পবিত্র কুরআন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন্ত মুজিযা। পূর্র্ববর্তী নবী–রাসূলগণের ইন্তিকালের সাথে সাথে তাদের মুজিযা স্থগিত হয়ে গেছে, কিন্তু কুরআনের মুজিযা আজও বিদ্যমান। এ কিতাবের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত সর্বশ্রেষ্ট আমলই শুধু নয়; বরং দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত কল্যাণের বাহক। আজ আমরা শুধু এ ঐশী গ্রন্থ তিলাওয়াতের বিশেষ কিছু ফযীলত নিয়ে আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ।
নবী প্রেরণের প্রথম দায়িত্ব তিলাওয়াতে কুরআন
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ৪টি মৌলিক দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার প্রথমটি হলো উম্মাহর কাছে কুরআন তিলাওয়াত করা। ইরশাদ হচ্ছে,
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
–আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন। তাদের অন্তর পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত–১৬৪)
কুরআন তিলাওয়াতকারী উভয় জাহানের সর্বোত্তম মানুষ
উসমান ইবনে আফফান (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
–তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়। (বুখারী, কিতাবু ফাদাইলিল কুরআন, বাবু খাইরুকুম মান…)
হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الأُتْرُجَّةِ؛ رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ, وَمَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِي لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ؛ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ لَا رِيحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ, وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ مَثَلُ الرَّيْحَانَةِ؛ رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ, وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِي لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الْحَنْظَلَةِ لَيْسَ لَهَا رِيحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ
–কুরআন তিলাওয়াতকারী মুমিনের উদাহরণ হলো কমলালেবুর মতো। এর স্বাদও উৎকৃষ্ট আর ঘ্রাণও উৎকৃষ্ট। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ খেজুরের মতো। এটি খেতে সুস্বাদু, তবে তার কোনো সুঘ্রাণ নেই। কুরআন তিলাওয়াতকারী মুনাফিক ব্যক্তি সুগন্ধি ফুলের মতো। এর সুগন্ধ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক আবার কুরআন তিলাওয়াতও করে না সে মাকাল ফলের মতো। এর স্বাদও তিক্ত আর কোনো সুঘ্রাণও নেই। (বুখারী, কিতাবুল আতইমাহ, বাবু যিকরিত তাআম)
ঈমান বৃদ্ধির অব্যর্থ আমল কুরআন তিলাওয়াত
যদিও মূল ঈমানের হ্রাস–বৃদ্ধি নেই। তবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও তা শ্রবণের মাধ্যমে ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
–নিশ্চয় মুমিনগণ এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে কুরআনের আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় রবের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (সূরা আনফাল, আয়াত–২)
সূরা যুমারের অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
اللهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللهِ ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
–আল্লাহর উত্তম বাণী (তথা কুরআন) নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পুনরায় পঠিত। এতে তাদের পশম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় পায়। এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিন¤্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করেন আর যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন। তাঁর কোনো পথনির্দেশক নেই। (সূরা যুমার, আয়াত–২৩)
তিলাওয়াতকারীদের জন্য কুরআনের শাফাআত
কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াত ও তা অনুযায়ী আমল করতে পারলে কিয়ামতের কঠিন দিনে তা তিলাওয়াতকারীর জন্য জান্নাতের সুপারিশকারী হবে। আবূ উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِصَاحِبِهِ
–তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো। কারণ, কিয়ামতের দিন সে তার তিলাওয়াতকারীর জন্য (জান্নাতের) সুপারিশ করবে। (মুসলিম, বাবু ফাদাইলিল কুরআন…)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ إِنِّي مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ فيشفعان
–কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কুরআন বান্দাহর জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনের বেলা খাবার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বাধা প্রদান করেছি। আমাকে তার জন্য শাফাআতকারী হিসেবে কবূল করুন। অপরদিকে কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতের বেলা ঘুম থেকে বাধা প্রদান করেছি আমাকে তার জন্য (জান্নাতী হবার) শাফাআতকারী হিসেবে কবূল করেন। অতঃপর তাদের উভয়ের শাফাআত কবূল করা হবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ২০৩৬)
অন্য বর্ণনাতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَلَا آيَةً مِنْ كِتَابِ اللهِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
–যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদের একটি আয়াত তিলাওয়াত করবে, তা তার জন্য কিয়ামত দিবসে আলো হয়ে দাঁড়াবে। (শুআবুল ঈমান, বাবু ফি তাযিমিল কুরআন)
লাভজনক ব্যবসা
ব্যবসায় লাভ–ক্ষতি উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কুরআন তিলাওয়াতে লাভ ছাড়া ক্ষতির কোনো অংশ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَّن تَبُورَ
–যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়িম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হয় না। (সূরা ফাতির, আয়াত–২৯)
প্রত্যেক অক্ষরের বিনিময় দশগুণ সাওয়াব অর্জন
কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে উচ্চারিত প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা দশগুন সাওয়াব প্রদান করবেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
–যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকী প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকী দশটি নেকীর সমান। আমি বলি না যে, ‘আলিফ–লাম–মীম’ একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। (সুনানে তিরমিযী, কিতাবু ফাদাইলিল কুরআন, বাবু মা জাআ ফি ফাদলি কারীইল কুরআন)
কুরআনের বিশ্বাসীদের প্রমাণ তার যথার্থ তিলাওয়াত
যারা কুরআন কারীমে বিশ্বাস করেন, তারা তার সঠিকভাবে তিলাওয়াত করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
الَّذِيْنَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولٰئِكَ يُؤْمِنُوْنَ بِهِ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ فَأُولٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
–যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি, তারা তা যথার্থভাবে তিলাওয়াত করে। তারা তাতে বিশ্বাস করে। আর যারা তা অস্বীকার করবে তারাই হলো ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাকারা, আয়াত–১২১)
তিলাওয়াতকারির উপর আল্লাহর পক্ষ হতে প্রশান্তি বিতরণ
যারা কুরআন কারীমে বিশ্বাস করেন, তারা তার সঠিকভাবে তিলাওয়াত করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ تَعَالَى يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ
–আল্লাহ তাআলার ঘরসমূহের কোনো ঘরে যদি কোনো একদল মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজেদের মধ্যে তার শিক্ষা গ্রহণ করে তবে তাদের উপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) প্রশান্তি নাযিল হয়, তাদেরকে আল্লাহর দয়া–অনুগ্রহ আবিষ্ট করে রাখে, ফিরিশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর নৈকট্যশীলদের কাছে এসকল মানুষের কথা উল্লেখ করেন। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যিকরি ওয়াদ দুআ…, বাবু ফাদলিল ইজতিমা আলা তিলাওয়াতিল কুরআন…)
জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম অর্জন
সাহাবী হযরত আমর ইবনে আস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ: اقْرَأْ وَارَتْقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَ كَعِنْدَ آخِرِ آيَة تقرؤها
–কিয়ামতের দিনে কুরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে, কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে উপরে উঠতে থাকো। দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে ধীরে (তাজবীদ সহকারে) তিলাওয়াত করতে, তেমন করতে থাকো। কেননা, তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। (আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাত, বাবু ইসতিহবাবিত তারতীলি ফিল কিরাআতি)
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কুরআন কারীম মুখস্থ করো। নিশ্চয় যার হৃদয়ে কুরআন কারীম আছে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।’ (শারহুস সুন্নাহ লিল বাগাভী: ৪/৪৩৭)
ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব
পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তিকে হিংসা করা জায়িয নেই; কিন্তু দু’ব্যক্তিকে হিংসা বা ঈর্ষা করা যায়। তার মধ্যে একজন যে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে ও সে অনুযায়ী আমল করতে পারে। ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
لَا حَسَدَ إِلَّا على اثْنَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَار
–দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো ব্যাপারে হিংসা করা যায় না। প্রথম ব্যক্তি– যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন আর সে রাত ও দিনভর তা নিয়ে থাকে। দ্বিতীয় ব্যক্তি– যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিয়েছেন সাথে সাথে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করার তাওফীক দিয়েছেন। (বুখারী, কিতাবুল ইলম, বাবুল ইগতিবাতি ফিল ইলমি ওয়াল হিকমাতি)
উত্তম সম্পদ অর্জন
কুরআন তিলাওয়াত বা শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ الله عز وَجل خير لَهُ من نَاقَة أَو نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِل
–তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কুরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার থেকেও উত্তম হবে। তিনটি আয়াতের তিলাওয়াত ও শিক্ষা তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চারটি উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা তা উত্তম বিবেচিত হবে। (সহীহ মুসলিম, বাবু ফাদাইলিল কুরআনি ওয়ামা ইয়াতাআল্লাকু বিহি)
পিতা–মাতার জান্নাতি নূরের টুপি লাভ
কুরআন তিলাওয়াতকারী শুধু নিজেই উপকৃত হবেন না; বরং তার ওসীলায় তার পিতা–মাতা অসামান্য মর্যাদায় ভূষিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيهِ أُلْبِسَ وَالِدَاهُ تَاجًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْؤُهُ أَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ فِى بُيُوتِ الدُّنْيَا لَوْ كَانَتْ فِيكُمْ فَمَا ظَنُّكُمْ بِالَّذِى عَمِلَ بِهَذَا.
–যে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে কিআমত দিবসে তার পিতা–মাতাকে নূরের টুপি পরিধান করানো হবে। এই টুপির আলো সূর্যের আলো অপেক্ষা উজ্জ¦ল হবে। ধরে নাও যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কীরূপ হবে?) তাহলে যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করে নাও। (আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাত, বাবু ফি সাওয়াবি কিরাআতিল কুরআন)
কুরআনের তিলাওয়াতে ফিরিশতাগণের অবতরণ
হযরত উসাইদ বিন হুদায়র (রা.) একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেন,
يَا رَسُولَ اللهِ، بَيْنَمَا أَنَا أَقْرَأُ سُورَةً إِذْ سَمِعْتُ وَجْبَةً مِنْ خَلْفِي فَظَنَنْتُ أَنَّ فَرَسِي أُطْلِقَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :”اقْرَأْ يَا أَبَا عَتِيكٍ” فَالْتَفَتُّ فَإِذَا مِثْلُ الْمَصَابِيحِي تَدَلَّى بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: “اقْرَأْ يَا أَبَا عَتِيكٍ”، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا اسْتَطَعْتُ أَنْ أَمْضِيَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “تِلْكَ الْمَلَائِكَةُ نَزَلَتْ لِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ، أَمَا إِنَّكَ لَوْ مَضَيْتَ لَرَأَيْتَ الْعَجَائِبَ”
–ইয়া রাসূলাল্লাহ! একদিন আমি কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম হঠাৎ পেছনে এক আওয়াজ শুনে ভাবলাম আমার বেঁধে রাখা উট ছুটে যাচ্ছে। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ আতীক তিলাওয়াত করো। তখন আমি তাকিয়ে দেখলাম মনে হচ্ছে যেন আকাশ ও যমীনের মধ্যখানে আলো জ্বলছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, হে আবূ আতীক! তিলাওয়াত করতে থাকো। তখন তিনি (উসায়দ রা.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি পারছি না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওরা ছিল ফিরিশতা। যারা কুরআন তিলাওয়াতের দরুণ নাযিল হচ্ছিল। যদি তুমি তিলাওয়াত অব্যাহত রাখতে পারতে, তাহলে অনেক আশ্চর্য্য দৃশ্য দেখতে পারতে। (শুআবুল ঈমান, বাবু ফি তাযিমিল কুরআন)
প্রিয় পাঠক! কুরআন নাযিলের মাস রমাদ্বান সমাগত। কুরআনের এ মাসে আমরা যেন এর যথার্থ তিলাওয়াত করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সে তাওফীক দিন। আর যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম নন, অন্তত, এ মাসে তাদের জন্য হোক কুরআন শেখার মাস। এটাই হোক আমাদের শপথ। আমীন।