1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
প্রশ্ন : আমাদের দেশে মৃতের সওয়াব রেসানীর উদ্দেশ্যে জায়িয মনে করে অনেকে ‘ঈসালে সাওয়াব’ করে থাকেন আবার অনেকে এটাকে বিদআত বলেন। কোনটি সঠিক? জানতে চাই।
জবাব দিচ্ছেন: মাওলানা আবু নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

জবাব: ‘ঈসালে সওয়াব’ এর অর্থ হচ্ছে অন্যের নিকট সওয়াব পৌঁছানো। প্রচলিত অর্থে ঈসালে সওয়াব বলতে কোনো নেক কাজের সওয়াব কোনো মৃত ব্যক্তিকে দান করে দেওয়া বুঝায়। এ ব্যাপারে মুতাজিলা সম্প্রদায়ের মত হলো- মৃত ব্যক্তি কেবল নিজের কৃতকর্মের প্রতিদান পাবে, অন্যের দ্বারা সম্পাদিত কোনো আমলের সওয়াব দ্বারা মায়্যিত উপকৃত হয় না। তাই তাদের মতে এটি জায়িয নয়। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা চার মাযহাবের জমহুর উলামায়ে কিরামের মত অনুযায়ী কোনো নেক আমলের সাওয়াব আমলকারী মায়্যিতকে দান করলে সে সওয়াব মায়্যিতের নিকট পৌঁছে এবং এর দ্বারা মায়্যিত উপকৃত হয়। কেউ কেউ দৈহিক ইবাদাত যথা নামায়, রোযা ইত্যাদির সওয়াব পৌঁছে না বলে মন্তব্য করলেও ইমাম আবূ হানিফা (র.)সহ অধিকাংশ ইমামগণের মতে এগুলোর নেকি দ্বারাও মায়্যিত উপকৃত হন। এ সম্পর্কে আল বাহরুর রাইক ও আল হিদায়াহ প্রভৃতি গ্রন্থে আছে,
الأصل في هذا الباب أن الإنسان له أن يجعل ثواب عمله لغيره صلاة أو صوما أو صدقة أو غيرها عند أهل السنة والجماعة لما روي عن النبي عليه الصلاة والسلام أنه ضحى بكبشين أملحين أحدهما عن نفسه والآخر عن أمته ممن أقر بوحدانية الله تعالى وشهد له بالبلاغ.
-আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতে কোনো ব্যক্তি নামায, রোযা, সদকা ইত্যাদি নেক আমলের সওয়াব অন্যকে দান করার অধিকার রাখে। কেননা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সা.) দুটি ভেড়া কুরবানী করেছেন একটি নিজের পক্ষ থেকে এবং অন্যটি তাঁর সে সকল উম্মতের পক্ষ থেকে যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর [রাসূল (সা.)] রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে। (আল হিদায়াহ:১/১৭৮, আল বাহরুর রাইক: ৩/৬৩, তাবয়ীনুল হাকাইক:২/৮৩)
আকায়িদে নাসাফী গ্রন্থে এসেছে-
دعاء الاحياء للاموات وصدقتهم عنهم نفع لهم
-মৃতদের উদ্দেশ্যে জীবিতগণের দুআ কিংবা সদকাহ তাদের উপকার সাধন করে।
ফরয, নফল সকল প্রকার ইবাদাতের সওয়াব দান করা হানাফী ফকীহগণের মতানুসারে বৈধ। আল বাহরুর রাইক কিতাবে এসেছে,
وظاهر إطلاقهم يقتضي أنه لا فرق بين الفرض والنفل فإذا صلى فريضة وجعل ثوابها لغيره فإنه يصح لكن لا يعود الفرض في ذمته
-ফুকাহাগণের শর্তহীন বক্তব্য থেকে বাহ্যত কোনো পার্থক্য ব্যতিত ফরয কিংবা নফল উভয় প্রকার ইবাদাতের সওয়াব অন্যকে দান করা যায় বলেই প্রতীয়মান হয়। তাই কেউ ফরয নামায পড়ে যদি সে নামাযের সওয়াব অন্যকে দান করে তাহলে তা শুদ্ধ হবে এবং এর কারণে তার যিম্মায় উক্ত ফরয নামায পুনর্বার পড়া আবশ্যক হবে না। (আল বাহরুর রাইক; ৩য় খ-,পৃষ্ঠা:৬৪)
ঈসালে সওয়াবের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিকতা অপরিহার্য নয়। ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো নেক কাজের সওয়াব আমলকারী ব্যক্তি অন্যকে যখন ইচ্ছা দান করতে পারে। তবে দিন, তারিখ ধার্য করে সম্মিলিতভাবে ঈসালে সওয়াব সহ যে কোনো নেক কাজের আয়োজন করা জায়িয ও শরীআত সম্মত। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে,
عن أبي وائل، قال: كان عبد الله يذكر الناس في كل خميس فقال له رجل: يا أبا عبد الرحمن لوددت أنك ذكرتنا كل يوم؟ قال: أما إنه يمنعني من ذلك أني أكره أن أملكم، وإني أتخولكم بالموعظة، كما كان النبي صلى الله عليه وسلم يتخولنا بها، مخافة السآمة علينا
-হযরত আবূ ওয়াইল (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রতি বৃহস্পতিবার মানুষকে নসীহত করতেন। জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল: হে আবূ আব্দির রহমান! আমার একান্ত বাসনা যে যদি আপনি প্রতিদিন আমাদেরকে নসীহত করতেন? জবাবে তিনি বললেন: শুন, আমার এমন না করার কারণ হচ্ছে যে আমি তোমাদেরকে বিরক্তিকর অবস্থায় নিয়ে যেতে অপছন্দ করি। আর আমি তোমাদেরকে মাঝে মধ্যে নসীহত করি যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে মাঝে মধ্যে নসীহত করতেন আমাদের বিরক্তির আশঙ্কায়। (সহীহ বুখারী শরীফ; হাদীস নং: ৭০, ইবনে হিব্বান; হাদীস নং: ৪৫২৪)
বর্ণিত হাদীসে নির্দিষ্টভাবে প্রতি বৃহস্পতিবার হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) এর আনুষ্ঠানিক ওয়ায নসীহত করার বিষয় থেকে যে কোনো বৈধ নেক কাজের জন্য দিন, তারিখ নির্ধারণ করার বৈধতাসহ আনুষ্ঠানিকতারও বৈধতা প্রমাণিত।
সুতরাং উপরোল্লেখিত দলীল-প্রমাণের আলোকে দিন, তারিখ ধার্য করে আনুষ্ঠানিক ঈসালে সাওয়াবের প্রক্রিয়া মুস্তাহাব আমল। একে বিদআত বলা অসমিচীন।

প্রশ্নকারী:
লায়লা পারভীন, জয়পাশা, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার

 

ফেইসবুকে আমরা...