এখনও আসরের আযান হয়নি। দারুল কিরাতের পড়া চলছে জোরেশোরে। ছাত্র শিক্ষক মিলে মোটে ছয়জন। দুই যবর দুই যের দুই পেশকে তানভীন বলে। পড়াচ্ছেন শিক্ষক, বাকীরা চিৎকার করে তা পুনরাবৃত্তি করছে। মিনিট পাঁচেক ধরে এভাবে চলল। শিক্ষকের গলা ধরে এল। তিনি ছাত্রদের সারিতে বসলেন। অন্য একজন দাঁড়িয়ে আবার শুরু করলেন, জযমওয়ালা নুনকে নুন ছাকিন বলে। দারুল কিরাত মানে ঘরে বসে পড়া, তারাও পড়ছেন পুবের ঘরের বারান্দায়। তবু উচ্চ আওয়াজ পুরো বাড়ি মাতিয়ে তুলেছে। হঠাৎ নজরুল সাহেব এসে বললেন, তোমাদের চিৎকারে তো বাড়ি থাকা যাচ্ছে না। বড় চাচা, চিৎকার করছি না। এখানে দারুল কিরাত চলছে, উত্তর দিল শিক্ষক উম্মে হানী আদিবা। নজরুল সাহেব হেসে বললেন, আচ্ছা তাহলে চলুক।
শিক্ষকের বয়স বছর ছয়েক হবে। ছাত্রদের বয়স তিন থেকে পাঁচের কোটায়। ছাত্র শিক্ষক যারা আছেন কেউ জানে না তানভীন বা নুন ছাকিন কী? এসব দেখতে কেমন। আদিবা একদিন মাকে বলেছিল, দারুল কিরাতে কী পড়া হয়? উত্তরে মা যা বলেছিলেন এতটুকুই তাদের পাঠ্য। গত বছর থেকে গ্রামের মক্তবে দারুল কিরাত হচ্ছে না। তাই বাড়িতেই চলছে আদিবাদের দারুল কিরাত।
আযান শোনা মাত্র ছুটি হলো। সবাই ঘরে ফিরল। আজ আখনি রান্না হচ্ছে। মুরাদ শরীফ, নাহিয়ান সবাই তৈরি হচ্ছে। আশপাশের বাড়িতে ইফতারি নিয়ে যেতে হবে। এমন সময় এল বৃষ্টি। কেউ বাইরে যাবে না। দাদু বললেন, এ বাড়িতে আখনি রান্না করে কখনও একা খাওয়া হয়নি। ছাতা নিয়ে যেতে হবে। নাহিয়ান দাবি করে বসল, হুমাম মৌলভী না গেলে তারা কেউ যাবে না। হুমাম মৌলভীর বয়স সবেমাত্র তিন বছর। আমিরাত থেকে বাবা কাবুলি পাঞ্জাবি ও তুর্কি টুপি পাঠিয়েছেন। এসব পরে মসজিদে গিয়েছিল হুমাম। সেদিন থেকে হুমাম মৌলভী খেতাব পেয়েছে। দাদু বলেছেন তার নাতি বড় হলে হাফিয সাহেব হবে।
বৃষ্টি কমে গেলে তারা দলবলে বাহির হলো। যা নিয়ে গিয়েছিল তার দিগুণ নিয়ে ফিরল। প্রতিবেশি চাচিরা খালি বাটি ফেরত দেননি। ইফতারের সময় খুব নিকটে। আদিবার চাচা সূরা মুলক তিলাওয়াত করছেন। মা গেলাসে শরবত ঢালছেন, আদিবা সবার সামনে পৌঁছে দিচ্ছে। মসজিদের চোঙা থেকে ভেসে এল ‘আল্লাহু আকবার’। পুরো বাড়ি ছেঁয়ে গেল নিরবতায়।