রামাদান হলো সিয়াম সাধনার মাস, ইবাদতের মাস। বলা যায় এটি ইবাদতের বসন্তকাল। কেননা এ মাসের ইবাদত অন্যান্য মাসের ইবাদত থেকে অত্যন্ত মূল্যবান। হাদীস শরীফে এসেছে, এ মাসের একটি নফল ইবাদতের মর্যাদা অন্য মাসের ফরয ইবাদতের সমান। আর এ মাসের একটি ফরয ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরয ইবাদতের সমান। (শুআবুল ঈমান; বায়হাকী, ৩/৩০৫)। এ মাসের একটি উমরা হজ্জের সমতুল্য। (তিরমিযী,হা/৯৩৯)
একজন প্রকৃত মুমিনের সারা বছরই ইবাদতের মৌসুম। প্রতিটি মুহুর্তই নেকী অর্জনের সময়। আর আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ মর্যাদাবান রাত-দিন এবং মাস সমূহে একজন নেককার ব্যক্তির আমল বহুগুণ বেড়ে যায়, তার মন আল্লাহমুখী হয়। রামাদান মাসে আল্লাহর নেক বান্দাহগণ মহান মালিক ও মাওলাকে খুশি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করার চেষ্টা করেন। কোন কোন সালাফ থেকে বর্ণিত আছে , তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দুআ করতেন যেন আল্লাহ তাদেরকে রামাদান মাস পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। রামাদানের পরবর্তী ৫ মাস দুআ করতেন আল্লাহ যেন তাদের রামাদানের আমলকে কবূল করে নেন।
সাহাবায়ে কিরাম থেকে শুরু করে সালফে সালেহীন আইম্মায়ে কিরাম রামাদান মাসে ইবাদতের জন্য রজব মাস থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। হযরত আবূ বাকর আল বলখী র. বলেন, রজব হলো বীজ বপনের মাস, শাবান হলো সেচ প্রদানের মাস আর রামাদান হলো ফসল তোলার মাস। (লাতাইফুল মাআরিফ; ইবনু রজব হাম্বলী) কাজেই যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ বপন করলো না , শাবান মাসে পানি সেচ করলো না সে কিভাবে রামাদান মাসে ফসল তোলার আকাঙ্ক্ষা রাখতে পারে? এই চাহিদার দিক থেকে আমাদের পূর্বসূরীরা রামাদানের অনেক আগে থেকেই নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে নিতেন। এই দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়ে সালফে সালেহীন পুরো রামাদান মাস আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। দিনের বেলা রোযা রাখার পাশাপাশি নামায, দান-সাদকা, কুরআন তিলাওয়াতে নিমগ্ন থাকতেন।
সালফে সালেহীনসহ আমাদের পূর্বসূরি সকলেই পবিত্র রামাদান মাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়ার আকাক্সক্ষা করতেন। নেক কাজে একজন আরেকজনের সাথে প্রতিযোগিতা করতেন। তাদের সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তারা রামাদানের আগের ছয় মাস থেকে আল্লাহর কাছে দুআ করতেন, যেন তারা রামাদান মাস লাভ করেন এবং তাতে ইবাদত করতে পারেন। রামাদানের পরবর্তী মাসগুলোতে তারা দুআ করতেন, যেন আল্লাহ তাআলা তাদের রামাদানকে কবূল করে নেন।
রামাদানে কুরআন তিলাওয়াত
রামাদান মাস এবং কুরআন কারীম একটি যেন আরেকটির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আল্লাহ তাআলা রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করায় এ মাসের সাথে কুরআন তিলাওয়াতের নিবিড় সম্পর্ক হয়ে গেছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অন্য মাস থেকে এ মাসে বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত জিবরীলে আমীন রামাদানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআন কারীম শুনাতেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. রামাদান শরীফে তিন দিনে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। রামাদান ছাড়া অন্য সময়ে সপ্তাহে এত খতম তিলাওয়াত করতেন। (আস সুনানুল কুবরা; বায়হাকী, ২/৫৫৫)
ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় সালফে সালিহীন থেকে শুরু করে সকল যুগের নেককার ব্যক্তিগণ রামাদান মাসে কুরআন কারীমকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। রামাদানের পুরো মাসকে যেন তারা কুরআন দিয়ে সাজিয়ে রাখতেন। কুরআন তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি খতম করা, কুরআন শিক্ষা দেওয়া এমনকি নফল নামায আদায় করলেও তাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে কিরাআত পড়তেন। কুরআন নাযিলের এ মাসে তারা অন্যান্য সকল নফল ইবাদত বন্ধ করে কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ইমাম মালিক (র.) সারা বছর মসজিদে নববীতে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকহের দারস-তাদরীস নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু রামাদান মাস আগমনের সাথে সাথে তিনি সকল দারস-তাদরীস বন্ধ করে দিতেন। যেন তিনি এগুলো থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুরো রামাদান মাস তিনি কুরআন তিলাওয়াত নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। (লাতাইফুল মাআরিফ; ইবনু রজব হাম্বলী, পৃ. ১৭১) ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.) রামাদান মাসে শুধু দারস-তাদরীস নয় বরং অন্যান্য সকল নফল ইবাদতই বাদ দিয়ে শুধু কুরআন তিলাওয়াত নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। (প্রাগুক্ত) বরকতময় এ মাসে উম্মতের নেককারগণ বারবার কুরআন কারীম খতম করার চেষ্টা করতেন। মনে হতো যেন কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন? ইমাম আযম আবূ হানীফা (র.) এর যুহদ, তাকওয়া এবং ইবাদত ইতিহাসে খুবই প্রসিদ্ধ। তিনি চল্লিশ বছর ইশার উযূ দিয়ে ফজরের নামায আদায় করছেন। ইমাম আবূ ইউসুফ র. থেকে তার সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে যে, তিনি প্রতিদিন এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। রামাদান আগমনের সাথে সাথে তার কুরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ বেড়ে যেত, প্রতি রামাদানে তিনি কুরআন কারীম ৬০ বার খতম করতেন এবং ঈদের দিন আরো ২ খতম করতেন। (আখবারু আবি হানীফাহ, পৃ. ৫৫)
অনুরূপ আমলের বর্ণনা ইমাম শাফেঈ থেকেও রয়েছে। তার প্রসিদ্ধ ছাত্র রাবী বিন সুলাইমান বলেন, ইমাম শাফিঈ (র.) রামাদান মাসে ৬০ বার কুআন কারীম খতম করতেন। প্রত্যেক রাতে দুই খতম করে পুরো মাসে ৬০ খতম তিলাওয়াত করতেন। রামাদান ছাড়া অন্যান্য মাসে তিনি ৩০ খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। (তারীখে বাগদাদ, ২/৬১, সিফাতুস সাফওয়াহ, ২/২৫৫)
আল্লামা যাহাবী (র.) ইমাম বুখারী র. এর রামাদান মাসের আমল বর্ণনা করে লিখেন, ইমাম বুখারী শেষরাতে কুরআন কারীমের অর্ধেক অংশ বা এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন এবং ইফতারের পূর্বেই কুরআন খতম করে নিতেন। অর্থাৎ প্রত্যেক দিনই তিনি এক খতম তিলাওয়াত করতেন। এছাড়াও তিনি তারাবীহ’র নামাযের পর আবার নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং প্রত্যেক তিন দিনের নামাযে এক খতম তিলাওয়াত করতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা; ইমাম যাহাবী, ১২/৪৩৯) হযরত ইবরাহীম নাখঈ বলেন, হযরত আসওয়াদ রামাদানের প্রতি রাতে কুরআন কারীমের এক খতম করতেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; ইমাম যাহাবী, ৪/৫১) ইমাম নববী র. বিশুদ্ধ সনদে প্রখ্যাত তাবেঈ মুফাসসির হযরত মুজাহিদ র. সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি রামাদান মাসে প্রত্যেক দিন এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। (আত তিবয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কুরআন, পৃ. ৭৪)
হাফিয ইবনু আসাকির বলেন, রামাদান মাসে আমার বাবা খুব বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং প্রতিদিন এক খতম কুরআন তিলওয়াত করতেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; ইমাম যাহাবী, ২০/৫৬২)
হযরত কাতাদাহ (র.) প্রত্যেক সাত রাতে কুরআন কারীম একবার খতম করতেন। কিন্তু রামাদান মাসে প্রত্যেক তিন রাতে এক খতম তিলাওয়াত করতেন। রামাদানের শেষ দশকে প্রতি রাতে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। (হিলয়াতুল আউলিয়া) ইমাম যাহাবী বলেন, কাতাদাহ রামাদানে মানুষকে কুরআনের দারস দিতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা; ইমাম যাহাবী)
রামাদানে সালাফের নামায
রাতের গভীরে নামায আদায় করা সালফে সালেহীনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। রাতের বেলা নিরবে নিভৃতে আল্লাহকে ডাকেননি, আল্লাহর এমন কোনো নেক বান্দাহ খুঁজে পাওয়া বিরল। রাতের গভীরে আল্লাহকে ডাকা, তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা নেককারদের অন্যতম অভ্যাস। রামাদানে তাদের এই আমলগুলো আরো বেড়ে যেত। ইমাম যাহাবী আবূ মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ৪২৭ হিজরীর রামাদান মাসটি তিনি বাগদাদে কাটিয়েছেন। তিনি পুরো রামাদান মাস তারাবীহ’র নামায জামাআতের সাথে আদায় করেছেন। তিনি বলেন, এখানকার মানুষজন তারাবীহ’র নামায শেষে বিরতিহীনভাবে তারা ফজর পর্যন্ত নামায পড়তে থাকেন। ফজরের পর তারা তাদের ছাত্রদেরকে পাঠদান করতে থাকেন। তারা বলতেন, এ মাসের রাতে বা দিনে আমরা ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; ইমাম যাহাবী, ১৭/৬৫৩)
সাহাবায়ে কিরাম রামাদান মাসে রাতের বেলা ইশার নামাযের পর থেকে সাহরী পর্যন্ত নামায আদায় করতেন। তাদের সে নামাযের কিরাত হতো অনেক দীর্ঘ, সিজদা ছিল অনেক লম্বা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) রামাদান মাসে তার ঘরে রাত্রিকালীন নামায শুরু করতেন। অন্যান্য লোকেরা যখন নামায শেষ করে মসজিদ থেকে চলে যেত তখন তিনি একটি পানির পাত্র নিয়ে ঘর থেকে চুপি চুপি বের হয়ে মসজিদে নববীতে চলে যেতেন। সারা রাত তিনি মসজিদে কাটিয়ে ফজরের নামাযের পর মসজিদ থেকে বের হতেন। (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ২/৪৯৪) সাহাবায়ে কিরামের তারাবীহ সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী র. বর্ণনা করেন হযরত উমর (রা.), উসমান (রা.) এর যুগে লোকেরা বিশ রাকাআত তারাবীহ’র নামায এত গুরুত্বের সাথে আদায় করতেন যে, দীর্ঘ কিরাত পড়ার কারণে অনেকে তাদের লাঠির উপর ভর করেও নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (আস সুনানুল কুবরা, বায়হাকী)
সাহাবায়ে কিরামের পরবর্তী যুগের নেককার উম্মতগণের জীবনী অধ্যয়ন করলেও পাওয়া যায় তারা রামাদান শরীফে নফল নামাযের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। মুবারক এ মাসের প্রতিটি রাত-ই তারা নামাযের আদায়ের মাধ্যমে অতিবাহিত করতেন। এমনকি তাদের অনেক সম্পর্কে এমন বর্ণনাও আছে যে, দীর্ঘ নামাযের কারণে সাহরী খাওয়ার সমযটাও কমে যেত। ফজর উদিত হওয়ার আশক্সক্ষায় খুব দ্রুত সাহরী খেয়ে নিতেন। (আল মুআত্তা; ইমাম মালিক, কিতাবুস সালাতি ফি রামাদান) ইমাম ওয়াকী ইবনুল জাররাহ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি রামাদান মাসে যুহরের নামাযের পর থেকে আসর পর্যন্ত পুরোটা সময় নফল নামাযেই কাটাতেন। হযরত আবূ রাজা রামাদান মাসে তার ছাত্রদের নিয়ে রাতের বেলা নামায আদায় করতেন। প্রত্যেক দশ দিনের নামাযে কুরআন খতম করতেন। (কিতাবুয যুহদ, ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল)
এই হলো আমাদের পূর্বসূরিদের রামাদান মাসে নামায আদায়ের কিছু নমুনা। যারা রামাদান মাসকে গণীমত মনে করে এর প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করতেন। শুধু ইবাদত করেই শেষ নয়, সারা রাত জেগে আল্লাহর গোলামী করেও ফজরের পর থেকে দুআ করতে থাকতেন “আল্লাহ রাতের ইবাদত কবূল করো”। রিয়া বা লৌকিকতা থেকে মুক্ত হয়ে ইবাদত করার চেষ্টা করতেন। এজন্য দেখা যায় ইবাদতগুলো গোপন রাখার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। হযরত আইয়ুব সাখতিয়ানী সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি সারা রাত আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। ফজরের সময় ঘরের মধ্যে এমন কিছু শব্দ করতেন যাতে অন্যান্য লোকেরা বুঝে যে, তিনি এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/১৬) সুবহানাল্লাহ। এই ছিল তাদের তাকওয়া, তাদের ইবাদতের খুলুসিয়াত।
অন্যান্য ইবাদত
রামাদান দান করার ফযীলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সর্বোত্তম সদকাহ হলো যা রামাদানে প্রদান করা হয়। মাহে রামাদানের ফযীলত এবং এতে নেক আমলে বহুগুণ সাওয়াবের প্রত্যাশী হয়ে সালফে সালেহীন এ মাসে তাদের দান-সাদকাহ, মানুষকে খাওয়ানোর মাত্রা বাড়িয়ে নিতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) কোনো মিসকীনকে সাথে না নিয়ে ইফতার করতেন না। ইমাম যুহরী র. বলতেন, এ মাস হলো কুরআন তিলাওয়াত আর মানুষকে খাওয়ানোর মাস। (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃ.১৭১) হাম্মাদ বিন আবি সুলাইম রামাদান মাসে প্রতিদিন ৫০০ মানুষকে ইফতার করাতেন। এমনকি পুরো রামাদান মাস তিনি তাদের সব কিছুর ব্যবস্থাপনা করতেন। ঈদের পর তাদের প্রত্যেককে ১০০ দিরহাম করে দান করতেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; ইমাম যাহাবী, ৫/২৩১) আবুস সাওয়ার আল আদাওয়ী বলেন, বনী আদীর লোকজন রামাদান মাসে কাউকে সাথে না নিয়ে ইফতার করত না। আর কাউকে না পেলে তারা মসজিদে চলে যেত এবং সেখানে মানুষদের সাথে বসে ইফতার করত। (আল কারাম ওয়াল জুদ ওয়া সাখা; আল বুরজানী, পৃ.৫৩)
নামায, রোযা, কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি সলফে সালেহীন রামাদান মাসে আল্লাহর দরবারে অনেক বেশি রোনাজারি করতেন। তাদের মধ্যে অনেকে এমন ছিলেন যে, সারা রাত ইবাদত করার পর সকাল থেকে আল্লাহর কাছে দুআ করতেন যেন আল্লাহ তাদের রাত্রিকালীন ইবাদত কবূল করে নেন। সারা রাত এবং সারা দিন ইবাদতের মধ্য দিয়ে রামাদান অতিবাহিত করার পরও তাদের কান্নার পরিমাণ আরো বেশি হয়ে যেত, এই আশঙ্কায় যে, তাদের রামাদান আল্লাহর কাছে কবূল হলো কি না? হযরত উমর ইবনু আব্দিল আযীয র. ইদুল ফিতরের খুতবায় মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে লোকজন তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করেছো এবং রাতের ইবাদত করেছ। আজ তোমরা আল্লাহর কাছে এগুলো কবূল হওয়ার দুআ করবে। জনৈক সালাফকে ঈদুল ফিতরের দিন বলা হলো আজ তো খুশির দিন। তিনি বললেন, হ্যা, ঠিক বলেছ। কিন্তু আমি ভয়ের মধ্যে আছি। কারণ আমি এমন এক বান্দাহ যাকে তার মালিক নেক আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি জানি না আমার আমল কবূল হলো কি না? আবদুল আযীয ইবনু আবি রাওয়াদ বলেন, আমি পূর্বসূরি নেককার ব্যক্তিদের দেখেছি তারা নেক আমল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। আমল করার পরও তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করত। আমলটি আল্লাহর কাছে কবূল হলো কি না?
সালফে সালেহীনের সিয়াম এবং রামাদানের সাথে যদি আমাদের সিয়াম পালন এবং মাহে রামাদান অতিবাহিত করাকে তুলনা করি তাহলে আমরা সহজে অনুধাবন করতে পারব আমরা কতটুকু পিছনে আছি, কেমন গাফলতের সাথে মুবারক মাসটাকে কাটিয়ে দিচ্ছি। আমাদের উচিত হলো, জীবনের প্রতিটি রামাদানকে গণীমত মনে করে গাফলতের নিদ্রা সরিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।