স্নিগ্ধ সকাল। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে বিচ্ছুরিত হচ্ছে মাত্র। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা মুবারকের পাশেই বসে আছেন। ঠিক সেসময় একজন মিসকীনের আগমন। হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পেটে প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে, কিছু খেতে দিন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রভর্তি দুধ নিয়ে আসলেন মিসকীন লোকটির জন্য। লোকটি পাত্রভর্তি দুধ পেয়ে খুশিতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম জানিয়ে বিদায় গ্রহণ করলেন। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে প্রখর হতে লাগলো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারের আনুষাঙ্গিক কিছু কাজকর্ম করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যুহরের সালাতের। হযরত বিলাল (রা.) এর সুমধুর কণ্ঠে ভেসে আসলো আযানের ধ্বনি। ঝাঁকে ঝাঁকে মুসল্লীরা মসজিদে জড়ো হতে থাকলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের ইমামতী করলেন। নামায শেষে বের হলেন হুজরার দিকে। পথিমধ্যে এক বৃদ্ধার সাথে দেখা। বৃদ্ধা খুব ক্লান্ত হয়ে নবীজিকে পথরোধ করেন এবং কাতর কণ্ঠে সাহায্যের আহবান জানান। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের পরিজনের জন্য রাখা কিছু আটা ছিল যা পুরোটাই বৃদ্ধাকে দান করে দিলেন। বৃদ্ধা সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে গেলেন। নিজের পরিবারের জন্য অবশিষ্ট ছিল কিছু খেজুর। ঠিক সন্ধ্যায় দুজন ইয়াতীমের আগমন। তারা তাদের কষ্টের কথা বলতেই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরগুলো দুই ইয়াতীমের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে দিলেন। নবীজির ঘরে তার পরিজনের জন্য আর কোনো কিছু অবশিষ্ট রইলো না। নবীজি ভাবছেন, যদি এই মুহূর্তে কোনো সাহায্যকারী হাত পাতে আমি কী দিয়ে বিদায় করবো, এই ভেবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু খেজুর ধার নিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখী মানবতার জন্য এরকম ধার মাঝেমধ্যে করতেন। খেজুর ধার নেয়ার কিছুদিন পর ওই ব্যক্তিটি তার খেজুর ফেরত দেওয়ার তাগাদা দিতে শুরু করলো কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দেওয়ার মতো কোনো খেজুর বা অন্য কোনো জিনিসপত্র অবশিষ্ট ছিল না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভীষন্নতায় ছেয়ে যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্দর মুখখানি। এমন সময় এক আনসারী সাহাবীর আগমন। শুনলেন নবীজি ও লোকটির কথোপকথন। লোকটিকে তিনি খেজুর দিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চাইলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বস্থি পেলেন এবং লোকটির ঋণ পরিশোধ করার জন্য আনসারী সাহাবীকে অনুমতি দিয়ে দিলে তিনি লোকটির পাওনা মিটিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পরেই লোকটি আবারও নবীজির কাছে এসে কাতর কণ্ঠে বলতে লাগলো, আমি যদি আপনার কাছ থেকে ইনসাফ পাওয়ার আশা না করতে পারি তাহলে এই শহরের আর কার কাছে তা প্রত্যাশা করতে পারি। লোকটির মুখে এরকম কথা শুনে নবীজির হৃদয়টা কেঁপে ওঠলো। নবীজি জানতে চাইলেন তার সমস্যা কী?
লোকটি বলল, আপনাকে আমি যে মানের খেজুর দিয়েছিলাম আপনি আমাকে এর চেয়ে অনেক নিম্নমানের খেজুর ফেরত দিয়েছেন। তা কখনো কামনা করিনি। নবীজি খুব কষ্ট পেলেন এবং তাকে বিনয়ের সাথে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করেন। সাথে সাথে ওই আনসারী সাহাবীকে ডেকে পাঠালেন এবং খুব দ্রুততার সাথে সমমানের খেজুর দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। আনসারী সাহাবী ওই ব্যক্তিকে পুনরায় ভালোমানের খেজুর প্রদান করেন এবং লোকটি কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করতে করতে বিদায় গ্রহণ করলো।