1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
শ্রমের মর্যাদায় ইসলাম
মাহফুজ আল মাদানী
  • ১ মে, ২০২১

মানুষের জীবনের উন্নতির উচ্চশিখরে আরোহণ করার মূল হচ্ছে তার পেশা ও কর্মদক্ষতা। মানব জাতির অস্তিত্ব, প্রগতি, সভ্যতা ও উন্নয়ন সবকিছুর মূলে রয়েছে শ্রম। এটাই জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায়। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি মানুষকে শ্রম নির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা আল বালাদ, আয়াত-০৪)
যে যত বেশি পরিশ্রমী, সে তত বেশী সফলকাম। তা যেকোনো পর্যায়ের শ্রম হোক না কেন। শিক্ষার্থী পরিশ্রমী হলে তার ফলাফল হয় সেরা। একজন কৃষক তার কৃষি কাজে সময়মতো শ্রম প্রয়োগ করলে সেও লাভবান হয়। তেমনিভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যে যত শ্রম ব্যয় করবে সে তত সফল হবে। এজন্যই তো বলা হয়, ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’।
মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায় হচ্ছে শ্রম। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর এই যে মানুষ তা-ই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে; অতঃপর তাকে দেওয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান’ (সূরা নাজম, আয়াত-৩৯, ৪১)। তাছাড়া মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাকে ইবাদত বন্দেগি শেষে জমিনে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কাজ তথা শ্রম ব্যয় করার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন নামায সমাপ্ত হয়, তখন তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) জমিনে ছড়িয়ে পড়ো’ (সূরা জুমুআ, আয়াত-১০)। আল্লাহ এই আদেশ প্রদান করেছেন বান্দাহ যাতে হালালভাবে রিজিক অন্বেষণ করে এবং হালাল তথা পবিত্র রিজিক হতে পানাহার করে। হালাল রিজিক অর্জনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৬৮)। হাদীস শরীফেও এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসীর (র.) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সা’দ (রা.) কে বলেছেন, ‘হে সা’দ! তোমার খাদ্য হালাল বানাও, তাহলে মুস্তাজাবুত দাওয়াত হতে পারবে’। আমাদের পানাহার হালাল হলে সমাজে বিরাজ করবে জান্নাতী পরিবেশ। আমাদের সকলের আদর্শ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল উপার্জন করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করেছেন। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফরয ইবাদত আদায়ের পর হালাল রুজি উপার্জন করা ফরয’ (বায়হাকী)। আমাদের উচিত প্রিয় নবীর আদর্শ অনুকরণের মাধ্যমে হালাল বা বৈধ উপায়ে রিযিক অন্বেষণ করে সমাজকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা। যা হবে আমাদের বসবাস উপযোগী। হালাল উপার্জনের পাশাপাশি হারাম অর্জন থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হারাম উপার্জনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মন্দ কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘আর আপনি তাদের অনেককে দেখবেন যে, দৌড়ে দৌড়ে পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং হারাম ভক্ষণে পতিত হয়। তারা অত্যন্ত মন্দ কাজ করছে’ (সূরা মায়িদা, আয়াত-৬২)। হারাম উপায়ে উপার্জন এবং তা হতে ভক্ষণ অবশ্যই মন্দ এবং ঘৃণিত কাজ।
এতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, উপার্জন তথা শ্রম ব্যয় নিঃসন্দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এজন্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের শ্রমে অর্জিত উপার্জনকে উত্তম বলে আখ্যা প্রদান করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘কারও জন্য নিজ হাতের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য বা খাদ্য আর নেই। আল্লাহর নবী হযরত দাঊদ (আ.) নিজ হাতের কামাই খেতেন’ (বুখারী ও মিশকাত)। আমাদের প্রিয় নবীও নিজে শ্রম দিয়ে কাজ করেছেন। হাদীস শরীফের ভাষ্যানুযায়ী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ দুনিয়াতে এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি ছাগল ও ভেড়া চরাননি। তখন সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনিও? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ! আমিও কয়েক কীরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল ও ভেড়া চরাতাম। (বুখারী, হাদীস নং ১৩৪০)
ইসলামী বিধানে শ্রমিক, চাষী এবং অন্যান্য শ্রমজীবীকে কেউ বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে পারবে না। ন্যায়সঙ্গত যথার্থ পারিশ্রমিক তাদের দিতেই হবে। তাই ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে শ্রমিকের কাজের ফল বা মজুরি কিংবা পারিশ্রমিক যথাযথ দেওয়া এবং কোন রকম যুলম-অন্যায়, নিপীড়ন, শোষণ বা বঞ্চনার প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কাজ অনুযায়ী, এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কর্মেও পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না’ (সূরা আহকাফ, আয়াত-১৯)। হাদীস শরীফে কাজের মজুরি প্রদানের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও’। পাশাপাশি মানুষের শ্রম করার অধিকার অত্যন্ত পবিত্র ঈমানী দায়িত্ব এবং এ অধিকার নারী-পুরুষের জন্য সর্বতোভাবে সমান মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত। নিজের পছন্দমতো বৈধ ও আইনসম্মত যে কোনো পন্থায় শ্রম করা প্রতিটি মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা সহকারে মর্যাদাসম্পন্ন অধিকার। প্রত্যেকেই তার শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুসারে মজুরি পাওয়ার অধিকার রাখে। কেউ অতিরিক্ত বা অতি উত্তম কাজ করলে তারও মজুরি বা সেজন্য ঘোষিত পুরস্কার পাওয়ার অধিকারও অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে’। (সূরা যিলযাল, আয়াত-৭,৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিককে মজুরি দান করার পরও তাকে লাভের অংশ দেওয়ার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘কর্মচারীদের তাদের কাজের লভ্যাংশ দাও। কেননা আল্লাহর শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যায় না’ (মুসনাদে আহমদ)। মজুরি না দেওয়া বা কাজ অনুপাতে মজুরি কম দেওয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ কিয়ামতের দিন অসন্তুষ্ট হবেন। তাদের একজন হচ্ছে যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিক নিযুক্ত করে তার দ্বারা পূর্ণ কাজ করিয়ে নেয়ার পর তার মজুরি দেয়নি’ (বুখারী)। ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা শ্রমের সঠিক মর্যাদা এবং শ্রমিকের সঠিক মূল্যায়ন করেছে।

ফেইসবুকে আমরা...