প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের পর তৃতীয় পেরিয়ে আমরা পা ফেলছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দরজায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছে প্রযুক্তির সঙ্গে জৈব অস্তিত্বের সংমিশ্রণে এক নতুন সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে। ইতোমধ্যে রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট, ন্যানো প্রযুক্তি যে অভাবনীয় পরিবর্তনের সূচনা করেছে, তাতে এই বিপ্লবের ব্যাপ্তি ও প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যে সব প্রযুক্তি আমাদের জীবন আমূল বদলে দিবে তার অন্যতম হলো, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বাংলাদেশে যখন সোফিয়া রোবটের আগমন হয় তখন কমবেশি সবাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নাম শুনেছেন। আপনি কি জানেন? গুগল সার্চ করতে গিয়ে যখন আমরা বানান ভুল করি, তারপরও কিভাবে সঠিক ফলাফল প্রদর্শন করে গুগল? কাজটা হয় কিন্তু এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। এছাড়াও আপনি গুগলে কোনো কিছু সার্চ দেওয়ার পর যখন কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, ওই ওয়েবসাইটে ঠিক ওই রকম অ্যাডই শো করে যা আপনি সার্চ দিয়ে খুঁজেছিলেন। অর্থাৎ, সার্চ ইঞ্জিনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স আপনাকে মনিটর করছে, আপনার প্রয়োজন বুঝে নিচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে সার্ভিস দিচ্ছে।
আপনার মেইলের কথা ভাবুন। প্রতিদিনই আপনার ইনবক্সের স্প্যাম ফোল্ডারে প্রচুর মেইল জমা হচ্ছে, যা আপনার জন্য কোনো কাজের নয়, বরং ক্ষতিকর। মেইলিং সিস্টেম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে ঠিকই বুঝতে পারে কোন মেইলটি আপনার জন্য দরকারি আর কোনটি নয়।
আবার আপনি ইউটিউবে যে ক্যাটাগরির ভিডিও দেখেন, খেয়াল করে দেখবেন, পরবর্তীতে আপনি যখনই ইউটিউবে প্রবেশ করবেন, তখন ঠিক ওইরকম ভিডিওই সাজেস্ট করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো- কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? উত্তর হচ্ছে- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে চলছে প্রচুর গবেষণা। বিশ্বের বিখ্যাত সকল প্রযুক্তিবিদ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যাপারে বলেছেন, এর প্রতিক্রিয়া হবে মানুষের উন্নতির সর্বোচ্চ পর্যায় অথবা মানুষের ধ্বংসের প্রধান কারণ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে বাংলায় অনুবাদ করলে হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সাধারণভাবে মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে সক্ষম কম্পিউটার বা মেশিনকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়। বর্তমান সময়ের কম্পিউটার বা মেশিনে মানুষ যে কমান্ড বা নির্দেশ দেয়, সেই মোতাবেক কাজ করতে পারে। এর বাইরে নিজে নিজে কোনো কাজ করতে পারে না। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে কম্পিউটার বা মেশিন নিজে নিজেই কাজ করতে পারে, চিন্তা করতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।
বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন প্রায় সকল কাজে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার হচ্ছে। বক্ষমাণ আলোচনা দেখে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব কতটা বেশি। বড় আকারের ডাটা সংরক্ষণ ও সুবিন্যস্তভাবে সাজানো এবং সেখান থেকে মানুষের সাহায্য ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য দেখানোর কাজটাও খুব সহজেই করা যাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে।