Logo
প্রশ্ন: আমি যুক্তরাজ্যে আমাজনের ওয়্যারহাউসে কাজ করি। ডিউটি চলাকালীন অবস্থায় আমাকে প্রায় শ’খানেক প্রোডাক্ট লোড/আনলোড, স্ক্যান করা, স্টিকার মারা ইত্যাদি করতে হয়। এর মধ্যে কিছু প্রোডাক্ট থাকে যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। এমতাবস্থায় আমার স্যালারি কি হালাল হবে?
জবাব দিচ্ছেন: মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২৫

প্রশ্নকারী: শাহরিয়ার হাবিব, যুক্তরাজ্য

জবাব: শরীআতের দৃষ্টিতে যে সকল বিষয়াদি হারাম সেগুলোর ক্রয়-বিক্রয় ও হারাম। এমনকি এতে সহযোগিতা করা ও নাজায়িয বা অবৈধ। তাই আমাজনের  ওয়্যারহাউসের উপরোল্লেখিত কাজে হারাম প্রোডাক্ট অন্তর্ভুক্ত থাকায় এবং তা বাদ দিয়ে শুধু হালাল প্রোডাক্ট সংশ্লিষ্ট কাজ করার সুবিধা না থাকায় সে কাজের উপার্জন হারাম হিসেবেই গন‍্য হবে। বিধর্মীদের দেশে যদি কোন মুসলমান অন‍্য কোন হালাল উপার্জনের পেশা বা চাকুরি না পেয়ে জীবিকা নির্বাহে নিরুপায় হয়ে এমন চাকুরি করতে বাধ‍্য হয়, তাহলে তার জন‍্যে অন‍্য হালাল রোজগারের সুযোগ না হওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজন অনুযায়ী এরূপ উপার্জন বৈধ বিবেচিত হবে। তবে তাকে হালাল অবলম্বন তালাশের প্রচেষ্টা অব‍্যাহত রাখা অপরিহার্য। হালাল কোন অবলম্বন পেয়ে গেলে কিংবা অন‍্য কোন বৈধ উপায়ে জীবন নির্বাহের সামর্থ্য থাকলে হারাম পেশার উপার্জন ভোগ করা বৈধ নয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ [ البقرة: 172]

-হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র ও উত্তম রিযক দিয়েছি তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে থাক।

মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

-আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত-২)

তাফসীরে আহকামুল কুরআন কিতাবে লিখেছেন,

وقوله تعالى(وتعاونوا على البر والتقوى) يقتضي ظاهره إيجاب التعاون على كل ما كان تعالى لأن البر هو طاعات الله وقوله تعالى(ولا تعاونوا على الإثم والعدوان) نهي عن معاونة غيرنا على معاصي الله تعالى

(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯৬)

আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়‍্যাহ কিতাবে লিখেছেন,

وَلَوْ اسْتَأْجَرَ مُسْلِمًا لِيَرْعَى لَهُ الْخَنَازِيرَ يَجِبُ أَنْ يَكُونَ عَلَى الْخِلَافِ كَمَا فِي الْخَمْرِ  وَلَوْ اسْتَأْجَرَهُ لِيَبِيعَ لَهُ مَيْتَةً لَمْ يَجُزْ هَكَذَا فِي الذَّخِيرَةِ.

(আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়‍্যাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৫০)

মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন,

فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ ۙ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

-তবে কেউ পাপের প্রবণতা ছাড়া কেবল ক্ষুধার তাড়নায় মৃত পশু খেতে বাধ্য হলে তাতে তার কোন গুনাহ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত-৩)

প্রশ্ন: শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ও গবেষণায় অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে থিসিস ও অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে বিদেশে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থী, যেমন—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা, পড়াশোনার পাশাপাশি আয়-রোজগারে ব্যস্ত থাকার কারণে নিজেরা এই কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারেন না। ফলে তারা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কিছু এজেন্সি বা ব্যক্তির সহায়তা নেন, যারা তাদের হয়ে থিসিস বা অ্যাসাইনমেন্ট লিখে দেয়। এক্ষেত্রে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে জানতে চাই: ১. এভাবে অ্যাসাইনমেন্ট বা থিসিস করিয়ে নেওয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য কতটুকু ন্যায়সঙ্গত? ২. টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে থিসিস বা অ্যাসাইনমেন্ট লেখা কি ইসলামে বৈধ? ৩. এটি কি হারাম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত হবে?
ফেইসবুকে আমরা...