1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
তালামীযে ইসলামিয়া ও সফল দুটি আন্দোলন
এম.এ কাদির আল হাসান
  • ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ভ্রান্ত রাজনীতির হিংস্র ছোবল থেকে ছাত্রসমাজকে রক্ষা করা ও তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতাদর্শের আলোকে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং অন্যায় ও অসত্যের বেড়াজাল ছিন্ন করে সত্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে দেশ, জাতি ও ইসলামের ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ১৯৮০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নানা সীমাবদ্ধতা, বাধা ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে সংগঠনটি অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য যোগ্য, ত্যাগী ও সাহসী ব্যক্তি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে সংগঠনটি। দেশ, জাতি ও ইসলামের প্রয়োজনের আলোকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে তালামীযে ইসলামিয়া। অসংখ্য ন্যায্য, যৌক্তিক ও অতি প্রয়োজনীয় আন্দোলন-সংগ্রামের কখনো অগ্র-পথিক হিসেবে আবার কখনো অংশীদার হিসেবে প্রশংসনীয় অবদান রাখছে।
নিকট অতীতে দেশের দুটো উল্লেখযোগ্য ও সফল আন্দোলনে তালামীযে ইসলামিয়ার অংশগ্রহণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার আলোকপাত নিম্নে উপস্থাপিত হলো।
এক
২০০১ সাল, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল একজন বিতর্কিত নারীর নামে নামকরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি নেপথ্য ভূমিকা পালন করেন। এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সিলেটের প্রায় সকল রাজনৈতিক সংগঠন (শুধুমাত্র তৎকালীন সরকার দল ছাড়া), বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন এবং সুধীজন পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া সিলেট শহর শাখার উদ্যোগে সর্বপ্রথম সিলেটের রাজপথে মিছিল বের করা হয়। সিলেটের প্রায় সকল পত্র-পত্রিকা এই মিছিলের সংবাদ পরদিন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠন এই ইস্যুতে রাজপথে নেমে আসে, আন্দোলনে উত্তাল হয়ে যায় সিলেট নগরী। যার ধারাবাহিকতায় দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিলেটের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সম্ভবত তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সকল সংগঠন এই ফোরামে অন্তর্ভুক্ত ছিল, এ আন্দোলনে তালামীযে ইসলামিয়ার ভূমিকা ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য।
পরবর্তীতে সরকার নামকরণের পক্ষে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে সকল গণসংগঠনের সমন্বয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। এবার ছাত্র আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। মিছিল-সমাবেশ, অবরোধ ও হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করার পরও যখন দাবি আদায় হচ্ছিলনা, তখন সিলেটের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ও খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গকে সমন্বয় করে একটি মহাসমাবেশ আয়োজনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে স্বাভাবিকভাবেই সর্বদলীয় নেতৃবৃন্দ মুজাদ্দিদে যামান হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাকে মহাসমাবেশের সভাপতির আসন অলঙ্কিত করার অনুরোধ জানান। হযরত ছাহেব কিবলাহ (র.) সিলেটের ধর্মপ্রাণ জনগণের এ যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। তিনি মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়ে সভাপতিত্ব করেন এবং দাবির পক্ষে খুবই জোরালো বক্তব্য রাখেন। পাশাপাশি দাবি না মানলে সরকারকে এর পরিণতির কথা জানিয়ে দেন।
এ মহাসমাবেশের পরেই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। যার ফলে নামকরণ বিরোধী এই আন্দোলন সফলভাবে সমাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য, তালামীযে ইসলামিয়া সিলেট শহর শাখার তৎকালীন সভাপতি মুকিত রহমানী ও তালামীয কর্মী আব্দুল বাকী খালেদ এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন।
দুই
মাদরাসা শিক্ষায় ফাযিলকে ডিগ্রি ও কামিলকে মাস্টার্স এর সমমান প্রদানের যৌক্তিক দাবি অনেককাল থেকেই চলে আসছিল। ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকার এই দাবি মেনে সমমান দেওয়ার ঘোষণা দিলেও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই সমমান প্রদান করা হবে এটা নিয়ে বিপত্তি দেখা দিল।
মাদরাসা শিক্ষার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য দেশের আলিম-উলামা, ইসলামী সংগঠন ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। কিন্তু সরকার ও তাদের জোটের শরীকরা এটাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে ফাযিল ও কামিল এর মান প্রদানের পায়তারা শুরু করলে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া জাতির সেই ক্রান্তিকালে মাদরাসা শিক্ষার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার লক্ষ্যে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। জাতির অগ্রসেনানী হিসেবে সমমনা প্রায় ১১টি ইসলামী ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্র ঐক্য’ গঠন করা হয়। সংগঠনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এম.এ কাদির আল হাসান এর নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশব্যাপী আন্দোলন জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঢাকার রাজপথে মিছিল-সমাবেশ, বিভিন্ন সেমিনার, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাওসহ নানামুখী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
এ জোরালো ও সুদীর্ঘ আন্দোলনের পরেও সরকার দাবি না মানায় ইসলামী আন্দোলনের সিংহপুরুষ মুজাহিদে মিল্লাত শামসুল উলামা হযরত আল্লামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) রাজপথে নেমে আসেন। আপাদমস্তক আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিবেদিত ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এই মহান বীর মাদরাসা শিক্ষার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানীর ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের আহবান জানান।
সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় এক বিশাল গাড়িবহর নিয়ে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করেন। হযরত ছাহেব কিবলাহ (র.) এর নির্দেশে ও বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি ছাহেবজাদা হযরত আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরীর নেতৃত্বে কর্মসূচি বাস্তবায়নে তালামীযে ইসলামিয়ার কর্মীরা জীবন বাজি রেখে ময়দানে কাজ করে।
এই আন্দোলনেরই ফলশ্রুতিতে মাদরাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ধারাবাহিকভাবে স্বতন্ত্র ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইসলামী তাহযিব তামাদ্দুন ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অত্যন্ত তৎপর, সুশৃংখল ও আদর্শবাদী সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া যে সকল আন্দোলন সংগ্রামে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে উক্ত নিবন্ধে তার মধ্য থেকে দৃষ্টান্তস্বরূপ দু’টো ঘটনা উল্লেখ করা হলো। ১৮ ফেব্রুয়ারি তালামীযে ইসলামিয়ার ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনের সাবেক-বর্তমান নেতৃবৃন্দ কর্মী ও শুভাকাঙ্খী যারা জীবিত আছেন সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, যারা কবরবাসী হয়েছেন আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করছি।

ফেইসবুকে আমরা...