মহিলাদের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে যাতে পুরুষের কোনো অংশিদারিত্ব নেই। অনুরূপ পুরুষদের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে যাতে মহিলাদের কোনো অংশিদারিত্ব নেই। মহান রাব্বুল আলামীন মহিলাদের কয়েক দিকে দুর্বল করেছেন, যেমন শারীরিক দিক থেকে এবং বুদ্ধির দিক থেকে। মহান আল্লাহ পাক নিজেই পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ -মহিলাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। (সূরা বাকারা, আয়াত-২২৮)
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে নারী সমাজ! তোমরা বেশি বেশি দান-খয়রাত করো, কেননা মিরাজের রাতে আমাকে দেখানো হয়েছে তোমরা অধিকাংশই দুযখী। তিনি আরো বলেন, তোমাদের জ্ঞানের ও দ্বীনের ব্যাপারে অপূর্ণতা রয়েছে। তারা বলল, দ্বীন ও জ্ঞানের কী অপূর্ণতা রয়েছে? প্রত্যুত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নারীদের সাক্ষ্য কি পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা বলল, হ্যাঁ; তাহলে এটাই জ্ঞানের অপূর্ণতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মহিলারা ঋতুবতী হয়, তখন নামায, রোযা তিলাওয়াত কিছুই করতে পারে না। এটাই হলো দ্বীনের অপূর্ণতা। (বুখারী ও মুসলিম)
সাক্ষ্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ ۖ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ
-দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৮২)
জাহেলী যুগে নারীরা তাদের সম্মান না পেয়ে লাঞ্চিতা ও নির্যাতিতা ছিল। ইসলাম নারীদের ন্যায্য অধিকার দিয়ে স্বাধীন জাতির মর্যাদা দিয়েছে। যেই নারী জাতির জন্মকে অভিশাপ ও কু-লক্ষণ বলে মনে করা হতো, সেই নারী জাতি সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে। ইসলাম যেমন নারীদের সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে তেমনি পরিবার ও সমাজ গঠনেও তাদের অধিকার দিয়েছে। শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة
-জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, ‘নারীদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি যে, তোমরা তাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে।’
জাহেলী যুগের মতো নারীদেরকে পিতা বা স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
يُوصِيكُمُ اللهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ
-আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্বন্ধে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক পুত্রের জন্য দুই কন্যার অংশের তুল্য। (সূরা নিসা, আয়াত-১১)
এক কথায় ইসলাম ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ছাড়া মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারী জাতির জন্য এমন সুষ্ঠু গ্যারান্টি এ পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম দিতে সম্ভব হয়নি। নারী পুরুষ উভয়কে সামাজিক শালীনতা বজায় রাখতে হবে। আর এই সামাজিক শালীনতা বজায় রাখার জন্য নারীদের পর্দা প্রথাকে ইসলাম বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। আল কুরআন যেমন নারীদের পর্দা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে, তেমনি পুরুষদেরও দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
মহিলাদের প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হওয়া উচিত নয়। কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে নারীরা বের হতে পারবে তবে পর্দার সাথে। পর্দা অর্থ এমন নয় যে, পর্দা দিয়ে নারীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বরং নারীরা যেন নিজের সতীত্ব রক্ষা করে চলে, সেই ব্যবস্থার নামই পর্দা। আমরা উপন্যাসের নারী চরিত্রের দিকে নযর না দিয়ে (আবার ইসলামী ভাবধারায় রচিত উপন্যাস থেকে অনেক শিক্ষা লাভ করা যায়) মুসলিম রমণী যারা ইতিহাসের সোনালী পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাদেরকে অনুসরণ করব। তাদের জীবনীতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে। যেমন হযরত ফাতিমা (রা.) যিনি দুনিয়াতে লজ্জাশীলা ছিলেন, তিনি হবেন জান্নাতী রমণীদের সর্দারিণী। বর্তমানে আমরা অস্থায়ী জীবনের মোহে অন্ধ হয়ে বিক্রি করছি আখিরাতের অনন্তকালের সুখ-শান্তি, আর ক্রয় করছি অনন্তকালের জন্য দুযখের কঠিন শাস্তি। লজ্জা স্ত্রীলোকের সর্বশ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। লজ্জা সৌন্দর্যকে বর্ধিত করে। যদি আমরা আল কুরআনকে আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর রাসূল বলে মানি এবং পরকালের কঠিন আযাবকে ভয় করি তাহলে আমরা পর্দার অমূল্য মর্যাদা বুঝতে পারব এবং পর্দার গুরুত্ব মেনে চলতে পারব। অন্যথায় দুনিয়া এবং আখিরাতের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে মুনাজাত করছি, তিনি যেন আমাদের প্রত্যেককে পর্দার প্রয়োজনীয়তা বুঝার তাওফীক দান করেন।