প্রশ্ন: বিতর নামায কত রাকআত এবং কীভাবে পড়তে হয়? এর সঠিক নিয়ম দলীলসহ জানতে চাই।
হাফিয নজরুল ইসলাম
কুইন্স, নিউইয়র্ক
জবাব দিচ্ছেন-
মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
প্রিন্সিপাল ও খতীব, আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার
মিশিগান, আমেরিকা।
জবাব: বিতর নামাযের রাকআত সংখ্যা নিয়ে হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা থাকলেও রাসূলুল্লাহ ব এর শেষ ও চূড়ান্ত আমল থেকে তা তিন রাকাআত পড়ার বিষয় সাব্যস্ত। তাই হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিতর তিন রাকাআত পড়তে হবে। এতে কম বা বেশি করা যাবে না। মুস্তাদরাকে হাকিম গ্রন্থে হযরত আয়িশা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনা এসেছে-
عن عائشة، قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهنগ্ধ وهذا وتر أمير المؤمنين عمر بن الخطاب رضي الله عنه وعنه أخذه أهل المدينة
-রাসূলুল্লাহ ব তিন রাকাআতে বিতর আদায় করতেন এবং কেবল শেষ রাকআতেই সালাম ফিরাতেন। এভাবে হযরত উমর (রা.)ও বিতর আদায় করতেন। তার থেকেই মদীনাবাসী এই আমল গ্রহণ করেছেন।
বিতর নামায সম্পর্কীয় যে সকল বর্ণনায় এক, তিন, পাঁচ ও সাত ইত্যাদি সংখ্যার কথা এসেছে সেগুলো প্রাথমিক সময়কার অবস্থা সম্পর্কীয়। তখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট রাকআত স্থির হয়নি। পরবর্তীতে এর রাকআত সংখ্যা তিন হওয়া নির্দিষ্ট হয়েছে। যা বহু বর্ণনায় সাব্যস্ত ও মদীনাবাসীগণের স্থায়ী আমল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এ সম্পর্কে হাদীসের বর্ণনাসমূহের মধ্যে রয়েছে-
১। হযরত আয়িশা (রা.) এর উপরিউক্ত বর্ণনা, যা রাসূল ব এর বিতর নামায আদায় সম্পর্কীয়।
২। হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) এর ঐ বর্ণনা যেখানে তিনি তার মাতাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিতর নামায গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্যে পাঠিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন, যা আল ইসতিআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব গ্রন্থে এসেছে। হাদীসটি হলো-
عن عبد الله قال: أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي فصلى ما شاء الله أن يصلي، حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسبح اسم ربك الأعلى في الركعة الأولى، وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون. ثم قعد، ثم قام، ولم يفصل بينهما بالسلام، ثم قرأ [قل هو الله أحد الله الصمد لم يلد ولم يولد، ولم يكن له كفوا أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت، فدعا مما شاء الله أن يدعو ثم كبر وركع. وروى وكيع، عن سفيان، عن أبي إسحاق، عن مصعب ابن سعد، قال: فرض عمر بن الخطاب للنساء المهاجرات في ألفين ألفين، منهن أم عبد
৩। অনুরূপ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর বর্ণনা, যা সহীহ মুসলিম গ্রন্থে باب الدعاء في صلاة الليل وقيامه অধ্যায়ে এসেছে। অনুরূপ মুসনাদে আহমদ, সুনানে কুবরা ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে উক্ত বর্ণনা এসেছে-
عن عبد الله بن عباس، أنه رقد عند رسول الله صلى الله عليه وسلم، فاستيقظ فتسوك وتوضأ وهو يقول: {إن في خلق السماوات والأرض واختلاف الليل والنهار لآيات لأولي الألباب} [آل عمران: ১৯০] فقرأ هؤلاء الآيات حتى ختم السورة، ثم قام فصلى ركعتين، فأطال فيهما القيام والركوع والسجود، ثم انصرف فنام حتى نفخ، ثم فعل ذلك ثلاث مرات ست ركعات، كل ذلك يستاك ويتوضأ ويقرأ هؤلاء الآيات، ثم أوتر بثلاث، فأذن المؤذن فخرج إلى الصلاة
উপরিউক্ত সকল বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বিতর তিন রাকাআত পড়তেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
৪। তাছাড়া হযরত উমর (রা.) সা’দ (রা.) কে এক রাকআত বিতর আদায় করতে দেখে এরূপ করতে নিষেধ করে শাস্তির ধমক দিয়েছেন বলে হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে। (আল মাবসূত: ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৬৪)
৫। হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, কোনো নামায যদি এক রাকআত করে পড়া যেত তাহলে ফজরের ফরয মুসাফিরের জন্য এক রাকআত করা হতো। (আল মাবসূত: ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৬৪)
বিতর নামায পড়ার নিয়ম: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিতর নামায আদায়ের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা সম্পর্কীয় উপরে বর্ণিত হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) এর মাতা থেকে যে রিওয়ায়াত এসেছে এর সারাংশ হচ্ছে: অন্যান্য নামাযের ন্যায় দুই রাকআত নামায পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহ্হুদ পড়া। তারপর তৃতীয় রাকাআত পড়ার জন্য উঠে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সূরা বা আয়াত মিলানো। অতঃপর তাকবীর বলে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত বাঁধা। তারপর (নিঃশব্দে) দুআয়ে কুনূত পড়া। দুআয়ে কুনূত পড়ে পূর্বের ন্যায় রুকু, সিজদার পর শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ, দুরূদ ও দুআয়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামায সমাপ্ত করতে হয়। (আল ইসতিআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব: অধ্যায়: ام عبد بنت صويم بن قويم ৪র্থ খ-, পৃষ্ঠা ১৯৪৬)