1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
বাংলা কবিতায় নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আবূ আতিকা
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

১. নাতে রাসূল
‘নাত’ আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো- প্রশংসা। সুতরাং ‘নাতে রাসূল’ অর্থ হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা।
মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, কথায়-কর্মে, চলাফেরায় সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহাপুরুষ। মানব জীবনে যত উন্নত চরিত্র ও আদর্শ থাকতে পারে, তাঁর মধ্যে এসবের পরিপূর্ণ সমাহার ঘটেছিল। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই কালামে পাকে ঘোষণা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বকালের সর্ব প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব, তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ’ এর অর্থও তাই। পৃথিবীর সকল ভাষা ও সাহিত্যে প্রিয়নবী (সা.) এর প্রশংসা রয়েছে। আমাদের বাংলা কবিতায়ও রাসূল প্রশস্তি এক বিরাট স্থান দখল করে আছে।

২. বাংলা কবিতায় নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইসলামের সঙ্গে আমাদের পরিচয় দীর্ঘদিনের। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর সময়ে এদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছে বলে কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায়। তবে বঙ্গ বিজেতা ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর সময় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সাথে ইসলামের সক্রিয় সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেকাল থেকেই মুসলমান কবিরা তাঁদের রচনায় হামদ ও নাত রচনার প্রশংসিত রীতির প্রচলন করেন। অদ্যাবধি সে রীতি চালু আছে। সেকালের কবি শাহ মুহাম্মদ সগীর থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের প্রায় সকল মুসলমান কবিদের অনেক কবিতায় রাসূল প্রশস্তি লক্ষ্য করা যায়।

ক. প্রাচীন বাংলা কবিতায় নাতে রাসূল
প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের কবিদের অন্যতম শাহ মুহাম্মদ সগীর তাঁর ‘ইউসুফ-জুলেখা’ গ্রন্থে রাসূল প্রশস্তি গেয়েছেন এভাবে-

জীবাত্মার পরমাত্মা মুহাম্মদ নাম
প্রথম প্রকাশ তথি হৈল অনুপাম
যত ইতি আদি কৈলা ত্রিভূবন
মুহাম্মদ হন্তে কৈলা তা সব রতন।

সৈয়দ সুলতান তাঁর ‘জ্ঞান প্রদীপ’ এ রাসূল প্রশস্তি গেয়ে লিখেছেন-

প্রথমে প্রভুর নাম করি এ স্মরণ
আঠারো হাজার আলম যার সৃজন
দ্বিতীয়ে লই মস্তফা পয়গাম্বর
যাহার সিফাত রোজ মহাশর।

কবি আলাওল তাঁর ‘পদ্মাবতী’ কাব্যগ্রন্থে নাতে রাসূল গেয়েছেন এভাবে-

তাহান (রাসূল সা. এর) পিরীতে প্রভু সৃজিলা সংসার
আপনে কহিছে প্রভু কোরান মাজার
সেই দীপ জ্যোতি ও উজ্জল ত্রিভূবন
হইল নির্মল জ্যোতি পাতন নাশন।

এসকল কবিদের সময়ে, পূর্বে এবং পরেও অনেক কবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসা গেয়েছেন তাঁদের কবিতায়। তাঁদের মধ্যে কবি জৈন উদ্দীন, শাহ বারীদ খাঁ, উজির বাহরাম খান, কবি শেখ চান্দ, সৈয়দ হামজা, নসরুল্লাহ খান প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
এদের পরবর্তীতে সতেরো ও আঠারো শতকে গীতি কবিতায় ‘নাত’ রচনায় এগিয়ে এসেছেন মরমী কবি লালন ফকির, খন্দকার শামসুদ্দীন মুহাম্মদ সিদ্দীকী প্রমুখেরা। লালন ফকিরের একটি গীতি কবিতায় আছে-

তোমার মতো দয়াল বন্ধু আর পাবো না
দেখা দিয়ে ওহে রাসূল ছেড়ে যেও না
তুমি হে খোদার দোস্ত
ওপারের কান্ডারী সত্য
তোমা বিনে পারের লক্ষ্য আর দেখা যায় না।

খ. আধুনিক বাংলা কবিতায় নাতে রাসূল
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম পর্যায়ে কবি মীর মোশররফ হোসেন, কবি কায়কোবাদ ও কবি মোজাম্মেল হক নাত রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এ সময়ের নাত রচয়িতাদের মধ্যে আরো রয়েছেন- শেখ জমিরুদ্দীন, মুন্সী মেহেরুল্লাহ, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, সৈয়দ আবুল হোসেন প্রমুখ।
মীর মোশাররফ হোসেনের একটি নাতে রয়েছে-

তুমি হে ইসলাম রবি
হাবিবুল্লাহ শেষ নবী
নত শিরে তোমায় সেবি
মুহাম্মদ ইয়া রাসূলাল্লাহ।
তুমি সত্য উদ্ধারিলে
মহা তত্ব প্রকাশিলে
প্রভু বাণী শুনাইলে
মুহাম্মদ ইয়া রাসূলাল্লাহ।

মীর মোশাররফ হোসেনের এ নাতটি আজও মিলাদ মাহফিলে পঠিত হয়ে থাকে।

মুন্সী মেহেরুল্লাহর একটি নাতে রয়েছে-
গাওরে মুসলিমগণ নবীগুণ গাওরে
পরান ভরিয়া সবে সাল্লু আলা গাওরে

বিশ শতকের প্ররম্ভে নাতে রাসূল রচনায় যাদের বিশেষ পরিচিতি পাওয়া যায় তাঁরা হলেন কবি গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদ, বন্দে আলী মিয়া, জসিম উদ্দীন, কাজী কাদের নেওয়াজ প্রমুখ। কবি গোলাম মোস্তফার নাত-

তুমি যে নূরের রবি
নিখিলের ধ্যানের ছবি
তুমি না এলে দুনিয়ায়
আঁধারে ডুবিত সবি

আজো বাংলার ঘরে ঘরে মিলাদ মাহফিলে পঠিত হয়। তাছাড়া গোলাম মোস্তফার বিভিন্ন নাত আজও দেশের সর্বত্র জনপ্রিয়। যেমন-

দূর মদীনার স্বপন দেখি
বাংলাদেশের কুটির হতে।

নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি
আমার মুহাম্মদ রাসূল। ইত্যাদি।

বাংলা সাহিত্যে নাত রচনায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সর্বশীর্ষে। তাঁর অসংখ্য কবিতা, গান ও গজলে রাসূল প্রশস্তি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। কবি নজরুল ১৯২০ সালে লেখা তাঁর খেয়াপারের তরণী কবিতায় লিখেছেন-

নহে ওরা শংকিত বজ্র নিপাতেও
কান্ডারী আহমদ তরী ভরা পাথেয়।

কবির নাত থেকে আরো কয়েকটি উদ্ধৃতি দেওয়া হলো।

১. আজকে যত পাপী ও তাপী
সব গুনাহের পেল মাফি
২. নয়নেরই পিয়ালায় আসো হযরত
তরাইতে পাপীরে খোদার রহমত
৩. ত্রিভূবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়।
৪. দ্বীনের নবীজি শোনায় একাকী কুরআনের মধুবাণী
আয়িশা খাতুন শোনেন বসিয়া নয়নে ঝরিছে পানি।

বর্তমান সময়ের কবিদের কবিতায়ও নাতে রাসূল শিকড় গেড়ে আছে। এ সময়ের কবিদের মধ্যে কবি আল মাহমুদ, মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, কবি আল মুজাহিদী, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, কবি আবদুল মুকীত চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হুদা, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখের কবিতায় ‘নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। যতদিন পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের গতিধারা প্রবাহমান থাকবে ততদিন বাংলা কবিতায় ‘নাতে রাসূল’ এর ধারাও অব্যাহত থাকবে।

ফেইসবুকে আমরা...