জনৈক শায়খ বলেছেন ওলীর অনুমতি ব্যতীত বিবাহ শুদ্ধ হয় না, রেফারেন্স স্বরূপ তিনি হযরত আয়িশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে ওলীর অনুমতি ব্যতিত বিবাহ বাতিল। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
প্রশ্নকারী: নাজমুল ইসলাম
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ
জবাব: হযরত আয়িশা (রা.) ও হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা.) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, لا نكاح إلا بولي -অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ হবে না।
আবূ মূসা আশআরী (রা.) বর্ণিত হাদীস সুনানু আবি দাউদ, তিরমিযীসহ বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থে রয়েছে। হযরত আয়িশা (রা.) থেকে তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় আছে, أيما امرأة نكحت بغير إذن وليها، فنكاحها باطل، فنكاحها باطل، فنكاحها باطل -যে মহিলা তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।
এ দুটি হাদীসের হুকুম নাবালিগা মেয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
প্রকাশ থাকে যে, ওলায়াত দুই প্রকার- ১. ওলায়াতে নুদব ২. ওলায়াতে ইজবার।
ওলী কর্তৃক নাবালিগা, জ্ঞানশূন্য বোকা ও ক্রীতদাসীকে বিবাহ দেওয়ার যে অধিকার বা কর্তৃত্ব আছে তাকে ‘ওলায়াতে ইজবার’ বলে। ইজবার শব্দের অর্থ জবরদস্তী করা বা বল প্রয়োগ করা। আর যেহেতু ওলীর জন্য উল্লেখিতদের জবরদস্তিমূলকভাবে বিবাহ দেওয়ার অধিকার আছে। তাই এ ওলায়াতকে ‘ওলায়াতে ইজবার’ বলে। (শামী ২য় খণ্ড)
ওলীর জন্য বালিগাকে (চাই সে কুমারী হোক বা বিবাহিত হোক) বিবাহ দেওয়ার যে অধিকার বা ওলায়েত আছে, তাকে ‘ওলায়াতে নুদব’ বলে। নুদব অর্থ হলো মুস্তাহাব। আর বালিগাকে জবরদস্তীমূলকভাবে বিবাহ দেওয়ার অধিকার ওলীর নেই। এ সত্ত্বেও বালিগার ব্যাপারটি ওলীর উপর ন্যস্ত করা যাতে তাকে বেশরম, বেহায়া বলতে না পারে। এ ওলায়াতকে ওলায়াতে নুদব বলে। (শামী ২য় খণ্ড)
ওলায়াতে ইজবার অবস্থায় বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য ওলীর অনুমতি শর্ত। ওলীর অনুমতি ব্যতিত বিবাহ সহীহ হবে না। ওলী নাবালিগ ও নাবালিগাকে তাদের সম্মতি ছাড়াই বিবাহ দিতে পারে।
ওলায়েতে নুদব অবস্থায় বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য ওলীর অনুমতি শর্ত নয়। এ অবস্থায় পাত্রপাত্রীর অসম্মতিতে তাদের বিবাহ দেওয়ার অধিকার ওলীর নেই। বালিগ ও বালিগা ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করলে তা সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও ওলীর সম্মতি নেওয়া উত্তম। (শামী ২য় খণ্ড)
কেউ কেউ পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত “বিবাহ হবে না” দ্বারা বালিগার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ না হওয়া কিংবা উত্তম না হওয়ার অর্থ গ্রহণ করেছেন, যা শুদ্ধ না হওয়াকে আবশ্যক করে না। হযরত আয়িশা (রা.) উক্ত হাদীসের মূল বর্ণনাকারী, তিনি তাঁর ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর (রা.) এর মেয়েকে ভাইয়ের অনুমতি ব্যতীত বিবাহ দিয়েছেন। অধিকন্তু হযরত আয়িশা (রা.) নিজে এ মাসআলায় বিপরীত রায় দিয়েছেন। তাছাড়া হযরত আয়িশা (রা.) থেকে কোনো কোনো বর্ণনায় “ওলীর” পরিবর্তে “মাওলা” ব্যবহৃত হয়েছে, যা মূলত ক্রীতদাসীর বিবাহের ক্ষেত্রে তার মনিবের অনুমতি আবশ্যক হওয়া বুঝিয়েছে।
ওলীর (অভিভাবকের) অনুমতি ব্যতীত বালিগা নারীর বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে হাদীসে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
عن ابن عباس، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: الأيم أحق بنفسها من وليها، والبكر تستأذن في نفسها، وإذنها صماتها
-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বালিগা বিবাহিতা নারী তার নিজের ব্যাপারে অভিভাবকের চেয়ে অধিকতর অধিকার রাখে। আর বালিগা কুমারীকে তার বিবাহের বিষয়ে অনুমতি নেওয়া হবে এবং তার অনুমতি হচ্ছে চুপ থাকা। (সহীহ মুসলিম; হাদীস নং: ১৪২১, সুনানু আবী দাউদ; হাদীস নং: ২০৯৮, সুনানু তিরমিযী; হাদীস নং: ১১০৮)
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ ও মুসান্নাফে আবদির রায্যাক এ হযরত আবূ সালামাহ ইবনে আবদির রহমান থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, এক নারীকে তার পিতা তার মতামত উপেক্ষা করে বিবাহ দিতে চাইলে উক্ত মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বিষয়টি উত্থাপন করে এর প্রতিকার চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিতাকে জিজ্ঞেস করে ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে তাকে তার ইচ্ছানুযায়ী বিবাহ করতে বললেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস নং ১৫৯৫৩, মুসান্নাফে আবদির রায্যাক, হাদীস নং ১০৩০৪)
আর পবিত্র কুরআন মাজীদের নিম্নবর্ণিত আয়াতে বিবাহকে সরাসরি নারীর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে, যা বিবাহ বৈধ কিংবা শুদ্ধ হওয়ার জন্য অভিভাবকের অনুমতির আবশ্যকতা বুঝায় না। যেমন- সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতে এসেছে-
فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَه مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡکِحَ زَوۡجًا غَیۡرَه-
“অতঃপর যদি স্বামী তার স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়, তবে সে স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিবাহ না করা পর্যন্ত তার জন্যে হালাল (বৈধ) নয়।”
জবাবদাতা: প্রিন্সিপাল ও খতীব, আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার
মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র