1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
বিসমিল্লাহ- এর তাফসীর
আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)
  • ১ জানুয়ারী, ২০২১

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

তাফসীর: আরবী ভাষায় যে সকল হরফ রয়েছে ب (বা) তার মধ্যে হচ্ছে বিনম্র হরফ, যা দ্বারা নম্রতা প্রকাশ করা হয়। এ জন্য এ হরফ দ্বারা কুরআন শরীফ শুরু করা হয়েছে। ‘বা’ হরফ الله নামের সাথে মিলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বাণী, من تواضع لله رفعه الله যে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে নম্রতা প্রকাশ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে উচ্চ আসনে আসীন করবেন। এভাবে জুদী পাহাড়ে হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা স্থির হওয়া, জাবালে রাহমাতে হযরত আদম (আ.) এর তাওবা কবূল হওয়া এবং মক্কা শরীফে কাবাগৃহ স্থাপন, এসব আল্লাহ তাআলার দয়া এবং মেহেরবানী ছিল। কারণ এখানে একই ধরনের নম্রতা বিদ্যমান ছিল। الله শব্দটি اسم غير مشتق অর্থাৎ যার থেকে আর কোনো শব্দ বের হয় না। এ  শব্দটি আল্লাহ তাআলার সত্তার জন্য নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত, এ শব্দ আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না, যেমন الٰه শব্দ হয়ে থাকে।
الرحمٰن শব্দটি দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য ব্যবহার করা হয়। الرحيم শুধু আখিরাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ জন্য বলা হয়,

رَحْمٰنَ الدُّنْيَا وَرَحِيْمَ الْاٰخِرَةِ

হযরত ইকরামা বলেন, رَحْمٰن একটি রহমতের সমন্বয় এবং رحيم শব্দে একশত রহমতের সমন্বয়। যেমন আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার একশত রহমতের মধ্যে একটি রহমত দুনিয়াবাসীকে প্রদান করেছেন এবং অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত নিজের জন্য রেখেছেন। তা দিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে রহম করবেন।

বিসমিল্লাহ এর ফদ্বীলত:
সকল ইলম বা জ্ঞান রয়েছে আসমানী চার কিতাবে। আর এই চার কিতাবের ইলম একত্রিত হয়েছে কুরআনে পাকে। কুরআনে পাকের সমস্ত জ্ঞান রয়েছে সূরা ফাতিহার মধ্যে এবং সূরা ফাতিহার সমস্ত ইলম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর মধ্যে নিহিত। এ আয়াতের সমস্ত ইলম বিসমিল্লাহ এর ‘ب’ এর মধ্যে নিহিত। কেননা সমস্ত ইলমের মূল উদ্দেশ্য এবং ভিত্তি হচ্ছে- রবের সান্নিধ্য লাভ করা এবং এ ‘ب’ الصاق (মিলন) অর্থে এসেছে। সুতরাং ب বান্দাহকে রব পর্যন্ত পৌঁছায়। রবের সান্নিধ্য লাভই হচ্ছে বান্দাহর অন্তিম বাসনা।
হযরত ইমাম নিশাপুরী বলেন, একদা হযরত মূসা (আ.) অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং পেটের মধ্যে কঠিন ব্যথা হয়েছিল। রোগমুক্তির জন্য তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে এক ময়দানের একটি ঘাসের কথা বলে দেন। তিনি তা খেয়ে আল্লাহ তাআলার হুকুমে ভালো হন। তারপর দ্বিতীয়বার তাঁর এ অসুখ হয়েছিল। তিনি ঐ ঘাস খেলেন, কিন্তু অসুখ তো সারেনি বরং অসুখ আরও বেড়ে গেল। তারপর তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমি এ ঘাস প্রথমবার খেয়েছিলাম, তাতে আপনি ভালো করে দিয়েছিলেন; কিন্তু দ্বিতীয়বার খাওয়াতে আমার ক্ষতি হয়ে গেল। আল্লাহ তাআলা উত্তর দিলেন, হে মূসা! তুমি প্রথমবার আমার নির্দেশে ঘাসের কাছে গিয়েছিলে, তাই তুমি ভালো হয়েছিলে, কিন্তু দ্বিতীয়বার নিজেই গিয়েছ, তাই অসুখ বেড়ে গেছে। তুমি কী জানো না, দুনিয়াতে যা আছে, সবই বিষ, কিন্তু এর প্রতিষেধক হচ্ছে আমার নাম, অর্থাৎ আমার নাম নিয়ে খেলেই বিষ পানি হয়ে যায়।
আরো একটি ঘটনা: হযরত রাবিয়া (রা.) এক রাতে তাহাজ্জুদ এবং নফল নামাযে কাটাচ্ছিলেন। যখন সকাল হলো, তখন ঘুমিয়ে পড়লেন। তাঁর ঘরে একটি চোর প্রবেশ করল এবং তাঁর কাপড় নিয়ে দরজা দিয়ে বের হতে চেষ্টা করল; কিন্তু রাস্তা পেল না, তারপর কাপড় রেখে দিল, এতে সে দরজার সন্ধান পেল, এভাবে তিন বার করল, সে সময় ঘরের কোণ থেকে একটি আওয়াজ আসল। চুরি করা মাল রেখে বের হয়ে যা। যদিও বন্ধু ঘুমিয়ে গেছেন কিন্তু বাদশাহ জাগ্রত আছেন।
আরো একটি ঘটনা: আল্লাহর এক ওলী ছাগল চরাতেন। তাঁর ছাগলের কাছে বাঘ আসত, কিন্তু ছাগলের কোনো ক্ষতি করত না। একদিন এক লোক ঐ ছাগলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থা দেখে বললেন, কখন থেকে বাঘ এবং ছাগলের মধ্যে সন্ধি হয়েছে। রাখাল জবাব দিলেন, যখন থেকেই রাখাল আল্লাহ তাআলার সাথে সন্ধি করেছেন।
বর্ণিত আছে, ফিরাউন খোদায়ী দাবি করার আগে নির্দেশ দিয়েছিল, তার দরজার বাইরে যেন بسم الله ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়। যখন খোদায়ী দাবি করল এবং হযরত মূসা (আ.) কে তার নিকট প্রেরণ করা হলো এবং তাকে আল্লাহ তাআলার একত্বের দাওয়াত দেওয়া হলো, তখন ফিরাউনের মধ্যে হিদায়াতের কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। হযরত মূসা (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! আমি কতদিন পর্যন্ত তাকে দাওয়াত দিতে থাকব? অথচ আমি তার মধ্যে কোনো ভালো লক্ষণ দেখছি না। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মূসা! সম্ভবত, তুমি ফিরাউনের ধ্বংস চাচ্ছ এবং তার কুফরের প্রতিই লক্ষ্য করছ, অথচ আমি তার দরজায় যা লেখা আছে, তার প্রতি লক্ষ্য করছি।
দরজার বাইরে বিসমিল্লাহ লেখার কারণে যখন এক কাফির ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়ে গেল, তখন যে লোক জীবনের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত নিজের অন্তরে আল্লাহ তাআলার কালিমা লিখে রেখেছে, তাঁর অবস্থা কী হবে? যখন আল্লাহ তাআলা নিজের নাম রাহমান এবং রাহীম রেখেছেন, সে ক্ষেত্রে আমরা কেন রহম পাব না।
গোলাম কোনো জিনিস ক্রয় করলে তা জানোয়ার হোক বা উপভোগ্য কোনো জিনিস, সেক্ষেত্রে তার উপর বাদশাহের প্রতীক বা মোহর লাগিয়ে দেওয়া হয়, যেন শত্রুরা তাতে লোভ না করে। তেমনি আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার গোলাম। শয়তান তোমার দুশমন। তুমি যখন কোনো কাজ বা ইবাদত শুরু করবে, তখন তুমি এর উপর আমার নামের নিশান লাগিয়ে দিবে। আর বলবে, بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
হযরত নূহ (আ.) যখন নৌকার উপর সাওয়ার হলেন তখন بِسْمِ اللهِ مَجْرهَا وَمُرْسَاهَا এ অর্ধ কালিমা পাঠ করেই মুক্তি পেয়ে গেলেন। যে ব্যক্তি সারা জীবন এ কালিমার অনুশীলন করতে থাকে, সে নাজাত থেকে বঞ্চিত হবে কেন?
উল্লেখ্য, মানুষ তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১. سابق بالخيرات অর্থাৎ যারা কল্যাণের দ্বারা আগের সারিতে স্থান করে নেয়।
২.مقتصد ন্যায়পরায়ণ, যে ন্যায়-নীতি মেনে চলে।
৩. নিজের উপর নিজে অত্যাচার করে। নিজের খারাপ নিজেই করে বসে।
প্রথম প্রকারের লোকদের জন্য- তিনি আল্লাহ, দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ লোকদের জন্য তিনি রহমান আর তৃতীয় প্রকার লোকের জন্য তিনি রাহীম। আল্লাহ الرحيمএর গুণে মানুষের ত্রুটি প্রকাশ না করে বরং লুকিয়ে রাখেন। মানুষ নিজের ক্ষতি নিজে এত বেশি করে, নিজের পিতাও যদি তা জানত তাকে ছেড়ে চলে যেত, নিজের সহধর্মিনী যদি জানত তাহলে সেও তাকে ছেড়ে চলে যেত, প্রতিবেশি যদি জানত, তবে তার ঘর বাড়ি ধ্বংস করে দিত।
আল্লাহ তাআলার اَلله নামের বরকতে মানুষ তাঁর বন্ধুত্ব লাভ করতে পারে। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন, اَللهُ وَلِىُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا
রাহমান নামের কারণে তাঁর মুহব্বতের দাবি করা যায় যেমন আল্লাহ বলেন, اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا
-“অবশ্যই যারা ঈমান আনে, নেক কাজ করে, শীঘ্রই রাহমান তাদের জন্য মহব্বতকারী নির্ধারণ করে দিবেন।” (সূরা মারইয়াম: ৮৯)
رحيم (রাহীম) নামের কারণে তিনি তার রহমত প্রবাহিত করেন। যেমন আল্লাহ বলেন, وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَحِيْمًا
আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য ছয়টি জায়গায় রাহীম। যথা:
১. কবর আর কবরের ভিতর যে ভয়ঙ্কর দৃশ্যের অবতারণা হবে তা থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে। ২. কিয়ামতের অন্ধকারের সময়। ৩. আমলনামা পাঠ করার সময়। ৪. সীরাত পার হওয়ার সময় যে ভীতির সঞ্চার হবে, তখন। ৫. দুযখ আর এর শাস্তির সময়। ৬. জান্নাত আর এর শ্রেণি প্রদানের সময়।
হযরত ঈসা (আ.) একটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি দেখলেন আযাবের ফিরিশতারা ঐ মৃত ব্যক্তিকে আযাব দিচ্ছেন। তিনি নিজের কাজ শেষ করে ফেরার পথে আবার ঐ কবরের পাশ দিয়ে আসলেন। তখন দেখলেন, ঐ কবরে রাহমাতের ফিরিশতা নিয়োজিত হয়েছেন আর ঐ কবর নূরে পূর্ণ হয়ে গেছে। এতে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তারপর তিনি নামায আদায় করলেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট ওহী পাঠালেন, হে ঈসা! এ বান্দা গোনাহগার ছিল, আর মৃত্যুকালে তার স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা রেখে এসেছিল। তার স্ত্রীর একটা ছেলে হয়, সে তাকে লালন পালন করে বড় করল। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সোপর্দ করল। এ বাচ্চাকে শিক্ষক بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ শিক্ষা দিলেন। এতে আমার লজ্জা এসে গেল, আমার বান্দাকে যমীনের পেটের ভিতর আগুনের শাস্তি দেওয়া হবে, অথচ তার ছেলে যমীনের পিঠে আমার নাম স্মরণ করছে।
আল্লাহ তাআলার এক ওলী এক টুকরো কাগজে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ লিখে ওসীয়ত করে গেলেন, এটা যেন তার কফিনের মধ্যে দেওয়া হয়। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি উত্তর দিলেন, আমি কিয়ামতের দিন বলব ইলাহী, আপনি কিতাব পাঠিয়েছিলেন, আর এ কিতাবের শিরোনাম ছিলো بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ। আপনি কিতাবের শিরোনাম অনুসারে আমার সাথে ব্যবহার করুন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ এ উনিশটি হরফ রয়েছে। আর দুযখের রক্ষক হচ্ছেন উনিশ জন। আল্লাহ তাআলা এ উনিশটি অক্ষরের বিনিময়ে উনিশজন রক্ষকের পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন।
দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পাঁচ ঘন্টার জন্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে, আর বাকী উনিশ ঘণ্টা খালি রয়ে গেছে। যে সময়ের মধ্যে বান্দা আল্লাহ তাআলার স্মরণে ডুবে থাকতে পারে না। এ উনিশ হরফ উনিশ ঘন্টা গোনাহের কাফফারা বা পরিপূরক।
সূরা তাওবায় যুদ্ধ বিগ্রহ হত্যাকা- সম্পর্কে উল্লেখ থাকার কারণে সূরার শুরুতে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ লেখা হয়নি। তাছাড়া যবেহ করার সময় بسم الله الله اكبر বলা কর্তব্য, কিন্তু بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ বলতে বলা হয় না। যখন আল্লাহ তাআলা ফরয নামাযের মধ্যে দৈনিক সতেরো বার এ কালিমা পাঠ করার তাওফীক দিয়েছেন। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বান্দাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে সৃষ্টি করা হয়নি বরং রহমত এবং সাওয়াব প্রদানের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِলেখা আছে এমন কোনো কাগজ যমীন থেকে উঠাবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁকে সিদ্দীকীনের অন্তর্ভুক্ত করবেন। তার পিতা-মাতার উপর থেকে আযাব হ্রাস করা হবে, যদিও বা তারা মুশরিক হয়।
হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ আয়াত নাযিল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রথমে যখন এ আয়াত হযরত আদম (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হয়, তখন আদম (আ.) বলেন, আমার সন্তানগণ এ কালিমার ওসীলায় আযাব থেকে রক্ষা পাবে, যতক্ষণ তা পড়তে থাকবে। এরপর আল্লাহ এ আয়াত উঠিয়ে নিলেন। এরপর হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর উপর অবতীর্ণ করেন। হযরত ইব্রাহীম তা অগ্নিকু-ের মধ্যে পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা অগ্নি শীতল করে দেন। তারপর আবার এ আয়াত উঠিয়ে নিলেন। তারপর হযরত সুলাইমান (আ.) এর উপর অবতীর্ণ করেন। তখন ফিরিশতারা বলতে লাগলেন, আল্লাহর কসম! এখন সুলাইমান (আ.) এর রাজত্ব পূর্ণ হয়েছে। তারপর এ আয়াত উঠিয়ে নিলেন। তারপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত আমার উপর নাযিল করেন। আমার উম্মতরা পড়তে থাকবে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ আর এরই বরকতে কিয়ামতের দিন তাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে, তারা বেহেশতে প্রবেশ করবে।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আবূ হুরায়রা! তুমি উযূ করার সময় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ বলবে। এতে ফিরিশতারা তোমার উযূ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকবে। স্ত্রী সহবাসের সময় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ বলবে, এ জন্যেও ফিরিশতারা তোমার জন্য নেকী লিখতে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত গোসল করনি। এ সহবাসে যদি কোনো সন্তান লাভ করো তা হলে তার জন্যে তার নিশ্বাস এর সংখ্যা অনুযায়ী নেকী লেখা হবে। আর সে সন্তান থেকে যে সন্তান হবে, তাদের নিশ্বাস অনুযায়ী নেকী লেখা হবে, এভাবে বংশ পরম্পরায় নেকী লেখা হবে।
হে আবূ হুরায়রা! তুমি কোনো সওয়ারীর উপর আরোহণ করলে بسم الله والحمد لله বলবে। তাহলে সওয়ারীর প্রতি কদমে তোমার জন্যে নেকী লেখা হবে। নৌকায় সওয়ার হলেبسم الله والحمد لله বলবে। তা হলে নৌকা থেকে নেমে আসার পূর্ব পর্যন্ত তোমার জন্যে নেকী লেখা হবে।
হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, যখন বনী আদম স্ত্রী সহবাস করার জন্য কাপড় খুলে ফেলে, তখন بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ তাঁদের লজ্জাস্থান ও শয়তানের চোখের মধ্যে পর্দা হয়।
এ থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আল্লাহ তাআলার নাম যদি সহবাসের সময় শত্রুদের পর্দা হতে পারে, তাহলে কেন আখিরাতে তোমার আর দুযখ রক্ষীদের মধ্যে পর্দা হতে পারবে না?

 

[ আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) কৃত ‘আত্ তানভীর’ কিতাব থেকে মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী কর্তৃক অনূদিত ]

ফেইসবুকে আমরা...