Logo
ইসলামী শরীআহ মুতাবিক কাদেরকে বিবাহ করা জায়িয, আর কাদেরকে বিবাহ করা নাজায়িয?
জবাবদাতা: মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ১০ নভেম্বর, ২০২৫

মো. আব্দুর রহমান রোমান
গিয়াসনগর, মৌলভীবাজার
প্রশ্ন: ইসলামী শরীআহ মুতাবিক কাদেরকে বিবাহ করা জায়িয, আর কাদেরকে বিবাহ করা না জায়িয, জানালে উপকৃত হবো।

জবাব: ইসলামী শরীআতে যেকোনো পুরুষের জন্য ১৪ নারীকে বিবাহ করা হারাম, তদ্রুপ যেকোনো নারীর জন্য ১৪ জন পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ানো হারাম। উক্ত ১৪ জনকে ইসলামী শরীআতে মাহরাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যাদের পরস্পরের দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়িয এবং তাদের মধ্যে পর্দা করার প্রয়োজন নেই।
পুরুষের মাহরাম ১৪ জন হলেন-
১. মা ২. ফুফু (বাবার বোন) ৩. খালা (মায়ের বোন) ৪. শাশুড়ি (স্ত্রীর মা ) ৫. দুধ মা (ছোট বেলায় যে মায়ের দুধ পান করা হয়েছে) ৬. নিজের বোন ৭. নানি (মায়ের মা) ৮. দাদি (বাবার মা) ৯. নাতনি (আপন ছেলে ও মেয়ের কন্যা) ১০. দুধ বোন ১১. মেয়ে ১২. ভাতিজি (আপন ভাইয়ের মেয়ে) ১৩. ভাগনি (আপন বোনের মেয়ে) ১৪. ছেলের বউ।
উক্ত ১৪ জন ছাড়াও একজন পুরুষের জন্য আরও কয়েক শ্রেণির নারীর সঙ্গে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া হারাম। তারা হলেন-
১. একসঙ্গে চারজনের অধিক নারীকে বিয়ে করা হারাম।
২. ঘনিষ্ঠতম দুই নারীকে একসঙ্গে বিয়ে করা হারাম। অর্থাৎ, এমন দুইজন দুধ সম্পর্কীয় বা বংশ সম্পর্কীয় নারীকে একসঙ্গে বিয়ে করা, যাদের একজনকে পুরুষ ধরা হলে অন্যজনের সঙ্গে তার বিয়ে বৈধ হবে না। যেমন- ফুফু-ভাতিজি ও আপন দুই বোনকে একসঙ্গে বিয়ে করা হারাম।
কারণ, এদের মধ্যে ফুফুকে যদি চাচা মনে করা হয় তাহলে চাচার সঙ্গে ভাতিজির বিয়ে হারাম, আবার ভাতিজিকে যদি ভাতিজা মনে করা হয়, তাহলে ফুফুর সঙ্গে ভাতিজার বিয়ে বৈধ নয় অথবা দুই বোনের মধ্যে কোনও একজনকে ভাই মনে করা হলে ভাইয়ের জন্য বোনকে বিয়ে করা হারাম।
৩. স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার পর কোনো ক্রীতদাসীকে বিয়ে করা বৈধ হবে না।
৪. অন্য পুরুষের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যুর পর নারীর ইদ্দতের সময় অতিবাহিত হওয়ার আগে তাকে বিয়ে করা বৈধ হবে না।
৫. মুসলিম পুরুষের জন্য অমুসলিম নারীকে বিয়ে করা হারাম।
৬. কোনও নারীর জন্য নিজের গোলাম বা দাসকে বিয়ে করা হারাম।
৭. স্বামীর জন্য নিজের তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে বিয়ে করা হারাম। তবে অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তালাক পাওয়া কিংবা স্বামী মারা গেলে প্রথম স্বামী আবারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
৮. যে নারীর সঙ্গে যিনা করা হয়েছে বা যৌন উত্তেজনার সঙ্গে যে নারীকে স্পর্শ বা চুমু দেওয়া হয়েছে- এমন নারীর মেয়ে, নাতনি বা মা, নানিকে বিয়ে করা হারাম।
এ সম্পর্কে আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়্যাহ কিতাবে লিখেছেন-
الْقِسْمُ الْأَوَّلُ الْمُحَرَّمَاتُ بِالنَّسَبِ. وَهُنَّ الْأُمَّهَاتُ وَالْبَنَاتُ وَالْأَخَوَاتُ وَالْعَمَّاتُ وَالْخَالَاتُ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ فَهُنَّ مُحَرَّمَاتٌ نِكَاحًا وَوَطْئًا وَدَوَاعِيَهُ عَلَى التَّأْبِيدِ فَالْأُمَّهَاتُ: أُمُّ الرَّجُلِ وَجَدَّاتُهُ مِنْ قِبَلِ أَبِيهِ وَأُمِّهِ وَإِنْ عَلَوْنَ وَأَمَّا الْبَنَاتُ فَبِنْتُهُ الصُّلْبِيَّةُ وَبَنَاتُ ابْنِهِ وَبِنْتُهُ وَإِنْ سَفَلْنَ وَأَمَّا الْأَخَوَاتُ فَالْأُخْتُ لِأَبٍ وَأُمٍّ وَالْأُخْتُ لِأُمٍّ وَكَذَا بَنَاتُ الْأَخِ وَالْأُخْتِ وَإِنْ سَفَلْنَ، وَأَمَّا الْعَمَّاتُ فَثَلَاثٌ عَمَّةٌ لِأَبٍ وَأُمٍّ وَعَمَّةٌ لِأَبٍ وَعَمَّةٌ لِأُمٍّ وَكَذَا عَمَّاتُ أَبِيهِ وَعَمَّاتُ أَجْدَادِهِ وَعَمَّاتُ أُمِّهِ وَعَمَّاتُ جَدَّاتِهِ وَإِنْ عَلَوْنَ وَأَمَّا عَمَّةُ الْعَمَّةِ فَإِنَّهُ يُنْظَرُ إنْ كَانَتْ الْعَمَّةُ الْقُرْبَى عَمَّةً لِأَبٍ وَأُمٍّ أَوْ لِأَبٍ فَعَمَّةُ الْعَمَّةِ حَرَامٌ وَإِنْ كَانَتْ الْقُرْبَى عَمَّةً لِأُمٍّ فَعَمَّةُ الْعَمَّةِ لَا تَحْرُمُ وَأَمَّا الْخَالَاتُ فَخَالَتُهُ لِأَبٍ وَأُمٍّ وَخَالَتُهُ لِأَبٍ وَخَالَتُهُ لِأُمٍّ وَخَالَاتُ آبَائِهِ وَأُمَّهَاتِهِ وَأَمَّا خَالَةُ الْخَالَةِ فَإِنْ كَانَتْ الْخَالَةُ الْقُرْبَى خَالَةً لِأَبٍ وَأُمٍّ أَوْ لِأُمٍّ فَخَالَتُهَا تَحْرُمُ عَلَيْهِ وَإِنْ كَانَتْ الْقُرْبَى خَالَةً لِأَبٍ فَخَالَتُهَا لَا تَحْرُمُ عَلَيْه
الْقِسْمُ الثَّانِي الْمُحَرَّمَاتُ بِالصِّهْرِيَّةِ. وَهِيَ أَرْبَعُ فِرَقٍ: (الْأُولَى) أُمَّهَاتُ الزَّوْجَاتِ وَجَدَّاتُهُنَّ مِنْ قِبَلِ الْأَبِ وَالْأُمِّ وَإِنْ عَلَوْنَ (وَالثَّانِيَةُ) بَنَاتُ الزَّوْجَةِ وَبَنَاتُ أَوْلَادِهَا وَإِنْ سَفَلْنَ بِشَرْطِ الدُّخُولِ بِالْأُمِّ، كَذَا فِي الْحَاوِي الْقُدْسِيِّ سَوَاءٌ كَانَتْ الِابْنَةُ فِي حِجْرِهِ أَوْ لَمْ تَكُنْ، كَذَا فِي شَرْحِ الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِقَاضِي خَانْ. وَأَصْحَابُنَا مَا أَقَامُوا الْخَلْوَةَ مَقَامَ الْوَطْءِ فِي حُرْمَةِ الْبَنَاتِ هَكَذَا فِي الذَّخِيرَةِ فِي نَوْعِ مَا يُسْتَحَقُّ بِهِ جَمِيعُ الْمَهْرِ. (وَالثَّالِثَةُ) حَلِيلَةُ الِابْنِ وَابْنِ الِابْنِ وَابْنِ الْبِنْتِ وَإِنْ سَفَلُوا دَخَلَ بِهَا الِابْنُ أَمْ لَا. وَلَا تَحْرُمُ حَلِيلَةُ الِابْنِ الْمُتَبَنَّى عَلَى الْأَبِ الْمُتَبَنِّي هَكَذَا فِي مُحِيطِ السَّرَخْسِيِّ.
(وَالرَّابِعَةُ) نِسَاءُ الْآبَاءِ وَالْأَجْدَادِ مِنْ جِهَةِ الْأَبِ أَوْ الْأُمِّ وَإِنْ عَلَوْا فَهَؤُلَاءِ مُحَرَّمَاتٌ عَلَى التَّأْبِيدِ نِكَاحًا وَوَطْئًا، كَذَا فِي الْحَاوِي الْقُدْسِيِّ. وَتَثْبُتُ حُرْمَةُ الْمُصَاهَرَةِ بِالنِّكَاحِ الصَّحِيحِ دُونَ الْفَاسِدِ، كَذَا فِي مُحِيطِ السَّرَخْسِيِّ. فَلَوْ تَزَوَّجَهَا نِكَاحًا فَاسِدًا لَا تَحْرُمُ عَلَيْهِ أُمُّهَا بِمُجَرَّدِ الْعَقْدِ بَلْ بِالْوَطْءِ هَكَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ. وَتَثْبُتُ بِالْوَطْءِ حَلَالًا كَانَ أَوْ عَنْ شُبْهَةٍ أَوْ زِنًا، كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ. فَمَنْ زَنَى بِامْرَأَةٍ حَرُمَتْ عَلَيْهِ أُمُّهَا وَإِنْ عَلَتْ وَابْنَتُهَا وَإِنْ سَفْلَتَ، وَكَذَا تَحْرُمُ الْمَزْنِيُّ بِهَا عَلَى آبَاءِ الزَّانِي وَأَجْدَادِهِ وَإِنْ عَلَوْا وَأَبْنَائِهِ وَإِنْ سَفَلُوا، كَذَا فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ.
(আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৩-২৭৪; তাবঈনুল হাকাইক, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০১)

ফেইসবুকে আমরা...