হাদীসের মূলভাষ্য
عَنْ عَائِشَةَ خَرَجَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِىٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلِىٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ: إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا-
অনুবাদ
হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তাঁর পরণে ছিলো উটের গদির ছবি অঙ্কিত কালো পশমী চাদর। এমতাবস্থায় হযরত হাসান ইবন আলী (রা.) আসলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে চাদরের মধ্যে প্রবেশ করালেন। এরপর হযরত হুসাইন (রা.) আসলেন। তিনিও তাঁর সাথে প্রবেশ করলেন। অতঃপর হযরত ফাতিমা (রা.) আসলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে প্রবেশ করালেন। এরপর হযরত ফাতিমা (রা.) আসলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকেও চাদরের মধ্যে প্রবেশ করালেন। এরপর তিলাওয়াত করলেন-
إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
(অর্থ: হে আহলুল বাইত! আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পরপিূর্ণরূপে পবিত্র করতে)। (সহীহ মুসলিম, কিতাব- ফাদাইলুস সাহাবা, বাব-ফাদাইলু আহলি বাইতিন নাবিয়্যি)
হাদীসের ব্যাখ্যা
এ হাদীসের সারকথা হলো, একদা ভোরে রাসূলুল্লাহ (সা.) উটের গদির ছবি অঙ্কিত কালো পশমী চাদর পরিধান করে বের হলেন। এমতাবস্থায় একে একে হযরত হাসান (রা.), হুসাইন (রা.), ফাতিমা (রা.) ও আলী (রা.) আসলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁদের প্রত্যেককে চাদরের মধ্যে প্রবেশ করালেন। এ হাদীসের বর্ণনায় হযরত হুসাইন (রা.) চাদরের মধ্যে প্রবেশ করলেন উল্লেখ থাকলেও অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে প্রবেশ করালেন। এরপর তিনি হাদীসে উল্লেখিত আয়াত তিলাওয়াত করলেন। এ হাদীস আহলুল বাইতের মহীয়ান মর্যাদার অমর স্বাক্ষী। কিন্তু আহলুল বাইত কারা? এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।
আহলুল বাইতের পরিচয়
আহ্ল (أَهْل) শব্দের অর্থ পরিবার-পরিজন বা বাসিন্দা, বাইতুন অর্থ ঘর। অতএব, আহলুল বাইত এর শাব্দিক অর্থ ঘরের বাসিন্দা বা পরিবার-পরিজন। এখানে আহলুল বাইত বলতে ‘আহলু বাইতিন নাবিয়্যি’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা নবী করীম (সা.)-এর পরিবার-পরিজন উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ال শব্দটিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন বলা হয় ال محمد -মুহাম্মদ (সা.) এর পরিবার-পরিজন। আহলুল বাইত কারা এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। যেমন:
১. হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রা.) হলেন আহলুল বাইত
প্রথম কথা হলো, হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইন (রা.) এবং তাঁদের বংশধরগণ হলেন আহলুল বাইত। উপরোক্ত হাদীস থেকেও এটিই প্রমাণিত হয়। কেননা হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী তাদেরকে চাদরে প্রবিষ্ট করে রাসূলুল্লাহ (সা.) আহলুল বাইতের ফযীলত সংক্রান্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেছেন। আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কিত বিভিন্ন বর্ণনার একটি হলো যে, এ আয়াত তাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
তাছাড়া অন্য হাদীসে আছে, যখন মুবাহালার আয়াত ندع أبناءنا وأبناءكم নাযিল হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে ডাকলেন অতঃপর বললেন, اللهم هؤلاء أهل بيتي হে আল্লাহ! এরা আমার
আহলুল বাইত। (মুসলিম)। অনুরূপ আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে।
২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রীগণও হলেন আহলুল বাইত
দ্বিতীয় কথা হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রীগণও আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কিরামের মতে হাদীসে উল্লিখিত আয়াত (إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ) আযওয়াজে মুতাহ্হারাত তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রীগণের শানে নাযিল হয়েছে। আয়াতের পূর্বাপর বর্ণনা থেকেও এটি প্রমাণিত হয়। আল্লামা ইবনু কাসির (র.) লিখেছেন,
وهذا نص في دخول أزواج النبي صلى الله عليه وسلم في أهل البيت هاهنا؛ لأنهن سبب نزول هذه الآية، وسبب النزول داخل فيه قولا واحدا، إما وحده على قول أو مع غيره على الصحيح.
-রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রীগণ যে আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত এ আয়াত তার দলীল। কেননা তাঁরা এ আয়াত নাযিলের কারণ। আর আয়াত নাযিলের কারণ (অর্থাৎ যাদের উদ্দেশ্যে আয়াত নাযিল হয়েছে তারা) অবশ্যই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে যে, কেবল তারাই কি আহলুল বাইত, না তাদের সাথে অন্য আরো সদস্য রয়েছেন? এখানে শেষোক্ত মতটিই বিশুদ্ধ। (তাফসীর ইবন কাসির)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীগণ আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত কি না এ বিষয়ে হাদীস শরীফের মধ্যে পরষ্পরবিরোধী যে বর্ণনা পাওয়া যায় ইমাম ইবনু কাসির (র.) এগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রীগণ আহলুল বাইত। তবে কেবল তারাই আহলুল বাইত নন; বরং তাদের পাশাপাশি আহলুল বাইতের মধ্যে আরো সদস্য রয়েছেন।
৩. যাদের জন্য যাকাত গ্রহণ করা হারাম তারাও আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কারাবত তথা নৈকট্য ও আত্মীয়তার কারণে যাদের জন্য যাকাত গ্রহণ করা হারাম তারাও আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত। মুসলিম শরীফে দীর্ঘ বর্ণনার মধ্যে আছে, হযরত যাইদ ইবন আরকাম (রা.) বলেন,
قَامَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَوَعَظَ وَذَكَّرَ ثُمَّ قَالَ ্র أَمَّا بَعْدُ أَلاَ أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِىَ رَسُولُ رَبِّى فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ . فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ وَرَغَّبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ ্র وَأَهْلُ بَيْتِى أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِى أَهْلِ بَيْتِى أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِى أَهْلِ بَيْتِى أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِى أَهْلِ بَيْتِى গ্ধ. فَقَالَ لَهُ حُصَيْنٌ وَمَنْ أَهْلُ بَيْتِهِ يَا زَيْدُ أَلَيْسَ نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ قَالَ نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ وَلَكِنْ أَهْلُ بَيْتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعْدَهُ. قَالَ وَمَنْ هُمْ قَالَ هُمْ آلُ عَلِىٍّ وَآلُ عَقِيلٍ وَآلُ جَعْفَرٍ وَآلُ عَبَّاسٍ . قَالَ كُلُّ هَؤُلاَءِ حُرِمَ الصَّدَقَةَ قَالَ نَعَمْ.
-একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ‘খুম’ নামক কূপের নিকট দাড়িয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করলেন এবং সদুপদেশ ও নসীহত প্রদান করলেন। এরপর বললেন, অতঃপর জেনে রাখো, হে মানুষ সকল! নিশ্চয় আমি একজন মানুষ। সম্ভবত অচিরেই আমার কাছে আল্লাহর দূত আসবেন, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। তবে আমি তোমাদের নিকট দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাবো। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, যাতে রয়েছে হিদায়াত ও নূর। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ করবে এবং তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে তাকীদ ও উৎসাহ-অনুপ্রেরণা প্রদান করলেন। এরপর বললেন, অপরটি হলো আমার আহলুল বাইত। আমি আমার আহলুল বাইত সম্পর্কে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমি আমার আহলুল বাইত সম্পর্কে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তখন হুসাইন ইবন সাবরাহ (র.) হযরত যাইদ ইবনু আরকাম (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহলুল বাইত কারা? তাঁর স্ত্রীগণ কি তাঁর আহলুল বাইত নন? তিনি বললেন, তাঁর স্ত্রীগণ তো তার আহলুল বাইত। কিন্তু তারাও তাঁর আহলুল বাইত, যাদের জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম। হুসাইন ইবন সাবরাহ বললেন, তারা কারা? তিনি (যাইদ) বললেন, তারা হলেন, হযরত আলী (রা.)-এর পরিবার, হযরত আকীল (রা.)-এর পরিবার, হযরত জাফর (রা.) এর পরিবার, হযরত আব্বাস (রা.)-এর পরিবার। হুসাইন ইবন সাবরাহ বললেন, তাদের সকলের জন্যই কি সদকা গ্রহণ করা হারাম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (মুসলিম, কিতাব- ফাদাইলুস সাহাবা, বাবু মিন ফাদাইলি আলী ইবনি আবি তালিব)
উক্ত হাদীসের মর্মানুযায়ী যাদের জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম তারাও আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত। তারা হলেন, হযরত আলী (রা.)-এর পরিবার, হযরত আকীল (রা.)-এর পরিবার, হযরত জাফর (রা.) এর পরিবার, হযরত আব্বাস (রা.)-এর পরিবার অর্থাৎ বনূ হাশিম। হিদায়া ও ফতওয়ায়ে শামীসহ হানাফী ফিকহের বিভিন্ন গ্রন্থে আছে, বনূ হাশিমের মধ্যে যাদের জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম তারা হলেন, হযরত আব্বাস (রা.)-এর পরিবার, হযরত আলী (রা.)-এর পরিবার, হযরত জাফর (রা.) এর পরিবার, হযরত আকীল (রা.)-এর পরিবার ও হারিস ইবন আবদিল মুত্তালিব এর পরিবার। বনূ হাশিমের মাওয়ালী তথা ক্রীতদাস-দাসীদের উপরও সদকা গ্রহণ করা হারাম। কেননা দাস-দাসী ব্যক্তির পরিবারের মধ্যেই গণ্য হয়ে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীগণ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও বনূ হাশিমের মধ্যে যাদের জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম তাদের সকলের উপর ‘আহলুল বাইত’ এর প্রয়োগ দলীল-প্রমাণাদির ভিত্তিতে সাব্যস্ত। তবে হাদীস শরীফে উল্লেখিত বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা আহলুল বাইতের মধ্যে হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর সবিশেষ মর্যাদা প্রমাণিত হয়। এমনকি এ চার মহান ব্যক্তির উপর ‘আহলুল বাইত’ এর প্রয়োগও অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ। সুতরাং আহলুল বাইত বলতে সামগ্রিকভাবে পূর্বোক্ত সকলেই শামিল হলেও বিশেষভাবে আহলুল বাইত হলেন হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রা.) এবং তাঁদের বংশধরগণ।
আহলুল বাইতের মর্যাদা
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর আহলুল বাইতদের উদ্দেশ্য করে পবিত্র কুরআন মজীদের আয়াত তিলাওয়াত করেছেন:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
-হে আহলুল বাইত! আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব, আয়াত ৩৩)
সূরা আহযাবের এ আয়াত থেকে আহলুল বাইতের সুমহান মর্যাদা সুষ্পষ্ট। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের অপবিত্রতা দূর তাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। আল্লামা ইবনুল আরাবী (র.) লিখেছেন, এখানে রিজস (رِجْس) বা অপবিত্রতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো চারটি বিষয়: ১. গুনাহ, ২. শিরক, ৩. শয়তান ৪. সব ধরণের অশ্লীল কাজ, যেমন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা এবং সকল মন্দ চরিত্র, যেমন কৃপণতা, হিংসা, আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ ইত্যাদি (আহকামুল কুরআন)। সুতরাং এ তাফসীর অনুযায়ী আয়াতের মর্মার্থ হলো, আল্লাহ তাআলা আহলুল বাইতকে শিরক, সব ধরনের গুনাহ, শয়তানের কুমন্ত্রণা, সকল অশ্লীল কাজ ও মন্দ চরিত্র থেকে দূরে রেখে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।
ইমাম রাযী (র.) এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
يزيل عنكم الذنوب و يلبسكم خلع الكرامة
– আল্লাহ তোমাদের থেকে গুনাহ মিটিয়ে দিবেন এবং তোমাদের সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন (তাফসীরে কাবীর)। এ তাফসীর অনুযায়ী তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সুসংবাদ রয়েছে। যদি আল্লাহ গুনাহ মিটিয়ে দেন তাহলে আখিরাতে তাদের কোনো ভয় থাকবে না। সেখানে তারা নাজাতপ্রাপ্ত ও সম্মানিত হবেন। আর দুনিয়াতে তাদের জন্য সম্মানের মুকুট তো আছেই।
বিভিন্ন হাদীসে আহলুল বাইতের ফযীলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। পূর্বে উল্লেখিত মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের নিকট দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাবো। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, অপরটি হলো আমার আহলুল বাইত। আমি আমার আহলুল বাইত সম্পর্কে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমি আমার আহলুল বাইত সম্পর্কে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বিদায় হজ্জের দিন তাঁর কাসওয়া নামক উটনীর উপর আরোহন করে খুতবা দিতে দেখেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি,
يا أيها الناس إني تركت فيكم ما إن أخذتم به لن تضلوا : كتاب الله وعترتي أهل بيتي
-হে মানুষ সকল! আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যা আকড়ে ধরলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুটি হলো: আল্লাহর কিতাব এবং আমার পরিবার পরিজন-আমার আহলুল বাইত। (তিরমিযী)
অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ যর (রা.) বলেন, আমি নবী করীম (সা.) কে বলতে শুনেছি,
ألا إن مثل أهل بيتي فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك
-সাবধান! জেনে রাখো, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমার আহলুল বাইত হলো নূহ (আ.) এর নৌকার মতো। যে তাতে আরোহন করবে সে নাজাত পাবে আর যে তা থেকে পিছিয়ে থাকবে সে ধ্বংস হবে। (মুসনাদু আহমদ)
শেষকথা
রাসূলুল্লাহ (সা.) আহলুল বাইতকে আঁকড়ে ধরার কথা বলেছেন এবং বিশেষভাবে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসার নামান্তর। অনুরূপ তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি শত্রুতা পোষণের নামান্তর। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের প্রতি যেমন শত্রুতা পোষণ করা যাবে না তেমনি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করা যাবে না।