1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
শবে বরাত: ফযীলত অস্বীকারকারীর নিকট গ্রহণযোগ্য শাইখদের অভিমত
ইমাদ উদ্দীন ইবনে মাহমুদ
  • ১৫ মার্চ, ২০২২

হাদীসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যরাত হলো ১৪ তারিখ দিবাগত রজনী। উপমহাদেশে এই রাতকে আমরা ‘শবে বরাত’ নামে চিনি। শরীআতে মুহাম্মাদীর প্রথম যুগ থেকেই মুসলমানরা ‘শবে বরাত’ ইবাদত বন্দেগিতে অতিবাহিত করে আসছেন। এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ভিন্ন সনদে একাধিক হাদীসসহ সাহাবাদের বর্ণনা আছে, যা দৃঢ়ভাবে দলীল হওয়ার উপযুক্ত। উলামায়ে কিরাম এ রাতের ফযীলত বয়ান করেছেন। কিন্তু এর বিপরীতে কতিপয় থেকে প্রত্যাখ্যানমূলক বেশ কঠিন বক্তব্যও শোনা যায়। শবে বরাতকে তারা এমনভাবে প্রত্যাখ্যান করেন যেন ইসলামী শরীআতে এর কোন ভিত্তিই নেই। তবে মজার বিষয় হলো বর্তমানে যারা শবে বরাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য আলিমরাও কিন্তু এর পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।
আমরা এখানে শরঈ মানদণ্ডের আলোচনায় না গিয়ে এমন আলিমদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যাদেরকে ‘শবে বরাত’ এর বিপরীতে অবস্থানকারীগণ নির্ভরযোগ্য হিসেবে মানেন।
নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে ‘শবে বরাত’ এর ফযীলত অস্বীকারকারীদের নিকট মান্যবর শাইখদের অভিমত তুলে ধরছি।
১) শাইখ আল্লামা ইবন তাইমিয়া (৭২৮ হি.) ‘শবে বরাত’-এর ব্যাপারে বলেন,

ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻔِﻴﻬَﺎ ﻓَﻀْﻞٌ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻠَﻒِ ﻣَﻦْ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻴﻬَﺎ

-আর শাবান মাসের মধ্য রাত (শবে বরাত)-এর ফযীলত রয়েছে। পূর্বেকার উলামায়ে কিরামের অনেকে এই রাতে নফল নামায পড়তেন।১
তাঁর রচিত আরেকটি কিতাব “ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম” এ তিনি বলেন,

أما ليلة النصف من شعبان فقد روي في فضلها من الأحاديث المرفوعة والآثار ما يقتضي أنها ليلة مفضلة وأن من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها

-শাবান মাসের মধ্যরাত তথা শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস এবং সাহাবীদের অনেক বর্ণনা রয়েছে। এসব বর্ণনা দাবি করে যে এই রাতটি বরকতময়। পূর্বসূরি সাহাবী-তাবিঈ অনেকেই এই রাতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করতেন।২
২) আল্লামা যাইনুদ্দীন ইবন রজব হাম্বলী (৭৯৫ হি.) রচিত ‘লাতায়িফুল মাআরিফ’ গ্রন্থে শবে বরাত সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করে বলেন,

فينبغي للمؤمن أن يتفرغ في تلك الليلة لذكر الله تعالى ودعائه بغفران الذنوب، وستر العيوب، وتفريج الكروب، وأن يقدم على ذلك التوبة فإن الله تعالى يتوب فيها على من يتوب

-মুমিন বান্দার উচিত, এ রাতে যিকর ও দুআর জন্য অবসর হওয়া। যাতে খাঁটি মনে গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, দূর্বলতাকে গোপন রাখার এবং আপদ-বিপদ দূর হওয়ার জন্য দুআ করে। এসবের জন্য তাওবাহ করতে থাকবে কারণ আল্লাহ তাআলা তাদের প্রার্থনা কবূল করেন, যারা তাঁর নিকট ফিরে আসতে গুনাহের ক্ষমা চায়।৩
৩) আল্লামা আব্দুর রাহমান মুবারকপুরি (১৩৫৩ হি.) তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াযি‘-তে শবে বরাতের অনেকগুলো হাদীস উল্লেখ করে বলেন,

ﺍِﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﻭَﺭَﺩَ ﻓِﻲ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔِ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻋِﺪَّﺓُ ﺃَﺣَﺎﺩِﻳﺚَ ﻣَﺠْﻤُﻮﻋُﻬَﺎ ﻳَﺪُﻝُّ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥَّ ﻟَﻬَﺎ ﺃَﺻْﻠًﺎ

-জেনে রাখো! শাবান মাসের মধ্যরাত (শবে বরাত) এর ফযীলতের উপর অনেক হাদীস রয়েছে। যেগুলো প্রমাণ করে, নিশ্চয়ই এই রাতের শরঈﻨ ভিত্তি রয়েছে।৪
৪) আল্লামা আবুল হাসান উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরি রচিত “মিশকাতুল মাসাবীহ” এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মিরআতুল মাফাতীহ” এ বলেন,

ﻭﺭﺩ ﻓﻲ ﻓﻀﻴﻠﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻫﻲ ﺑﻤﺠﻤﻮﻋﻬﺎ ﺣﺠﺔ ﻭﺃﺿﺎﻑ ﻗﺎﺋﻼ ﺑﻌﺪ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺎﺕ ﺍﻟﻮﺍﺭﺩﺓ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ : ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﻛﻠﻬﺎ ﺗﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﻋﻈﻢ ﺧﻄﺮ ﻟﻴﻠﺔ ﻧﺼﻒ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﺟﻼﻟﺔ

-শাবানের মধ্যরাত তথা শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে অনেক হাদীস রয়েছে। এসব হাদীস একত্রিতভাবে দলীল সাব্যস্ত। আর এই বর্ণনাগুলো উপস্থাপন করে বলা যায়, এসব হাদীস শবে বরাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রমাণ করে।৫
৫) শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ ইবন মুহাম্মাদ আল উসাইমিন (১৪২১ হি.) বলেন,

ﻭﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﻓﻀﻠﻬﺎ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻣﻦ ﻳﺨﺼﻬﺎ ﺑﺎﻟﻘﻴﺎﻡ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺃﻧﻜﺮ ﻓﻀﻠﻬﺎ ﻭﻃﻌﻦ ﻓﻲ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﻮﺍﺭﺩﺓ ﻓﻴﻬﺎ، ﻟﻜﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻋﻠﻴﻪ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺃﻭ ﺃﻛﺜﺮﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺗﻔﻀﻴﻠﻬﺎ

-এ আলোচনার অন্তর্ভূক্ত হলো শাবান মাসের মধ্যরাত। এ সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সালাফদের (সাহাবী-তাবিঈ) অনেকে বিশেষভাবে এই রাতে ইবাদত করতেন। তবে পূর্বসূরি কিছু আলিম হাদীসগুলো দলীলযোগ্য নয় বলে ফযীলত অস্বীকার করেন। কিন্তু পূর্বসূরি আহলে ইলমের অনেকাংশ বা বেশিরভাগই ‘শবে বরাত’ ফযীলতপূর্ণ রাত সাব্যস্ত করেছেন।৬
৬) শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী তার নির্বাচিত সহীহ হাদীসের সংকলিত কিতাব “সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহাহ” গ্রন্থে বলেন,

وجملة القول ان الحدیث بمجموع هذه الطرق صحیح بلا ریب

-মোদ্দাকথা, শবে বরাতের হাদীসটি তার অনুগামী সকল বর্ণনার কারণে নিঃসন্দেহে সহীহ।৭
‘শবে বরাত’-এর ফযীলত অস্বীকারকারীদের নিকট গ্রহণযোগ্য আরও অনেক ইমাম, ফকীহ, আল্লামা আছেন, যারা এই রাতের ফযীলত সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করেছেন। আর ফিকহী মাযহাবের বিবেচনায় বলতে হয়, ফযীলতের ক্ষেত্রে মাযহাব চতুষ্টয়ের ঐকমত্য আছে। তাই, যারা হাল যামানায় এই রাতে আমল করাকে বিদআত বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, তাদের উচিত অন্তত নিজেদের মান্যবর পূর্বসূরিদের অভিমত জানা এবং আমজনতাকে আমল থেকে বিমূখ না করা। আল্লাহ সবাইকে সত্য বুঝার ও মানার তাওফীক দিন। পাশাপাশি সবাইকে এই রাতের বরকত হাসিল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

———————————————

১. হাফিয তাকি উদ্দীন আহমাদ ইবন আব্দুল হালীম ইবন তাইমিয়া (৭২৮ হি.), আল ফাতাওয়াল কুবরা, কিতাবু ইখতিয়ারাতিল ইলমিয়্যা, বাবু সালাতিত তাত্বাওউ, কিতাবুস সালাহ, ৫/৩৪৪
২. শাইখ হাফিয তাকি উদ্দীন ইবন আব্দিল হালীম ইবন তাইমিয়াহ (৭২৮ হি.), ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকিম, ২/৬৩১
৩. আল্লামা যাইনুদ্দীন আবুল ফারজ ইবন রজব হাম্বলী (৭৯৫ হি.), লাতায়িফুল মাআরিফ ফীমা লিমাওয়াসিমিল ‘আমি মিনাল ওয়াযায়েফ ১৬৩ পৃষ্ঠা।
৪. আবুল আলা মুহাম্মাদ ইবন আব্দির রাহমান মুবারকপুরি (১৩৫৩ হি.), তুহফাতুল আহওয়াযি বিশারহি জামিয়িত তিরমিযী, আবওয়াবুস সাউম আন রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বাবু মা জাআ ফী লাইলাতিন নিসফি মিন শাবান, হাদীস নং- ৭৩৯
৫. আল্লামা আবুল হাসান উবাইদুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ আব্দিস সালাম মুবারকপুরি, মিরয়াতুল মাফাতীহ, বাবু কিয়ামি শাহরি রামাদান, তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
৬. শাইখ মুহাম্মাদ ইবনুস সালিহ ইবন মুহাম্মাদ আল উসাইমিন (১৪২১ হি.), মাজমুয়ু ফাতাওয়া ওয়া রাসাইলে ইবনে উসাইমিন, ৭/১৫৬
৭. শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহাহ, হাদীস নং- ১১৪৪, ৩/১৩৫

ফেইসবুকে আমরা...