1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
ইসলামের মূল ভিত্তি
মাওলানা নজমুল হুদা খান
  • ১ মার্চ, ২০২১

হাদীসের মূল ভাষ্য

عن أبي عبد الرحمن عبد الله بن عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إلٰهَ إلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ”

অনুবাদ
আবূ আবদির রাহমান আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনিল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: ১. একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, ২. নামায কায়িম করা, ৩. যাকাত দেওয়া, ৪. বায়তুল্লাহ’র হজ্জ করা ও ৫. রামাদানের রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম)

প্রাসঙ্গিক কথা ও বর্ণনাকারী পরিচিতি
এ হাদীস দ্বীন পরিচয়ের অন্যতম মূল ভিত্তি। কেননা এতে দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত রয়েছে। অবশ্য, হাদীসে জিবরাইলেও এ বিষয়গুলো রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে। এ হাদীসের মূল বর্ণনাকারী হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.)। তাঁর উপনাম আবূ আবদির রাহমান। তিনি দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক (রা.) এর পুত্র। উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা (রা.) তাঁর সহোদর বোন। তাঁর মা হলেন যায়নাব বিনতে মাযউন (রা.)। তিনি হযরত উসমান ইবনে মাযউন (রা.) এর সহোদর ছিলেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম ছিলেন। তিনি আপন পিতার সাথে মক্কা শরীফে বাল্যকালেই ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর পিতার সাথেই হিজরতও করেন। কারো কারো মতে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.), পিতার পূর্বেই মুসলমান হন এবং তাঁর পূর্বে হিজরতও করেন। তবে এ উক্তিটি বিশুদ্ধ নয়।

তিনি বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। কারণ সে সময় তাঁর বয়স কম ছিল। উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাইলেও বয়স পূর্ণ পনের বছর না হওয়ায় তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরবর্তী সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণে অধিক গুরুত্ব দিতেন। সবসময় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদাঙ্ক অনুসরণে সচেষ্ট থাকতেন।

তিনি অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের অন্যতম। এক্ষেত্রে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর পরই তাঁর স্থান। তাঁর থেকে ২৬৩০টি হাদীস বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে ১৭০টি হাদীস ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র.) যৌথভাবে বর্ণনা করেছেন। বুখারী শরীফে তাঁর ৮১টি হাদীস এমন আছে, যেগুলো মুসলিম শরীফে নেই। আর মুসলিম শরীফে তাঁর ৩১ টি হাদীস এমন আছে, যা বুখারীতে নেই।

একবার আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফকে তাগিদ দিয়েছিলেন যে, হজ্জ সংক্রান্ত বিষয়াদিতে ইবনু উমর (রা.) এর বিরোধিতা করো না। কথাটি হাজ্জাজের কাছে খারাপ মনে হলো। যখন আরাফাত থেকে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে, তখন হাজ্জাজের ইঙ্গিতে একব্যক্তি বিষাক্ত বল্লম তাঁর পায়ে লাগিয়ে দেয়। ফলে তিনি কয়েকদিন গুরুতর অসুস্থ থেকে যিলহজ্জ মাসে ৭৩ হিজরীতে শাহাদাত লাভ করেন। (নাসরুল বারী)

হাদীসের ব্যাখ্যা
এ হাদীসে ইসলামকে একটি তাবুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। একটি তাবুতে সাধারণত পাঁচটি স্তম্ভ থাকে। চারদিকে চারটি এবং মধ্যখানে একটি। ঈমান মধ্যবর্তী মূল স্তম্ভতুল্য এবং বাকী চারটি অর্থাৎ নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত চারকোণার চারটি স্তম্ভতুল্য। ইসলামের রুকন কেবল এ চারটিতে সীমাবদ্ধ নয় বরং আরো রুকন আছে। আল্লামা আবুল আব্বাস কুরতুবী (র.) বলেন, এ পাঁচটি বিষয় হলো দ্বীনের মূল। এগুলোর দ্বারাই দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ হাদীসে উক্ত পাঁচটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু জিহাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ জিহাদ দ্বীনকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে এবং বাতিলদের চক্রান্ত ধ্বংস করে। এর কারণ হলো, উল্লেখিত পাঁচটি বিষয় সর্বদা ফরয। কিন্তু জিহাদ এরূপ নয়। এটি ফরযে কিফায়াহ এবং কখনো কখনো জিহাদ সাকিত হয়ে যায় (অর্থাৎ এর আবশ্যকতা থকে না)।

নিম্নে ইসলামের মূল ভিত্তিগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।

ঈমানের সাক্ষ্য
ইসলামের মূল স্তম্ভ হলো এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। এখানে দুটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের কথা রয়েছে। ১. আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস, ২. হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতের প্রতি বিশ্বাস। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতে বিশ্বাস ছাড়া কেবল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের দ্বারা ঈমান হয় না। সুতরাং কেউ কেবল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করলে তাকে মুমিন বলা যাবে না।

হাদীস শরীফে আছে, مَن قال لا الٰهَ الا الله دخل الجنة যে সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই সে জান্নাতে যাবে।
এ হাদীস থেকে মনে হতে পারে, তাওহীদ তথা কেবল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। বিষয়টি এমন নয়। এখানে বর্ণনাকে সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে কেবল  لا الٰه الا اللهএর কথা বলা হয়েছে। এর সাথে মূলত পরবর্তী محمد رسول الله অংশও অন্তর্ভুক্ত। তাওহীদে বিশ্বাসের সাথে রিসালাতে বিশ্বাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমনিভাবে অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলোও সংশ্লিষ্ট রয়েছে। বুখারী ও মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

اٰمُرُكُم بالإيمان بالله وحده، أتدرون ما الإيمان بالله وحده؟ شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله، وإقام الصلوة، وإيتاء الزكاة، وصيام رمضان، وأن تؤدوا خمس ما غنمتم.

-আমি তোমাদের এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিচ্ছি। তোমরা কি জান, এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থ কী? এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থ হলো- একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, নামায কায়িম করা, যাকাত দেওয়া, রামাদানের রোযা রাখা এবং গনীমতের এক পঞ্চমাংশ (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) দান করা।

নামায
নামায ইসলামের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি। এটি শারীরিক ইবাদত। ঈমানের পর পরই নামাযের স্থান। নামায ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামায দ্বীনের স্তম্ভ। যে তা কায়িম করলো সে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করলো। আর যে তা ছেড়ে দিলো সে দ্বীনকে ধ্বংস করল।
ইকামতে সালাত তথা নামায কায়িম করার অর্থ হলো, নামাযের প্রতি গুরুত্বারোপ করা, যথাসময়ে ও যথাযথরূপে তা আদায় করা, সর্বোপরি নিবিষ্ট চিত্তে তা সম্পাদন করা। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلّٰهِ قَانِتِينَ

-তোমরা যত্নবান হও সকল নামাযের প্রতি এবং (বিশেষভাবে) মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা একাগ্রচিত্তে দণ্ডায়মান হও। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৮)

ইকামতে সালাতের অর্থ নিয়ে উলামায়ে কিরামের আরো অনেক বক্তব্য রয়েছে।

নামায কখন ফরয হয়?
জমহুর উলামার ঐকমত্যে নামায মি’রাজ রজনীতে ফরয হয়েছে। মি’রাজ হযরত খাদিজা (রা.)-এর ইন্তিকালের পর ও হিজরতের পূর্বে সংঘটিত হয়েছে। তবে কোন সালে ও কোন মাসে হয়েছে এ বিষয়ে অনেক ইখতেলাফ রয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, নবুওয়াতের দশম বর্ষে শিআবে আবি তালিব থেকে বের হওয়ার পর হযরত খাদিজা (রা.)-এর ইন্তিকাল হয়। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, মি’রাজ নবুওয়াতের দশম বছরের পর একাদশ বর্ষে সংঘটিত হয়েছে। (সীরাতুল মুস্তাফা)

মি’রাজ কোন মাসে হয়েছে এ বিষয়ে পাঁচটি মত পাওয়া যায়। ১. রবিউল আউয়াল মাসে, ২. রবিউস সানী মাসে, ৩. রজব মাসে, ৪. রামাদান মাসে ৫. শা’বান মাসে। তবে প্রসিদ্ধ মত হলো রজব মাসের ২৭ তম রাতে মি’রাজ সংঘটিত হয়েছে। (সীরাতুল মুস্তাফা, শরহে মাওয়াহিব সূত্রে)

যাকাত
যাকাত আর্থিক ইবাদত। এটি আমভাবে সকল মুসলমানের উপর ফরয নয়। বরং সুনির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে সামর্থবান মুসলমানের উপর ফরয।

হজ্জ
হজ্জ শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতের সমন্বয়। এটিও আমভাবে সকলের উপর ফরয নয়। হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত সাতটি। ১. মুসলমান হওয়া, ২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, ৩. আকিল বা জ্ঞানবান হওয়া, ৪. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া, ৫. আযাদ বা স্বাধীন হওয়া ৬. দৈহিক ও আর্থিকভাবে হজ্জ পালনে সক্ষম হওয়া ৭. হজ্জের সময় হওয়া।

রামাদানের রোযা
রামাদানের রোযা সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের উপর ফরয। এটি শারীরিক ইবাদত। শরীয়তের পরিভাষায় সাওম বা রোযা হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম। অন্যান্য ইবাদতে লৌকিকতার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোযার মধ্যে লোক দেখানোর সুযোগ কম থাকে। এজন্য হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোযা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দিব। অথবা আমিই এর প্রতিদান।

শেষ কথা
ইসলামের মূল পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে ঈমান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি না থাকলে অপর চারটি কোনো কাজের নয়। কিন্তু যদি কারো ঈমান থাকে আর অপর কোনোটির ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি থাকে তবুও সে ব্যক্তি মুমিন বলে গণ্য হবে।

ফেইসবুকে আমরা...