পবিত্র কুরআন তারতীল সহকারে বা সহীহ শুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের জন্য তাজবীদ জানা অত্যন্ত জরুরি। সমসাময়িক প্রচলিত ও পঠিত তাজবীদ গ্রন্থসমূহের মধ্যে আল-কাউলুছ ছাদীদ গ্রন্থখানা সবচেয়ে সহজবোধ্য ও সহজ আমলযোগ্য একটি কিতাব। কিতাবটির মূল নাম হলো ‘আল-কাউলুছ ছাদীদ ফিল কিরাআতি ওয়াত তাজবীদ’। গ্রন্থটি আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) কর্তৃক লিখিত। মূল কিতাবটি ১৯৫২ সালে উর্দু ভাষায় প্রণীত হয়। পরবর্তীতে তদীয় বড় ছাহেবজাদা আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন এবং তাতে বিভিন্ন কায়দা যেমন ইখফা, ইযহার, ইদগাম, পুর, বারিক ইত্যাদির হরফগুলোকে মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে শব্দগুচ্ছ করে দিয়েছেন এবং সকল ক্ষেত্রে মুখস্থ রাখার সহজ কৌশল ব্যবহার করেছেন।
স্বাধীন জ্ঞানচর্চার কিছু আগ্রহ থাকায় তাজবীদ বিষয়ে অধমের একাধিক গ্রন্থ সংগ্রহে আছে। তাই কিছুটা তুলনা করার সুযোগ হয়েছে। মনে হয়েছে অন্য কিতাবগুলো শুধু বিশেষভাবে আলিমদের কাছেই বোধগম্য হবে আর আল-কাউলুছ ছাদীদ গ্রন্থটি আলিম ও সাধারণ শিক্ষিত লোক, সকলেরই সহজে বোধগম্য। কারণ এর ভাষা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল যা অন্যান্য কিতাবের তুলনায় অনেক আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য কিতাব পাঠ করে এ কিতাবে এসে তার সারসংক্ষেপ পাওয়া যাবে।
এ কিতাবে অনুসরণ করা হয়েছে তাজবীদের মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য কিতাবাদী যেমন- হিরজুল আমানি ওয়াজহুত তাহানী, যিনাতুল কারী, শরহে জাযরী, মাখারিজে হুরূফ এবং তদীয় উস্তাদ রঈসুল কুররা আহমদ হিজাযী মাক্কী (র.) কর্তৃক তার কাছে উপহারস্বরূপ প্রেরিত দুইখানা আরবী কিতাব। তাই একে বিভিন্ন ভাষায় রচিত তাজবীদের কিতাবসমূহের একটি সহজবোধ্য সংকলন বলা যায়।
সম্ভবত সকল পাঠকই চায়- সে যে বইটি পড়ছে তা যেন সে বুঝতে পারে এবং আমল করার যোগ্য হলে তা আমল করতে পারে।
কিতাবখানা এত বুদ্ধিবৃত্তিক বিন্যস্ত যে, একজন নতুন পাঠক প্রথমে কুরআন পাঠ শিখতে হলে যে কাওয়াইদ বা নিয়মাবলি জেনে নিতে হয় সেগুলো প্রথমেই আলোচিত হয়েছে। তারপর পরবর্তী প্রয়োজনীয় মাসআলা আলোচিত হয়েছে। এতে যেকোনো বয়স ও যেকোনো স্তরের শিক্ষিত লোকের পক্ষে তা আয়ত্ত করা সহজ।
কিতাবখানা সহীহভাবে সাথে কুরআন তিলাওয়াত, নামাযে তিলাওয়াতের ফরয আদায় করতে, ভুলভাবে কুরআন তিলাওয়াতের কবীরা গুনাহ থেকে জিহ্বাকে হিফাযত করতে ও অর্থ বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে তা পাঠক ও শ্রোতাকে কুরআনের প্রতি আগ্রহী করে তুলে, কুরআনের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে, আরবী জানা লোকদেরকে অর্থ বুঝতে সহায়তা করে এবং কুরআন এর লফযী তিলাওয়াতের যতটুকু সাওয়াব আছে তা পুরোপুরি পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
মোটকথা কিতাবখানা আদ্যোপান্ত পাঠ করলে এবং এ জাতীয় অন্যান্য কিতাবের সাথে তুলনা করলে বুঝা যায়, এটি সরল উদ্দেশ্যে লিখিত। কাসরাতুল ইনতিফা বা বেশি উপকার দেওয়ার জন্য, সবাইকে সহীহ কুরআন শেখানোর জন্য। এজন্য তিনি সবচেয়ে মশহুর একটি কিরাত অর্থাৎ ইমাম হাফছ (র.) এর পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন, সকল পদ্ধতি নয়। কেননা সকল কিরাতের নিয়মাবলি পাঠ করা অনেকের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। এ সহজ পদ্ধতির কারণেই কিতাবখানা পড়ে বাংলাদেশসহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে বসবাসকারী মুসলিম ভাই-বোনেরা অনবরত কুরআনের বিশুদ্ধ পাঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন। ইউরোপ-আমেরিকার শিক্ষার্থীদের সহজে বোধগম্য করার জন্য কিতাবটি ইংরেজিতেও ভাষান্তর করা হয়েছে। ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর দৌহিত্র সৈয়দ আজমল হোসেন ওয়াসি।
বইটি নিউজপ্রিন্ট এবং সাদা কাগজে সুন্দর বাধাইসহ সকল ইসলামী লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। মূল্য অত্যন্ত সাশ্রয়ী ৫০ টাকা মাত্র।