1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
শবে মীলাদের মু’জিযা
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.)
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাইহাকী ও আবূ নুআইমের রিওয়ায়াতে আছে, হযরত হাসসান ইবন সাবিত (রা.) বর্ণনা করেন, আমি সাত-আট বছরের সচেতন বালক ছিলাম। একদিন এক ইয়াহুদী একটি টিলায় আরোহণ করে মদীনার ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে ডাকল। তারা সমবেত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ব্যাপার কি? ইয়াহুদী বলল, আজ রাতে আহমদ জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর নক্ষত্র উদিত হয়ে গেছে।
বাইহাকী, তাবারানী, আবূ নুআইম ও ইবন আসাকির হযরত উসমান ইবন আবুল আস (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন, আমার মা আমাকে বলেছেন যে, যখন আমিনার গৃহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ঘরের চার কোণ নূরের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে গিয়েছিল। তারকারাজি এমনভাবে ঝুঁকে পড়ছিল, মনে হচ্ছিল যেন আমার উপরই আছড়ে পড়বে। তার জন্মের সময় আমিনার শরীর থেকে একটি নূর উদিত হয়ে সমগ্র গৃহকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলে।
আহমদ, বাযযায, তাবারানী, হাকিম, বাইহাকী ও আবূ নুআইম ইরবায ইবন সারিয়া (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি আল্লাহর বান্দা। আমি তখন থেকে খাতামুন্নাবিয়্যীন, যখন আদমের সত্তা মাটি ও পানির মধ্যে ছিল। আমি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দুআ, হযরত ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি দেখেছেন। পয়গাম্বরগণের জননীগণ এরূপ স্বপ্ন দেখে থাকেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জননী তাঁর জন্মের সময় একটি নূর দেখেন, যা দ্বারা সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ চমকে উঠে।
হাকিম ও বাইহাকী খালিদ ইবন মা’দান থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন, তিনি বললেন, আমি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দুআ এবং হযরত ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি দেখেছেন। আমার মা আমি গর্ভে থাকা অবস্থায় স্বপ্ন দেখেছেন যেন তার শরীর থেকে একটি নূর উদিত হয়েছে, যার ফলে শাম দেশের বুসরা ভূখ- আলোকময় হয়ে গেছে। খালিদ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জননী গর্ভাবস্থায় যে নূর দেখেছিলেন, সেটা ছিল স্বপ্ন; কিন্তু জন্মের সময় যে নূর দেখেছিলেন, সেটা ছিল জাগ্রত অবস্থায় বাস্তব ঘটনা। ইবন ইসহাকের রিওয়ায়াতে হযরত আমিনা বর্ণনা করেন যে, গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর কেউ তাঁকে বলল, তোমার গর্ভে এই উম্মতের সরদার রয়েছেন। এর নিদর্শন এই যে, যখন তিনি ভূমিষ্ঠ হবেন, তখন একটি নূর উদিত হবে, যার ফলে শাম দেশের বসরার রাজপ্রাসাদ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এই শিশু জন্মগ্রহণ করলে তার নাম রাখবে মুহাম্মদ।
ইবন সা’দ ও ইবন আসাকির হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, হযরত আমিনা বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গর্ভে ধারণ করার পর তার জন্ম পর্যন্ত আমার কোনো কষ্ট হয়নি। তিনি যখন ভূমিষ্ট হলেন, তখন তাঁর সাথে একটি নূর উদিত হলো, যার ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী সমস্ত ভূপৃষ্ঠ আলোকময় হয়ে গেল। জন্মের সময় তিনি হাত দিয়ে মাটিতে ভর দেন। এক মুষ্টি মাটি নিয়ে হাত বন্ধ করে নেন এবং আকাশ পানে তাকিয়ে থাকেন।
ইবন সা’দ সওর ইবন ইয়াযীদ থেকে, তিনি আবুল আজফা থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি যখন ভূমিষ্ঠ হলাম, তখন আমার জননী আপন শরীর থেকে একটি নূর উদিত হতে দেখলেন, যার ফলে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়ে।
আবূ নুআইম আতা ইবন ইয়াসার থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, হযরত উম্মু সালামাহ (রা.) হযরত আমিনার এই উক্তি উদ্ধৃত করেছেন, যে রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন, আমি একটি নূর উদিত হতে দেখি, যে কারণে সিরিয়ার প্রাসাদ এতটুকু উজ্জ্বল হয়ে যায় যে, আমি তা দেখতে পাই।
ইবন সা’দ আমর ইবন আসিম থেকে, তিনি হুমাম ইবন ইয়াহইয়া থেকে, তিনি ইসহাক ইবন আবদুল্লাহ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জননীর এই বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করলে আমার শরীর থেকে একটি নূর উদিত হয়, যার ফলে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ আলোকময় হয়ে যায়। তিনি সম্পূর্ণ পাক পবিত্র অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ভূমিষ্ঠ হয়েই তিনি মাটিতে হাত রাখেন।
ইবন সা’দ মুআয আম্বরী থেকে, তিনি ইবন আওন থেকে, তিনি ইবনুল কিবতিয়া থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, হযরত আমিনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি আমার শরীর থেকে একটি আলোকপি- উদিত হতে দেখি, যার ফলে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ আলোকোদ্ভাসিত হয়ে উঠে।
ইবন সা’দ হাসসান ইবন আতিয়্যা থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ঠ হয়ে হাতের তালু ও হাঁটু দিয়ে মাটিতে ভর দেন। তাঁর দৃষ্টি আকাশ পানে নিবদ্ধ ছিল।
ইবন সা’দ মূসা ইবন উবায়দা থেকে, তিনি আপন ভাই থেকে রিওয়ায়াত করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ঠ হয়ে হাত দিয়ে মাটিতে ভর দেন। মাথা আকাশ পানে উত্তোলন করেন এবং হাতে এক মুষ্টি মাটি তুলে নেন। বনূ-লাহাবের এক ব্যক্তি এই খবর পেয়ে মন্তব্য করলো, একথা সত্য হলে এই শিশু সমগ্র বিশ্ব করতলগত করে নিবে।
আবূ নুআইম আবদুর রহমান ইবন আউফ থেকে, তিনি তার জননী আশ শিফা বিনতে আমর ইবন আউফের এ মর্মের একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম আমার হাতে হয়েছে। তার মুখম-ল উজ্জ্বল ছিল। আমি কাউকে বলতে শুনলাম, তোমার প্রতি আল্লাহর রহমত, তোমার প্রতি তোমার রবের রহমত। এরপর আমার সামনে পূর্ব ও পশ্চিম আলোকিত হয়ে গেল এবং আমি রোমের কিছু রাজপ্রাসাদ দেখতে পেলাম। এরপর আমি নবজাত শিশুকে কাপড় পরিয়ে শুইয়ে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার উপর তমসা ও ভীতির একটা পর্দা যেন পড়ে গেল এবং শরীরে কম্পন এসে গেল। আমি কাউকে বলতে শুনলাম, তুমি একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? জবাব দেওয়া হলো- পশ্চিম দিকে। এরপর আমার এ অবস্থা কেটে গেল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পুনরায় সে অবস্থা আমাকে আচ্ছন্ন করে নিল ভীতি, অন্ধকার ও কম্পন। আবার কাউকে বলতে শুনলাম, একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? জওয়াব এলো- পূর্ব দিকে। শিফা বিনতে আমর ইবন আউফ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতপ্রাপ্তি পর্যন্ত এই কথাগুলো আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। তিনি যখন নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন, তখন আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম।
আবূ নুআইম আমর ইবন কুতাইবা থেকে, তিনি আপন পিতার কাছ থেকে শুনেছেন যে, হযরত আমিনার সন্তান প্রসবের সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাগণকে আদেশ করলেন, সমস্ত আকাশ ও জান্নাতের দরজা খুলে দাও। সকল ফিরিশতা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হোক। সে মতে ফিরিশতারা একে অপরকে সুসংবাদ দিতে দিতে হাযির হতে লাগল। পৃথিবীর পাহাড়সমূহ উঁচু হয়ে গেল এবং সমুদ্র স্ফীত হয়ে গেল। এসবের অধিবাসীরা একে অপরকে সুসংবাদ দিল। সকলে হাযির হয়ে গেল। শয়তানকে সত্তরটি শিকল পরানো হল এবং তাকে কাস্পিয়ান সাগরে উপুড় করে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। সকল দুষ্ট ও অবাধ্য মাখলুককেও শৃঙ্খলবদ্ধ করে দেওয়া হলো। সূর্যকে সেদিন অসাধারণ আলো প্রদান করা হলো এবং তার প্রান্তে শূন্য পরিম-লে সত্তর হাজার হুরকে দাঁড় করানো হলো যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের অপেক্ষায় ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানার্থে আল্লাহ তাআলা সে বছর পৃথিবীর সকল নারীর জন্য পুত্র সন্তান নির্ধারণ করে দিলেন। এটাও ঠিক করলেন যে, কোনো বৃক্ষ ফলবিহীন থাকবে না এবং যেখানে অশান্তি সেখানে শান্তি স্থাপিত হয়ে যাবে। অতঃপর যখন প্রতীক্ষিত জন্ম হলো, তখন সমস্ত পৃথিবী নূরে ভরে গেল। ফিরিশতারা একে অপরকে মুবারকবাদ দিল। প্রত্যেক আকাশে পদ্মরাগ মণি ও চুনির স্তম্ভ নির্মিত হলো। ফলে আকাশ আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে মিরাজে এসব স্তম্ভ দেখতে পেলে তাঁকে বলা হয় যে, এগুলো আপনার জন্মের সুসংবাদের কারণে নির্মিত হয়েছিল। যে রাতে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম হয়, আল্লাহ তাআলা হাওযে কাওসারের কিনারে সত্তর হাজার মিশক আম্বরের বৃক্ষ সৃষ্টি করেন এবং এসবের ফলকে জান্নাতীদের সুগন্ধি সাব্যস্ত করেন। সে রাতে সকল আকাশের অধিবাসীরা নিরাপত্তার জন্য দুআ করেন। সকল প্রতিমা উপুড় হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। লাত ও উয্যা আপন আপন ধনভা-ার উদগীরণ করে দেয়। তারা বলাবলি করতে থাকে কুরাইশদের মধ্যে আল-আমীন এসেছেন, সিদ্দীক এসেছেন; অথচ কুরাইশরা জানেই না যে, কি হয়ে গেল। বাইতুল্লাহ থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত এই আওয়াজ ভেসে আসতে থাকেÑ এখন পূর্ণচন্দ্র ফিরে এসেছে। এখন আমার যিয়ারতকারীরা আগমন করবে, এখন আমি মূর্খতার আবর্জনা থেকে পাক পবিত্র হয়ে যাব। হে উয্যা! তোর ধ্বংস এসে গেছে। বাইতুল্লাহর ভূকম্পন তিনদিন ও তিন রাতে খতম হলো। এটা ছিল পবিত্র জন্মের প্রথম নিদর্শন, যা কুরাইশরা অবলোকন করলো।
আবূ নুআইম রিওয়ায়াত করেন যে, হযরত ইবন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, গর্ভধারণের নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি এই যে, সে রাতে কুরাইশদের প্রত্যেকটি জন্তু বলল, কা’বার প্রতিপালকের কসম, গর্ভ হয়ে গেছে। তিনিই দুনিয়ার শান্তি এবং দুনিয়াবাসীদের প্রদীপ। সে রাতে কুরাইশদের এবং আরবের সকল গোত্রের অতিন্দ্রীয়বাদী নারীদের সঙ্গিনী জিন আত্মগোপন করে এবং তাদের অতিন্দ্রীয়বাদ বিদ্যা খতম হয়ে যায়। দুনিয়ার সকল বাদশাহের সিংহাসন ভেঙ্গে যায়। সেদিন বাদশাহরা সকলেই বোবা হয়ে যায়। পূর্বের জন্তু-জানোয়াররা পশ্চিমের জন্তু জানোয়ারদের কাছে সুসংবাদ নিয়ে যায়। এভাবে সমুদ্রের প্রাণীরা একে অপরকে সুসংবাদ দেয়। গর্ভের প্রত্যেক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আকাশে এবং পৃথিবীতে ঘোষণা করা হতো- সুসংবাদ! এখন আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণ ও বরকত নিয়ে দুনিয়াতে এসে গেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জননীর উদরে পূর্ণ নয় মাস অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁর জননী পেটে কোনো ব্যথা বা অস্থিরতা অনুভব করেননি। এমন কোনো বিষয়ও হয়নি, যা সাধারণত গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে। মাতৃগর্ভে থাকাকালেই পিতা আবদুল্লাহর ইন্তিকাল হয়ে যায়। এতে ফিরিশতারা বললেন, পরওয়ারদিগার! আপনার এই নবী ইয়াতীম হয়ে গেছেন। পরওয়ারদিগার ইরশাদ করলেন, আমি তার অভিভাবক, রক্ষক ও মদদগার। তোমরা তাঁর জন্ম থেকে বরকত হাসিল কর। তাঁর জন্ম বরকতময়। আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্মের সময় আকাশ ও জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। হযরত আমিনা নিজের সম্পর্কে বলেন, গর্ভের ছয়মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমার কাছে জনৈক আগন্তুক এসে নিদ্রায় আমার পায়ে টোকা দিয়ে বলল, হে আমিনা! তুমি সারাবিশ্বের মনোনীত ব্যক্তিকে গর্ভে ধারণ করেছ। সে জন্মগ্রহণ করলে তার নাম রাখবে মুহাম্মদ। আমিনা নিজের নিফাস সম্পর্কে বলেন, আমারও তাই হয়েছে যা মহিলাদের হয়। কিন্তু কেউ জানতে পারেনি। এরপর আমি ভীষণ গড়গড় শব্দ শুনতে পাই এবং ভীত হয়ে পড়ি। দেখি কি যেন কোন সাদা পাখির পাখা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছে। ফলে সমস্ত ভয় ও কষ্ট দূর হয়ে গেল। এরপর দেখি, সাদা দুধে পূর্ণ একটি পেয়ালা রাখা আছে। আমি পিপাসার্ত ছিলাম। তাই পাত্র তুলে পান করে নিলাম। এরপর আমার শরীর থেকে একটি নূর উদিত হলো। তখন কয়েকজন মহিলা দৃষ্টিগোচর হলো। তাঁরা খেজুর গাছের মতো দীর্ঘ ছিলেন। মনে হচ্ছিল তাঁরা আবদে মানাফ পরিবারের কন্যা। তাঁরা আমাকে গভীরভাবে দেখতে লাগলেন। আমি হতভম্বই ছিলাম, এমন সময় একটি কিংখাব (ফুলকাটা জরিদার রেশমী বস্ত্র) আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে ছড়িয়ে পড়ল। কেউ বলল, তাকে মানুষের দৃষ্টি থেকে উধাও করে নাও। এরপর কিছু লোক দেখলাম, তারা শূন্য ম-লে রূপার লোটা হাতে দ-ায়মান ছিল। এরপর পাখিদের একটি ঝাঁক এলো এবং আমার কোল আবৃত করে নিলো। তাদের চঞ্চু পান্নার এবং পাখা চুনির ছিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমার সামনে পূর্ব ও পশ্চিম উন্মুক্ত করে দিলেন। আমি তিনটি ঝা-া উড্ডীয়মান দেখলাম। একটি পূর্বে, একটি পশ্চিমে ও একটি কা’বা গৃহের ছাদে। এরপর আমার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলো এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করলেন। তিনি যখন বাইরে এলেন, তখন আমি তাঁকে সিজদারত দেখলাম। তিনি অনুনয় সহকারে আঙ্গুলি উত্তোলিত রেখেছিলেন। এরপর আকাশে একটি সাদা মেঘ এসে আকাশকে আচ্ছন্ন করে নিল। অতঃপর অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি একজনকে বলতে শুনলাম মুহাম্মদকে পূর্ব ও পশ্চিমে নিয়ে যাও এবং সমুদ্রে নিয়ে যাও। যাতে মানুষ তাঁর নাম, আকৃতি ও গুণাবলি সম্পর্কে ওয়াকিফ হয়ে যায় এবং তারা জানতে পারে যে, তাঁর নাম “মাহী”। তাঁর আমলে শিরক মেটে যাবে। এর পরক্ষণেই আমি তাকে একটি সাদা পশমী কাপড়ে জড়িত দেখলাম। নীচে ছিল সবুজ রেশম। তিনি যেন বহু মূল্যবান ধাতু নির্মিত তিনটি চাবি হাতের মুঠিতে ধারণ করে রেখেছেন। আওয়াজ এলো, মুহাম্মদ নবুওয়াতের চাবি গ্রহণ করেছেন। এরপর একটি মেঘখ- এলো, যার মধ্য থেকে অশ্বের হ্রেষার এবং পাখা নাড়ানোর শব্দ ভেসে আসছিল। অবশেষে সেটি আচ্ছন্ন হয়ে গেল। অতঃপর অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর কেউ ডেকে বলল, মুহাম্মদকে পূর্ব ও পশ্চিমে নিয়ে যাও, পয়গাম্বরগণের জন্মভূমিতে নিয়ে যাও। জিন, মানব, পশুপক্ষী এবং হিং¯্র প্রাণীদের কাছে নিয়ে যাও। তাঁকে আদম (আ.) এর পরিচ্ছন্নতা, নূহ (আ.) এর ন¤্রতা, ইবরাহীম (আ.) এর বন্ধুত্ব, ইসমাঈল (আ.) এর ভাষা, ইয়াকুব (আ.) এর মুখম-ল, ইউসুফ (আ.) এর রূপ, দাউদ (আ.) এর কণ্ঠস্বর, আইয়ুব (আ.) এর সবর, ইয়াইয়া (আ.) এর বৈরাগ্য এবং ঈসা (আ.) এর কৃপা দান করো। তাকে সকল পয়গাম্বরের চরিত্রের নমুনা করে দাও। এরপর এই অবস্থাও দূর হয়ে গেল। এরপর আমি আমার শিশুর হাতে সবুজ রেশমী বস্ত্র জড়িত দেখলাম। কেউ বলল মুহাম্মদ সারা বিশ্ব দখল করে নিয়েছে। সৃষ্টির প্রতিটি বস্তু তার মুঠিতে চলে গেছে। এরপর তিন ব্যক্তি এলো। তাদের একজনের হাতে রূপার লোটা, অপর জনের হাতে সবুজ পান্নার ক্ষুদ্র প্লেট এবং তৃতীয় জনের হাতে সাদা রেশম রয়েছে। সেটি খুলে সে একটি মনোমুগ্ধকর আংটি বের করল। লোটার পানি দিয়ে আংটিটি সাতবার ধৌত করে সেটি দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই কাঁধের মধ্যস্থলে মোহর করে দিল। অতঃপর কিছুক্ষণ আপন পাখায় আবৃত রেখে আমাকে ফিরিয়ে দিল।
আবূ নুআইম দুর্বল সনদে রিওয়ায়াত করেন যে, হযরত আব্বাস (রা.) বলেছেন, আমাদের ছোটভাই আবদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করলে তাঁর মুখম-লে নূর সূর্যের মতো ঝলমল করতো। আমাদের পিতা বললেন, এই শিশুর অদ্ভুত অবস্থা। আমি স্বপ্নে দেখলাম তার নাসিকা থেকে একটি সাদা পাখি বের হয়ে উড়ে গেল এবং পূর্ব ও পশ্চিম ঘুরে কাবাগৃহের উপর পতিত হলো। সমগ্র কুরাইশ গোষ্ঠি তাকে সিজদা করল। অতঃপর পাখিটি আবার আকাশে উড়ে গেল। আমি বনূ-মাখযূমের অতিন্দ্রীয়বাদিনীর কাছে গেলে সে বলল, তোমার এ স্বপ্ন সত্য হলে তোমার ঔরস থেকে এক পুত্র জন্মগ্রহণ করবে। পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসীরা তাঁর অনুসারী হয়ে যাবে।
অতঃপর আমিনা সন্তান প্রসব করলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি দেখেছ? সে বলল, আমার প্রসব ব্যথা শুরু হলে আমি গড়গড় আওয়াজ এবং কিছু মানুষের কথা বলার শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি ইয়াকূতের খুঁটিতে কিংখাবের ঝা-া আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে স্থাপিত দেখলাম। আমি শিশুর মাথা থেকে একটি নূর উদিত হতে দেখলাম, যা আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেল। এর আলোকে আমি সিরিয়ার প্রাসাদকে স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলতে দেখলাম। এরপর আমি নিকটেই পাখির একটি ঝাঁক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাখা বিস্তার করে সিজদা করতে দেখলাম। আমি সায়ীরা আসাদীর জিনকে বলতে শুনলাম, তোমার এই পুত্রের জন্মের কারণে প্রতিমা ও অতিন্দ্রীয়বাদীদের ধ্বংস হয়ে গেছে। সায়ীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। এরপর আমি একজন দীর্ঘদেহী সুশ্রী যুবককে দেখলাম। সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার কোল থেকে নিয়ে গেল এবং তার মুখে থুথু দিল। তার কাছে স্বর্ণের একটি প্লেট ছিল। সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বুক চিরে হৃদপি- বের করল। অতঃপর হৃদপি-টি চিরে একটি কালো বিন্দু বের করে দূরে নিক্ষেপ করল। প্লেটে সাদা রঙের সুগন্ধি ছিল। তা হৃদপি-ে ভরে দেওয়া হলো। এরপর একটি সাদা রেশমী থলে থেকে একটি আংটি বের করল এবং তার সাহায্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই কাঁধের মধ্যভাগে মোহর এঁটে দিল। অতঃপর তাকে জামা পরিয়ে দিল।
হাফিয আবূ যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন মায়িয মীলাদ প্রসঙ্গে হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, হযরত আমিনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম দিবসের আশ্চর্য ঘটনাবলি বর্ণনায় বলেন, আমি সেদিনের ঘটনাবলিতে বিস্ময়াবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় তিন ব্যক্তি আগমন করল। তাদের সৌন্দর্য দেখে মনে হচ্ছিল সূর্য যেন তাদের মুখম-ল থেকে উদিত হচ্ছে। একজনের হাতে রূপার লোটা ছিল, যা থেকে মেশকের খুশবু ভেসে আসছিল। দ্বিতীয় জনের হাতে পান্নার চতুষ্কোণ প্লেট ছিল। প্রত্যেক কোণে একটি সাদা মোতি জড়ানো ছিল। কেউ বলল, এটা সারা বিশ্ব-পূর্ব পশ্চিম, জল ও স্থল। হে আল্লাহর হাবীব! এটি ধারণ করুন যেদিক দিয়ে ইচ্ছা, একথা শুনে আমিও ঘুরে গেলাম এটা দেখার জন্যে যে, তিনি কোনদিকে ধরেন। তিনি মাঝখানে ধরলেন। আওয়াজ এলো কা’বার কসম, মুহাম্মদ কা’বা ধারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্যে কা’বাকে কিবলাহ ও বাসস্থান করে দিয়েছেন। আমি দেখলাম তৃতীয় জনের হাতে খুব উত্তমরূপে ভাঁজ করা একটি সাদা রেশমী বস্ত্র রয়েছে। সে কাপড়টি খুলল এবং তার ভিতর থেকে একটি সুশ্রী আংটি বের করল। এরপর আমার দিকে অগ্রসর হলো। প্লেটওয়ালা ব্যক্তি আংটিটি নিয়ে সাতবার লোটার পানি দ্বারা ধৌত করল। এরপর সেটি দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই কাঁধের মাঝখানে মোহর এঁকে দিল। অতঃপর সেটি রেশমে ভাজ করে তাতে মেশকের সূতা বেঁধে দিল। অতঃপর সেটি কিছুক্ষণ আপন পাখায় রেখে দিল। (ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, এই ব্যক্তি ছিল জান্নাতের রক্ষী রিদওয়ান।) সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কানে কিছু কথা বলল, যা আমি বুঝতে পারিনি। অতঃপর সে বলল, হে মুহাম্মদ! আপনাকে সুসংবাদ। প্রত্যেক নবীর জ্ঞান আমি আপনাকে দিয়েছিলাম। আপনি তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানবান এবং সর্বাধিক বীরপুরুষ। আপনার কাছে সাফল্যের চাবি রয়েছে। আপনাকে প্রখর ব্যক্তিত্ব ও জাকজমক দান করা হয়েছে। হে আল্লাহর খলীফা! যে কেউ আপনার নাম শুনবে, আপনাকে না দেখেই তার অন্তর কেঁপে উঠবে। ইবন ওয়াহিদ ‘তানভীর’ গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসটি অজ্ঞাত।
ইবন সা’দ, হাকিম, বাইহাকী ও আবূ নুআইম হযরত আয়িশা (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহুদী মক্কায় বাস করত এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করত। মীলাদের রাত্রিতে সে কুরাইশদের মজলিসে এসে বলল, হে কুরাইশগণ! আজ রাতে তোমাদের মধ্যে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কি? তারা বলল, আমাদের জানা নেই। সে বলল, মনে রেখ, এ রাতে আখিরী উম্মতের নবী জন্মগ্রহণ করেছেন। তার কাঁধের মাঝখানে চিহ্ন আছে, যাতে কিছু চুল রয়েছে। এই শিশু দুদিন দুধ পান করবে না। কেননা, কোনো জিন তার মুখে অঙ্গুলি রেখেছে। কুরাইশরা বিস্ময় সহকারে মজলিস ত্যাগ করল। আপন আপন গৃহে পৌঁছে তারা গৃহের লোকজনকেও একথা বলল। তারা বলল, আবদুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিবের পুত্র সন্তান হয়েছে। তারা তার নাম রেখেছে মুহাম্মদ। অতঃপর কুরাইশরা ইয়াহুদীর কাছে পৌঁছে এ সংবাদ জানিয়ে দিল। সে বলল, আমাকে নিয়ে চল। আমি এই শিশুকে দেখতে চাই। সে মতে তারা ইয়াহুদীকে হযরত আমিনার কাছে নিয়ে গেল এবং শিশুকে দেখাতে বলল। হযরত আমিনা দেখালেন। তারা তাঁর পিঠ খুলে সেখানে একটি তিলের ন্যায় চিহ্ন দেখতে পেল। এটা দেখে ইয়াহুদী সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলল। কিছুক্ষণ পর সংজ্ঞা ফিরে এলে কুরাইশরা জিজ্ঞাসা করল? তোমার কি হয়েছিল? সে বলল, বনী ইসরাঈল থেকে নবুওয়াত খতম হয়ে গেছে। তোমাদের এতে আনন্দিত হওয়া উচিত। আল্লাহর কসম! সে তোমাদের উপর এমন বিজয় অর্জন করবে যে, তার খবর পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
বাইহাকী ও ইবন আসাকির আবুল হাকাম তানূখী থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, কুরাইশদের মধ্যে কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে হাঁড়ি দেওয়ার জন্যে মহিলাদের হাতে সোপর্দ করা হতো। তারা শিশুকে সকাল পর্যন্ত হাঁড়ির নিচে রাখত। সে মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ঠ হলে আবদুল মুত্তালিব তাঁকে মহিলাদের কাছে সোপর্দ করলেন। সকালে এসে তারা দেখল যে, হাঁড়ি দ্বিখ-িত হয়ে গেছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় চক্ষু মেলে আকাশ পানে তাকিয়ে আছেন। মহিলারা আবদুল মুত্তালিবের কাছে এসে বলল, আমরা এমন শিশু কখনও দেখিনি। তার উপরে হাঁড়ি ভেঙ্গে গেছে এবং আমরা তাঁকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি। আবদুল মুত্তালিব বললেন, তাকে হিফাযত কর। আমি মঙ্গলই আশা করি। সপ্তম দিনে আবদুল মুত্তালিব জন্তু যবেহ করলেন এবং কুরাইশদেরকে দাওয়াত করলেন। আহার শেষে সকলেই জিজ্ঞাসা করল, আবদুল মুত্তালিব! শিশুর কি নাম রেখেছেন? তিনি বললেন, নাম রেখেছি মুহাম্মদ। তারা বলল, এমন নাম রাখার কারণ কি? আবদুল মুত্তালিব বললেন, আমি চাই যে, আকাশে আল্লাহ তাআলা এবং পৃথিবীতে মানবজাতি তার প্রশংসা করুক।
আবূ নুআইম ও ইবন আসাকির মুসাইয়িব ইবন শরীফ থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবন শরীফ থেকে, তিনি আমর ইবন শরীফ থেকে, তিনি আপন পিতা থেকে, তিনি আপন দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, মাররুয-যাহরানে ঈসা নামক এক সিরীয় সন্ন্যাসী বাস করত। সে ছিল বিজ্ঞ আলিম। অধিকাংশ সময় গির্জার ভিতরেই অবস্থান করতো। মাঝে মাঝে মক্কায় এলে মানুষ তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যেত। তখন সে বলত তোমাদের মধ্যে এক শিশু জন্মগ্রহণ করবে। তার সামনে সমগ্র আরব মাথা নত করবে এবং সে অনারবেরও মালিক হয়ে যাবে। এটাই তার আগমনের সময়। যে তাঁর সময় পাবে এবং তাঁর অনুসরণ করবে, সে সফলকাম হবে। আর যে তার বিরোধিতা করবে, সে ব্যর্থ মনোরথ হবে। আল্লাহর কসম! আমি রুটি ও শরাবের দেশ এবং শান্তির জায়গা ছেড়ে এই অভাব-অনটন ও ভয়ভীতির স্থানে তাঁরই অন্বেষণে এসেছি। উক্ত সন্ন্যাসী মক্কার প্রতিটি নবজাত শিশু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করত এবং বলত এখনও আসেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের সকালে আবদুল মুত্তালিব ‘ঈসা’ সন্ন্যাসীর দ্বারে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দিলেন। সে প্রশ্ন করল, কে? উত্তর হলো- আমি, আবদুল মুত্তালিব। সন্ন্যাসী তাঁর কাছে এসে বলল, সম্ভবত তুমিই তার বাপ। আজ সেই শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যার সম্পর্কে আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, সে সোমবারে জন্মগ্রহণ করবে, নবুওয়াত প্রাপ্ত হবে এবং সোমবারে ওফাত পাবে। তাঁর নক্ষত্র গত সন্ধ্যায় উদিত হয়ে গেছে। এর চিহ্ন এই যে, এখন তার ব্যথা আছে। এই ব্যথা তিনদিন থাকবে। তুমি মুখ বন্ধ রাখবে। কেননা, এতটুকু হিংসা কারও সাথে করা হয়নি, যা তার সাথে করা হবে এবং এতটুকু শত্রুতা কারও সাথে করা হয়নি, যা তার সাথে করা হবে। আবদুল মুত্তালিব জিজ্ঞাসা করলেন, সে কতটুকু বয়স পাবে? সন্ন্যাসী বলল, কম হোক কিংবা বেশি তবে সত্তর বছর হবে না; বরং এরকম কোনো বেজোড় সংখ্যায় হবে একষট্টি কিংবা তেষট্টি। তার উম্মতের লোকদেরও এরূপ বয়ঃক্রম।
আবূ নুআইম হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, জাহেলিয়াত যুগে রাতের বেলায় কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে হাঁড়ির নীচে রেখে দেওয়া হতো এবং সকাল পর্যন্ত কেউ তাকে দেখতো না। জন্মের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও হাঁড়ির নীচে রেখে দেওয়া হয়। সকালে দেখা গেল, হাঁড়ি দ্বিখ-িত হয়ে পড়ে আছে এবং তার চক্ষু আকাশের দিকে উত্থিত। এতে সকলেই আশ্চর্যান্বিত হলো। এরপর তাঁকে দুধ পান করানোর জন্য বনূ বকরের এক মহিলার হাতে সোপর্দ করা হলো। সে তাকে দুধ পান করালে তার সংসারে চতুর্দিক থেকে কল্যাণ ও বরকত আসতে লাগল। তার কাছে গুটিকতক ছাগল ছিল। আল্লাহ তাতে বরকত দিলেন এবং ছাগলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল।
আবূ নুআইম দাউদ ইবন আবী হিন্দ থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করলে নবুওয়াতের নূরে টিলাসমূহ উজ্জ্বল হয়ে যায়, তিনি হাত দিয়ে মাটিতে ভর দেন এবং চক্ষুদ্বয় উন্মুক্ত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যখন তাঁকে বড় হাঁড়ি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় তখন হাঁড়ি দুটুকরা হয়ে যায়।
ইবন সা’দ হযরত ইকরিমা (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করলে তাঁর জননী তাঁর উপর হাঁড়ি রেখে দেন, যা ভেঙ্গে যায়। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁকে দেখলাম, তখন তার চক্ষুদ্বয় উন্মুক্ত ছিল এবং তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
ইবন আবী হাতিম ইকরিমা থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, পবিত্র জন্মের সময় ভূপৃষ্ঠ নূরে উজ্জ্বল হয়ে যায়। ইবলীস বলল, আজ এমন এক শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে যে আমাদের কাজ কারবার প- করে দিবে। ইবলীসের এক সহচর বলল, তুমি যাও এবং তার জ্ঞান-বুদ্ধি নষ্ট করে দাও। সে মতে ইবলীস এলো কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে পৌঁছলো, তখন হযরত জিবরাঈল (আ.) তাকে সজোরে লাথি মারলেন। ফলে সে আদনে গিয়ে পতিত হলো।
যুবাইর ইবন বাক্কার ও ইবন আসাকির মারুফ ইবন খানূস থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবলীস সপ্ত আকাশ প্রদক্ষিণ করত। কিন্তু যখন হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করলেন, তখন তিন আকাশেও প্রবেশাধিকার রহিত হয়ে গেল। এরপর যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করলেন, তখনও তার জন্যে সাত আকাশের দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হলো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিন প্রত্যুষে জন্মগ্রহণ করেন।
বাইহাকী, আবূ নুআইম, খারায়েতী ও ইবন আসাকির আবূ ইয়ালা ইবন ইমরান বাজালী থেকে, তিনি মখম ইবন সানী থেকে এবং তিনি নিজের পিতা থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের রাত্রিতে পারস্য রাজের প্রাসাদে ভূকম্পন হয়। ফলে চৌদ্দটি গম্বুজ ভূমিসাৎ হয়ে যায়। পারস্যের মহা অগ্নিকু- নির্বাপিত হয়ে যায়, যা এক হাজার বছর ধরে অনির্বাণ ছিল। সারা হ্রদ শুকিয়ে যায়। ভোরবেলায় পারস্য রাজ আতঙ্কিত হয়ে গেলেন। তিনি ভাবলেন, এ বিষয়টি উযীরদের কাছে গোপন রাখা ঠিক হবে না। সে মতে তিনি মুকুট পরিধান করে সিংহাসনে বসলেন। সকলকে একত্রিত করে পরিস্থিতি বর্ণনা করলেন। এমনি মুহূর্তে সংবাদ এল যে, অগ্নিকু- নির্বাপিত হয়ে গেছে। স¤্রাট খুবই দুঃখিত হলেন। প্রধান পুরোহিত বলল, ঈশ্বর স¤্রাটকে সালামত রাখুন। আমিও আজ রাতে স্বপ্ন দেখেছি যে, শক্ত উট আরবী ঘোড়াকে টেনে আনছে এবং দজলা পার হয়ে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স¤্রাট জিজ্ঞাসা করলেন, পুরোহিত, এবার কি হবে? সে বলল, আরবের দিক থেকে কোনো বিরাট ঘটনা সংঘঠিত হবে। এরপর স¤্রাট নুমান ইবন মুনযিরকে লিখলেন, কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। আমি তাকে কিছু প্রশ্ন করব। নুমান আবদুল মসীহ ইবন আমর ইবন হাসসান গাসসানীকে দরবারে পাঠিয়ে দিল। স¤্রাট তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কি জিজ্ঞেস করতে চাই? সে বলল, বাদশাহ জাহাপনা বলুন। সঠিক জবাব জানা থাকলে আমি বলে দিব। নতুবা যে জানে, তার ঠিকানা বলে দিব। স¤্রাট তাকে সবকিছু খুলে বললেন। আবদুল মাসীহ বলল, আমার মামা সাতীহ এ বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞাত আছেন। তিনি সিরিয়ার প্রান্ত দেশে বাস করেন। স¤্রাট বললেন, তাকে নিয়ে এস। আমি তাকেই জিজ্ঞাসা করব। আবদুল মাসীহ রওয়ানা হয়ে সাতীহের কাছে পৌঁছল। সে তখন মরণোন্মুখ। আবদুল মাসীহ সালাম করলে সে মাথা তুলল এবং বলল, আবদুল মাসীহ একটি দ্রুতগামী উটে সওয়ার হয়ে সাতীহের কাছে এসেছে, যার মৃত্যু আসন্ন। তোমাকে সাসানীদের স¤্রাট প্রেরণ করেছে। কেননা, রাজপ্রাসাদে ভুকম্পন হয়েছে। পারস্যের অগ্নিকু- নির্বাপিত হয়ে গেছে। প্রধান পুরোহিত স্বপ্ন দেখেছে যে, শক্ত উট আরবী ঘোড়াসমূহকে টেনে নিচ্ছে এবং দজলা পার হয়ে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। হে আবদুল মাসীহ, যখন তিলাওয়াত বেশি হতে থাকে, লাঠি বাহক আত্মপ্রকাশ করে, সামাদাহ উপত্যকা পানিতে টগবগ করতে থাকে, সারা হ্রদ শুকিয়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকু- শীতল হয়ে যায়, তখন সাতীহের জন্যে সিরিয়া নয়। ব্যস গম্বুজের সম সংখ্যক স¤্রাট হবে এবং যা হবার হয়ে যাবে। একথা বলে সাতীহ মারা গেল। আবদুল মাসীহ ফিরে এসে স¤্রাটকে সমস্ত ঘটনা বলল। শুনে স¤্রাট বললেন, যতদিনে আমাদের চৌদ্দজন স¤্রাট হবে, ততদিনে কতকিছু হবে কে জানে। কিন্তু চৌদ্দজনের মধ্যে দশজন স¤্রাট তো চার বছরের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়ে গেল। অবশিষ্ট চারজন হযরত উসমান (রা.) এর খিলাফত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। ইবন আসাকির বলেন, এ হাদীসটি গরীব শ্রেণিভুক্ত।
খারাইতী ও ইবন আসাকির উরওয়া থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, ওয়ারাকা ইবন নওফেল, যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়েল, উবায়দুল্লাহ ইবন জাহশ, উসমান ইবন হুওয়াইরিস প্রমুখ কুরাইশ নেতা এক রাতে এক প্রতিমার কাছে সমবেত হন। তারা দেখলেন যে, প্রতিমাটি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তারা একে খারাপ মনে করে সোজা করে দিলেন। কিছুক্ষণ পর সেটি আবার সজোরে পড়ে গেল। তারা আবার সোজা করে দিলেন। কিন্তু তৃতীয়বার আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। উসমান ইবন হুওয়াইরিস বললেন, অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে। এটা ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের রাত্রি। এ স্থলে উসমান এই কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন, হে মূর্তি, তোর কাছে দুরদুরান্ত থেকে আগত আরব সরদারগণ রয়েছেন। আর তুই উল্টে পড়ে আছিস। ব্যাপার কি বল? তুই কি খেলা করছিস? আমাদের দ্বারা কোনো গুনাহ হয়ে থাকলে আমরা স্বীকার করি এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকি। আর যদি তুই লাঞ্ছিত ও পরাভূত হয়ে মাথা নত করে থাকিস, তবে তুই প্রতিমাদের সরদার ও রব নয়।” এরপর তারা প্রতিমাটি পুনরায় খাড়া করে দিলেন। এরপর সেটির ভিতর থেকে আওয়াজ এলো, এ প্রতিমা ধ্বংস হয়ে গেছে সে শিশুর কারণে, যার নূরে সমগ্র বিশ্ব আলোকময় হয়ে গেছে। তার আগমনে সকল প্রতিমাই ভূমিসাৎ হয়ে গেছে। রাজ-রাজড়াদের অন্তর তার ভয়ে কেঁপে উঠেছে। পারস্যের অগ্নিকু- নিভে গেছে। ফলে পারস্য স¤্রাট খুবই মর্মাহত হয়েছেন। অতিন্দ্রীয়বাদীদের কাছ থেকে তাদের জিনেরা উধাও হয়ে গেছে। এখন তাদেরকে কেউ সত্য-মিথ্যা খবর পৌঁছাবে না। হে বনূ কুসাই, পথভ্রষ্টতা পরিত্যাগ করো এবং প্রকৃত সত্যের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নাও।
খারাইতী হিশাম ইবন উরওয়া থেকে, তিনি নিজের পিতা থেকে, তিনি তার দাদী আসমা বিনতে আবূ বকর (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, যাইদ ইবন আমর ইবন নুফায়ল ও ওয়ারাকা ইবন নওফেল বলেছেন, আমরা মক্কা থেকে আবরাহা প্রত্যাবর্তন করার পর আবিসিনিয়া স¤্রাট নাজ্জাশীর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ! সত্য বল, তোমাদের মধ্যে এমন কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কি, যার বাপ তাকে বলীদান করার ইচ্ছা করেছিল? এরপর লটারির মাধ্যমে আরও অনেক উট যবেহ করে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল? আমরা বললাম, হ্যাঁ, এরূপ শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল। নাজ্জাশী জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জানো কি, সে পরে কি করেছে? আমরা বললাম, সে আমিনা না¤œী এক মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তাকে গর্ভবতী রেখে ইন্তিকাল করেছে। স¤্রাট আবার প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জানো, গর্ভের এই শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কি না? জবাবে ওয়ারাকা বললেন, আমি এক রাতে এক প্রতিমার কাছে ছিলাম। আমি সেটির ভিতর থেকে এই আওয়াজ শুনেছি, নবী পয়দা হয়ে গেছেন। স¤্রাটেরা লাঞ্ছিত হয়েছে। গোমরাহি দূর হয়ে গেছে এবং শিরক মিটে গেছে। এরপর প্রতিমাটি উপুড় হয়ে পড়ে গেল। যাইদ বললেন, হে বাদশাহ! আমার কাছেও এমনি ধরনের খবর আছে। আমি সেই পবিত্র রাতে স্বপ্নযোগে আবূ কুবাইস পাহাড়ে পৌঁছে এক ব্যক্তিকে আকাশ থেকে অবতরণ করতে দেখলাম তার দুটি সবুজ পাখা ছিল। সে কিছু সময় আবূ কুবাইস পাহাড়ে অবস্থান করে মক্কায় এসে বলল, শয়তান লাঞ্ছিত হয়েছে, মূর্তিপূজা খতম হয়ে গেছে। ‘আল-আমীন’ জন্মগ্রহণ করেছেন। এরপর সে একটি কাপড় খুলে পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে দিল। আমি দেখলাম, কাপড়টি সমগ্র আকাশের নীচে তাঁবুর মতো হয়ে গেল। এরপর একটি নূর উদিত হলো, যার চাকচিক্যে আমার চক্ষু ঝলসে গেল। এসব দেখে আমি ভীত হয়ে গেলাম। এ গাইবী আওয়াজকারী আপন পাখা নাড়া দিল এবং কা’বার উপর পতিত হলো। এরপর একটি নূর উদিত হলে মক্কার ভূখ- উদ্ভাসিত হয়ে গেল। সে বলল, ভূপৃষ্ঠ পবিত্র হয়ে গেছে এবং সে তার সজীবতা উদগীরণ করেছে। এরপর সে কা’বা গৃহে রক্ষিত প্রতিমাদের প্রতি ইশারা করলে সেগুলো ভূমিসাৎ হয়ে গেল।” নাজ্জাশী বললেন, এখন আমার কথা শুনো। আমি সে রাতেই আমার শয্যায় নিদ্রিত ছিলাম। স্বপ্নে দেখি হঠাৎ মাটি ভেদ করে একটি গ্রীবা ও মাথা বের হলো। সে বলল, হস্তীবাহিনী ধ্বংস হয়ে গেছে। আবাবীল পাখি তাদেরকে কংকর নিক্ষেপ করে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে। পাপী-অপরাধীদের আশ্রয়ও খতম হয়ে গেছে। নবী মক্কী জন্মগ্রহণ করেছেন। এখন যে তার কথা মানবে, সে সফলকাম হবে। আর যে অবাধ্য হবে সে ধ্বংস হবে। এতটুকু বলে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি চিৎকার করতে চাইলাম; কিন্তু আমার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হলো না। আমি পালাতে চাইলাম; কিন্তু দাঁড়াতে পারলাম না। এরপর আমার গৃহের লোকজন আমার কাছে এসে গেল। আমি তাদেরকে বললাম, হাবশী লোকদেরকে আমার সম্মুখ থেকে সরিয়ে দাও। তারা তাই করল।
তাবারানী, আবূ নুআইম, খতীব ও ইবন আসাকির হযরত আনাস (রা.) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার পরওয়ারদিগার আমাকে এক সম্মান এই দান করেছেন যে, আমি খতনা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছি। কেউ আমার গুপ্ত অঙ্গ দেখেনি।
ইবন সা’দ ইউনুস ইবন আতা থেকে, তিনি হাকাম ইবন আবান থেকে, তিনি ইকরিমা থেকে, তিনি ইবন আব্বাস (রা.) থেকে এবং তিনি তাঁর পিতা হযরত আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নালকাটা ও খতনা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। আবদুল মুত্তালিবের কাছে বিষয়টি অভিনব মনে হয়। ফলে তার দৃষ্টিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা বেড়ে যায়। তিনি বললেন, আমার এই বৎসের বিরাট শান হবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।

[ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) এর লিখিত ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনূদিত ‘খাসাইসুল কুবরা’ থেকে সংকলিত।]

ফেইসবুকে আমরা...