1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
গণঅভ্যূত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইসলামপন্থি দল
মারজান আহমদ চৌধুরী
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটনাবহুল দুটি মাস পার হলো। স্বৈরাচারের পতন, নতুন পাতি-স্বৈরাচারের উত্থান, দখলদারি, ভাঙচুর, হত্যা, বিরোধ-বিদ্রোহ ও মাস্টারমাইন্ড নামক নাটকের মঞ্চায়ন— কী দেখিনি এই দুটি মাসে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জাতি হিসেবে আমরা এখনও যথেষ্ট ‘বালেগ’ হয়ে উঠতে পারিনি।

দেশের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে প্রথমেই আসে সমন্বয়ক নামক একটি শ্রেণীর উত্থানের গল্প। অবশ্যই, সমন্বয়ক কোনো ‘শ্রেণী’ নয় এবং তাদেরকে আলাদা একটি শ্রেণী বলে তাচ্ছিল্য করার প্রয়োজন দুই মাস আগেও ছিল না। উল্টো হাসিনা সরকারের পতনের উপাখ্যানে তারা বারুদের ভূমিকায় ছিলেন। একটি কৃতজ্ঞ জাতি কখনও তাদের অবদান অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু এরপর আসলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসেই শুরু করলেন অতিমাত্রায় ছাত্রবন্ধনা। সেই যে শুরু হলো, তা আর থামার নাম নেই। ইউনূস সাহেব দেশে থাকেন কিংবা বিদেশে; তাঁর মুখে ছাত্র ছাড়া আর কোনো কালাম নেই। যেন কেবল ছাত্ররা, বা আরও স্পষ্ট করে বললে সমন্বয়করা একাই ঘটিয়ে দিয়েছেন এই গণঅভ্যুত্থান। সমন্বয়কদের মধ্য থেকে দুজনকে উপদেষ্টা বানানো হলো, বাকি দুই-তিনজন দেশব্যাপী বিপ্লবের স্পিরিটকে সংহত রাখতে তৎপরতা শুরু করলেন। দিন দিন সমন্বয়কদের সংখ্যা ও খবরদারি বাড়তেই আছে। অথচ রাজনীতির মঞ্চে অপারদর্শী এসব তরুণ বুঝতেই পারছেন না যে, গণঅভ্যুত্থান পরিচালনা করা আর সরকার পরিচালনা করা এক বিষয় নয়। এরই মধ্যে বন্যার সময় টিএসসিতে উত্তোলিত ত্রাণের কোটি টাকা ব্যাংকে রেখে দেওয়া, সচিবালয়ে গিয়ে আমলাদের পদায়ন ও বদলিতে খবরদারি করা, দেশব্যাপী সফরকালে এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিতে চাওয়া, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও প্রক্টরকে শপথ পাঠ করানো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-সমন্বয়কদের অবহেলা করাসহ নানাবিধ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পরিচিত সমন্বয়কদের প্রতি। বলছি না, সব অভিযোগ শতভাগ সত্য। কিন্তু এসব অভিযোগ সমন্বয়কদেরকে আলাদা একটি এলিট শ্রেণী বানিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইদানিং সমন্বয়কদের মধ্যে গ্রুপিং ও ভাঙনের কানাঘুষাও শোনা যাচ্ছে। তরুণ সমন্বয়করা যেটি বুঝতে পারছেন না, তা হলো, খবরদারি করার জন্য প্রথমে জিম্মাদারি নিতে হয়। জিম্মাদারিবিহীন খবরদারি কেউ পছন্দ করে না। সমন্বয়কদের মধ্যে কেবল দুজন উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রীয় দপ্তরের জিম্মাদার। তাদের জবাবদিহি আছে। বাকিদের জিম্মাদারি নেই, তাই জবাবদিহিও নেই। সুতরাং তারা কোন আক্কেলে সচিবালয়ে গিয়ে আমলাদের ওপর খবরদারি করেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিকে কোন আক্কেলে তারা শপথ পাঠ করান? কোন আক্কেলেই বা ড. ইউনূস জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সব ক্রেডিট ছাত্রদের দিয়ে দেন? এ অভ্যুত্থান তো ছিল আপামর জনতার। তাছাড়া সমন্বয়ক বা নায়ক বলতেই কেবল ঢাবির ছাত্রদেরকে সামনে নিয়ে আসা হয় কেন? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ত্যাগ ও সাহসিকতার গল্প কে বলবে?

কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উচিত ২০১৩ সালে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ ও এর মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া। গণজাগরণ মঞ্চের মূল দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীর বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের একটি আইন পরিবর্তন করা, যদিও সে দাবিও বিতর্কিত ছিল। সরকার আইন পরিবর্তন করেছিল। কিন্তু মঞ্চের মুখপাত্ররা ততদিনে মজা পেয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে পাদপ্রদীপের আলোয় এসে তারা আর সাধারণ জীবনে ফিরে যাননি। মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ডাক্তারি পেশা ছেড়ে ততদিনে পেশাদার ‘মুখপাত্র’ বনে গিয়েছিলেন। হঠাৎ ধেয়ে আসা জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং পরের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে রীতিমতো জামানত হারিয়েছিলেন। ইমরান ও তার কমরেডরা ধরে নিয়েছিলেন শাহবাগে যত লোক জড়ো হয়েছিল, সবাই তাদের ভক্ত-কর্মী। ইমরান ততদিনে নিজেকে লেনিন বা খোমেনি ভাবা শুরু করেছিলেন। ফলাফল, সেই গণজাগরণ মঞ্চ আজ মানুষের বিতৃষ্ণা ও হাসির পাত্র। মুখপাত্র গং বুঝতে পারেনি কখন কোথায় থামতে হবে। থামতে না পারার কারণে কালের গর্ভে তারা হারিয়ে গেছেন।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়কদেরও এখন থামার সময় হয়েছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাদের ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী দুই মাসে তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ বেআইনি কর্মকাণ্ডের শক্তিশালী অভিযোগ উঠেছে। মানুষ ভাবতে শুরু করেছে, আওয়ামীলীগ-বিএনপির দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-সাংসদরা যা যা করে গেছেন, সমন্বয়করা তা-ই করছেন বা করার চেষ্টা করছেন। তারা যে জেলায়ই যাচ্ছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ধাওয়া খেয়ে ফিরছেন; নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে। কোথাও কোথাও অর্থ আত্মসাতের মতো অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ভাবার বিষয় হলো, অল্প কয়েকজনকে বাদ দিলে দেড় শতাধিক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের সবাই শিক্ষার্থী। এখন তাদের কাজ হলো সচিবালয়ে ভিড় না করে নিজ-নিজ শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়া এবং তারকা হওয়ার চেষ্টা বা আন্দোলনকে ব্যবহার করে পয়সা রোজগারের চেষ্টা না করে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া। আর রাজনীতি করতে হলে দল গঠন করে, নিবন্ধন করে, রাষ্ট্রীয় সুবিধা না নিয়ে তৃণমূল থেকে নিজেদেরকে সুসংহত করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাজনীতি করা। নইলে আজকের সমন্বয়করা আগামীকাল ইমরান এইচ সরকার হতে দেরি হবে না।

জিম্মাদারিবিহীন রাজনৈতিক খবরদারির পাশাপাশি সমন্বয়কদের উচিত ইসলাম নিয়ে খবরদারি বন্ধ করা। সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশে নতুন ধারার একটি ‘লালনবাদী’ ইসলামকে ইন্ট্রোডিউস করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তারা ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ধারণা দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ‘ইনক্লুসিভ সমাজ’ নামক পরিভাষাটি সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডাররা ব্যবহার করে থাকে। তাই সমন্বয়কদের বুঝা উচিত, এমনসব পরিভাষা যদি তারা ব্যবহার করেন, যেগুলো বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে ট্রান্সজেন্ডারদের আমদানি করার ইঙ্গিত বহন করে, তাহলে এর প্রতিক্রিয়া ভয়ংকর হবে। তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বাংলার মানুষ লালনের সুফীবাদকে নয়; শাহজালালের সূফীবাদকে আঁকড়ে ধরে আছে। এ সূফীবাদ শরীআতী-বেশরীআতী সবাইকে শিলপাটায় ছেঁচে মোরব্বা বানায় না। বরং শাহজালালের সুফীবাদকে দাওয়াত, সাম্য ও মমত্ববোধ যেমন আছে, তেমনই শরীআতের পাবন্দি এবং জিহাদও আছে। তাই আমেরিকাকে খুশি করতে গিয়ে ইনক্লুসিভ সমাজের নামে তারা যেন ট্রান্সজেন্ডার ফিতনার পালে হাওয়া না দেন। এটি এ দেশের মুসলমানরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

একইসাথে ড. ইউনূসের উচিত অতিমাত্রায় ছাত্রবন্ধনা থেকে বের হওয়া এবং নিজের ক্যারিশমা ব্যবহার করে পশ্চিমা অনুদান হাসিল করার প্রয়াসের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ঠিক করার চেষ্টা করা। রাষ্ট্রব্যবস্থা এখনও ভঙ্গুর, পুলিশসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করছে না৷ অথচ ড. ইউনূসের হালচাল দেখে মনে হচ্ছে, হাসিনা যেরকম শেখ মুজিবকে বাঙালি জাতির ত্রাণকর্তা বানিয়ে বিশ্বমঞ্চে হাযির করেছিলেন, ইউনূস সেরকম মাহফুজ আলমকে জাতির মাস্টারমাইন্ড বানিয়েই ছাড়বেন। অথচ এর কোনো দরকার ছিল না। যার যা অবদান, জাতি এমনিতেই তা স্মরণ রাখবে।

দ্বিতীয়ত, দেশের ইসলামপন্থি দলগুলোর উচিত নিজেদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করা। আওয়ামীলীগ আমলে দেশের বেশিরভাগ ইসলামপন্থি দল কোণঠাসা ছিল। হঠাৎ করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে তারা যেভাবে আস্ফালন শুরু করেছে, তাতে জনমনে বিতৃষ্ণার জন্ম হতে বেশি বাকি নেই। মসজিদ-মাদরাসার পদ দখল, মাযার ভাঙ্গার হুমকি, ন্যূনতম মতভিন্নতার কারণে প্রতিপক্ষের ওপর অপবাদ ও ঘৃণা ছড়ানোর পুরোনো খেলায় ইসলামপন্থিরা ভালোই মজে উঠেছেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কথাই ধরা যায়। এতদিন তারা মজলুম ছিলেন। কিন্তু সরকার পতনের পর আকস্মিকভাবে তাদের মধ্যে পতিত স্বৈরাচারের বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। জোরপূর্বক মাদরাসা প্রধানের পদ দখল করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদে নিজেদের মানুষকে পদায়ন করা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ-অপবাদ, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, ন্যুনতম সমালোচনা সহ্য করতে না পারা, নিজেদের বেলায় হেকমতি উকিল আর অন্যদের বেলায় কঠোর বিচারকের ভূমিকা নেওয়া, অসহিষ্ণুতা, গালিগালাজ কিছুই তারা বাদ রাখছেন না। ওদিকে নিজেদের কর্মকাণ্ডকে আড়াল করতে দলীয় আমিরকে সাধুপুরুষ বানিয়ে হাযির করেছেন। এটি অবশ্য নতুন নয়। পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের পরাজয়ের পর পরবর্তী সব নির্বাচনে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদূদীকে তারা এরকম সাধুপুরুষ বানিয়ে হাযির করেছিলেন। যদিও ফায়দা কিছুই হয়নি। একই কাজ এখন ডা. শফিকুর রহমানের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে। এসব বাদ দিয়ে জামায়াত-শিবিরের ভাবা উচিত যে, এত সংঘবদ্ধ দল, এত আর্থিক সক্ষমতা, এত ডেডিকেটেড কর্মী ও ক্যাডার বাহিনী থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তারা কেন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাননি? কেন জামায়াত-শিবির এখনও অনেকের কাছে জুজুর নাম? কেন তারা অন্যান্য ইসলামী দল ও উলামা-মাশাইখের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন? ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়ে যাওয়া জামায়াত কেন বারবার ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আপোস করে নিজেদের দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে? দলীয় প্রান্তিকতা বাদ দিয়ে উম্মাহ-কেন্দ্রিক ভাবনা কখন আসবে জামায়াতের মধ্যে?

অন্যান্য ইসলামপন্থি গণতান্ত্রিক দলের মধ্যেও ইসলামী আদর্শের পাহারাদারি করার চেয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের একটি চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আলাপ থেকে দূরে গিয়ে তারা সেক্যুলার দলগুলোর বয়ান ধরেছেন। বর্তমান ধর্ম উপদেষ্টা, যিনি হেফাজতে ইসলাম ঘরানার লোক, মাদরাসার ছাত্রদেরকে পূজার সময় মন্দির পাহারা দেওয়ার কথা বলেছেন। হেফাজতের আরেক নেতা বলেছেন, হিন্দুরা যত ইচ্ছা মূর্তি তৈরি করুক, আমরা পাহারা দেব। গণঅভ্যুত্থানের পরপর অস্থিরতার সময় মাদরাসার ছাত্ররা মন্দির ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছেন। তখন এটি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটি কি মাদরাসার ছাত্রদের কাজ? মূর্তি, মন্দির এসবের সাথে ইসলামের যে বুনিয়াদি বিরোধ, তা ভুলে এখন আমরা মন্দির পাহারা দেব? আর মাদরাসার ছাত্রদেরকে যদি মন্দিরের নিরাপত্তা দিতে হয়, তাহলে রাষ্ট্র আছে কীজন্য? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে আজ বহু ইসলামের ছড়াছড়ি। তরুণ ইসলামী তাত্ত্বিকদের খিলাফতি ইসলাম, জামায়াত-হেফাজতের গণতান্ত্রিক ইসলাম, সমন্বয়কদের লোকায়ত নদীময় ইসলাম, মাযারপন্থি ইসলাম, মাযারবিরোধী ইসলাম, মন্দির-মূর্তি পাহারা দেওয়া সেক্যুলার ইসলাম। এতসব ইসলামের ভীড়ে ইসলামের স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে যায় কি না, সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ওদিকে কতিপয় ইসলামপন্থি দল জামাতের আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ড ও প্রোপাগাণ্ডায় কোনঠাসা হয়ে হতাশায় ভুগছেন। তাদের উচিত হতাশার বুদবুদ থেকে বের হয়ে আত্মসমালোচনা করা এবং নিজেদের আদর্শ ও অতীত অবদানকে সামনে এনে নিজেদেরকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। মনে রাখা উচিত, আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি কেবল রাজনৈতিক দল। কিন্তু একটি ইসলামী দল কেবল রাজনৈতিক দল নয়। রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক অঙ্গনেও তাদের দায় আছে। যারা রাজনীতিতে ক্ষণিকের জন্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন, তাদের উচিত আপাতত কিছুদিনের জন্য কেবল ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে গুরুত্ব দেওয়া। অতীতে যেসব কাজ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে তারা সম্মান কুড়িয়েছেন, সেসব কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি। সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার ফিতনা আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে, পাঠ্যবই সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটিতে নানা অসংগতি আছে। অতএব ইসলামী শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা, পাঠ্যবইয়ে ইসলাম ও মুসলিম সমাজকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে এমন বিশেষজ্ঞদেরকে সংশোধন কমিটিতে নিযুক্ত করা, অনৈসলামিক সংস্কৃতির আমদানি রুখে দেওয়া, দেশে দ্বীন ইসলামের স্বার্থ সংরক্ষণ করাসহ নানা ধর্মীয় ইস্যু রয়েছে, যা নিয়ে মাঠে সুসংহত আন্দোলন করে এসব কক্ষপথবিচ্ছিন্ন দল আবারও প্রাসঙ্গিক হতে পারে। একইসাথে প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের সামাজিক গুরুত্বকেও জানান দিতে পারে, যার ইতিবাচক ফলাফল ইতোমধ্যেই দেখা গেছে। এসব না করে হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে কেউ এসে কাউকে উদ্ধার করবে না। ফায়দা হয় আত্মসমালোচনার মাধ্যমে, ফায়দা হয় ভুল সংশোধনের মাধ্যমে, ফায়দা হয় আঘাতের পর পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামের সঠিক আকীদা পোষণ করা প্রতিটি ইসলামপন্থি দলেরই দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। এর জন্য প্রয়োজন হলো, সঠিক ধর্মীয়-রাজনৈতিক ‘বয়ান’ তৈরি করা, সমালোচনা সহ্য করার অভ্যাস করা, জন-আকাঙ্খাকে ঠিকমতো উপলব্ধি করা এবং সময়-সময় আত্ম-মূল্যায়নের মাধ্যমে নিজেদের কক্ষপথ ঠিক রাখা। এতে করে ঘুরে দাঁড়ানো এবং অতীতের মতো দ্বীন ও জাতির খিদমত করা সম্ভব হবে।

ফেইসবুকে আমরা...