1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
প্রশ্ন: অনেক ওলী-বুযুর্গের নামের সাথে কিবলাহ লেখা হয়। কেউ কেউ বলেন এটা শিরক। বিস্তারিত জানতে চাই।
জবাব দিচ্ছেন: মাওলানা আবু নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ১১ এপ্রিল, ২০২৩

জবাব: ‘কিবলাহ’ মূলত: আরবী শব্দ। উর্দু ও ফার্সী ভাষায় আরবী ভাষার অনেক শব্দের ব্যবহার রয়েছে। তাই কিবলাহ শব্দের ব্যবহার উর্দু ও ফার্সী ভাষায়ও হয়ে থাকে। উর্দু ও ফার্সী ভাষার চর্চা আমাদের উপমহাদেশে ব্যাপকহারে চলমান থাকার কারণে বাংলা ভাষায় উক্ত ভাষাদ্বয়ের বহু শব্দের ব্যবহার ও চর্চা ব্যাপকহারে হয়ে গেছে। তাই বাংলা ভাষায় অনেক উর্দু, ফার্সী ও আরবী শব্দের প্রয়োগ বিদ্যমান। এ দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত ‘কিবলাহ’ শব্দ সন্মানজনক উপাধি হিসেবে আমাদের ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আভিধানিক দিক থেকে এর যে সকল অর্থ রয়েছে, তন্মধ্যে সন্মানজনক উপাধি হিসেবে এর ব্যবহার অন্যতম। তাই ওলী, বুযুর্গ কিংবা সন্মানিত পর্যায়ের কোন ব্যক্তির উপাধি হিসেবে এর ব্যবহার যথার্থ।

বিখ্যাত উর্দু অভিধান فيروز اللغات এ লিখেছেন:

قبلہ:(1)سامنے یا مقابل کی چیز (2) سمت کعبہ (3)کعبہ (4) کلمۂ تعظیم -حضرت – جناب

قبلۂ انام: سب کا واجب التعظیم

قبلۂ حاجت: لوگوں کی ضرورتوں کو رفع کرنے والا

قبلۂ عالم: ساری دنیا کا قبلہ-بادشاہوں کا لقب

قبلہ و کعبہ: کلمۂ تعظیم و تکریم

قبلہ و کعبہ سمجھنا: تعظیم کے لائق جاننا

কিবলাহ :১) সম্মুখস্থ জিনিস ২) কাবার দিক ৩) কাবা ৪) সম্মান প্রকাশক শব্দ, হযরত, জনাব

কিবলায়ে আনাম: সকলের সম্মানের পাত্র

কিবলায়ে হাজাত: লোকের প্রয়োজন সমাধাকারী

কিবলায়ে আলম: সারা দুনিয়ার কিবলাহ, বাদশাহদের উপাধি

কিবলাহ ও কাবা: সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশক শব্দ

কিবলাহ ও কাবা সমুজনা: সম্মানের উপযুক্ত মনে করা। (ফিরুযুল লুগাত, পৃষ্ঠা-৯৪৮)

তাই যারা ওলী, বুযুর্গদের লকব হিসেবে ‘কিবলাহ’ শব্দের ব্যবহারকে ‘শিরক’ আখ্যায়ন করেন, তাদের উক্তি আদৌ সঠিক নয় বরং অজ্ঞতা প্রসূতই এমন ধারণা করেন।

কেউ আবার কিবলাহ শব্দকে নির্দিষ্ট একটি অর্থের মধ্যে নামাযের দিক অর্থে সীমাবদ্ধ করতে চান। অথচ একটি আরবী শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ থাকা স্বাভাবিক। প্রকৃত এবং রূপক অর্থ থাকতে পারে। যাকে উসূলের পরিভাষায় হাকীকত এবং মাজায বলা হয়। কুরআন কারীমে এর অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ— আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَوْلاكُمْ نِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ النَّصِيرُ

-যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখো, আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক; তিনি কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী। (সূরা আনফাল, আয়াত-৪০)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজেকে মুমিনদের “মাওলা” হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। একই শব্দকে তিনি তার অন্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন। যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَٰلِكَ ظَهِيرٌ

-তবে জেনে রেখো আল্লাহ, জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তু ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।(সূরা তাহরীম, আয়াত-৪)

এই আয়াতে আল্লাহ নিজের জন্য “মাওলা” শব্দের ব্যবহার করেছেন, পাশাপাশি জিবরাঈল (আ.) এবং নেককার মুমিনদের জন্যও “মাওলা” শব্দের ব্যবহার করেছেন। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা নিজেকে সামি, বাসীর, রাঊফ, রাহীম বলেছেন। পাশাপাশি এই শব্দগুলোকে বান্দাহর সিফাত বুঝানোর জন্যও ব্যবহার করেছেন। এখন উভয় ক্ষেত্রে শব্দগুলো একই অর্থ প্রদান করবে না। বরং আল্লাহর ক্ষেত্রে এই শব্দগুলো প্রকৃত অর্থ এবং বান্দাহর ক্ষেত্রে রূপক অর্থ প্রদান করবে। অনুরূপভাবে কিবলাহ শব্দটি সব সময় একই অর্থ প্রদান করবে না। ক্ষেত্র বিশেষ তার ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলোকে শিরক আখ্যায়িত করার ব্যাপক প্রবণতা একদলের পক্ষ থেকে পরিলক্ষিত হয়, যা মারাত্মক ভ্রান্তিকর ও ঈমান বিনষ্টকারী। যারা এমন কথার প্রচার করেন তারা মূলত সৌদি রাজতন্ত্রের সহায়ক শক্তি আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারী। আল্লাহর ওলীদের সাথে সম্পৃক্ত সম্মানসূচক শব্দ নিয়ে তারা আপত্তি করলেও আসমাউল হুসনার অন্তর্ভুক্ত ‘মালিক’ শব্দটি তারা সৌদি বাদশাহর ক্ষেত্রে প্রয়োগে কখনো আপত্তি করেননি। আর পূর্বোক্ত হকিকত মাজাযের বিবেচনায় এটা আপত্তিকর নয়ও বটে। তাই উলামায়ে কিরাম এই দলের ভ্রান্তি তুলে ধরে এদেরকে এড়িয়ে চলতে সাধারণ মানুষকে নসিহত করে থাকেন।

প্রশ্নকারী: লায়েক আহমদ, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ

ফেইসবুকে আমরা...