মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে ফিতরাত তথা স্বভাবজাত কিছু বিষয়ের উপর সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا
সুতরাং তুমি নিজ চেহারাকে একনিষ্ঠভাবে এই দ্বীনের অভিমুখী রাখ। আল্লাহর সেই ফিতরাত অনুযায়ী চল, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রূম, আয়াত-৩০)
ফিতরাত তথা স্বভাবজাত বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান হলো, আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইসলাম চেনার, বোঝার যোগ্যতা দিয়েই দুনিয়ায় পাঠিয়ে থাকেন। যার কারণে কোনো বাচ্চাকে মা-বাবা কাফির না বানালে সাধারণত সে জন্ম থেকেই ইসলামকে মেনে নেয় এবং মুসলমান হয়েই বড় হয়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
-প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী বা নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক বানায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস-১৩৮৫)
আল্লাহ তাআলা এই গুণের সাথে সাথে আরও কিছু ফিতরাত তথা স্বভাবজাত বিষয় দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে বলেন,
الْفِطْرَةُ خَمْسٌ أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ
ফিতরাত (স্বভাব) পাঁচটি অথবা বলেছেন, পাঁচটি কাজ হলো ফিতরাত এর অন্তর্ভুক্ত- খাতনা করা, ক্ষুর দ্বারা নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং গোঁফ কাটা। (সহীহ বুখারী, হাদীস-৫৮৯১, সহীহ মুসলিম, হাদীস-৪৮৫)
মানবজাতি সূচনালগ্ন থেকে এই কাজগুলো করে আসছে। তাই ইসলাম এগুলোকে ফিতরাত বলে আখ্যায়িত করেছে।
আজ আমরা ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত নখ কাটার সুন্নত পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।
১. নখ কাটার গুরুত্ব
নখ কাটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এ হুকুম পুরুষ নারী সবার জন্য প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে হাত পা উভয়ের হুকুম সমান। যা উল্লিখিত হাদীসের বর্ণনা থেকে সহজেই বুঝে আসে। কারণ রাসূলুল্লাহ সা. নখ কাটার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার পার্থক্য করেননি। তাছাড়া নখ বড় রাখা একটি অস্বাস্থ্যকর বিষয়। বড় নখে ময়লা জমে থাকা একেবারে সাধারণ বিষয়। হিংস্র জন্তুদের নখ বড় থাকে, যা কোনো মুসলমানের ব্যাপারে কল্পনা করা যায় না। তাছাড়া আপনি হাত তোলে আল্লাহর কাছে দুআ করবেন এমন অবস্থায় যে আপনার নখ ময়লা আবর্জনায় ভর্তি, অথচ অপরিচ্ছন্নতা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। একবার আবূ ওয়াসিল (র.) হযরত আবূ আইয়্যুব আল আনসারী (রা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন তিনি তার সাথে মুসাফাহা করলেন এবং দেখলেন যে আবূ ওয়াসিল (র.) এর নখ বড়। তৎক্ষনাৎ আবূ আইয়্যুব আল আনসারী (রা.) তাকে একটি হাদীস শুনালেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,
يَسأَلُ أحَدُكم عن خَبَرِ السَّماءِ، وهو يَدَعُ أظْفارَه كأظافيرِ الطَّيرِ يَجتَمِعُ فيها الجَنابةُ والخَبَثُ والتَّفَثُ
তোমাদের কেউ কেউ আসমানের খবর জিজ্ঞাসা করো, অথচ তার হাতের নখগুলো পাখির নখের মতো, যাতে জমে থাকে ময়লা-আবর্জনা! (মুসনাদ আহমদ, শাইখ শুয়াইব আরনাউতের তাহকীক, হাদীস-২৩৫৪২)
লম্বা নখে ময়লা থাকলেও সাধারণত অযুর সময় পানি ঢুকে এবং ময়লা ভিজে যায়, কিন্তু এমন অবস্থা যদি হয় যে ময়লা ভিজে না তখন উযূ বিশুদ্ধ হয় না এবং নামাযও কবূল হয় না। ময়লা থাকা সত্ত্বেও পানি ভিতরে প্রবেশ করলেও এই নখের ময়লা নামাযের ইতমিনান নষ্ট করে দেয়। এমনকি আপনার নখের ময়লা কারণে নামাযে ইমাম সাহেবের সংশয় তৈরি হতে পারে। কারণ একবার রাসূলুল্লাহ সা. নামায পড়ার সময় সন্দেহ তৈরি হলে সাহাবায়ে কিরাম কারণ জিজ্ঞেস করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
ما لي لا أوهَمُ ورُفْغُ أحدِكم بين ظفرِهِ وأنملتِهِ
কেন সন্দেহ তৈরি হবে না? অথচ তোমাদের কারো কারো নখে ময়লা আবর্জনা রয়েছে ! (ফাতহুল বারী ১০/৩৫৭; বাইহাকী, হাদীস: ২৫১১)
বড় নখের অকল্যাণের ব্যাপারে ইমাম হাসকাফী (র.) বলেন,
لِأَنَّ مَنْ كَانَ ظُفْرُهُ طَوِيلًا كَانَ رِزْقُهُ ضَيِّقًا
যে নখ বড় রাখে তার রিযক সংকীর্ণ হয়! (রদ্দুল মুহতার, ৬/৪০৫)
যার কারণে আমাদের উচিত নিয়মিত নখ কাটা। এতে গাফলতির কোনো অবকাশ নেই।
২. নখ কাটার সুন্নত তারিখ
নখ কাটার জন্য নির্ধারিত কোনো তারিখ নেই। বরং যখনই বড় হবে, তখনই কেটে নেয়া উচিত। সপ্তাহের যে কোনো দিন নখ কাটা যায়, এমনকি পর্যাপ্ত আলো থাকলে রাতেও কাটা যায়। ফতোয়ায়ে শামীতে এসেছে, ইমাম হাসকাফী (র.) বলেন,
قُلْت وَفِي الْمَوَاهِبِ اللَّدُنْيَّةِ قَالَ الْحَافِظُ ابْنُ حَجَرٍ إنَّهُ يُسْتَحَبُّ كَيْفَمَا احْتَاجَ إلَيْهِ وَلَمْ يَثْبُتْ فِي كَيْفِيَّتِهِ شَيْءٌ وَلَا فِي تَعْيِينِ يَوْمٍ لَهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া কিতাবে ইবন হাজার (র.) বলেন, ….প্রয়োজন অনুযায়ী নখ কাটা মুস্তাহাব। নখ কাটার জন্য রাসূলুল্লাহ সা. থেকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ সাবিত নেই। (রদ্দুল মুহতার, ৬/৪০৬)
তাই নখ বড় হলে নির্দিষ্ট কোনো দিনের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই, বরং যখন বড় হবে, নখে ময়লা জমবে তখনই কেটে নেয়াই সুন্নত। নখ লম্বা হওয়ার পর না কাটে নির্দিষ্ট (মুস্তাহাব) দিনের অপেক্ষা করা বা এমনিতেই নখ না কেটে লম্বা রাখা মাকরূহ তথা গুনাহের কাজ। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫/৩৫৮)
ফতোয়ায়ে শামীতে এসেছে,
(قَوْلُهُ إلَّا إذَا أَخَّرَهُ إلَيْهِ) أَيْ إلَى يَوْمِ الْجُمُعَةِ بِأَنْ طَالَ جِدًّا وَأَرَادَ تَأْخِيرَهُ إلَيْهِ فَيُكْرَهُ
অর্থাৎ, কেউ যদি জুমুআবারের অপেক্ষা করে নখকে অধিক লম্বা করে ফেলে তবে তা মাকরূহ হবে। (রাদ্দুল মুহতার ৬/৪০৫)
তবে হ্যাঁ, জুমুআবার দিনের অন্যতম মুস্তাহাব হচ্ছে নখ কাটা। কারো যদি সপ্তাহে একদিন নখ কাটলেই যথেষ্ট হয় তবে সে জুমুআবার দিনে নখ কাটলে সুন্নত ও মুস্তাহাব উভয়ের সাওয়াব পাবে। কারণ হাদীস শরীফে এসেছে,
أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ كان يُقلِّمُ أظفارَه ويقُصُّ شاربَه يومَ الجمعةِ قبل أن يروحَ إلى الصَّلاةِ
রাসূলুল্লাহ সা. জুমুআবার জুমুআর নামাযে বের হওয়ার পূর্বে নখ এবং গোঁফ কাটতেন। (বাইবাকী ৩/১০৬৩)
এই হাদীসের সনদ দূর্বল, কিন্তু জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) বলেন,
قَالَ السُّيُوطِيّ: وَبِالْجُمْلَةِ فَأَرْجَحُهَا أَيْ الْأَقْوَالِ دَلِيلًا وَنَقْلًا يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَالْأَخْبَارُ الْوَارِدَةُ فِيهِ لَيْسَتْ بِوَاهِيَةٍ جِدًّا مَعَ أَنَّ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اهـ
জুমুআবার নখ কাটা মুস্তাহাব হওয়ার মতটি আকলী ও নকলী দলিলে অগ্রগণ্য। কারণ এব্যাপারে যে হাদীস এসেছে তা একেবারে পরিত্যাজ্য নয়। বরং (স্বাভাবিক) দূর্বল। আর ফাদায়েলে আমালের ক্ষেত্রে এই জাতীয় হাদীস আমলযোগ্য। (রাদ্দুল মুহতার, ৬/৪০৫)
তবে কারো নখ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সপ্তাহে দু’বার কাটার প্রয়োজন পড়লে সে সপ্তাহে দু’বারই কাটবে।
৩. নখ কাটার পদ্ধতি
নখ কাটার সময় ডান হাতের নখ প্রথমে কাটা এবং বাম হাতের পরে কাটা সুন্নত। তেমনিভাবে ডান পায়ের নখ প্রথমে এবং পরে বাম পায়ের নখ কাটা সুন্নত। কারণ আয়িশা (রা.) ইরশাদ করেন,
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُورِهِ وَفِي شَأْنِهِ كُلِّهِ.
-নবী কারীম e জুতা পরা, চুল আচঁড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক হতে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস-১৬৮)
কিন্তু ডান হাতের কোন আঙুল থেকে কাটা শুরু করা হবে এবিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। ইমাম গাযযালী (র.) একটি পদ্ধতির কথা বর্ণনা করেছেন, যা ইমাম নববী (র.) ও নকল করেছেন। তিনি বলেন,
ويستحب أن يبدأ باليدين قبل الرجلين فيبدأ بمسبحة يده اليمنى ، ثم الوسطى ثم البنصر ثم الخنصر ثم الإبهام ثم يعود إلى اليسرى فيبدأ بخنصرها ثم ببنصرها إلى آخرها ثم يعود إلى الرجلين اليمنى فيبدأ بخنصرها ويختم بخنصر اليسرى .والله أعلم. (شرح النواوي، كتاب الطهارة ، باب خصال الفطرة)
অর্থাৎ মুস্তাহাব হচ্ছে, পায়ের আগে হাতের নখ কাটবে। সে শুরু করবে ডান হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে, তারপর মধ্যমা তারপর অনামিকা তারপর কনিষ্ঠা শেষে বৃদ্ধাঙ্গুলি। এরপর বাম হাতের কনিষ্ঠা থেকে, অতঃপর শেষ করবে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে এসে। আল্লাহ ভালো জানেন। (শারহু সহীহ মুসলিম ৩/১৪৯)
কিন্তু ইমাম নববী (র.) তার شرح المهذب গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম গাযালী (র.) যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে এই পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন সেই হাদীসের কোনো ভিত্তি নেই।
রদ্দুল মুহতারেও ইমাম হাসকাফী (র.) ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (র.) এর কওল উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
قَالَ الْحَافِظُ ابْنُ حَجَرٍ: إنَّهُ يُسْتَحَبُّ كَيْفَمَا احْتَاجَ إلَيْهِ وَلَمْ يَثْبُتْ فِي كَيْفِيَّتِهِ شَيْءٌ وَلَا فِي تَعْيِينِ يَوْمٍ لَهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا يُعْزَى مِنْ النَّظْمِ فِي ذَلِكَ لِلْإِمَامِ عَلِيٍّ ثُمَّ لِابْنِ حَجَرٍ قَالَ شَيْخُنَا إنَّهُ بَاطِلٌ.
অর্থাৎ, নখ কাটার ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রয়োজন মতো যে কোনো নখ থেকে কাটা শুরু করা মুস্তাহাব। যেহেতু রাসূলুল্লাহ e থেকে নখ কাটার নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি সাবিত নেই।…. হযরত আলী (রা.) থেকে যেসব কবিতা দিয়ে দলীল দেওয়া হয় সেগুলো বাতিল। (রদ্দুল মুহতার, ৬/৪০৬)
ইবনে আবিদীন শামী (র.) জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (র.) থেকে উল্লেখ করেন,
وَكَذَا قَالَ السُّيُوطِيّ: قَدْ أَنْكَرَ الْإِمَامُ ابْنُ دَقِيقِ الْعِيدِ جَمِيعَ هَذِهِ الْأَبْيَاتِ وَقَالَ لَا تُعْتَبَرُ هَيْئَةً مَخْصُوصَةً، وَهَذَا لَا أَصْلَ لَهُ فِي الشَّرِيعَةِ، وَلَا يَجُوزُ اعْتِقَادُ اسْتِحْبَابِهِ لِأَنَّ الِاسْتِحْبَابَ حُكْمٌ شَرْعِيٌّ لَا بُدَّ لَهُ مِنْ دَلِيلٍ وَلَيْسَ اسْتِسْهَالُ ذَلِكَ بِصَوَابٍ اهـ
ইমাম ইবনু দাকীক আল-ঈদ (র.) এই সব কবিতা (নখ কাটার পদ্ধতির) কে অস্বীকার করেছেন। এবং বলেছেন, নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই। আর এই (বিশেষ পদ্ধতির) কোনো ভিত্তি শরীআতে নেই। এই বিশেষ পদ্ধতিকে মুস্তাহাব বিশ্বাস করা জায়িয নেই। কেননা মুস্তাহাব একটি শরয়ী হুকুম, তার জন্য অবশ্যই দলীল প্রয়োজন। (প্রাগুক্ত রাদ্দুল মুহতার ৬/৪০৬)
তবে ইবন হাজার আসকালানী (র.) ফাতহুল বারীতে এই পদ্ধতির পক্ষে একটি কিয়াস উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন,
يمكن أن يؤخذ بالقياس على الوضوء، والجامع التنظيف، وتوجيه البداءة باليمنى لحديث عائشة الذي مر في الطهارة: “كان يعجبه التيمن في طهوره وترجله، وفي شأنه كله”، والبداءة بالمسبحة منها لكونها أشرف الأصابع؛ لأنها آلة التشهد، وأما اتباعها بالوسطى فلأن غالب من يقلم أظفاره يقلمها قبل ظهر الكف فتكون الوسطى جهة يمينه، فيستمر إلى أن يختم بالخنصر ثم يكمل اليد بقص الإبهام، وأما في اليسرى فإذا بدأ بالخنصر لزم أن يستمر على جهة اليمين إلى الإبهام
-যেহেতু আয়িশা (রা.) এর হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ e সব কাজে ডান দিক কে পছন্দ করতেন। সুতরাং এই হাদিসের উপর কিয়াস করে নখ কাটা ডান থেকে শুরু করার বিধান গ্রহণ করা যায়। আর ডান হাতের প্রথমেই শাহদাত আঙুল দিয়ে শুরু করার কারণ হচ্ছে, এই আঙুল সবচেয়ে সম্মানিত আঙুল, যেহেতু এই আঙুলের মাধ্যমে (তাশাহহুদে) সাক্ষ্য প্রদান করা হয়। এরপর মধ্যমা কাটা হয়। কারণ মানুষ সাধারণত হাতের তালুর পিঠের দিক থেকে নখ কাটে, তখন ডান দিকে পড়ে মধ্যমা। এরপর ডান দিকে আসে যথাক্রমে অনামিকা ও কনিষ্ঠা। এরপর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাধ্যমে ডান হাত সমাপ্ত হয়। আর বাম হাতের ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করতে চাইলে কনিষ্ঠা থেকে শুরু করতে হয়, এবং শেষ বৃদ্ধাঙ্গুলি তে শেষ করতে হয়। (তাহলে পূর্ণ ডান দিক অনুসরণ হলো)। (ফাতহুল বারো, কিতাবুল লিবাস, বাবু কাসসিশ শারিব, হাদীস ৫৮৮৯)
উক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম, নখ কাটার কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য হাদীসে আসেনি। তবে উলামায়ে কিরাম কিয়াস করে একটি উত্তম পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছে প্রথমে ডান হাতের শাহাদাত আঙুল, তারপর মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠা, শেষে বৃদ্ধাঙ্গুলি। আর বাম হাতের কনিষ্ঠা থেকে শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে শেষ করা।
পায়ের নখ কাটার ক্ষেত্রে একই কথা। হাদীসে নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি বর্ণিত হয়নি। কিন্তু উলামায়ে কিরামদের নির্দেশিত একটি উত্তম পদ্ধতি রয়েছে। রদ্দুল মুহতারে ইমাম হাসকাফী (র) বলেন,
وَلَمْ يَثْبُتْ فِي أَصَابِعِ الرِّجْلِ نَقْلٌ، وَالْأَوْلَى تَقْلِيمُهَا كَتَخْلِيلِهَا
পায়ের নখ কাটার পদ্ধতির ব্যাপারে কোনো বর্ণনা প্রমাণিত নয়। তবে উত্তম হচ্ছে, উযূতে পা খিলালের পদ্ধতি অনুসারে পায়ের নখ কাটা।
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইমাম ইবন আবিদীন শামী (র.) বলেন,
قَوْلُهُ وَالْأَوْلَى تَقْلِيمُهَا كَتَخْلِيلِهَا) يَعْنِي يَبْدَأُ بِخِنْصَرِ رِجْلِهِ الْيَمِينِ وَيَخْتِمُ بِخِنْصَرِ الْيُسْرَى.
অর্থাৎ, ব্যক্তি নখ কাটা শুরু করবে ডান পায়ের কনিষ্ঠা আঙুল থেকে, ধারাবাহিকভাবে শেষ করবে বাম পায়ের কনিষ্ঠা আঙুলে। (হাশিয়াতু ইবন আবিদীন, ৬/৪০৬)
আমাদের সমাজে মোটামুটি প্রচলিত পদ্ধতির ব্যাপারে ফতোয়ায়ে আলমগীরীতে এসেছে, ডান হাতের শাহাদাত আঙুল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠা কেটে বাম হাতের কনিষ্ঠায় চলে যাবে, সেখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে কেটে আসবে, সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কাটবে। (আলমগীরী, ৫/৩৫৮)
এই সমান পদ্ধতি আল্লামা ইবনু আবেদীন শামী (রহ.) ফতোহায়ে শামীতেও উল্লেখ করেছেন (রাদ্দুল মুহতার ৬/৪০৬)। তাই পদ্ধতিগুলোকে আমরা সুন্নত বলছি না, তবে উলামায়ে কিরামদের নির্দেশিত সহজতার পদ্ধতি বলা যায়।
৪. দাত দিয়ে নখ কাটা
নখ কাটার ক্ষেত্রে ধারালো নখ কাটার যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত। কখনো দাঁত দিয়ে কাটা উচিত নয়। ইমাম শামী (র.) বলেন,
وَقَلْمُهَا بِالْأَسْنَانِ مَكْرُوهٌ يُورِثُ الْبَرَصَ،
দাঁত দিয়ে নখ কাটা মাকরূহ। এতে কুষ্ঠ রোগ হবার আশঙ্কা তৈরি হয়। (প্রাগুক্ত)
৫. নখ কাটার স্থান
নখ ঘরে বাহিরে যে কোনো ভালো জায়গায় বসে কাটা যায়। কিন্তু কাটার পর নখগুলো কে মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম, অথবা সাধারণ মাটিতে ফেলে দেয়া যায়। কিন্তু ঘরে বা টয়লেটে বা গোসলখানায় ফেলে রাখা অস্বাস্থ্যকর। ইমাম শামী (র.) বলেন,
فَإِذَا قَلَّمَ أَظْفَارَهُ أَوْ جَزَّ شَعْرَهُ يَنْبَغِي أَنْ يَدْفِنَهُ فَإِنْ رَمَى بِهِ فَلَا بَأْسَ وَإِنْ أَلْقَاهُ فِي الْكَنِيفِ أَوْ فِي الْمُغْتَسَلِ كُرِهَ لِأَنَّهُ يُورِثُ دَاءً.
অর্থাৎ, নখ বা চুল কেটে তা পুঁতে ফেলা উচিত। যদি মাটিতে নিক্ষেপ করে তবেও অসুবিধা নাই। আর যদি টয়লেটে বা গোসলখানায় ফেলে রাখে তবে মাকরূহ হবে, কারণ এতে রোগ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। (প্রাগুক্ত)
৬. যে যে সময় নাখ না কাটার বিধান
ইহরাম অবস্থায় নখ কাটা নিষিদ্ধ। তাই ইহরাম বাঁধার পূর্বেই নখ কেটে নিতে হয়। তেমনিভাবে যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন কুরবানীর আগ পর্যন্ত নখ না কাটা মুস্তাহাব।
৭. নখ কাটা নিয়ে কুসংস্কার
আমাদের সমাজে নখ কাটা নিয়ে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। “অমুক বারে নখ কাটা যাবে না, রাতে নখ কাটা যাবে না, ঘরে নখ কাটা যাবে না, কাটলে নানা ধরনের অমঙ্গল হবে”… ইত্যাদি বিষয় কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। ইসলামী শরীআতে এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীসে এ জাতীয় কুলক্ষণ বা অমঙ্গলের কথা পাওয়া যায় না। নখ লম্বা হলে যেকোনো দিন কেটে নেওয়া উচিত। তবে স্বাভাবিক হালতে জুমুআবার কাটা উত্তম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

