1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
হযরত উমর (রা.) এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কারামত
মাওলানা মো. ছালিক আহমদ (র.)
  • ৯ নভেম্বর, ২০২৪

নাম উমর, পিতার নাম খাত্তাব। কুনিয়াত বা উপনাম আবূ হাফস। উপাধি আল ফারুক ও আমীরুল মুমিনীন। নবুওয়াতের ষষ্ঠ মতান্তরে পঞ্চম বৎসরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, চল্লিশজন পুরুষ এবং এগারোজন মহিলার ইসলাম গ্রহণের পর। কেউ কেউ বলেছেন তাঁর ইসলাম গ্রহণের মধ্যদিয়েই ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষদের সংখ্যা চল্লিশ পূর্ণ হয়েছে। হযরত উমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তাঁর ইসলাম গ্রহণের মধ্যদিয়ে মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। তিনি দারে আরকামে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে যখন কালিমায়ে শাহাদাত পড়ে ইসলাম কবূলের ঘোষণা দেন, তখন সেখানে উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম এত জোরে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তুলেছিলেন যে তাকবীরের আওয়াজ মসজিদে হারাম পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করেন, আমরা কি সত্যের উপর নই? রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, শপথ সেই সত্তার, যার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ, আমরা অবশ্যই সত্যের উপর আছি। হযরত উমর (রা.) ঘোষণা করলেন, তাহলে গোপনে কেন, চলুন আমরা প্রকাশ্যে গিয়ে কাবার আঙিনায় নামায আদায় করব। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে দুই সারিতে বিভক্ত করে বেরিয়ে পড়লেন। এক সারির প্রধান ‘সায়্যিদুস শুহাদা’ হযরত হামযা (রা.) এবং অপর সারির প্রধান হযরত উমর (রা.)। কুরাইশের নেতৃস্থানীয় কাফির-মুশরিকদের উপস্থিতিতেই তাঁরা প্রকাশ্যে কাবা প্রাঙ্গণে নামায আদায় করলেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনই হযরত উমর (রা.) কে ‘ফারুক’ লকবে ভূষিত করেন। তিনিই ইসলামের প্রথম ব্যক্তি যাকে ‘আমীরুল মুমিনীন’ খিতাবে ভূষিত করা হয়। অনেক বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত মুতাবিক পবিত্র কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। তিনি দশ বছর ছয় মাস খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। হযরত মুগীরা বিন শু’বা (রা.) এর অগ্নিপূজক ক্রীতদাস আবূ লুলু তাকে মারাত্মক আঘাত করে। আর এ আঘাতের কারণেই শাহাদাতবরণ করেন। চব্বিশ হিজরী সনের মুহাররাম মাসের দশ তারিখ রবিবার দিন রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত সুহাইব (রা.) তাঁর নামাযে জানাযা পড়ান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি ছিলেন ইসলাম জগতের দ্বিতীয় খলীফা।

তাঁর মর্যাদায় বর্ণিত হাদীস
তাঁর বর্ণনায় অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে দুটো হাদীস উল্লেখ করা হলো।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُنِي دَخَلْتُ الْجَنَّةَ، فَإِذَا أَنَا بِالرُّمَيْصَاءِ، اِمْرَأَةِ أبِي طَلْحَةَ، وسَمِعْتُ خَشَفَةً، فَقُلتُ: مَن هٰذَا؟ فَقَالَ: هٰذَا بِلَالٌ، ورَأَيْتُ قَصْرًا بِفِنائِهِ جَارِيَةٌ، فَقُلتُ: لِمَن هٰذَا؟ فَقَالَ: لِعُمَرَ، فأرَدْتُ أَنْ أدْخُلَهُ فأنْظُرَ إلَيْهِ، فَذَكَرْتُ غَيْرَتَكَ فَقَالَ عُمَرُ: بِأَبِي اَنْتِ وأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعَلَيْكَ أغَارُ. (متفق عليه؛ مشكوة، ص-৫৫৭)
-হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি মিরাজের রাত্রে জান্নাতে প্রবেশ করলাম তখন সেখানে দেখলাম আবূ তালহা (রা.) এর স্ত্রী রুমাইসাকে (হযরত আনাস রা. এর মাতা উম্মু সুলাইম রা. এর মূল নাম)। এমতাবস্থায় কারো জুতার আওয়াজ আমার কর্ণকুহরে ভেসে উঠল, আমি জিবরাইল (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি কে? তিনি জবাব দিলেন, বিলাল। অর্থাৎ বিলাল (রা.) এর জুতার ধ্বনি শুনেছেন। তখন আমি একটি অট্টালিকা দেখতে পেলাম যার আঙিনায় একজন কিশোরী রয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ অট্টালিকা কার? তিনি বললেন, এটা উমর ইবন খাত্তাবের। তখন সেখানে প্রবেশ করে দেখতে আমার ইচ্ছা হলো, কিন্তু (হে উমর!) এ সময় তোমার আত্মমর্যাদাবোধের কথা আমার মনে হলো (তাই আমি তা করিনি)। একথা শুনে হযরত উমর (রা.) বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথেও কি আমার আত্মমর্যাদাবোধ চলে? (বুখারী; মুসলিম; মিশকাত, পৃষ্ঠা ৫৫৭)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ جَعَلَ الْحَقَّ عَلٰى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ. رواه الترمذى وفى رواية الى داود عن أبي ذر قال إنَّ اللهَ وَضَعَ الحَقَّ على لِسانِ عُمَرَ يَقولُ به. (مشكوة، ص-৫৫৭)
-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা হযরত উমর (রা.) এর মুখে ও অন্তরে হক রেখে দিয়েছেন অর্থাৎ তার জবান দিয়ে আল্লাহ সত্য প্রকাশ করেন। (তিরমিযী) আবূ দাঊদ শরীফে হযরত আবূ যর গিফারী (রা.) থেকে অনুরূপ এক বর্ণনায় রয়েছে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা হক হযরত উমর (রা.) এর জিহ্বায় রেখে দিয়েছেন এবং তা দিয়ে তিনি (উমর) কথা বলেন। (মিশকাত, পৃষ্ঠা ৫৫৭)
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা.) এর কারামত
اَخْرَجَ الْبُخَارِىُّ عَنْ اَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لقَدْ كَانَ فِيما قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ مُحَدَّثُونَ، فإنْ يَكُ في أُمَّتي أحَدٌ، فإنَّه عُمَرُ. (متفق عليه، مشكوة ৫৫৬)
-ইমাম বুখারী (র.) হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের মধ্যে এমন কিছু লোক ছিলেন যাদের অন্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম করা হতো। আর আমার উম্মতের মধ্যে যদি এমন কেউ থেকে থাকেন তাহলে তিনি হচ্ছেন হযরত উমর (রা.)। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
উক্ত হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো হযরত উমর (রা.) ইলহামের অধিকারী ছিলেন। আর তার এ গুণ কারামতেরই অন্তর্ভুক্ত। তাঁর অন্যতম কারামত হলো, তাঁর মত আল্লাহর ওহী এবং কিতাবের সাথে মিলে যেত। প্রায় বাইশটি বিষয় এমন রয়েছে যে, হযরত উমর (রা.) এর ফয়সালা অনুযায়ী পবিত্র কুরআনের আয়াত কিংবা আল্লাহর ওহী নাযিল হয়েছে।

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ وَجَّهَ عُمَرُ جَيشًا، ورَأَّسَ عَلَيْهِمْ رَجُلًا يُدعٰى سَارِيَةً وَفَبَيْنَا عُمَرُ يَخْطُبُ جَعَلَ يُنادِيْ يَا سَارِيَةُ الْجَبَلَ ثَلَاثًا، ثُمَّ قَدِمَ رَسُوْلُ الْجَيْشِ فَسَأَلَهُ عُمَرُ، فَقَالَ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ هُزِمْنَا فَبَيْنَا نَحْنُ كَذٰلِكَ إِذْ سَمِعْنَا صَوْتًا يُنَادِيْ يَا سَارِيَةُ الْجَبَلَ ثَلَاثًا، فَأَسْنَدْنَا ظَهْرَنَا إِلَى الْجَبَلِ فَهَزَمَهُمُ اللهُ، قَالَ فَقِيْلَ لِعُمَرَ إِنَّكَ كُنْتَ تَصِيْحُ بِذَالِكَ وَذَالِكَ الْجَبَلُ الَّذِى كَانَ سَارِيَةُ عِنْدَهُ بِنَهَاوَنْدَ مِنْ اَرْضِ الْعَجَمِ قَالَ اِبْنُ حَجَرٍ فِى الْاِصَابَةِ اِسْنَادُهُ حَسَنٌ.
-হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উমর (রা.) হযরত সারিয়া (রা.) এর নেতৃত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। একদা হযরত উমর (রা.) মদীনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববীর মিম্বর শরীফে খুতবা প্রদানরত অবস্থায় তিনবার “হে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে মনোনিবেশ করো” কথাটি উচ্চারণ করলেন। কিছুদিন পর যখন উক্ত বাহিনীর কোনো একজন দূত মদীনায় ফিরে আসলেন, তখন হযরত উমর (রা.) তাঁর নিকট যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন দূত জবাব দিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার উপক্রম ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনবার আমরা يَا سَارِيَةُ الْجَبَل এ আওয়াজটি শুনতে পেলাম। তখন আমরা পাহাড়ের দিকে সরে গিয়ে পাহাড়ে আমাদের পৃষ্ঠদেশ ঠেস লাগিয়ে দিলাম এবং আল্লাহ পাক শত্রুদেরকে পরাজিত করে আমাদের বিজয় দান করলেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) বলেন, তখন লোকেরা হযরত উমর (রা.) কে বললেন, আপনি জুমুআর দিন মধ্যখানে এ আওয়াজ দিয়েছিলেন। এই পাহাড় যার নিকটে হযরত সারিয়া (রা.) ও তাঁর বাহিনী অবস্থান করেছিল তা প্রাচ্যের ভূখণ্ড নেহাওন্দ (সিরিয়ায়) নামক স্থানে ছিল (যা মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রায় সাতশত মাইল দূরে অবস্থিত)।
আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী (র.) তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ الاصابة فى تميز الصحابة নামক গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করে এর সনদ হাসান পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন।
তাছাড়া মিশকাত শরীফে ইমাম বাইহাকী (র.) এর দালাইলুন নাবুওয়াত গ্রন্থের রেফারেন্সে হাদীসটি নিম্নরূপ বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ اَنَّ عُمَرَ بَعَثَ جَيشًا، وأمَّر عليهِمْ رجُلًا يُدعى سارِيةَ وفَبَينا عُمرُ يَخطُبُ فَجَعلَ يصيح يا سارِيُ الجبَلَ فأسنَدْنَا ظَهرَنا إلى الجبَلِ فهزَمَهُم اللهُ تعالى. (رواه البيهقى فِى دَلَائِلِ النُّبُوَّة، مشكوة ৫৪৬)
-হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উমর (রা.) একদল সৈন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে (সিরিয়ায় নেহাওন্দ নামক স্থানে) প্রেরণ করলেন এবং তাদের বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করলেন হযরত সারিয়া নামক জনৈক সাহাবীকে। এমতাবস্থায় হযরত উমর (রা.) মসজিদে নববীতে খুতবা দান করছিলেন হঠাৎ يا سارى الجبل বলে চিৎকার করে উঠলেন। অর্থাৎ ‘হে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে মনোনিবেশ করো’। তখন আমরা আমাদের পৃষ্ঠদেশ পাহাড়ের গায়ে ঠেস লাগিয়ে দিলাম ফলে আল্লাহ পাক শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করে দিলেন। (মিশকাত, পৃষ্ঠা ৫৪৬)

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لِرَجُلٍ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: جَمْرَةُ، قَالَ: اِبْنُ مَنْ؟ قَالَ اِبْنُ شِهَابٍ. قَالَ: مِمَّنْ؟ قَالَ: مِنَ الْحَرَقَةِ. قَالَ: أَيْنَ مَسْكَنُكَ؟ قَالَ: الْحَرَّةُ. قَالَ: بِأَيِّهَا؟ قَالَ: بِذَاتِ لَظٰى فَقَالَ عُمَرُ: أَدْرِكْ أَهْلَكَ فَقَدْ اِحْتَرَقُوْا.
فَرَجَعَ الرَّجُلُ فَوَجَدَ أَهْلَهُ قَدْ اِحْتَرَقُوْا. أخرجه ابو القاسم فى قوائده ومالك فى المؤطا عن يحيى بن سعيد نحوه واخرجه ابن دريد فى الاخبار المنثورة وابن الكلبى فى الجامع- (تاريخ الخلفاء)
-হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উমর (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? সেই ব্যক্তি উত্তর দিল جمرة অর্থাৎ (প্রজ্জ্বলিত কয়লা)। তখন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার পুত্র? লোকটি উত্তর দিল ابن شهاب অর্থাৎ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ছেলে। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? জবাব দিল حرقة অর্থাৎ (পুঁড়া)। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাসস্থান কোন এলাকায়? জবাব দিলحرة অর্থাৎ প্রচণ্ড উষ্ণ এলাকায়। অতঃপর প্রশ্ন করলেন, হাররার কোন অংশে তোমার বসবাস? সে জবাব দিল ذات لظى অর্থাৎ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বেষ্টিত এলাকায়। তা শ্রবণ করে হযরত উমর (রা.) বললেন, তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যাও এবং গিয়ে দেখ তোমার পরিবার-পরিজন সব জ্বলে ভষ্ম হয়ে গিয়েছে। লোকটি ফিরে গিয়ে সত্যিই তার পরিবার-পরিজনকে ভষ্ম পেল। এ ঐতিহাসিক আশ্চর্যজনক ঘটনাটি আবুল কাসিম বিন বিশরান তার فوائد নামক গ্রন্থে, হযরত ইমাম মালিক (র.) ইয়াহইয়া বিন সাঈদ এর বর্ণনায় ‘মুয়াত্তা’ গ্রন্থে, ইবন দুরাইদ তার الاخبار المشهورة গ্রন্থে এবং ইবন কালবী তার الجامع গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (তারীখুল খুলাফা)

اَخْرَجَ اَبُو الشَّيْخِ فِىْ كِتَابِ الْعِصْمَةِ عَنْ قَيْسِ بْنِ الْحَجَّاجِ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ، قَالَ: لَمَّا فُتِحَتْ مِصْرُ أَتٰى أَهْلُهَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ حِيْنَ دَخَلَ يَوْمٌ مِنْ أَشْهُرِ الْعَجَمِ، فَقَالُوْا: يَا أَيُّهَا الْأَمِيْرُ إِنَّ لِنِيْلِنَا هٰذَا سُنَّةً لَا يَجْرِيْ إِلَّا بِهَا، قَالَ: وَمَا ذَاكَ؟ قَالُوْا: إِذَا كَانَ إِحْدٰى عَشَرَةَ لَيْلَةً تَخْلُوْ مِنْ هٰذَا الشَّهْرِ عَمِدْنَا إِلٰى جَارِيَةٍ بِكْرٍ بَيْنَ أَبَوَيْهَا فَأَرْضَيْنَا أَبَوَيْهَا وَجَعَلْنَا عَلَيْهَا مِنَ الثِّيَابِ وَالْحُلٰي أَفْضَلَ مَا يَكُوْنُ، ثُمَّ أَلْقَيْنَاهَا فِيْ هٰذَا النِّيْلِ، فَقَالَ لَهُمْ عَمْرُو: إِنَّ هٰذَا لَا يَكُوْنُ أَبَدًا فِي الْإِسْلَامِ، وَإِنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ، فَأَقَامُوْا وَالنِّيْلُ لَا يَجْرِي قَلِيْلاً وَلَا كَثِيْرًا، حَتّٰى هَمُّوا بِالْجَلَاءِ، فَلَمَّا رَأٰى ذٰلِكَ عَمْرُو كَتَبَ إِلٰى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِذٰلِكَ، فَكَتَبَ لَهُ أَنْ: قَدْ أُصِبْتَ بِالَّذِيْ قُلْتَ، وَإِنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ، وَبَعَثَ بِطَاقَةً فِيْ دَاخِلِ كِتَابِهِ، وَكَتَبَ إِلٰى عَمْرٍو: إِنِّيْ قَدْ بَعَثْتُ إِلَيْكَ بِبِطَاقَةٍ فِيْ دَاخِلِ كِتَابِيْ فَأَلْقِهَا فِي النِّيْلِ، فَلَمَّا قَدِمَ كِتَابُ عُمَرَ إِلٰى عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَخَذَ الْبِطَاقَةَ فَفَتَحَهَا، فَإِذَا فِيْهَا: مِنْ عَبْدِ اللهِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَمِيْرِ الْمُؤْمِنِيْنَ إِلٰى نِيْلِ مِصْرَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنْ كُنْتَ تَجْرِي مِنْ قِبَلِكَ فَلَا تَجْرِ، وَإِنْ كَانَ اللهُ يُجْرِيْكَ فَأَسْأَلُ اللهُ الْوَاحِدَ الْقَهَّارَ أَنْ يُجْرِيْكَ، فَأَلْقَى الْبِطَاقَةَ فِي النِّيْلِ قَبْلَ الصَّلِيْبِ بِيَوْمٍ، فَأَصْبَحُوْا وَقَدْ أَجْرَاهُ الله تَعَالٰى سِتَّةَ عَشَرَ ذِرَاعًا فِي لَيْلَةٍ وَاحِدَةٍ، فَقَطَعَ اللهُ تِلْكَ السُّنَّةَ عَنْ أَهْلِ مِصْرَ إِلَى الْيَوْمِ. (تاريخ الخلفاء- ৯০/৯১)
-হযরত আবুশ শাইখ তাঁর রচিত ‘আল ইসমা’ কিতাবে হযরত কাইস ইবন হাজ্জাজ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন মুসলমানগণ মিশর বিজয় লাভ করলেন, তখন সেখানে হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) কে গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। একদা মিশরবাসী একটি প্রতিনিধি দল তাদের অনারবী মাস অর্থাৎ ইংরেজি বর্ষের কোনো এক মাসের প্রথম তারিখে হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) এর দরবারে আগমন করে বলল, হে গভর্নর! আমাদের নীল নদ সম্পর্কে একটি প্রথা চালু রয়েছে যা পালন না করলে নীল নদে পানি প্রবাহিত হয় না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তা কী? তারা বললেন, যখন এ মাসের এগারো তারিখের রাত অতিবাহিত হবে তখন প্রতি বছর আমরা একজন যুবতী কুমারী মেয়েকে তার পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করে খুব ভালো পোশাকাদি ও চমৎকার অলংকারাদি পরিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজিয়ে নীল নদে বিসর্জন দিয়ে থাকি। তখন নীল নদ পানি প্রবাহিত করে থাকে। হযরত আমর ইবন আস (রা.) তা শ্রবণ করে বললেন, ইসলাম এটি কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম পূর্বের সকল কুপ্রথা রহিত করে দিয়েছে। এটা শুনে মিশরীয়রা তা থেকে বিরত থাকল। কিন্তু নীল নদ পানি প্রবাহ করা থেকে বিরত থাকল। এজন্য মিশরের লোকেরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার মনস্থ করল। (কারণ নীল নদ প্রবাহিত না হলে মিশরে দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে) হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) যাবতীয় বিষয় উল্লেখপূর্বক আমীরুল মুমিনীন উমর (রা.) এর নিকট একখানা পত্র প্রেরণ করলেন। উত্তরে হযরত ফারুকে আযম (রা.) লিখলেন, হে আমর ইবন আস! আপনি যা করেছেন সবই ঠিক করেছেন। কেননা ইসলাম জাহিলী যুগের সকল কুপ্রথা রহিত করে দিয়েছে। তিনি হযরত আমর ইবন আস (রা.) এর নিকট লিখলেন, আমি পত্রের ভিতর একটি চিরকুট আপনার নিকট প্রেরণ করছি, এটি নীল নদে নিক্ষেপ করবেন।
আমীরুল মুমিনীন উমর (রা.) এর প্রেরিত পত্রখানা যখন মিশরে হযরত আমর (রা.) এর নিকট আসল, তিনি তা খুলে পাঠ করলেন এবং ভিতরে নীল নদের নিকট লিখা চিরকুটটিও খুললেন ও পাঠ করলেন। উক্ত পত্রের ভাষ্য ছিল নি¤œরূপ, ‘আল্লাহর বান্দা, আমীরুল মুমিনীন উমর এর পক্ষ থেকে মিশরের নীল নদের নিকট হামদ ও সালাতের পরÑ যদি তুমি তোমার নিজের পক্ষ থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকো তাহলে তোমার প্রবাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর যদি আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করে থাকেন তাহলে এক আল্লাহ যিনি কাহহার তার সমীপে দুআ করি যেন তিনি তোমাকে প্রবাহিত করেন।’ হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) صليب নামক তারকা প্রকাশ পাওয়ার পূর্বের রাতে এ (বিস্ময়কর) পত্রখানা নীল নদে নিক্ষেপ করলেন। (সুবহানাল্লাহ) পরবর্তী দিন ভোরবেলা লোকেরা স্বচক্ষে দেখতে পেল যে, নীল নদের পানি ষোল হাত উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহ পাক (হযরত উমর (রা.) এর পত্রের ওয়াসীলায় নদী প্রবাহিত করে দিয়ে) মিশরবাসীদের সে কুপ্রথা আজ তথা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ করে দিলেন। (তারীখুল খুলাফা, পৃষ্ঠা ৯০-৯১)
উক্ত ঘটনাটি খলীফা উমর (রা.) এর একটি জীবন্ত কারামত। মানুষ যখন আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হয়ে যায় তখন আল্লাহ গোটা সৃষ্টিজগতকে তার অধীনস্থ করে দেন। তাইতো বলা হয় من له المولى فله الكل অর্থাৎ জিসকা রব উসকা সব।

عَنْ يَحْيٰى بْنِ اَيُّوْبَ الْخُزَاعِىْ قَالَ سَمِعْتُ مَنْ يَذْكُرُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ اَنَّهُ ذَهَبَ اِلٰى قَبْرِ شَابٍّ فَنَادَاهُ يَا فُلَانُ وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ فَأَجَابَهُ الْفَتٰى مِنْ دَاخِلِ الْقَبْرِ يَا عُمَرُ قَدْ أَعْطَانِيْهِمَا رَبِّيْ فِي الْجَنَّةِ مَرَّتَيْنِ. (قرة العينين)
-হযরত ইয়াহইয়া বিন আইয়ুব আল খাজায়ী (র.) বলেন, আমি জনৈক ব্যক্তিকে উল্লেখ করতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, একদা হযরত উমর (রা.) জনৈক যুবকের কবরের পাশ দিয়ে যাত্রাকালে বলেছিলেন, হে অমুক! যে তার রবকে ভয় করে তার জন্য রয়েছে দুটো জান্নাত। তখন কবরের ভিতর থেকে উক্ত যুবক হযরত উমর (রা.) কে ডেকে বলে, হে উমর! আমার রব আল্লাহ তাআলা আমাকে এ দুটি জান্নাত দুবারই প্রদান করেছেন। (কুররাতুল আইনাইন, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮)
হাফিযে হাদীস ইবন আসাকির (র.)ও উক্ত ঘটনাটি অত্যন্ত দীর্ঘ করে বর্ণনা করেছেন।

عَنْ مَعْدَانِ بْنِ اَبِى طَلْحَةَ فِىْ قِصَّةٍ اَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ رُؤْياً كَانَ دِيْكاً أَحْمَرَ نَقَّرَنِيْ نَقْرَتَيْنِ وَلَا أَرٰى ذَالِكَ إِلَّا لِحُضُوْرِ أَجَلِيْ. اَخْرَجَهُ اِبْنُ اَبِى شَيْبَةَ. (قرة العينين، ص ১০৩)
-হযরত মা’দান বিন আবূ তালহা (রা.) থেকে এক দীর্ঘ ঘটনায় রয়েছে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একদা বললেন, হে লোক সকল! আমি (স্বপ্নে) দেখলাম যে, একটি লাল মোরগ আমাকে দুটো ঠুকর মেরেছে। এর দ্বারা আমি মনে করি আমার মৃত্যু একেবারেই সন্নিকটে। এ ঘটনাটি ইবন আবূ শাইবাও বর্ণনা করেছেন। (কুররাতুল আইনাইন, পৃষ্ঠা ১০৩)
বাস্তবেই দেখা গেল এ স্বপ্ন বর্ণনা করার কিছুদিনের মধ্যেই হযরত মুগীরা বিন শোবা (রা.) এর ক্রীতদাস অগ্নিপূজক আবূ লুলু আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা.) কে নামাযরত অবস্থায় আঘাত করল এবং এ আঘাতের কারণেই তিনি শাহাদাতবরণ করলেন।

عَنْ مُحَمَّد بْنَ سَعْدِ بْنِ اَبِىْ وَقَّاصٍ اَنَّ اَبَاهُ قَالَ اِسْتَأْذَنَ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَعِنْدَهُ نِسْوَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ يُكَلِّمْنَهُ ويَسْتَكْثِرْنَهُ، عَالِيَةً أَصْوَاتُهُنَّ عَلٰى صَوْتِهِ، فَلَمَّا اسْتَأْذَنَ عُمَرُ بنُ الخَطّابِ قُمْنَ فَبادَرْنَ الحِجابَ، فأذِنَ له رَسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَدَخَلَ عُمَرُ ورَسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَضْحَكُ، فَقالَ عُمَرُ: أضْحَكَ اللهُ سِنَّكَ يا رَسولَ اللهِ، فَقالَ النبيُّ صلى الله عليه وسلم: عَجِبْتُ مِن هٰؤُلاءِ اللَّاتي كُنَّ عِندِي، فَلَمّا سَمِعْنَ صَوْتَكَ ابْتَدَرْنَ الحِجابَ فَقالَ عُمَرُ: فأنْتَ أحَقُّ أنْ يَهَبْنَ يا رَسولَ اللهِ، ثُمَّ قالَ عُمَرُ: يا عَدُوّاتِ أنْفُسِهِنَّ أتَهَبْنَنِي ولا تَهَبْنَ رَسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ فَقُلْنَ: نَعَمْ، أنْتَ أفَظُّ وأَغْلَظُ مِن رَسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقالَ رَسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: إيهًا يا ابْنَ الخَطَّابِ، والذي نَفْسِي بيَدِهِ ما لَقِيَكَ الشَّيْطانُ سالِكًا فَجًّا قَطُّ إلَّا سَلَكَ فَجًّا غيرَ فَجِّكَ. (رواه البخارى، ج-১، ص-৫২০)
-মুহাম্মদ বিন সাদ বিন আবূ ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা সাদ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, একদা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গৃহে প্রবেশ করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন কুরাইশের কতিপয় মহিলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উচ্চ আওয়াজে বাক্যালাপ করছিলেন। যখন হযরত উমর (রা.) গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন, তখন তারা অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর (রা.) কে ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলে তিনি প্রবেশ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাস্যরত অবস্থায় দেখতে পেয়ে হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন আমি এ সকল মহিলাদের ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করলাম যারা আমার নিকট অবস্থান করছিল, এমতাবস্থায় তোমার আওয়াজ শুনে তারা তাড়াতাড়ি পর্দার আড়ালে চলে গেল। হযরত উমর (রা.) উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের তো আপনাকে বেশি ভয় করা উচিত ছিল। অতঃপর উমর (রা.) মহিলাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে নিজেদের উপর অত্যাচারকারিনী মহিলারা! তোমরা আমাকে ভয় কর অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভয় কর না। জবাবে তারা বললেন, আপনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক কঠোর। তখন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই হে ইবনুল খাত্তাব! শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে রাস্তা দিয়ে বিচরণ করো সে রাস্তা দিয়ে শয়তানও চলে না। সে তোমার রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করে।
হযরত উমর (রা.) কে শয়তানের এ ধরনের ভয় করা তার সুস্পষ্ট কারামত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫২০)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ مَا سَمِعْتُ عُمَرَ لِشَيْءٍ قَطُّ يَقُوْلُ: إِنِّيْ لَاظُنُّهُ كَذَا إِلَّا كَانَ كَمَا يَظُنُّ، بَيْنَمَا عُمَرُ جَالِسٌ إِذْ مَرَّ بِهِ رَجُلٌ جَمِيْلٌ فَقَالَ لَقَدْ أَخْطَأَ ظَنِّيْ أَوْ إِنَّ هٰذَا عَلٰى دِيْنِهِ فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَوْ لَقَدْ كَانَ كَاهِنَهُمْ، عَلَيَّ الرَّجُلَ فَدُعِيَ لَهُ فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ فَقَالَ مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ اسْتُقْبِلَ بِهِ رَجُلٌ مُسْلِمٌ قَالَ فَإِنِّيْ أَعْزِمُ عَلَيْكَ إِلَّا مَا أَخْبَرْتَنِيْ قَالَ كُنْتُ كَاهِنَهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ قَالَ فَمَا أَعْجَبُ مَا جَاءَتْكَ بِهِ جِنِّيَّتُكَ قَالَ بَيْنَمَا أَنَا يَوْمًا فِي السُّوقِ جَاءَتْنِيْ أَعْرِفُ فِيْهَا الْفَزَعَ فَقَالَتْ أَلَمْ تَرَ الْجِنَّ وَإِبْلَاسَهَا وَيَأْسَهَا مِنْ بَعْدِ إِنْكَاسِهَا وَلُحُوقَهَا بِالْقِلَاصِ وَأَحْلَاسِهَا قَالَ عُمَرُ صَدَقَ بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ عِنْدَ آلِهَتِهِمْ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ بِعِجْلٍ فَذَبَحَهُ فَصَرَخَ بِهِ صَارِخٌ لَمْ أَسْمَعْ صَارِخًا قَطُّ أَشَدَّ صَوْتًا مِنْهُ يَقُوْلُ يَا جَلِيْحْ أَمْرٌ نَجِيْحْ رَجُلٌ فَصِيْحْ يَقُوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَوَثَبَ الْقَوْمُ قُلْتُ لَا أَبْرَحُ حَتَّى أَعْلَمَ مَا وَرَاءَ هَذَا ثُمَّ نَادَى يَا جَلِيْحْ أَمْرٌ نَجِيْحْ رَجُلٌ فَصِيْحْ يَقُوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَقُمْتُ فَمَا نَشِبْنَا أَنْ قِيْلَ هَذَا نَبِيٌّ. (بخارى، ج-১، ص:৫৪৫-৫৪৬)
-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি (স্বীয় পিতা উমর রা. সম্পর্কে বলেন) যে, উমর (রা.) অতিশয় সঠিক অনুমান ও শুদ্ধ ধারণাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। কোনো সময়ে তিনি কোনো ধারণা বা অনুমান করলে আমি কখনো তার ব্যতিক্রম ঘটতে দেখিনি।
একদা উমর (রা.) বসেছিলেন। তাঁর নিকট দিয়ে একজন সুশ্রী মানুষ পথ অতিক্রম করল। তিনি তার সম্পর্কে বললেন, আমার ধারণা অবাস্তব না হলে ঐ ব্যক্তি অমুসলিম হবে; আর যদি সে এখন মুসলমান হয়েই থাকে তবে সে পূর্বে নিশ্চয়ই গণক (জিন-ভূতের দ্বারা গোপন খবর সংগ্রহকারী) ছিল। এ মন্তব্য করে তিনি লোকটিকে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। তাকে ডেকে আনা হলো। তিনি তার সম্মুখেও উক্ত মন্তব্য করলেন। সেই ব্যক্তি বললেন, একজন মুসলমানকে এরূপ অমুসলিম সন্দেহ করা সঙ্গত কি? অর্থাৎ আমি তো মুসলমান। তখন হযরত উমর (রা.) তাকে কসম দিয়ে বললেন, বল তো তুমি পূর্বে কী ছিলে? সে বলল, আমি পূর্বে গণক ছিলাম। উমর (রা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, যে জিনটির সম্পর্ক তোমার সঙ্গে ছিল সে সর্বাধিক আশ্চর্যজনক বিষয় তোমাকে কী জানিয়েছিল? তিনি বললেন, একদা আমি বাজারে ছিলাম, আকস্মাৎ সে জিনটি ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় আমার নিকট উপস্থিত হলো এবং বলল, তুমি জানো কি? জিনগণ এক ভীষণ দূরবস্থার সম্মুখীন হয়েছে (তারা দীর্ঘকাল মানুষ জাতিকে নানা প্রকার গর্হিত কাজে লিপ্ত রেখে স্বৈরাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছিল সে অবস্থা আর তারা বিরাজমান রাখতে পারবে না বলে) তারা নিরাশ হয়ে পড়েছে। তাদের দুর্দিনের সূচনা হয়েছে, ফলে তারা নিজেদের সবকিছু গুটিয়ে (সাধারণ লোকালয় হতে অনাবাদ এলাকার দিকে) দ্রæত পালাবার চেষ্টায় লেগে গিয়েছে।
হযরত উমর (রা.) ঘটনা শ্রবণান্তে বললেন, তোমার জিনটি তোমাকে যে নতুন পরিস্থিতির খবর দিয়েছিল তা সত্যই ছিল। আমারও (ইসলাম পূর্বের) অনুরূপ একটি ঘটনা রয়েছে। একদা আমি মূর্তি ঘরে শুয়েছিলাম। এক ব্যক্তি এসে মূর্তিগুলোর সামনে একটি গো-শাবক বলিদান করল। তখন বিকট আওয়াজে একটি ঘোষণা শুনতে পেলাম- তদপেক্ষা বিকট আওয়াজ আমি জীবনে কখনো শুনিনি। সেই ঘোষণাটি ছিল এই- হে জালীহ! একটি সাফল্য অর্জনকারী কর্মের সূচনা হয়েছে। এক সুপরিচিত ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যার ঘোষণা হবে- لا اله الا الله অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। উক্ত আওয়াজে ভয়ে উপস্থিত লোকজন সকলেই ছুটাছুটি করতে লাগল। (উমর রা. বলেন) তখন আমি মনে মনে এ প্রতিজ্ঞা করলাম, এ ঘোষণাটির তথ্য সঠিকরূপে জ্ঞাত না হওয়া পর্যন্ত আমি এর পিছনে লেগে থাকব। কিছু সময় আমি সেখানেই অপেক্ষা করলাম এবং পুনরায় ঐরূপ বিকট আওয়াজের ঘোষণা শুনলাম, হে জালীহ! সাফল্য অর্জনকারী কর্মের সূচনা হয়ে গিয়েছে। সুপরিচিত ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে, যার ঘোষণা হবে- لا اله الا الله অতঃপর আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। অল্প দিনের মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ল (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) নবীর আবির্ভাব হয়েছে। (বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪৫-৫৪৬)
উক্ত ঘটনায় হযরত উমর (রা.) সেই ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণাপ্রসূত যা বলেছিলেন তা সরাসরি মিলে গিয়েছিল। সুতরাং তা তাঁর সুস্পষ্ট একটি কারামত।

ফেইসবুকে আমরা...