ঈদুল ফিতর এর দিনের আমল
আরবী عيد শব্দটি عود শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ ফিরে আসা। যেহেতু এ দিনগুলো আনন্দের বার্তা নিয়ে ফিরে আসে এ কারণে এ দিনগুলোকে ঈদের দিন বলা হয়। মুসলিম বিশ্বের জন্য মহা খুশির দিন হচ্ছে ঈদের দিন। আল্লাহ পাক মুসলমানদের খুশি প্রকাশের জন্য দুটি দিনকে বেছে নিয়েছেন। যদিও রূপক অর্থে যেকোনো খুশির দিনকে ঈদের দিন বলা হয়।
‘কুল্লিয়াত’ গ্রন্থে ঈদ সম্পর্কে বলা হয়েছে- الْعِيد : كل يَوْم مَسَرَّة فَهُوَ عيد وَلذَا قيل عيد وَعِيد وَعِيد صرن مجتمعة … وَجه الحبيب وَيَوْم الْعِيد وَالْجُمُعَة
-ঈদ হচ্ছে প্রত্যেক খুশির দিন। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে- ঈদ, ঈদ এবং ঈদ, (৩টি ঈদ) একত্রিত হয়েছে। তা হচ্ছে হাবীবের চেহারা, ঈদের দিন এবং জুমুআর দিন। (কিতাবুল কুল্লিয়াত)
এখানে দেখা যাচ্ছে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কারণে একটি দিনকে ঈদের দিন বলা হচ্ছে।
এমনিভাবে হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ও গ্রহণযোগ্য ফাতওয়ার কিতাব ‘শামী’তে বলা হয়েছে-
باب العيدين سمي به لأن لله فيه عوائد الإحسان ولعوده بالسرور غالبا : أو تفاؤلا، ويستعمل في كل يوم مسرة
-এ দিনগুলোকে ঈদের দিন বলে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, এ দিনে আল্লাহ পাকের অসংখ্য ইহসান ফিরে আসে এবং এ দিনগুলো ফিরে আসে মূলত আনন্দ আর খুশি নিয়ে। এ কারণেই প্রতিটি আনন্দের দিনের ক্ষেত্রে ঈদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। (রদ্দুল মুহতার)।
وقال ابنُ الأَعرابيِّ :”سُمِّيَ العِيدُ عِيداً لأَنَّه يَعُودُ كلَّ سَنَةٍ بِفَرَحٍ مُجَدَّدٍ”
ইবনুল আরাবী বলেন, ঈদকে ঈদ বলা হয় এজন্য যে, তা প্রতি বছর নতুন আনন্দের বার্তা নিয়ে ফিরে আসে। (লিসানুল আরব)
যাই হোক, মুসলমানদের জন্য আনন্দ প্রকাশের দুটি দিনের একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর। পূর্ণ একটি মাস সিয়াম পালনের পর আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। এ যেন রামাদান শরীফের রোযা পালনের তাওফীক প্রদান করায় আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করা এবং আনন্দ প্রকাশ করা।
ঈদুল ফিতর এর প্রেক্ষাপট
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, إن لكل قوم عيد وهذا عيدنا অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির জন্য ঈদের দিন রয়েছে আর আমাদের জন্য এটি (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা) ঈদের দিন। এখানে লক্ষণীয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য জাতির আনন্দ-উৎসব থেকে মুসলিম জাতির ঈদকে আলাদা করেছেন। তার মানে তাদের আনন্দ প্রকাশ কিংবা উৎসবের দিনকে মুসলমানগণ উৎসব হিসেবে পালন করতে পারবেন না। আর এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত হযরত আনাস (রা.) এর নিম্নোক্ত হাদীস থেকে।
عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ.
-হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় তাশরীফ নিলেন তখন দেখলেন সেখানকার লোকদের জন্য দুটি দিন নির্ধারিত আছে। এ দিনগুলোতে তারা খেল-তামাশা করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটো দিন কী? তারা জবাবে বলল, আমরা জাহিলিয়াতের যুগ থেকে এ দুদিনে খেল-তামাশা করে আসছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটি দিনের উৎসবকে আরো উত্তম দুটি দিনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এর একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর আর অপরটি হচ্ছে ঈদুল আদহা। (আবু দাউদ)
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইসলামে বিনোদন নিষিদ্ধ নয় তবে তা হতে হবে শরীআতের গণ্ডির ভেতরে থেকে। কোনো অবস্থায়ই শরীআত সমর্থন করে না এমন বিনোদনের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া যাবে না।
ঈদুল ফিতরের ফযীলত
কোন লোক যখন তার মালিকের কাজ করে, তখন কাজ শেষ করে তার পারিশ্রমিক লাভ করে। সারা মাস কাজ করে এক সাথে পুরো মাসের পারিশ্রমিক লাভ করলে কি পরিমাণ আনন্দিত হতে পারে আমরা তা সহজেই কল্পনা করতে পারি। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ পাকের বিশেষ নির্দেশে পুরো এক মাস রোযা রাখার মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। এর পর আসে তাঁর প্রতিফল লাভের কাক্সিক্ষত সে দিন। সে দিনটিই হচ্ছে ঈদের দিন। এ কারণেই এ দিনটির মর্যাদা এতো বেশি এবং এর আনন্দও সর্বাধিক।
হযরত সাঈদ বিন আউস আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত হাদীস,
عن سعيد بن أوس الأنصاري عن أبيه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كان يوم الفطر وقفت الملائكة على أبواب الطرق فنادوا اغدوا يا معشر المسلمين إلى رب كريم يمن بالخير ثم يثيب عليه الجزيل لقد أمرتم بقيام الليل فقمتم وأمرتم بصيام النهار فصمتم وأطعتم ربكم فاقبضوا جوائزكم فإذا صلوا نادى مناد : ألا إن ربكم قد غفر لكم فارجعوا راشدين إلى رحالكم فهو يوم الجائزة ويسمى ذلك اليوم في السماء يوم الجائزة.
-হযরত সাঈদ বিন আউস আনসারী (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিন ফিরিশতাগণ রাস্তার প্রবেশদ্বারসমূহে অবস্থান করেন এবং বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আপনারা মেহেরবান রবের দিকে বের হোন। তিনি আপনাদেরকে কল্যাণ প্রদানের মাধ্যমে ইহসান করেছেন। এরপর তিনি আপনাদেরকে এর প্রতিফল দান করবেন। আপনাদেরকে রাত জেগে ইবাদত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আপনারা তা করেছেন। আপনাদেরকে দিনে রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আপনারা রোযা রেখেছেন। আপনারা আপনাদের রবের আনুগত্য করেছেন, সুতরাং এখন তার প্রতিদান গ্রহণ করুন। এরপর যখন তারা নামায আদায় করেন, তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করেন, “জেনে রেখো! তোমাদের রব তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা ভাগ্যবান হয়ে তোমাদের ঘরসমূহে ফিরে যাও।” এ দিনটি হচ্ছে প্রতিফল প্রদানের দিন। আকাশে এ দিনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘يوم الجائز’ বা পারিশ্রমিক প্রাপ্তির দিন। (লাতাঈফুল মাআরিফ)
ঈদের দিনের করণীয় কাজসমূহ
ঈদুল ফিতরের দিনের প্রধান ও মূল আমল হলো ঈদের নামায আদায় করা। এ ছাড়াও এ মহান আনন্দের দিনকে আরো আনন্দময় করে তোলার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনে উম্মতের জন্য কিছু আমলের নির্দেশ প্রদান করেছেন যে আমলগুলোর অপরিসীম ফযীলত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
(১) তাকবীর পাঠ করা
ঈদের রাত অর্থাৎ রামাদান শরীফের শেষ দিবাগত রাত থেকে ঈদগাহে যাওয়া পর্যন্ত বেশি বেশি করে তাকবীর পাঠ করা সুন্নাত। তবে ঈদুল ফিতরের তাকবীর আস্তে আস্তে পড়তে হয়। আর ঈদুল আদহার তাকবীর উচ্চস্বরে পড়তে হয়।
হাদীস শরীফে আছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: زَيِّنُوا أَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيرِ
-হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের ঈদসমূহকে তাকবীর-এর মাধ্যমে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। (মু’জামুস সগীর লিত-তাবরানী)
(২) ঈদুল ফিতরের রাতে বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা
عن عبادة بن الصامت أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من صلى ليلة الفطر والاضحى لم يمت قلبه يوم تموت القلوب
-হযরত উবাদা বিন সামিত (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহার রাতে সালাত আদায় করবে তার অন্তর মরবে না, যখন অন্তরসমূহ মুত্যুবরণ করবে। (মু’জামুল আওসাত লিত-তাবরানী)
(৩) ঈদগাহে বের হওয়ার পূর্বে কোন কিছু আহার করা
এ ব্যাপারে অনেক হাদীস রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يغدو يوم الفطر حتى يأكل ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع فيأكل من أضحيته.
-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কোন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে বের হতেন না, তবে ঈদুল আদহার দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে আসার আগে কোন কিছু খেতেন না। ঈদুল আদহার দিন কুরবানীর গোশত থেকে প্রথম আহার গ্রহণ করতেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ ফাতহুল কাদীর’ গ্রন্থকার এ খাবার মিষ্টিদ্রব্য হওয়ার মত প্রকাশ করেন। কারণ এক বর্ণনায় এসেছে-
كان عليه الصلاة والسلام لا يغدو يوم الفطر حتى يأكل تمرات ويأكلهن وترا
-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বেজোড় সংখ্যক খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না।
(৪) ঈদের দিন ভোরে গোসল করা
ইমাম তাবরানী (র.) বর্ণনা করেন,
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صام رمضان وغدا بغسل إلى المصلى وختمه بصدقة رجع مغفورا له
-হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রামাদান শরীফের রোযা রাখবে এবং (ঈদের দিন) ভোরে গোসল করে ঈদগাহে যাবে, আর সাদকার মাধ্যমে শেষ করবে সে ঈদগাহ থেকে গুনাহমুক্ত হয়ে ফিরবে। (মু’জামুল আওসাত লিত-তাবরানী)
(৫) ঈদের নামায শেষে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা
ঈদের নামায আদায় করে সম্ভব হলে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা সুন্নাতে মুস্তাহাব্বাহ। বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় আছে-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ
-হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন।
তাছাড়া মুসনাদে ইমাম বাযযার-এ বর্ণিত আছে-
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ رَضِيَ الهُل عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليهوسلم اغْتَسَلَ لِلْعِيدَيْنِ، وَجَاءَ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا، وَرَجَعَ فِي غَيْرِ الطَّرِيقِ الَّذِي خَرَجَ فِيهِ.
-হযরত মুহাম্মদ বিন উবায়দুল্লাহ তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের দিন গোসল করতেন, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং যে রাস্তা দিয়ে যেতেন অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন।
এ ছাড়াও সুগন্ধি ব্যবহার, উত্তম কাপড় পরিধান করা সুন্নাত।
সর্বোপরি ঈদের দিনের মূল কাজ হলো ঈদের নামায। ঈদের নামায ওয়াজিব এবং তা খোলা মাঠে আদায় করা সুন্নাত। তবে কোন কারণে মসজিদে আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে।
ঈদের নামাযের নিয়ম
ঈদের নামাযের জন্য জামাআত শর্ত। সুতরাং কেউ একাকী নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না। (শামী)
ঈদের নামাযের প্রতি রাকাআতে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলতে হয়। হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ রয়েছে,
روي عن إبن مسعود رضي الله عنه أنه كبر أربعاً ثم قرأ ثم كبر فركع، ثم يقوم في الثانية ثم يُكبر أربعاً
-হযরত ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযে চার তাকবীর দিতেন, এর পর তাকবীর বলে রুকুতে যেতেন। দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে আরও চার তাকবীর বলতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক)
উপরোক্ত হাদীসে চার তাকবীর বলে প্রথম রাকাআতে তাকবীরে তাহরীমাসহ চার তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীরের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং অতিরিক্ত তিন তাকবীরই বলতে হবে।
হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত আবূ দাউদ শরীফের একটি হাদীসে প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাআতে ছয় তাকবীরের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীসের জবাবে বলা হয় যে, ইবনে উমর (রা.) এর হাদীসে যে তাকবীরের কথা বলা হয়েছে তা তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীরসহ বলা হয়েছে।
দুররুল মুখতার গ্রন্থকার বলেন-
ويصلي الإمام بهم ركعتين مثنيا قبل الزوائد ، وهي ثلاث تكبيرات في كل ركعة
-ইমাম সাহেব মুসল্লীদের নিয়ে দু’রাকাআত নামায আদায় করবেন। অতিরিক্ত তাকবীরের পূর্বে সানা পাঠ করবেন। আর অতিরিক্ত তাকবীর হচ্ছে প্রতি রাকাআতে তিনটি তাকবীর।
উপরোক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় শামী গ্রন্থকার সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করে বলেন-
هذا مذهب ابن مسعود وكثير من الصحابة ، ورواية عن ابن عباس وبه أخذ أئمتنا الثلاثة
-আর এটিই (অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলা) হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) ও অনেক সাহাবীর মাযহাব। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর একটি মতামতও অনুরূপ। আর ইহাই আমাদের তিন ইমাম তথা ইমাম আবূ হানীফা, আবূ ইউসুফ এবং ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মাযহাব।
তিনি এ ব্যাপারে অন্যান্য মতামতের আলোচনা করে অবশেষে বলেন- فالعمل الآن بما هو المذهب عندنا -বর্তমানে আমাদের মাযহাবের উপরই আমল অব্যাহত আছে।
এভাবে প্রথম রাকাআত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাআতের কিরাত শেষে অতিরিক্ত তাকবীর পাঠ করা মুস্তাহাব। শামী গ্রন্থকার বলেন,
ويوالي ندبا بين القراءتين أي بأن يكبر في الركعة الثانية بعد القراءة لتكون قراءتها تالية لقراءة الركعة الأولى
-দুই কিরাতের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন মুস্তাহাব হিসেবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাআতে কিরাত পাঠের পর অতিরিক্ত তাকবীর বলবেন। যাতে দুই রাকাআতের কিরাতের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। (শামী)
এর থেকে বুঝা যায় যে, কেউ দ্বিতীয় রাকাআতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীর পাঠ করলেও নামায আদায় হবে, তবে কিরাতের পরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব।
সবশেষে ঈদের দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সাদকায়ে ফিতর আদায় করা। যদিও তা ঈদের দিনের পূর্বেই আদায় করা উত্তম, তবুও মালিকে নিসাবের কেউ যদি তা পূর্বে আদায় করে নিতে না পারেন তবে ঈদের নামাযে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করে নিতে হবে।