1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
আশুরা প্রসঙ্গ
মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী
  • ১৩ আগস্ট, ২০২১

আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে ইসলামী সনের প্রথম মাস মুহাররাম। মুহাররাম মাস আমাদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত: এটি আল্লাহ জাল্লা শানুহু ঘোষিত  হারাম বা সম্মানিত মাস সমূহের একটি। কুরআন কারীমে এসেছে- “নিশ্চয় আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।” ( সূরা তাওবাহ, আয়াত-৩৬)। কোন চারটি মাস সম্মানিত তা অমরা জানতে পারি মহানবীর বাণী হতে। আবূ বাকরাহ (রা.) কর্তৃক নবী (সা.) হতে বর্ণিত, তিনি ফরমান, আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেন সেদিন যেভাবে যামানা ছিল তা আজও তেমনি আছে। বারমাসে এক বছর, এর মধ্যে চারটি মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররাম আর মুদ্বার গোত্রের রাজব যা জামাদিউসসানী ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী।(সহীহ বুখারী)

আল্লাহ তাআলা যা কিছুকে সম্মানিত করেন তাকে সম্মান করা হচ্ছে মুমিনের দায়িত্ব। চারটি মাসকে সম্মানিত করে ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন ‘এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না’। যুলুম সব অবস্থায়ই র্নিষিদ্ধ, তারপরও হারাম মাসগুলোর কথা বিশেষভাবে বলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হযরত কাতাদাহ (র.) বলেন- হারাম মাসগুলোতে গুনাহের কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশী আযাবযোগ্য ও বড় গুনাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।’ সুতরাং বুঝা গেল মুহাররাম মাসের একটি আমল হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন!

তাছাড়া এ মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে বিভিন্নভাবে ঈমানদারদের উপর রহমত নাযিল করেছেন, কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এ মাস আমাদের কাছে শোকের মাস হিসেবে বেশি পরিচিত। কারণ এ মাসেই আমাদের আকা নবী (সা.) এর আহলুল বাইতের অনেক সদস্য কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। সেদিন থেকে মুহাররাম বিশেষত ১০ই মুহাররাম সকল মুসলমান তথা নবী প্রেমিকদের কাছে অত্যন্ত শোকের দিন। কারবালার নির্মম ঘটনার পূর্বেও ১০ই মুহাররাম বা আশুরা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এ দিনে আল্লাহ পাক আদম (আ.) এর দুআ কবূল করেন, মূসা (আ.) এর কওমকে মুক্তি দেন। এরকম আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে।

আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও কিছু সংখ্যক মানুষ হুসাইন (রা.) এর অনুপম ত্যাগকে অস্বীকার করা শুরু করেছে আবার শিয়ারা এ দিনকে নিয়ে বাড়াবাড়ী করছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা-বিশ্বাস ধারণকারী হিসেবে আমাদেরকে আশুরার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। কিছু বিপথগামীদের মতো হুসাইন (রা.) এর ত্যাগ অস্বীকার করা যাবেনা আবার শিয়াদের মতো তাযিয়া মিছিল বের করা, মাতম করা অথবা নিজেকে আঘাত করাও যাবেনা।

আশুরায় আমরা কী করব?

আশুরার ফদীলত এবং এদিনে রাসূলে পাক  (সা.) এর আমাল সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত আছে। রাসূল (সা.)ইরশাদ করেন,

(أفضلُ الصيامِ، بعدَ رمضانَ، شهرُ اللهِ المحرمِ. وأفضلُ الصلاةِ، بعدَ الفريضَةِ، صلاةُ الليلِ. (صحيح مسلم

-রামাদানের রোযার পরে সর্বোত্তম রোযা হলো মুহাররাম মাসের রোযা আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হলো রাতের তথা তাহাজ্জুদের নামায।(মুসলিম)

অন্য এক হাদীসে এসেছে-

عن عبد الله بن عباس قال قدم رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ المدينةَ. فوجد اليهودَ يصومون يومَ عاشوراءَ فسُئلوا عن ذلك؟ فقالوا: هذا اليومُ الذي أظهر اللهُ فيه موسى وبني إسرائيلَ على فرعونَ. فنحن نصومه تعظيمًا له. فقال النبيُّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ: نحنُ أَوْلى بموسى مِنكُم. فأَمرَ بصومِه. (صحيح مسلم)

-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন ইয়াহুদীরা মুহাররামের ১০ তারিখে রোযা রাখে। তিনি তাদের জিজ্ঞাস করলেন তোমরা কেন রোযা রাখছো? তারা বলল, এ দিনে আল্লাহ মূসা (আ.) এর কাওমকে মুক্তি দেন এবং ফিরআউনকে তার বাহিনীসহ ধ্বংস করেন। আমরা এর সম্মান হিসেবে রোযা রাখি। রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের থেকে মূসার বেশি নিকটবর্তী। সুতরাং তিনি সবাইকে আশুরায় রোযা রাখার আদেশ দিলেন। (মুসলিম)

তখন আশুরার দিন রোযা রাখলে ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায় সাহাবীদের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল (সা.) একটি সুন্দর সমাধান দেন;

عن عبد الله بن عباس قال حين صام النبي صلى الله عليه وسلم يوم عاشوراء وأمرنا بصيامه قالوا يا رسول اللهِ إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى فقال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم فإذا كان العام المقبل صمنا يوم التاسع فلم يأت العام المقبل حتى توفي رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم.(أبو داود)

-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, রাসূল (সা.) যখন আশুরার রোযা রাখলেন এবং আমাদেরকেও রাখতে বললেন। সাহাবীগণ বললেন, হে রাসূল (সা) ! এই দিনকে তো ইয়াহুদী ও নাসারারা সম্মান করে। তখন রাসূল (সা.)বললেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে আশুরার ৯ম দিনেও রোযা রাখবো (ইয়াহুদী নাসারাদের সাথে পার্থক্য করতে)। কিন্তু রাসূল (সা.) পরবর্তী আশুরা পাননি, এর আগেই এ ধরা ত্যাগ করেন। (আবূ দাউদ)

এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম এ ব্যপারে একমত যে, আশুরায় একটি রোযা রাখা মাকরূহ। ভালো হয় ৯ ও ১০ মুহাররাম রোযা রাখলে। সেটা সম্ভব না হলে ১০ ও ১১ মুহাররাম রাখলেও চলবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) অন্য একটি হাদীসে বলেন,

ما رأيتُ النبيَّ صلى الله عليه وسلم يتحرَّى صيامَ يومٍ فضَّلَه على غيرِه إلا هذا اليومَ، يومَ عاشوراءَ، وهذا الشهرَ، يعني شهرَ رمضانَ. (صحيح البخاري)

-আশুরার রোযা ছাড়া অন্য কোনো রোযার ব্যাপারে আমি রাসূল (সা.) কে এতো মনোযোগী হতে দেখিনি। আর রামাদান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এই মাস থেকে বেশি রোযা রাখতে দেখিনি। (সহীহ বুখারী)

অন্য এক হাদীসে এসেছে-

عن حفصة بنت عمر قالت أربعٌ لم يَكُن يدعُهُنَّ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم: صيامَ عاشورا، والعَشرَ، وثلاثةَ أيَّامٍ مِن كلِّ شهرٍ ورَكعتَينِ قبلَ الغداةِ. (النسائي)

-উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কে ৪টি আমল কখনো ত্যাগ করতে দেখিনি; ১. আশুরার রোযা ২. যিলহজ্জের ১০ দিনের রোযা ৩. প্রতিমাসে তিন দিন রোযা ৪. আর ফযরের দুই রাকআত সুন্নাত নামায। (সুনান নাসাঈ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)ইরশাদ করেছেন, আশুরার দিন যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে আল্লাহ তার পরিবারকে সারা বছর ভালো খাওয়াবেন। (মাকাসিদ আল হাসানাহ)

সুতরাং এসব আলোচনার উপসংহারে বলতে পারি আশুরা উপলক্ষে আমরা সব রকমের উত্তম আমল করবো। বিশেষ করে আশুরার দুই দিনসহ বেশি বেশি রোযা রাখবো, নামায আদায় করবো, দুরূদ পাঠ করবো, দান সাদকা করবো। আর যেহেতু এ দিনে আহলুল বাইতের বহু সংখ্যক সদস্য শাহাদাতবরণ করেন যাদের মাঝে মা ফাতিমা (রা.) হযরত হাসান-হুসাইন (রা.) এর সন্তানরাও ছিলেন সেহেতু যাবতীয় নেক আমল তাদের রূহের উদ্দেশ্যে পেশ করবো। তাদের কথা আলোচনা করবো এবং পরিবার ও সন্তানদের কাছে তাদের ফদীলত ও সম্মানের কথা তুলে ধরবো। কেননা আহলুল বাইতের ভালোবাসা ঈমানী চেনার অংশ। তারা অমাদের নাযাতের ওসীলাহ। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সন্নিধ্য আমদের কামনা। শেখ সাদী বলেছেন-

خدايا به حق بني فاطمه

بر که قول ايمان کنم خاتمه

-হে আল্লাহ ওসীলায় ফাতেমার সন্তানদের

মৃত্য দাও আমায় সাথে ঈমানের। আমীন।

ফেইসবুকে আমরা...