে। এ বাহিনী যথাস্থানে পৌঁছে সংবাদ পেল যে, আবূ সুফিয়ান বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে নিরাপদে মক্কায় চলে গেছেন। সে সময় আবূ জাহল তার দলকে বলল, “মুসলমানগণ যেন এত বড় দুঃসাহস আর কোনো দিন না করে তাই তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করা আবশ্যক। চলো, বদর প্রান্তরে উৎসব করে যাই।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফরা নামক স্থানে পৌঁছার পর আবূ জাহল এর নেতৃত্বে আসা মক্কা বাহিনীর বিশাল রণপ্রস্তুতির কথা অবহিত হলে তাদের শক্তি ও প্রাচুর্যের কথা সাহাবায়ে কিরামকে জানিয়ে দিলেন এবং তাদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় বসলেন। সভায় মুহাজির আনসার সকলেই কুরাইশ বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে মত দেন। বিশেষ করে হযরত মিকদাদ বিন আসওয়াদ (রা.) ও সাদ বিন মাআয (রা.) এর বক্তব্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ফুটে উঠে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে বদর প্রান্তরে উপনীত হন। যুদ্ধের আগাম ফলাফল ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন, “আর স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেন যে দুই দলের একদল তোমাদের আয়ত্তে আসবে। অথচ তোমরা চেয়েছিলে যে নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তে আসুক আর আল্লাহ চেয়েছিলেন সত্যকে তার বাণী দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং অবিশ্বাসীদেরকে নির্মূল করতে।” (সূরা আনফাল, আয়াত-০৭)

অবশেষে ১৭ রামাদান শুক্রবার বদর প্রান্তরে যুদ্ধের দামামা বেঝে উঠল। সে যুগের প্রথা অনুযায়ী দ্বৈতযুদ্ধে হযরত হামযা (রা.) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী উতবা বিন রাবিআকে, হযরত আলী (রা.) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ওলিদ বিন উতবাকে প্রথম আঘাতেই খতম করে ফেলেন। এদিকে বয়োবৃদ্ধ হযরত উবাইদা বিন হারিস (রা.) তাঁর প্রতিপক্ষ শায়বা বিন রাবীআর সঙ্গে যুদ্ধে আহত হলেন। হযরত আলী (রা.) ও হযরত হামযা (রা.) হযরত উবাইদা (রা.) এর সাহায্যে এগিয়ে এসে তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। এরই ফাঁকে হযরত আলী (রা.) শায়বাকে হত্যা করেন। প্রথম আঘাতেই সেরা তিনজন বীরযোদ্ধা ও গোত্র নেতাকে হারিয়ে কুরাইশ পক্ষ মরিয়া হয়ে মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুসলমানরা ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যান। তুমুল যুদ্ধে আনসারদের বনু সালামা গোত্রের কিশোর দুই ভাই হযরত মুআয ও হযরত মুআওয়িয ইবনু আফরা (রা.) আবূ জাহলকে হত্যা করেন।

হযরত বিলাল (রা.) এর হাতে তাঁর সাবেক মনিব উমাইয়া ইবনে খালফ নিহত হন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁর মামা আস ইবনে হিশাম ইবনে মুগিরাকে হত্যা করেন। বিকেলের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। ভীষণ এ যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। মুসলমানদের ভাগ্যে বিজয়ের গৌরব অর্জিত হলো। হক ও বাতিলের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা হলো। পবিত্র কুরআনের বর্ণানানুযায়ী এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা ফিরিশতা প্রেরণ করে মুসলমানদের সাহায্য করেন। এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে ছয়জন মুহাজির ও আটজন আনসার শহীদ হন। কাফিরদের পক্ষে ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বন্দি হয়। তাদের বড় বড় ২৪ জন নিহত নেতাকে বদরের একটি পরিত্যক্ত দুর্গন্ধময় কূপে নিক্ষেপ করা হয়। মুসলমানগণ প্রচুর গনীমতের মালের অধিকারী হন। যুদ্ধ শেষে আরবের রীতি অনুযায়ী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বাহিনীসহ বদর ময়দানে তিনদিন অবস্থান করার পর মদীনায় ফিরে আসেন।

বদর যুদ্ধের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থান ছিল পরাজিত যুদ্ধ বন্দিদের হত্যা না করা ও কষ্ট না দেওয়া। আরবের তৎকালীন প্রথানুযায়ী যুদ্ধ বন্দিদেরকে হত্যা করা, চির দাস বানানো অথবা মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হতো।

সাহাবায়ে কিরামের সাথে পরামর্শক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্দীদের হত্যা না করে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলো, মুক্তিপণ দেওয়ার মতো যাদের সামর্থ আছে তারা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি লাভ করবে। আর যাদের সামর্থ নেই তাদের মুক্তিপণ নির্ধারিত হলো আনসার সাহাবীদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিক্ষা দেওয়া। বদরের বন্দিদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আদর্শ ও উদার ব্যবহার দেখালেন, জগতের ইতিহাসে তার তুলনা হয় না। তাঁর আদেশে মদীনার আনসার ও মুহাজিররা সাধ্যানুযায়ী বন্দিদেরকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে আপন আপন গৃহে স্থান দিলেন এবং আত্মীয়-স্বজনের মতোই তাদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার করেন। বন্দিদের স্বগতোক্তি ছিল “মদীনাবাসীদের উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হোক। তাঁরা আমাদের উটে চড়তে দিয়ে নিজেরা পায়ে হেঁটে গেছে, নিজেরা শুষ্ক খেজুর খেয়ে আমাদের রুটি খেতে দিয়েছে।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের এই সুন্দর ও উদার ব্যবহার দেখে বন্দিদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। ফলে পরবর্তীতে অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

 

বদরের শিক্ষা

ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা লাভ করতে পারি তা হলো-

ক. দুআয় শিথিলতা প্রদর্শন না করা: হাদীসের ভাষ্য মতে দুআ হচ্ছে ইবাদত। কঠিন বিপদ-আপদ এমনকি জীবনে চরম মুহূর্তে দুআর ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন না করতে বদর যুদ্ধ আমাদেরকে শিক্ষা দেয়। কেননা বদর যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য কামনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে মিনতি সহকারে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা পূর্ণ করো। হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট তোমার ওয়াদাকৃত সাহায্যের নিবেদন করছি। হে আল্লাহ, আজ যদি আপনি এ দলকে ধ্বংস করেন তাহলে আপনার ইবাদত করার জন্য পৃথিবীতে কেউ থাকবে না। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওয়া সিয়ার)

আল্লাহ তাআলা বলেন, “স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিলেন, আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফিরিশতা দিয়ে সাহায্য করব যারা পরপর আসবে।” (সূরা আনফাল, আয়াত-৯৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে দিনকার দুআ শুধু কবূলই হয়নি, বরং সে দুআর বদৌলতে আজ আমরা ইসলাম পেয়েছি।

খ. সব কাজে আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখা: দুনিয়া-আখিরাতের সকল কাজে, সকল মাকসুদ হাসিল করার জন্য এবং সকল বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা রাখা হচ্ছে ইসলাম ও ঈমানের শিক্ষা।

মহান আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত-১১)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা তালাক, আয়াত-০৩)

বদর যুদ্ধ প্রমাণ করে সংখ্যা ও সরঞ্জামের কম-বেশি হওয়া বিজয়ের মাপকাটি নয়। বরং মহান আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভরতা হলো বিজয়ের মূল হাতিয়ার। এ যুদ্ধ মুসলমানদের শিখিয়েছে জাগতিক সব প্রস্তুতির পরেও সাফল্যের জন্য নির্ভর করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর ওপর। তবেই মহান আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় সম্ভব হবে।

গ. সংখ্যা সর্বদা মুখ্য ভূমিকা পালন করে না: আল্লাহর উপর ভরসা করে সততা ও ইখলাস সহকারে তাঁর দ্বীনের পতাকাকে উড্ডীন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার কারণে সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বদর প্রান্তরে মুসলমানদের বিজয় ও সফলতা দিয়েছেন। আমরা জানি এ যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জনের ক্ষুদ্র মুসলিম দল ১০০০ জনের পরিপূর্ণ অস্ত্রে সজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন।

মহান আল্লাহ বলেন, এবং আল্লাহ তোমাদের হীন অবস্থায় বদর যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন, সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো। যেন তোমরা শুকরগোজার হতে পার। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১২৩)

ঘ. ঐক্যের শিক্ষা: ঐক্য হচ্ছে সফলতা ও বিজয়ের অন্যতম ভিত্তি। আমরা লক্ষ্য করি বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল তাঁদের দৃঢ়পদ অবস্থান, একতা ও অবিচলতা। অন্যদিকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণকারী কাফিরদের অবস্থা ছিল ভঙ্গুর ফলে তারা সহজেই পরাজিত হয়েছিল। আজও ইসলাম বিদ্বেষীদের যুলম-নির্যাতন, শিরক, কুফর, অসত্য ও অন্যায়ের মুকাবিলায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বিজয় ছিনিয়ে আনতে অবশ্যই সক্ষম।

তাছাড়া অন্যায়কারী অন্যায় অপরাধ সংঘটিত করেও পার না পাওয়া, সব অপরাধীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা, দেশ ও সমাজে ইনসাফ ও মানবতার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা এবং কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াই বদর যুদ্ধের সুমহান শিক্ষা।

বদর যুদ্ধ শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসেও অনন্য অবস্থান দখল করে আছে। বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বদরের বিজয় ইসলামকে শাশ্বত চিরন্তন, বিজয়ী ও সার্বজনীন ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া এ বিজয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতের সত্যতা এবং তাঁকে মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে। মুসলমানদের এ বিজয় পরবর্তীকালে ইসলামী সা¤্রাজ্য সম্প্রসারণের সূচনা করে এবং মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্য পূর্ণতা লাভ করে। বদর যুদ্ধের সুমহান শিক্ষা সর্বযুগে মুসলিম জাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও প্রতিটি বিষয়ে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।

ফেইসবুকে আমরা...